স্ট্রোক এর লক্ষন কি?

স্ট্রোক বা স্ট্রোক এর লক্ষন কি তা হলো মস্তিষ্কের একটি রোগ যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের বিঘ্নতার জন্য কোষের মৃত্যু ঘটে। স্ট্রোকের বিভিন্ন লক্ষন শরীরে দেখা যায় যেমন- হাত, পা, মুখ অথবা বিশেষ করে শরীরের কোনো অংশের হঠাৎ দূর্বলতা বা অসাড় হওয়া, অনেক সময় কথা বুঝতে বা বলতে অসুবিধা হওয়া, উভয় বা এক চোখে দেখতে অসুবিধা হয়ে থাকে ।

মস্তিষ্কের যেসব অংশ শরীরের যেসব অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেসব অংশ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে শরীরের ওই স্থানগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিসের মতো মারাত্মক উপসর্গ দেখা যায়, কিছু স্ট্রোকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

স্ট্রোক কি ?

মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তের শিরায় রক্ত জমাট বাধার ফলে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক থেকে ব্রেন ড্যামেজ, প্যারালাইসিস এবং মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং স্ট্রোক গুরুতর একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকে হার্ট এটাককেও স্ট্রোক মনে করে থাকেন, স্ট্রোক হয় মাথায়, বড় ধরনের স্ট্রোক হলে শরীরের এক হাত পা প্যারালাইসিস সহ নানা সমস্যা হয়ে থাকে।

স্ট্রোকের প্রকারভেদ

স্ট্রোক এর লক্ষন অনুযায়ী স্ট্রোক দুই ধরনের হয়ে থাকে যেমন- ইস্কিমিক স্ট্রোক বা হেমোরেজিক স্ট্রোক

ইস্কিমিক বা রক্তসংরোধজনিত স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে, অন্যদিকে হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয় রক্তবাহের বিদারণ বা মস্তিষ্কের রক্তনালির গঠনগত ত্রুটির কারণে। প্রায় ৮৭% স্ট্রোক হলো রক্তসংরোধজনিত, আর বাকিটা রক্তক্ষরণজনিত।

স্ট্রোক এর লক্ষন কি?

স্ট্রোক বর্তমান সময়ের অন্যতম বড় একটি সমস্যা। স্ট্রোক এর লক্ষন গুলো মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন এবং স্ট্রোক হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করে দেয়া উচিত। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে যে, সাধারণ জনগণের মধ্যে, হৃদ রোগের মতো, স্ট্রোক উপসর্গের সচেতনতা খুবই কম। স্ট্রোকের সাধারনত যেসব উপসর্গ দেখা যায়-

  • মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া।
  • কথা বুঝতে এবং কথা বলতে অসুবিধা হওয়া। মুখ এক দিকে বেকে বা নেমে যেতে পারে এবং ব্যক্তিটি হাসতে সক্ষম হবে না।
  • অবশ, দুর্বলতা লাগা, শরীরের এক পাশ অকেজো হওয়া।
  • চোখে ঘোলা দেখা, অন্ধকার দেখা বা ডাবল দেখা।
  • স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ হলো হঠাৎ ঝিমুনি। মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্তসরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে এটা ঘটে।
  • আপনি যদি আগের যে কোনো মাথা ব্যথার তুলনায় অনেক বেশি তীব্র মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন তাহলে বুঝতে হবে আপনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। এই ব্যথা যে কোনো ব্যথার চেয়ে তীব্র হয়ে থাকে।
  • মস্তিষ্কই যেহেতু আমাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সেহেতু স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে লোকের অস্বাভাবিক রাগ, উদ্বেগ এবং ভ্যাবাচেকা খাওযার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি স্ট্রোক থেকে বেঁচে যাওয়ার পরও এমন সব সমস্যায় স্থায়ীভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।

স্ট্রোক এর লক্ষন কি

স্ট্রোকের কারন কী ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী যত অসংক্রামক ব্যাধি আছে, সেগুলোর মধ্যে মৃত্যুর দিক থেকে হৃদরোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান।স্ট্রোক এর লক্ষন কি তা তো আমরা জানলাম এবার কি কারনে স্ট্রোক হয় তা জানব। বিভিন্ন কারনে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে । আমাদের এমন কিছু অভ্যাস আছে যার ফলে আমাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে থাকে , চলুন এবার জেনে নেই যেসব কারনে স্ট্রোক হতে পারে –

অতিরিক্ত ওজনঃ  শরীরের ওজন অনেক বেশী হলে স্ট্রোকের ঝুকি থাকে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে, কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। তাই ওজন স্ট্রোকের ঝুকি কমাতে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসঃ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুকি থাকে । তাই ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ সবসময় নিয়ন্ত্রনে রাখা উচিত।

অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসঃ আমাদের একটি বদঅভ্যাস হলো অতিরিক্ত তেল ও চিনিযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার ও কোমল পানীয় খেয়ে থাকি। এগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং এর ফলে স্ট্রোকের ঝুকি বাড়ে।

ধূমপানঃ ধূমপান, তামাক-জর্দা বা অন্যান্য মাদক সেবন, মদপান ইত্যাদির অভ্যাস থাকলে  সেসব অভ্যাস দ্রুত বাদ দিতে হবে। এসব অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর, এসব গ্রহনের ফলে স্ট্রোকের ঝুকি বাড়ে।

বয়সঃ ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের স্ট্রোক করার হার বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু অল্পবয়সী লোকদেরও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

আরো পড়ুনঃ ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা

স্ট্রোকের ঝুকি এড়াতে করনীয় কি?

নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে স্ট্রোকের ঝুঁকি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এক্ষেত্রে  কয়েকটি পরামর্শ হলোঃ

  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও কোলেস্টেরল সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করতে হবে । সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান করা এবং ধুমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন স্ট্রোকের ঝুকি বাড়ায় তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্ট্রোক পরবর্তী চিকিৎসা ও পূনর্বাসন

স্ট্রোক এর লক্ষন দেখে স্ট্রোক হওয়ার পরে স্ট্রোকের চিকিৎসা ও পূনর্বাসন শুরু হয় হাসপাতালে।স্ট্রোক পূনর্বাসন এর মাধ্যমে রুগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারে এবং পরবর্তীতে আবার স্ট্রোক হওয়ার ঝুকি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । স্ট্রোক পূনর্বাসনে অনেকের এক সপ্তাহ বা এক মাস বা দুই মাসও লাগতে পারে।

স্ট্রোক পূনর্বাসন কি?

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন ব্যক্তিদের অক্ষমতাকে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে যা স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।স্ট্রোক পূনর্বাসন বলতে মূলত বিভিন্ন থেরাপি চিকিৎসাকে বুঝায় যেমন- ফিজিওথেরাপি , স্পিচ থেরাপি , অকুপেশনাল থেরাপি।

স্ট্রোক এর লক্ষন কি তা দেখে স্ট্রোক পরবর্তী পূনর্বাসন ব্যবস্থা নিতে হবে।সবচেয়ে ভালো হয় একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে নিয়ে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেয়া।

প্রশ্ন-উত্তর পর্বঃ 

স্ট্রোকের পর হাত পা অবশ হয়ে গেলে কি করনীয়?

আপনি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ মত পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

স্ট্রোক রোগী কি ফিজিওথেরাপিতে ভাল হয়?

স্ট্রোক পরবর্তী রিহ্যাবিলিটেশন এর জন্য ফিজিওথেরাপি হলো সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা।

স্ট্রোক রোগীকে থেরাপি দিতে কত টাকা লাগে?

রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে খরচ এর পরিমান কম বেশি হতে পারে।

স্ট্রোক রোগীকে কোথায় ফিজিওথেরাপি দিবো?

আপনি আপনার কাছাকাছি যে কোন ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক বা হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি দিতে পারেন।

স্ট্রোক রোগীর সুস্থ হতে কত দিন লাগে?

এটা সাধারনত রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে, এটা এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 147