হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

কখনও দীর্ঘক্ষণ হাতের উপর ভর দিয়ে শোয়া বা পায়ের উপর পা তুলে রাখলে অবশ হয়ে যায়। যদিও এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এমনটা বার বার যদি হতে থাকলে এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও যদি হয় তবে, সতর্ক হওয়া জরুরি। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের কারণে এমনটা হতে পারে। এই সমস্যায় স্নায়ুতন্ত্রের মায়োলিন সিথ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই দেশি না করে চিকিৎসকের কাছে যান।

এমন সময়ে, আপনি হাত-পা সরাতে অক্ষম বোধ করেন। এছাড়াও, দেহের যে কোনও অংশে অভ্যন্তরীণ আঘাতের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, এমন পরিস্থিতিতে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ। হাতে ও পায়ে অসাড়তা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং অন্যান্য অনেক রোগ থাকলে এ ধরনের অসাড়তার সমস্যাও দেখা দেয়।

হাত পা অবশ হওয়ার কারণ 

১) কখনও সখনও দীর্ঘক্ষণ হাতের উপর ভর দিয়ে শোয়া বা পায়ের উপর পা তুলে রাখার ফলে অবশ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এমনটা বার বার তহে থাকলে এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও হলে সতর্ক হওয়া জরুরি। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের কারণে এমনটা হতে পারে। এই সমস্যায় স্নায়ুতন্ত্রের মায়োলিন সিথ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই দেশি না করে চিকিৎসকের কাছে যান।

২) যে সব মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাঁদের অনেকের মধ্যেই পেরিফেরাল স্নায়ু রোগের প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। পেরিফেরাল স্নায়ুর সমস্যায় পায়ের পাতা ঘন ঘন অবশ হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীকালে এই অবশ ভাব শরীরের উপরের অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।

৩) স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে হাত, পা ও শরীরের অন্যান্য অংশে তীব্র ব্যথা এবং জ্বালা হতে পারে। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউরালজিয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। শরীরের যে কোনও অংশেই এই সমস্যা হতে পারে এই রোগ। বিশেষ করে কোনও সংক্রমণের কারণে বা বয়সের কারণে হতে পারে এই রোগ।

৪) মস্তিষ্কে যদি রক্ত সরবরাহ পর্যাপ্ত না হয় সে ক্ষেত্রে স্ট্রোক হয়। বিশেষ করে রক্তনালী কোনও কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে এমন হয়। স্ট্রোকের প্রথম লক্ষণ হল বাঁ হাত অবশ হয়ে যাওয়া যা ক্রণশ হাতের তালু পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে।

৫) ‘লাইম ডিজিজ-এর কারণে শরীরের কোনও কোনও অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। এটি একটি পতঙ্গবাহিত রোগ যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে। এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, ক্লান্তি, ঘাড়, পেশী ও জয়েন্টের ব্যথা ইত্যাদি। সময় মতো এর চিকিৎসা করা না হলে স্নায়ুর আরও নানা জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬) চিকিত্সা বিজ্ঞানে এর নাম ‘সিস্টেমিক ডিজিজ। এই রোগে কিডনি-সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। সিস্টেমিক ডিজিজে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে। এর জন্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বা স্নায়ুর নানা সমস্যা হতে পারে। প্রাথমিক ভাবে সিস্টেমিক ডিজিজে হাত, পা-সহ শরীরের একাধিক অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে।

৭) ফাইব্রোমায়ালজিয়ার মতো সমস্যার কারণে হাত, পা-সহ শরীরের একাধিক অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। এটি মস্তিষ্কের এমন একধরণের সমস্যা যার কারণে হলে স্মৃতির সমস্যা, পেশীতে ব্যথা বা ঘনমেজাজ হারানোর সমস্যা হতে পারে।

হাত ও পায়ের পক্ষাঘাতের প্রতিকার:

হাত পা অবশ বা ঝিনঝিন হওয়া এটা সাধারাণত পেশীর উপর ভর পরলে পেশী সাময়িক সময় এর জন্য কাজ করে না রক্ত চলা চলে ব্যাহত হওয়ার জন্য হাত পা অবশ হয়ে যায়। এটি সচারচর হয়ে থাকে। কিন্তু এটা বার বার হলে এটা একটা রোগে পরিণত হয়।তাই এই অবস্থায় এক জন ডাক্তার দেখানো অতি জরুরী।

১. শারীরিক ব্যায়াম : একজন চিকিৎসক এর নির্দেশনায় নির্দিষ্ট ব্যায়াম করলে পেশী শক্তি হবে , রক্ত চলা চল করবে। তখন হাত পা অবশ ভালো হতে সাহায্য করবে।

২. ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে: একজন ফিজিওথেরাপির কাছে গিয়ে ফিজিওথেরাপিস্টের পর্মশ নিয়ে থেরাপির নেওয়ার মাধ্যমে হাত পা অবশ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা করতে পারেন।

৩. ওষুধ: অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে, উপসর্গগুলি দেখে এবং প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, পেশী শিথিলকারী বা ইমিউনোসপ্রেসেন্টের মতো ওষুধগুলি গ্রহন করতে পারেন।

৪. সহায়ক ডিভাইস: ধনুর্বন্ধনী, স্প্লিন্ট বা অর্থোটিক্সের মতো সহায়ক ডিভাইসগুলি ব্যবহার করা অবস হাত ও পায়ের গতিশীলতাকে সহায়তা এবং উন্নত করতে পারেন।

৫. মেশিনের মাধ্যমে: ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিকাল নার্ভ স্টিমুলেশন (TENS) বা নিউরোমাসকুলার ইলেকট্রিকাল স্টিমুলেশন (NMES) এর মতো কৌশলগুলি স্নায়ু এবং পেশীকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করতে পারে, সম্ভাব্য কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে এবং পেশী অ্যাট্রোফি হ্রাস করতে পারে।

৬. লাইফস্টাইল পরিবর্তন: একটি সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল সহ একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা, সামগ্রিক সুস্থতাকে উন্নীত করতে পারে এবং পুনরুদ্ধার  হাত পা অবশ বা ঝিনঝিন হওয়া সহায়তা করতে পারে।

উপসংহার:

হাত ও পায়ের  অবশ বা ঝিনঝিন একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। মূল কারণগুলি বোঝা এবং কার্যকর প্রতিকারগুলি অন্বেষণ করা এই অবস্থাটি পরিচালনা এবং সম্ভাব্যভাবে বিপরীত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও উল্লিখিত প্রতিকারগুলি সহায়ক হতে পারে, তবে অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করতে এবং চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।  হাত ও পায়ের অবশ আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বস্তি পেতে, কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ হাত পা অবশ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা

হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় এবং এর সঠিক চিকিৎসা কি?

 

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 147