ঘাড় ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো , ঘাড় ব্যথা কি, এর লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

ঘাড় ব্যথা কি ?

ঘাড় ব্যথা হল ঘাড়ের পেশী, লিগামেন্ট বা জয়েন্টে ব্যথা। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে এটি ৩০ থেকে  ৫০  বছর বয়সী লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঘাড় ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো সেটা আমাদের জেনে রাখতে হবে ।

ঘাড় ব্যথার  কারণ কি?

ঘাড় ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

আঘাত: ভার উত্তোলন, গাড়ি দুর্ঘটনা বা খেলাধুলার চোটের কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘ সময় ধরে একই ভঙ্গিতে বসে থাকা: কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা, টেলিভিশন দেখা বা বই পড়ার কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।

টেনশন বা মানসিক চাপ: টেনশন বা মানসিক চাপের কারণে ঘাড়ের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে ব্যথা হতে পারে।

অসুস্থতা: আর্থ্রাইটিস, মাইগ্রেন বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো অসুস্থতার কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।

ঘাড় ব্যথার লক্ষণগুলি কি?

ঘাড় ব্যথার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ঘাড়ে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • ঘাড় শক্ত বোধ করা
  • মাথা ঘোরা
  • মাথাব্যথা
  • কাঁধে ব্যথা
  • হাত বা আঙ্গুলে ব্যথা বা অবশতা

আরও জানুন : কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ, চিকিৎসা ও তার প্রতিকার

ঘাড় ব্যথার চিকিৎসার কি ?

ঘাড় ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো সেটা আমাদের জেনে রাখতে হবে ।

বিশ্রাম: ঘাড়কে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে না ফেলে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।

বরফ বা তাপ ব্যবহার: বরফ বা তাপ ব্যবহার করে ঘাড়ের পেশীগুলিকে শিথিল করা যেতে পারে।

ব্যথানাশক ওষুধ: ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন, ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ফিজিওথেরাপি: ফিজিওথেরাপি ঘাড়ের পেশীগুলিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে।

কখন ঘাড় ব্যথার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন?

ঘাড় ব্যথার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করার কিছু কারণ হল:

  • ব্যথা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • ব্যথার সাথে অন্যান্য লক্ষণ থাকে, যেমন: মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা বা হাত বা আঙ্গুলে ব্যথা বা অবশতা।
  • যদি ব্যথা একটি আঘাত বা দুর্ঘটনার পরে শুরু হয়।
  • ব্যথার সাথে সাথে জ্বর, কাঁপুনি বা ওজন হ্রাস হয়।

ঘাড় ব্যথার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করলে, তারা আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসার পরিকল্পনা করতে একটি শারীরিক পরীক্ষা এবং অন্যান্য পরীক্ষা, যেমনঃ ইমেজিং পরীক্ষা করতে পারে।

ঘাড় ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো ?

ঘাড় ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো সেটা আমাদের জেনে রাখতে হবে । ঘাড় ব্যথার ধরণের উপর নির্ভর করবে কখন, কোন অবস্থায় , কোন ডাক্তার দেখাতে হবে ।

স্লিপ ডিস্কের এবং স্পন্ডোইলোসিস এর জন্যে অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া হয়ে থাকে। এর লক্ষণ হল, ঘাড়ে অসহ্য যন্ত্রণার ঝুঁকি থাকে।

যে কারণে অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া হতে পারে, তা নিম্নরুপঃ

• মেরুদণ্ডের উপরের দিকের অর্থাৎ সারভাইকাল স্পাইন অংশের অস্টিও-আর্থ্রাইটিস।

• বাইরে থেকে কোনও ভাবে চোট যদি অক্সিপিটাল নার্ভে লাগে।

• ঘাড়ের নিকটের মেরুদণ্ডের কশেরুকায় ক্ষয় হয় যদি ।

• গাউট।

• ডায়াবেটিস

• সারভাইকাল স্পাইনের ডিস্কের সমস্যা ।

এগুলোর মধ্যে  কোনও লক্ষণ সংক্রমণ হলে বা ঘাড়ের আশেপাশের রক্তনালি যদি ফুলে যায়  সেক্ষেত্রে   অক্সিপিটাল নিউরালজিয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় ।

অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া নির্ণয় করতে এমআরআই , সিটি স্ক্যান  করা হয়। এই ধরনের ব্যথায় আলো ও শব্দে রোগীর সমস্যা হয়।রোগীর খাওয়া-দাওয়াতে অরুচি চলে আসে, কাজকর্ম মনোযোগ  থাকেনা। এক্ষেত্রে নিউরোলজিস্ট বা পেন ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  ভয়ানক ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়। তবে সবার আগে রোগের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। এর জন্য নিউরোলজিকাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে । চিকিৎসক প্রয়োজন বোধ করলে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রোগ সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হলে রোগমুক্তি সম্ভব।

■ বিভিন্ন আঘাতের কারণে এবং হাড়ের ক্ষয় বা অনুপযুক্ত দৈনন্দিন কাজের কারণে, সার্ভিকাল মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলি প্রসারিত হয় এবং স্নায়ুর উপর চাপ দেয়। এই স্নায়ুর ওপর চাপ পড়লে ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, ধীরে ধীরে আঙুলে বিকিরণ হয়, অসাড়তা প্রভৃতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘাড়ের নিচে নরম বালিশ দিয়ে বিছানায় শুয়ে বারবার প্রত্যাহার ব্যায়াম করতে হবে।কি নিয়ম অনুসরণ করতে হবে তা একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে বলতে পারবে আপনার কি রোগ হয়েছে , সে অনুযায়ী আপনাকে চিকিৎসা করা হবে।  আপনাকে ফিজিওথেরাপিস্ট ডাক্তার শিখিয়ে দিতে পারবেন কি ভাবে আপনি ব্যায়াম করবেন, কি নিয়ম মেনে,  বেথামুক্ত সুস্থ জীবন উপভোগ করতে পারেন।

■ তীব্র ঘাড় ব্যথার সাথে অস্বাভাবিক পেশী সংকোচন বিবেচনা করে স্ট্রেচিং ব্যায়াম করা হয়। এই অস্বাভাবিক পেশী সংকোচন কমাতে রোগীকে তাপ এবং ঠান্ডা থেরাপি হিসাবে তাপ থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। যা একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ডাক্তার দিয়ে থাকেন । সে ক্ষেত্রে আপনাকে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হবে।

■ ব্যথার তীব্রতা কমে গেলে চেয়ারে বসে ব্যায়াম করা যেতে পারে।

■ যদি ব্যথা ঘাড় থেকে বাহু পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে যায়, তাহলে ঘাড়কে সরাসরি বিপরীত কাঁধে সরিয়ে  ব্যায়াম করা উচিত।সে ক্ষেত্রে আপনাকে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে।  যেখানে ব্যথা আছে সেখানে ঘাড়ের পেশী প্রসারিত করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে কোল্ড থেরাপি দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে, স্নায়ু সংকোচন কমাতে নিউরোডাইনামিক থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে ।

গর্ভবতী মহিলাদের ঘাড় ব্যথা

গর্ভবতী মহিলাদের ঘাড় ব্যথার ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ গর্ভকালীন সময়ে, পেটের বৃদ্ধি ঘাড়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তনগুলি ঘাড়ের পেশীগুলিকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।

ঘাড় ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো,গর্ভবতী মহিলাদের ঘাড় ব্যথার চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি সাহায্য করতে পারে:

**আরাম করুন এবং ঘাড়কে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে না ফেলুন।

**ঘাড়ের পেশীগুলিকে শিথিল করতে বরফ বা তাপ ব্যবহার করুন।

**ব্যথানাশক ওষুধ সাবধানে গ্রহণ করুন, কারণ কিছু ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

** ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে ঘাড়ের পেশীগুলিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে সাহায্য নিন।

যদি ঘাড় ব্যথা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধের উপায়

ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন: কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, টেলিভিশন দেখা বা বই পড়ার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মাথা সোজা রাখুন, আপনার কাঁধগুলি শিথিল করুন এবং আপনার পিঠটি সোজা রাখুন।

seat

নিয়মিত ব্যায়াম করুন: ঘাড়ের পেশীগুলিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে নিয়মিত ব্যায়াম করা সাহায্য করতে পারে।

আপনার ঘাড়কে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলবেন না: ভারী বস্তু উত্তোলনের সময় সঠিক কৌশল ব্যবহার করুন এবং দীর্ঘ সময় ধরে একই ভঙ্গিতে বসে থাকবেন না।

load lifting

পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত সময় ঘুমান। ঘুম পেশীগুলিকে শিথিল করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

এছাড়াও, নিম্নলিখিত টিপসগুলি ঘাড় ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে:

টেনশন বা মানসিক চাপ কমাতে ব্যবস্থা নিন: নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা ধ্যান করা টেনশন এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান রক্ত ​​সঞ্চালনকে বাধা দিতে পারে, যা ঘাড়ের ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ঘাড়ের পেশীগুলিকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করতে পারে, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

যদি আপনি ঘাড় ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে প্রথমে বিশ্রাম নিন এবং আপনার ঘাড়কে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলবেন না। বরফ বা তাপ ব্যবহার করেও ব্যথা এবং প্রদাহ কমানো যেতে পারে। যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা খারাপ হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

ঘাড়ে ব্যথায় কি ঔষধ সেবন করব?

ব্যথানাশক ওষুধ: অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, নাপ্রোক্সেন, কোডিন ইত্যাদি ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, যেমন অ্যামিট্রিপ্টাইলিন, ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। মাস্কুলোস্কেলেটাল রিলাক্স্যান্টস: মাস্কুলোস্কেলেটাল রিলাক্স্যান্টস পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে, যা ব্যথা কমাতে পারে।

ঘাড় ব্যথার জন্য আমার কি ফিজিওথেরাপিস্ট দেখানো উচিত?

আপনার অবশ্যই প্রথমে আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে যাওয়া উচিত যদি ঘাড়ে ব্যথা থাকে।

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস , ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার , ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি , ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম , ইন্ডিয়া ।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
https://visionphysiotherapy.com/appoi..

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 147