অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কেন হয় ও এর চিকিৎসা

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কি?

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস(Avascular Necrosis) যা এভিএন (AVN) বা অস্টিওনেক্রোসিস ( Osteonecrosis) নামেও পরিচিত। অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কেন হয় তা আমাদের জানতে হবে।
অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস(Avascular necrosis) একটি হাড়ের রোগ যা অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে হাড়ের রক্ত ​​সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং এর ফলে হাড়ের টিস্যু মারা যায় যা আক্রান্ত হাড় বা এর আশেপাশের অস্থিসন্ধিতে প্রচন্ড ব্যাথার সৃষ্টি করে এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
এটি শরীরের যেকোনো হাড়ে আক্রান্ত করতে পারলেও এটি নিতম্ব বা হিপ জয়েন্টে বেশি দেখা যায় এবং মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি দেখা দেয়। একটি গবেষণায় দেখা যায় প্রতিবছর সারাবিশ্বে কমপক্ষে ১৫০০০০ লোক অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসেন।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কেন হয় তার কারণ ?

  • হাড় বা অস্থিসন্ধিতে আঘাত
  • রক্তজনিত রোগ
  • রক্তশূন্যতা
  • ধমনীতে চর্বি জমে ধমনীর রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়া

আরও জানুন : পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও তার প্রতিকার

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস এর উপসর্গ কি?

এটি অনেকক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে কোন উপসর্গ প্রকাশ করে না। কিন্ত কিছুদিন এর মধ্যেই এটি কিছু উপসর্গ নিয়ে হাজির হয় যেমন:

  • অস্থিসন্ধির আশেপাশের মাংসপেশীতে ব্যাথা
  • অস্থিসন্ধির নাড়াচাড়া করতে সমস্যা হওয়া
  • অস্থিসন্ধির নাড়াচাড়ার পরিসীমা কমে আসা
  • আক্রান্ত পাশে শরীরের ওজন বহন করতে সমস্যা
  • হাটার সময়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করা
  • সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে সমস্যা হওয়া
  • সময় বাড়ার সাথে সাথে ব্যাথার পরিমান বাড়তে থাকা এবং অস্থিসন্ধি ব্যাবহার করতে কষ্ট হওয়া।

রোগ নির্ণয় :

12

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কেন হয় ও এর চিকিৎসা কি  তা আমাদের জানতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ সাধারনত কোন লক্ষণ প্রকাশ করে না এবং যখন রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায় তখন এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর রোগনির্ণয়ে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যবহৃত হয়।

এক্সরে: এক্সরেতে জয়েন্টের আশেপাশে হাড়ের মধ্যে ক্ষয় দেখা যায় এবং হাড়ের মসৃণতা নষ্ট হয়ে যায়
ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং ( এমআরআই): এমআরআইতে এ রোগ সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। কোথায় কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এবং আশেপাশের মাংশপেশীর অবস্থাও বোঝা যায়।

এনজিওগ্রাম: এনজিওগ্রাম সাধারনত সারা শরীরের রক্তচলাচলের কি অবস্থা এটি বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস এর ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ প্রকাশের আগে এটিই একমাত্র রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে জানার পদ্ধতি। কোন শিরা বা উপশিরার ক্ষতি হয়েছে বোঝার জন্য এনজিওগ্রাম অন্যতম কার্যকরী রোগনির্ণয় পদ্ধতি।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস এর চিকিৎসা :

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কেন হয় ও এর চিকিৎসা কি  তা আমাদের জানতে হবে।এর কোন প্রতিকার নেই যদিও কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্নয় করা গেলে কিছু ঔষধ ও ফিজিওথেরাপি এর মাধ্যমে লম্বাসময় ভালো থাকা সম্ভব। ব্যাথা কমানোর কিছু পদ্ধতি, কিছু ইলেক্ট্রোথেরাপি মেশিন এক্ষেত্রে বেশ কার্যকারী এবং অস্থিসন্ধির নাড়াচাড়ার পরিসীমা বাড়ানোর জন্য স্ট্রেনদেনিং ব্যায়াম উল্লেখযোগ্য। সঠিক ফিজিওথেরাপি এ মাধ্যমে লম্বাসময় সক্রিয় থাকা এবং ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
কিন্তু দীর্ঘদিন পরে রোগ ধরা পরলে বা অস্থিসন্ধির অনেকটা ক্ষয় হয়ে গেলে সাধারনত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে এবং অনেকক্ষেত্রে জয়েন্ট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়ে থাকে রোগীকে বিকলাঙ্গতা থেকে বাচানোর জন্য।

কিভাবে অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস এর ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়?

মদ্যপান না করা, স্টেরয়েড যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা, কোন রক্তরোগ থাকলে অতি দ্রুত তার চিকিৎসা করা , ধুমপান থেকে বিরত থাকা।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কি শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে যেতে পারে?

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস সাধারনত হাড় বা অস্থিসন্ধিতে হয়ে থাকে যদিও এটি রক্তের সঞ্চালন জনিত সমস্যা। এটি নিজে থেকে অন্য কোথায় ছড়িয়ে পরে না।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কি নিতম্ব ছাড়া অন্য কোথাও হতে পারে?

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস সাধারনত ওজন বহনকারী হাড় বা অস্থিসন্ধিতে বেশী দেখা যায় ( হাটু) কিন্তু এছাড়া অন্য যেকোন হাড় বা অস্থিসন্ধিতে এটি হতে পারে যদি ওই হাড়ের আশেপাশের রক্ত চলাচল ব্যহত হয়।

নিতম্বে ব্যাথা হলেই কি সেটি অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের লক্ষণ?

নিতম্বে বা নিতম্বের আশেপাশে অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস ছাড়াও অনেক কারনেই ব্যাথা হতে পারে যেমন মাংশপেশী ছিড়ে গেলে, লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা অস্থিসন্ধির অন্য যেকোন সমস্যায় ইত্যাদি। কিন্তু ব্যাথা অনুভূত হলে অতি দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেয়া শ্রেয়।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসে ফিজিওথেরাপি কিভাবে সাহায্য করবে?

এ রোগ হলে অস্থিসন্ধি ও তার আশেপাশে ব্যাথা দেখা দেয় এবং অস্থিসন্ধির কাজের পরিসীমা কমে আসে অনেক ক্ষেত্রে রোগী হাটাচলা ও করতে পারে না। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যাথা কমাতে, অস্থিসন্ধির কাজের পরিসীমা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং এই রোগ থেকে হওয়া ক্ষতির পরিমান কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। যদিও এই রোগের নিরাময় নেই কিন্তু ফিজিওথেরাপি এ রোগের বৃদ্ধি কমাতে অনেক বেশী কার্যকরী।

ধন্যবাদান্তে:-

ডা: ইব্রাহিম হাওলাদার (পিটি)
বিপিটি, এমডিএমআর( ফেলো)
ফিজিওথেরাপিস্ট,  ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
https://visionphysiotherapy.com/appoi..

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 147