
পিঠের মাঝখানে ব্যথা
পিঠের মাঝখানে ব্যথার (Back Pain in the middle) কারন বা পিঠের ব্যথা খুবই সাধারণ একটি স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পেশার মানুষ এইসব সমস্যায় বেশিরভাগ সময় ভুগে থাকেন।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পিঠে ব্যথা আমাদের জন্য ঝুঁকির কারন হয়ে দাঁড়ায়। পিঠের ব্যথা যে কারো জন্যই যন্ত্রনাদায়ক।
পিঠের মাঝখানে ব্যথার কারন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
আমাদের দৈনন্দিন কিছু কার্যকলাপ, যেকোনো ধরনের আঘাত এবং কিছু চিকিৎসা সমস্যা থেকে এই পিঠের ব্যথা হতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে, ৯০% পিঠের ব্যথা ভালো হতে অপারেশন এর প্রয়োজন হয়না। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই পিঠের মাঝখানে ব্যথা ভালো করা সম্ভব।
পিঠের মাঝখানে ব্যথার কারনঃ

আমাদের পিঠে হাড়, পেশী, ডিস্ক, টেন্ডন এবং লিগামেন্টের একটি জটিল গঠন রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সাপোর্ট দেয় এবং আমাদের চলাফেরা করতে সক্ষম করে। পিঠের মাঝখানে ব্যথার কারন এর কিছু লক্ষনের উপর নির্ভর করে। পিঠের মাঝখানে ব্যথার কিছু সাধারন লক্ষনগুলির মধ্যে রয়েছে:
আর্থ্রাইটিসঃ
বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস আছে যার কারনে পিঠের মাঝখানে ব্যথা হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস (OA) হলো পিঠের ব্যথার একটি সম্ভাব্য কারন। এর কারনে পিঠের জয়েন্টগুলোর কারটিলেজের অবনতি ঘটে যার ফলে মেরুদণ্ড চেপে আসে বা সংকীর্ণ হয়ে আসে যার কারনে ব্যথা হয়।
কশেরুকার হাড় ভাঙাঃ
কশেরুকা হলো মেরুদন্ডকে ঘিরে চাকতি আকারের হাড়। এই হাড়গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। স্পোর্টস ইনজুরি বা পড়ে যাওয়ার কারনে পিঠের মাঝখানের যে কোনো কশেরুকার হাড় ভাঙা যেতে পারে এতে করে পিঠের মাঝখানে ব্যথা হয়।
হার্নিয়েটেড ডিস্কঃ
প্রতিটি কশেরুকার মাঝে ডিস্ক নামক নরম টিস্যু থাকে। এই ডিস্ক ফেটে যাওয়া বা বাইরের দিকে ফুলে যাওয়াকে হার্নিয়েটেড ডিস্ক বলে। এই হার্নিয়েটেড ডিস্ক এর কারনে পিঠের মাঝখানে ব্যথা হয়।
কিডনির সমস্যাঃ
কিডনিতে সংক্রমণ বা কিডনিতে পাথর হওয়া এগুলো পিঠের ব্যথার কারন।
জীবনযাত্রার সমস্যাঃ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নিয়মিত শরীরচর্চা না করা করার ফলে পেশী দুর্বল হয়ে যায় যা পিঠের মাঝখানে ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও গবেষনায় দেখা যায়, যারা তামাক সেবন করে তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।
পিঠের পেশীতে চাপ বা স্ট্রেইনঃ
অনেক সময় পিঠের পেশীতে চাপ, ভারী কোনো জিনিস ভুলভাবে উত্তোলন বা ভুল ভঙ্গিতে হঠাৎ নড়াচড়াতে প্রায়ই পিঠের মাঝখানে ব্যথা হয়।
অতিরিক্ত ওজনঃ
শরীরের অতিরিক্ত ওজন পিঠের পেশী, হাড় এসবের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। ফলে পিঠের ব্যথা হয়ে থাকে।
অস্টিওপরোসিসঃ
অস্টিওপরোসিস হলো হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া বা হাড় পাতলা হয়ে ভঙুর হয়ে যাওয়া। এর ফলে অস্বাভাবিক পিঠের ব্যথা হয়ে থাকে।
পিঠের মাঝখানে ব্যথা প্রতিরোধের উপায়ঃ
পিঠের মাঝখানে ব্যথা প্রতিরোধ করতে হলে সর্বদা মেরুদন্ডের আকৃতি স্বাভাবিক রাখতে হবে এবং পিঠের উপর চাপ কমাতে হবে। কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন-
- ভারী কোনো কিছু বহন করা থেকে বিরত থাকুন। এমন ব্যাগ ব্যবহার করুন যা পিঠে, ঘাড়ে কাধে সমানভাবে ভর বিতরণ করে বা যা দুই কাধে নেয়ার মতো হয়। প্রয়োজনে চাকাওয়ালা ব্যাগ ব্যবহার করুন।
- ব্যথা হলে ব্যাথার স্থানে ঠান্ডা সেক এর মাধ্যমে ব্যাথা/প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন ২-৩ বার ২০ মিনিট অথবা ৩০ মিনিট করে ঠান্ডা সেক দিতে পারেন।
- একেবারে পিঠ টানটান করে চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। সামনের দিকে ঝুকে বা কুজো হয়ে বসবেন না এতে করে পিঠে চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন এর ফলে আপনার পিঠের পেশীগুলো শক্তিশালী হয় এতে করে পিঠের ব্যথা হয়না।
- অফিসের ডেস্কে কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষন বসে যারা কাজ করেন, তারা কাজের মধ্যে বিরতি নিন। সামান্য স্ট্রেচিং করুন, কাজের মাঝে একটু হেটে নিন।
- বিছানা বা বালিশের কারনে ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই বিছানা একটু শক্ত হতে হবে এবং বালিশ বেশী উঁচু হওয়া যাবে না, যাতে মেরুদণ্ড বাকা হয়ে থাকে।
- পুষ্টিকর সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
- ধুমপান করার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে।
কখন পিঠের মাঝখানে ব্যথা নিয়ে চিন্তিত হবেনঃ
পিঠের ব্যথা যদি অতিরিক্ত কাজের চাপ বা ভুল ভঙ্গীতে শোয়া বা বসার কারণে হয় তবে তা সাধারণত দুই তিন দিনের ভেতরই সেরেও যায়। তবে, ৩ মাসের বেশি সময় ধরে থাকা পিঠের ব্যথা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। ব্যাথার শুরু হওয়ার ৩ সপ্তাহের মধ্যে পিঠ ব্যাথার অবস্থা এবং তীব্রতায় যদি কোনো পরিবর্তন না আসলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। পিঠের ব্যথার পাশাপাশি যেসব উপসর্গ থাকলে বুঝবেন যে কোনো জটিল রোগের লক্ষন-
- দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র পিঠে ব্যথা যা রাতের দিকে আরো বেশী তীব্র হয়।
- মলমূত্র ত্যাগে নিয়ন্ত্রণ হারানো।
- অতিরিক্ত ওজন হ্রাস।
- জ্বর।
- যেকোন একটি বা উভয় পায়ে অসাড়তা বা দূর্বলতা।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সাথে যদি এধরনের লক্ষন থাকে তাহলে এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবেঃ
অনেকের ক্ষেত্রে পিঠে ব্যথার এক সপ্তাহের মধ্যে কমে যায় আবার অনেকের চার থেকে ছয় সপ্তাহ লেগে যায়। এক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে যেয়ে সঠিক ফিজিওথেরাপি নিলে ব্যথা ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ব্যথা থাকে যেগুলো প্যাথলজিক্যাল ব্যথা এসব ব্যথা ফিজিওথেরাপি নেয়ার পরেও ভালো হয়না। ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হয়ে থাকে এসব ক্ষেত্রে দেরী না করে দ্রুত কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে পিঠের মাঝখানে ব্যথা হলে কেবল সেসব ক্ষেত্রেই অপারেশন এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া পিঠের ব্যথা অপারেশন ছাড়া ফিজিওথেরাপি নিলেই ভালো হয়।
পরামর্শ দাতাঃ
ডাঃ সৌরভ রহমান, পিটি
বিপিটি (ঢাবি), এম ডি এম আর (এস এস টি)
ইনচার্জ এন্ড সিনিয়র ফিজিওথেরাপিষ্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা)
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ Visionphysiotherapy.com
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
উত্তরা অফিসঃ
Address: House-42, Lake Drive Road, Sector 07, Uttara, Dhaka-1230
Contact: 01932-797229
Email: [email protected]
Location Map : https://goo.gl/maps/C2khSTXYRnmqK2qH8
বণানী অফিসঃ
Address: House-119, Road-01, Chairman Bari, Banani, Dhaka-1213 (West side of Banani Club)
Contact: 01710-850563
Email: [email protected]
Location Map : https://goo.gl/maps/DxuV19Q1Bu4sefKK7