
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত ও প্রতিরোধের উপায়
মাথা ব্যথা কি ?
মাথা ব্যথা হল একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায়ই মস্তিষ্কের চারপাশে রক্তনালীগুলির প্রসারণের কারণে হয়।মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা আমাদের জানতে হবে । মাথা ব্যথার বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
টেনশন থেকে মাথাব্যথা: এই ধরনের মাথাব্যথা সবচেয়ে সাধারণ। এগুলি সাধারণত মাথার দুই পাশে টানা, চাপযুক্ত ব্যথা হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
মাইগ্রেন: মাইগ্রেন হল একটি আরও গুরুতর ধরণের মাথাব্যথা যা প্রায়শই বমি বমি ভাব, বমি এবং আলো বা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতার সাথে থাকে।
ক্লাস্টার মাথাব্যথা: ক্লাস্টার মাথাব্যথা হল একটি বিরল ধরণের মাথাব্যথা যা সাধারণত একই দিকে এবং একই সময়ে ঘটে। তারা তীব্র, বিদ্যুৎ-আঘাতের মতো ব্যথা হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
অন্যান্য ধরণের মাথাব্যথা: মাথা ব্যথার অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে আঘাত, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মেডিকেল অবস্থা, যেমন হাইপারটেনশন, টিউমার বা মস্তিষ্কের প্রদাহ।
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত ?
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা আমাদের জানতে হবে ।
মাথা ব্যথার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
ব্যথানাশক ওষুধ: অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, নাপ্রোক্সেন এবং কোডিন সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ মাথা ব্যথার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাস্কুলোস্কেলেটাল রিলাক্স্যান্টস: মাস্কুলোস্কেলেটাল রিলাক্স্যান্টস পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে, যা মাথা ব্যথা কমাতে পারে।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, যেমন ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, মাইগ্রেন এবং অন্যান্য ধরণের মাথা ব্যথার জন্য কার্যকর হতে পারে।
অন্যান্য চিকিৎসা: অন্যান্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ইনজেকশন, শারীরিক থেরাপি এবং কখনও কখনও অস্ত্রোপচার।
মাথা ব্যথার জন্য কোন নির্দিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই, তবে কিছু জিনিস করা যেতে পারে যা মাথা ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আরও জানুন : কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ, চিকিৎসা ও তার প্রতিকার
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা নিম্নরুপঃ
পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম পেশীগুলিকে শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম পেশীগুলিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে, যা মাথা ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা: মানসিক চাপ মাথা ব্যথার একটি সাধারণ কারণ। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনের কৌশলগুলি, যেমন ধ্যান বা যোগব্যায়াম, মাথা ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে, যা মাথা ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান করা: পর্যাপ্ত পানি পান করা মাথা ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মাথা ব্যথা যদি তীব্র হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য লক্ষণ, যেমন বমি বমি ভাব, বমি বা দৃষ্টি সমস্যার সাথে থাকে, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা আমাদের জানতে হবে ।তাছাড়া আরও বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো নিম্নরুপঃ
ট্রাইজেমিনাল নার্ভের ব্যথা: এটি মুখ এবং মাথার একপাশে তীব্র ব্যথার কারণ হয়।
তীব্র মাথাব্যথা: এগুলি হঠাৎ এবং তীব্র ব্যথার কারণ হয়। এগুলি সাধারণত একটি গুরুতর অবস্থার কারণে হয়, যেমন মস্তিষ্কের রক্তপাত, মস্তিষ্কের টিউমার বা মস্তিষ্কের সংক্রমণ।
ক্রনিক মাথাব্যথা: এগুলি প্রতি মাসে ১৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয়। এগুলি সাধারণত টেনশন মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের কারণে হয়।
আরও জানুন : পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও তার প্রতিকার
মাথা ব্যথার অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার
- অতিরিক্ত ঘুম বা ঘুমের ঘাটতি
- খাবার বা পানীয়ের ঘাটতি
- অনিদ্রা
- মানসিক চাপ বা উদ্বেত্ত
- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা ঝুঁকে থাকা
- কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- রক্তনালীর সমস্যা
- মস্তিষ্কের রোগ
- মাথা ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য, একজন ডাক্তার আপনার রোগের ইতিহাস, লক্ষণ এবং শারীরিক পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করবেন। তারা আপনার মাথা ব্যথার কারণ নির্ধারণ করতে অতিরিক্ত পরীক্ষাও করতে পারে, যেমন রক্ত পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা বা মস্তিষ্কের তরল পরীক্ষা।মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা আমাদের জানতে হবে।
মাথা ব্যথার চিকিৎসা কারণগুলির উপর নির্ভর করে। প্রাথমিক মাথাব্যথার জন্য, ব্যথানাশক ওষুধগুলি সাধারণত কার্যকর হয়।
মাথাব্যথার চিকিৎসার প্রাকৃতিক উপায়
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা আমাদের জানতে হবে।মাথাব্যথার চিকিৎসার প্রাকৃতিক উপায়গুলির মধ্যে রয়েছে:
বিশ্রাম: মাথাব্যথার সময়, ঘাড় এবং মাথাকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে না ফেলে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
বরফ বা তাপ ব্যবহার: বরফ বা তাপ ব্যবহার করে মাথার পেশীগুলিকে শিথিল করা যেতে পারে। বরফ মাথাব্যথার প্রথম ২৪ ঘন্টা ব্যবহার করা ভাল, যখন তাপ পরবর্তী ২৪ ঘন্টা ব্যবহার করা ভাল।
ব্যথানাশক ওষুধ: ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা কোডিন, মাথাব্যথার ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রতিকার: অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলির মধ্যে রয়েছে:
জিঙ্ক: জিঙ্ক একটি খনিজ যা মাথাব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন 25-35 মিলিগ্রাম জিঙ্ক গ্রহণ করা যেতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম: ম্যাগনেসিয়াম একটি খনিজ যা মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন 400-800 মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভিটামিন বি2: ভিটামিন বি2 একটি ভিটামিন যা মাইগ্রেন মাথাব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন 400 মিলিগ্রাম ভিটামিন বি2 গ্রহণ করা যেতে পারে।
কফি: কফি মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, কফির অতিরিক্ত ব্যবহার মাথাব্যথার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
চা: চা মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, অতিরিক্ত চা পানে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ভেষজ চা মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আদা: আদা একটি মশলা যা মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আদার চা পান করা যেতে পারে বা আদা মাথায় ম্যাসেজ করা যেতে পারে।
লেবু: লেবুর রস মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। লেবুর রস দিয়ে গরম জল পান করা যেতে পারে।
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা আমাদের জানতে হবে। মাথাব্যথা প্রতিরোধের জন্য কিছু টিপস:
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুমান।
- মানসিক চাপ কমাতে শিখুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল কম পান করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
মাথা ব্যথা করলে কি করা উচিত তা আমাদের জানতে হবে । এই টিপসগুলি অনুসরণ করে, আপনি মাথাব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারেন।
মাথাব্যথার জন্য কখন কোন ওষুধ প্রয়োজনঃ
মাথাব্যথার জন্য অনেক ধরণের ওষুধ পাওয়া যায়। এই ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
ব্যথানাশক ওষুধ: যেমনঃ অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা কোডিন, মাথাব্যথার ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
প্রতিষেধক ওষুধ: যেমনঃ টপিমাট্রেট বা ইমিট্রিপ্টাইন, মাথাব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার ডাক্তারের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলার আগে কোনও ওষুধ নেওয়া শুরু করবেন না।
প্রসারিত ওষুধ: যেমনঃ ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার বা বিটা-ব্লকার, মাথাব্যথার কারণ হতে পারে এমন রক্তনালীগুলি শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যান্য ওষুধ: যেমনঃ অ্যান্টিডপ্রেসেন্ট বা অ্যান্টিকনভালসেন্ট, মাথাব্যথার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাথাব্যথার জন্য ওষুধ নির্বাচন করার সময়, আপনার ডাক্তার আপনার মাথাব্যথার ধরন, তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি বিবেচনা করবে। তারা আপনার অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থা এবং ওষুধগুলিও বিবেচনা করবে।
মাথাব্যথার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মাথাব্যথার ওষুধের কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে:
- বমি বমি ভাব
- বমি
- পেট ব্যথা
- পেট ফাঁপা
- ডায়রিয়া
- মাথা ঘোরা
- উদ্বেগ
মাথাব্যথার ওষুধ সেবনে সতর্কতা
মাথাব্যথার ওষুধ নেওয়ার সময়, নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলি মনে রাখবেন:
- আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলার আগে কোনও ওষুধ নেওয়া শুরু করবেন না।
- আপনার ডাক্তারের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
- ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধের জন্য, নির্দেশাবলীতে প্রদত্ত ডোজের বেশি ব্যবহার করবেন না।
- আপনি যদি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
আমি কিভাবে বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে পার্থক্য করতে পারি?
বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার স্বতন্ত্র লক্ষণ রয়েছে। মাইগ্রেন: প্রায়শই বমি বমি ভাব এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা নিয়ে সাথে আসে। যখন টেনশনের কারণে মাথাব্যথ হয়,তখন নিস্তেজ ও অবিরাম ব্যথার মতো অনুভূত হয়।
কখন আমার মাথাব্যথার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
মাথাব্যথার জন্য আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত যদি এটি গুরুতর, আকস্মিক, স্নায়বিক উপসর্গগুলির সাথে থাকে, বা ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথা উপশমক দিয়েও কোন উন্নতি না হয়।
লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর কি মাথাব্যথায় কোন ভূমিকা রাখতে পারে?
হ্যাঁ। ঘুমের অভাব, অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপের মতো জীবনযাত্রার কারণগুলি কিছু ব্যক্তির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
মাথাব্যথা উপশম করার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার আছে?
হ্যাঁ, প্রাকৃতিক প্রতিকার যেমন হাইড্রেটেড থাকা, শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করা এবং ল্যাভেন্ডারের মতো প্রয়োজনীয় তেল ব্যবহার করা মাথাব্যথা উপশম করতে সহায়তা করতে পারে।
মাথাব্যথা প্রতিরোধে খাদ্যের ভূমিকা কী?
একটি সুষম খাদ্য বজায় রাখা, হাইড্রেটেড থাকা এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং খাবার এড়ানো মাথাব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস , ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার , ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি , ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম , ইন্ডিয়া ।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা)
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
https://visionphysiotherapy.com/appoi..