
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা বা পিঠে ব্যথা হওয়া খুবই সাধারণ, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে।
গর্ভাবস্থায়, আমাদের শরীরের লিগামেন্ট স্বাভাবিকভাবেই নরম হয়ে যায় এবং প্রসারিত হয় যার ফলে আমাদের শরীর প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয়। আমাদের শরীরের এই পরিবর্তনের কারনে গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা বা গর্ভাবস্থায় আমাদের পিঠের নিচের অংশে এবং পেলভিসের জয়েন্টগুলিতে চাপ দিয়ে থাকে,যা পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। এই সময় মহিলাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির পায় যার কারণে তাদের শরীরে শারীরিক পরিবর্তনের হয়। এর পরিবর্তনের কারনে মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভব করে। গর্ভাবস্থা এক জন মহিলার জন্য একটি সুন্দর সময়, এবং গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়েরই নিরাপদ এবং সুস্থ থাকে প্রয়োজন। তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সঠিক যত্ন এবং ব্যথা ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় প্রায় ৪০% মহিলারা ঘাড় ব্যথা কষ্ট পেয়ে থাকেন। এর কারণ হল গর্ভাবস্থার পুরো নয় মাসে শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে থাকে যেমন –
- অতিরিক্ত ওজন গর্ভবতী মহিলাদের ঘাড়ের ব্যথার উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে
- হরমোনের পরিবর্তন এবং
- জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য ঘাড়ের ব্যথা শুরু হয়ে থাকে।
গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ঘাড় ব্যথার অন্যান্য সম্ভাব্য কারণঃ
খারাপ ভঙ্গি (Bad posture):
সঠিক বসার নিয়ম না মেনে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় ফলে হতে পারে ঘাড়ে ব্যথা।
মেরুদণ্ডের বক্রতা পরিবর্তনঃ
এই সময় শরীরের ওজন বাড়তে থাকে (পেট বড় হওয়া) ফলে মহিলাদের মেরুদন্ডের বক্রতার পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের ফলেও ব্যথা হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত পরিশ্রমঃ
বিশ্রাম না নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করার ফলেও ব্যথা হয়।
একটোপিক গর্ভাবস্থাঃ
যখন একটি নিষিক্ত ডিম বা ডিম্বানু জরায়ুর বাইরে রোপন করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থা ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্য দিয়ে ইমপ্লান্ট হয়, যেটি দুটি টিউব যেটা ডিম্বাশয়কে জরায়ুর সাথে সংযুক্ত করে থাকে। যে সময় ডিম ফ্যালোপিয়ান টিউবে ইমপ্লান্ট হয়, তখন এটি টিউবাল গর্ভাবস্থা হিসাবে পরিচিত হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় ঘাড় ব্যথার কারণঃ
গর্ভাবস্থায় ঘাড়ের ব্যথা সবার একই রকম হয় না। কারন ব্যথার ধরণ নির্ভর করে ব্যথার কারণের উপর। এই কারণ গুলি হল কিছু সম্ভাব্য ঘাড়ের সমস্যা যা গর্ভাবস্থায় দেখা দিতে পারে:
মাংসপেশীর টানঃ
আমাদের ঘাড়ের পেশীর অত্যধিক ব্যবহারের কারণে পেশীতে ব্যথা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, লক্ষ্য করেন যে আপনি আপনার ঘাড়ের জন্য খারাপ অঙ্গভঙ্গীতে বসা অবস্থায় টিভি দেখছেন বা বই পড়ছেন এই অবস্থায় আপনি হঠাৎ করে দাড়াতে গেলেন তখন মাংসপেশি হঠাৎ প্রসারিত হতে বাঁধা গ্রস্থ হয়ে পেশীতে টান লাগতে পারে। এর ফলে ঘাড় এক পাশ থেকে অন্য পাশে ফেরার সময় ব্যথা হবে।
নেক স্প্যাসম (Spasm):
আপনি যখন শক্ত ঘাড় নিয়ে জেগে উঠবেন, তখন আপনি পেশীতে খিঁচুনি অনুভব করছেন। এটি সাধারণত ঘটে যখন আমাদের ঘাড়ের পেশীগুলি অনিচ্ছাকৃতভাবে টানটান হয়ে যায়, সাধারণত আমাদের ঘাড়ের সাথে এমন হয় ঘুমানো অবস্থায়।
এই সময় আমরা যখন শক্ত ঘাড় নিয়ে জেগে উঠি তখন আমরা পেশীতে খিঁচুনির মতন অনুভব করে থাকি।
মাথাব্যথাঃ
কখনও কখনও, আমাদের মাথার পিছনে অংশের মাথাব্যথা প্রসারিত হয়ে আমাদের ঘাড় পর্যন্ত বিকিরণ করে। ফলে ঐ মাথাব্যথা থেকেও ঘাড়ে ব্যথা হয়।
পিনচেড নার্ভঃ
যখন আমাদের মেরুদন্ডের হাড়ের পরীবর্তনের কারণে স্নায়ুতে চাপলাগে তখন স্নায়ুতে চাপের কারণে , ঝিঁঝিঁ লাগা, পিন এবং সূঁচের খোঁচা লাগার মতন ব্যথা আমাদের ঘাড়ে, বাহুতে এবং হাত পর্যন্ত অনুভব করতে পারি।
ঘাড়ে আঘাতঃ
দুর্ঘটনাজনিত কারনে ছিটকে পড়ে গিয়ে ঘাড়ে আঘাত আনতে পারে। কখনও কখনও হঠাৎ স্টপ বা যানবাহন দুর্ঘটনা হুইপ্ল্যাশের কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী অবস্থায় কোমর ব্যথা কারন জেনে নিন
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে কি করবেন?
গর্ভবতী মহিলাদের ঘাড় ব্যথা প্রতিকার
আমরা নিম্নলিখিত উপায়ে গর্ভাবস্থায় ব্যথা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি।
ভাল অঙ্গবিন্যাসঃ
আমরা বসার সময়, দাঁড়ানোর সময়, কাজ করার সময় এবং এমনকি ঘুমানোর সময় ভাল ভঙ্গি বজায় রেখে ঘাড়ের ব্যথা কমাতে পারি।
- উষ্ণ বা ঠান্ডা কম্প্রেস (hot & cold pack) ব্যবহার করা।
- গর্ভাবস্থা বালিশ – এই সময় বালিশের ব্যবহার আমাদের ব্যথা মুক্ত জীবন দিতে পারে।বিশেষভাবে ডিজাইন করা বালিশগুলি আমরা ঘাড়, পিঠ, হাঁটু এবং নিতম্বে নিচে দিয়ে আরাম করে বসব। এতে করে আমাদের জয়েন্টগুলিতে চাপ কম পরবে ফলে ব্যথা কম হবে।
- মৃদু স্ট্রেচিং এবং ব্যায়াম করা
কি করলে গর্ভাবস্থায় পিঠের ব্যথা এড়ানো যায়?
- আমাদের হাঁটু বাঁকিয়ে এবং আমাদের পিঠ সোজা রেখব যখন আমরা মেঝে থেকে কিছু উঠাব বা তুলতে যাব।
- ভারী বস্তু উত্তোলন এড়িয়ে যাব।
- ওজন সমানভাবে বিতরণ করার জন্য ফ্ল্যাট জুতা ব্যবহার করব।
- কেনাকাটা করার সময় 2 ব্যাগের মধ্যে ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করব।
- বসার সময় পিঠ সোজা রেখে বসব।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে চেষ্টা করব, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়
- উষ্ণ পানি দিয়ে স্নান করব।
সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ
গর্ভাবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন কি?
অতিরিক্ত ওজন গর্ভবতী মহিলাদের ঘাড়ের ব্যথার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে, হরমোনের পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য ঘাড়ের ব্যথা শুরু হয়ে থাকে।
কিভাবে গর্ভাবস্থায় পিঠের ব্যথা দূর করতে পারি?
ভালো ব্যয়াম অনুশীলন করুন, ভাল ব্যয়াম পিঠের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে, সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন, উচু জুতা না পরে নরমাল জুতা পরুন, প্রতিদিন হাঁটুন, সঠিকভাবে উঠানামা করুন, বেশি শক্ত বা নরম নয় এমন স্থানে ঘুমান।
গর্ভাবস্থায় পিঠের ব্যথা কোথায় থাকে?
বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলারা পিঠে ব্যথা অনুভব করেন, সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসে শুরু হয়। পিঠের নীচে, পেলভিক (অন্ত্র, মূত্রথলি এবং জরায়ু) স্থানে ব্যথা করে।
লিখেছেন-
ডাঃ মাসুমা খানম, পিটি
ইনচার্জ সিনিয়র ফিজিওথেরাপিষ্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার