গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এবং কি কি খাওয়া যাবে?
ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়া খুব দরকারি, এটা তো আমরা জানি। ফল আমাদের শরীরে অনেক ভিটামিন আর শক্তি যোগায়, যা বাচ্চা আর মায়ের দুজনের জন্যই ভালো। কিন্তু কিছু ফল আছে যা এই সময়টাতে একটু সাবধানে থাকতে হয়। কারণ ওগুলোতে এমন কিছু জিনিস থাকে যা হয়তো পেটের বাচ্চাটার জন্য ভালো না। তাই কোন ফলগুলো খাওয়া যাবে আর কোনগুলো একটু এড়িয়ে যেতে হবে, সেটা জানা জরুরি।
সহজ করে মনে রাখার জন্য কয়েকটা ফলের কথা বলি। আনারস নামের ফলটা এই সময় বেশি খেতে নেই। কারণ ওতে এমন একটা জিনিস আছে যা পেটের ভেতরে একটু সমস্যা করতে পারে। কাঁচা পেঁপেও একই রকম, ওটা খেলে পেটে ব্যথা বা অন্য কিছু অসুবিধা হতে পারে। পাকা পেঁপে অল্প পরিমাণে খাওয়া যায়, তবে কাঁচাটা একদম না খাওয়াই ভালো। আর আঙুর ফলটা মিষ্টি আর রসালো হলেও, এটা বেশি খাওয়া ঠিক না। অল্পস্বল্প খাওয়া যেতে পারে, তবে খুব বেশি খেলে মায়ের শরীরে হরমোনের একটু সমস্যা হতে পারে।
তাহলে মনে রাখবেন, আনারস আর কাঁচা পেঁপে এই সময় একদম বাদ। পাকা পেঁপে একটুখানি খাওয়া যেতে পারে। আর আঙুর অল্প পরিমাণে খান, বেশি না। ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেবেন যাতে কোনো নোংরা বা ওষুধ না লেগে থাকে। আর যদি কোনো ফল নিয়ে চিন্তা হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো বুদ্ধিমানের কাজ।
গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত এমন ফলের তালিকা
গর্ভাবস্থায় ফল নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার, তবে কিছু ফল গর্ভবতী নারীদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এর কারণ হলো, এসকল ফলে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান বিদ্যমান যা গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এবং মা ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। নিচে তেমনই কিছু ফলের তালিকা দেওয়া হলোঃ
কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপে
- গর্ভাবস্থায় কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপে খাওয়া উচিত নাঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীর অনেক সংবেদনশীল থাকে এবং গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি। কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্স (Latex) নামক একটি উপাদান থাকে যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- কারণ এতে এমন উপাদান থাকে যা মায়ের পেটের ভেতরের স্থান সংকুচিত করতে পারেঃ কাঁচা এবং আধা-পাকা পেঁপের মধ্যে থাকা ল্যাটেক্স জরায়ুর পেশীগুলোর সংকোচন ঘটাতে পারে। এই সংকোচন এতটাই শক্তিশালী হতে পারে যে তা গর্ভপাতের কারণ পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
- এর ফলে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকেঃ জরায়ুর অস্বাভাবিক সংকোচন গর্ভের শিশুর অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহে বাধা দিতে পারে। এর ফলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে এবং সময়ের আগে প্রসব বা গর্ভপাতের মতো গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে।
- ডাক্তাররা গর্ভাবস্থায় কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেনঃ ঝুঁকি এড়ানোর জন্য এবং মায়ের ও সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ডাক্তাররা সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপে সম্পূর্ণভাবে পরিহার করার পরামর্শ দেন।
পাকা পেঁপে
- পাকা পেঁপেতে ক্ষতিকর উপাদান কম থাকেঃ পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্সের পরিমাণ কাঁচা পেঁপের তুলনায় অনেক কম থাকে। তাই এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
- অল্প পরিমাণে পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারেঃ যেহেতু পাকা পেঁপেতে ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ কম থাকে, তাই অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলারা অল্প পরিমাণে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। তবে তা অবশ্যই পরিমিত হতে হবে।
- তবে ঝুঁকি এড়াতে অনেক ডাক্তার প্রথম কয়েক মাস পাকা পেঁপেও না খাওয়ার পরামর্শ দেনঃ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে ভ্রূণের বিকাশ দ্রুত হয় এবং যেকোনো ঝুঁকি এড়ানো উচিত। তাই অনেক ডাক্তার এই সময় পাকা পেঁপেও না খাওয়ার পরামর্শ দেন।
- খেতে চাইলে সামান্য পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে, বেশি খাওয়া উচিত নাঃ যদি গর্ভবতী মহিলার পাকা পেঁপে খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে তিনি খুবই সামান্য পরিমাণে খেতে পারেন। তবে কোনোভাবেই বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত না।
- গর্ভাবস্থায় কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়াই ভালোঃ সব মিলিয়ে গর্ভাবস্থায় কাঁচা ও আধা-পাকা পেঁপে নিয়ে কোনো ঝুঁকি না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এটি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করাই মায়ের ও সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ।
আনারস
- গর্ভাবস্থায় আনারস সাবধানে খাওয়া উচিতঃ আনারস একটি সুস্বাদু ফল হলেও গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এর কিছু উপাদান গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- কারণঃ এতে ব্রোমেলিন নামক উপাদান থাকেঃ আনারসে ব্রোমেলিন (Bromelain) নামক একটি এনজাইম থাকে। এই এনজাইমটি প্রোটিন হজমে সাহায্য করে। তবে গর্ভাবস্থায় এটি জরায়ুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- ব্রোমেলিন মায়ের পেটের ভেতরের মুখ নরম করতে পারেঃ ব্রোমেলিন জরায়ুমুখকে (Cervix) নরম করে দিতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে প্রসবের জন্য জরায়ুমুখের নরম হওয়া প্রয়োজন হলেও, প্রথম দিকে এটি সময়ের আগে প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- এটি পেটের ভেতরের মাংসপেশি সংকুচিত করতে পারেঃ ব্রোমেলিন জরায়ুর মাংসপেশির সংকোচনও ঘটাতে পারে। এই সংকোচন গর্ভের শিশুর জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে এবং জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- পেটের ভেতরের মুখ নরম হলে বা সংকোচন শুরু হলে গর্ভের বাচ্চার বিপদ হতে পারেঃ জরায়ুমুখ সময়ের আগে নরম হয়ে গেলে বা জরায়ুর সংকোচন শুরু হলে গর্ভপাত বা সময়ের আগে প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যা গর্ভের শিশুর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
- গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণঃ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনের সময়। এই সময় ব্রোমেলিনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই প্রথম তিন মাস আনারস এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
পাকা আনারস
- পাকা আনারসে ব্রোমেলিনের পরিমাণ কাঁচা আনারসের তুলনায় কম থাকেঃ পাকা আনারসে ব্রোমেলিনের ঘনত্ব কাঁচা আনারসের তুলনায় কিছুটা কম থাকে। এই কারণে অনেকে মনে করেন পাকা আনারস তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর।
- অনেকে মনে করেন অল্প পরিমাণে পাকা আনারস খেলে তেমন সমস্যা হয় নাঃ ব্রোমেলিনের পরিমাণ কম থাকায় কেউ কেউ মনে করেন যে অল্প পরিমাণে পাকা আনারস খেলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং ঝুঁকি থেকেই যায়।
- তবে ঝুঁকি থাকায় অনেক ডাক্তার গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আনারস না খাওয়ার পরামর্শ দেনঃ যেহেতু পাকা আনারসেও কিছু পরিমাণে ব্রোমেলিন থাকে, তাই ঝুঁকি এড়াতে অনেক ডাক্তার গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে আনারস সম্পূর্ণভাবে পরিহার করার পরামর্শ দেন।
- খুব বেশি খেতে ইচ্ছে করলে খুবই অল্প পরিমাণে পাকা আনারস খাওয়া যেতে পারে, বেশি খাওয়া উচিত নাঃ যদি কোনো গর্ভবতী মহিলার আনারস খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে তিনি খুবই সামান্য পরিমাণে পাকা আনারস খেতে পারেন। তবে কোনো অবস্থাতেই বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত না।
- নিজের ও বাচ্চার ভালোর জন্য গর্ভাবস্থায় সাবধানে থাকা দরকারঃ গর্ভাবস্থা একটি স্পর্শকাতর সময়। মায়ের সামান্য ভুল পদক্ষেপও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই নিজের এবং সন্তানের সুস্থতার জন্য গর্ভাবস্থায় খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
আঙুর
- গর্ভাবস্থায় মেপে খাওয়া উচিতঃ আঙুর মিষ্টি এবং মুখরোচক ফল হলেও, গর্ভাবস্থায় এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
- বেশি পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারেঃ অতিরিক্ত আঙুর খেলে পেট ফাঁপা বা অন্য ধরনের হজমের অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
- অনেকের অ্যালার্জি থাকতে পারেঃ আঙুরে অ্যালার্জি থাকা অস্বাভাবিক নয়, এবং গর্ভাবস্থায় অ্যালার্জি হলে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- রেসভেরাট্রল হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারেঃ কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে আঙুরে থাকা রেসভেরাট্রল নামক উপাদান গর্ভবতী মায়ের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে।
- খুব বেশি না খাওয়াই ভালোঃ উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আঙুর পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে (যদি অ্যালার্জি ও হজমের সমস্যা না থাকে)ঃ যদি আগে থেকে আঙুরে কোনো অ্যালার্জি না থাকে এবং এটি সহজে হজম হয়, তবে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
- বেশি খেলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা চলছেঃ আঙুরের অতিরিক্ত consumption গর্ভের শিশুর উপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলমান। তাই সাবধান থাকা শ্রেয়।
- অল্প পরিমাণে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজঃ সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে গর্ভাবস্থায় সীমিত পরিমাণে আঙুর খাওয়াই বিচক্ষণতার পরিচয়।
- অস্বস্তি হলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিতঃ আঙুর খাওয়ার পর যদি কোনো ধরনের অস্বস্তি অনুভব হয়, যেমন পেট খারাপ বা অন্য কোনো লক্ষণ, তবে তাৎক্ষণিকভাবে এটি খাওয়া বন্ধ করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
তেঁতুল
- গর্ভাবস্থায় টক খাবারের আগ্রহ বাড়েঃ অনেক গর্ভবতী মহিলাই তেঁতুলের মতো টক খাবারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন।
- প্রচুর ভিটামিন সি থাকেঃ তেঁতুলে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেক বেশি।
- অতিরিক্ত ভিটামিন সি সমস্যা করতে পারেঃ যদিও ভিটামিন সি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে গর্ভাবস্থায় এর অতিরিক্ত গ্রহণ কিছু জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- অতিরিক্ত ভিটামিন সি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে (কিছু গবেষণা)ঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় অত্যাধিক ভিটামিন সি গ্রহণ করলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- খাওয়ার সময় খুব সাবধান থাকতে হবেঃ এই কারণে গর্ভবতী মহিলাদের তেঁতুল খাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।
- অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে (যদি অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে)ঃ যদি অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকে, তবে অল্প পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া যেতে পারে।
- প্রতিদিন বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নাঃ প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য উচিত নয়।
- অস্বাভাবিকতা महसूस হলে तुरंत বন্ধ করে ডাক্তারের সাথে কথা বলুনঃ তেঁতুল খাওয়ার পর যদি কোনো অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়, যেমন পেটে ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা, তাহলে অবিলম্বে তেঁতুল খাওয়া থামিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- যেকোনো খাবার পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালোঃ গর্ভাবস্থায় যেকোনো খাবারই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, এবং তেঁতুলের ক্ষেত্রে এই সতর্কতা আরও বেশি প্রযোজ্য।
খেজুর
- মিষ্টি ও পুষ্টিকর ফলঃ খেজুর একটি মিষ্টি এবং স্বাস্থ্যকর ফল যা অনেকেই পছন্দ করেন।
- গর্ভাবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিতঃ গর্ভবতী মহিলাদের খেজুর খাওয়ার সময় কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার।
- শরীরে তাপ উৎপন্ন করতে পারেঃ খেজুরের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি শরীরে তাপ বৃদ্ধি করতে পারে।
- অতিরিক্ত তাপমাত্রা গর্ভের শিশুর জন্য অস্বস্তিকরঃ গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যাওয়া গর্ভের শিশুর জন্য আরামদায়ক নয়।
- জরায়ুর সংকোচন শুরু করতে পারে (কিছু গবেষণা)ঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে খেজুর জরায়ুর সংকোচন শুরু করার সম্ভাবনা রাখে।
- শেষের দিকে প্রসবের সময় সহায়কঃ প্রসবের কাছাকাছি সময়ে খেজুর খাওয়া জরায়ুর মুখ খুলতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করা হয়।
- প্রথম দিকে পরিহার করাই ভালোঃ গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে খেজুর এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
- গর্ভপাতের ঝুঁকিতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ যাদের আগে গর্ভপাতের ইতিহাস আছে বা ঝুঁকি রয়েছে, তাদের খেজুর খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- শেষ কয়েক সপ্তাহে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারেঃ গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক সপ্তাহে, বিশেষ করে প্রসবের কাছাকাছি সময়ে, অল্প পরিমাণে খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
- অস্বাভাবিকতা महसूस হলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করুনঃ খেজুর খাওয়ার পর যদি কোনো অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়, তবে তা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
লিচু
- রসালো ও সুস্বাদু গ্রীষ্মকালীন ফলঃ লিচু একটি জনপ্রিয় এবং মিষ্টি গ্রীষ্মকালীন ফল।
- গর্ভাবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিতঃ গর্ভবতী মহিলাদের লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
- প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকেঃ লিচুতে প্রাকৃতিকভাবে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারেঃ গর্ভাবস্থায় বেশি লিচু খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়েঃ রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়ে।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা ও শিশুর জন্য জটিলঃ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মা এবং গর্ভের শিশুর উভয়ের জন্যই বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরিঃ লিচু খাওয়ার সময় অবশ্যই পরিমাণের উপর নজর রাখা উচিত।
- অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে (যদি ডায়াবেটিস না থাকে)ঃ যাদের ডায়াবেটিসের কোনো সমস্যা নেই, তারা অল্প পরিমাণে লিচু খেতে পারেন।
- একসাথে অনেকগুলো খাওয়া উচিত নাঃ একসাথে বেশি পরিমাণে লিচু খাওয়া উচিত নয়।
- অস্বস্তি হলে বা শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ লিচু খাওয়ার পর অস্বস্তি হলে বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
- মিষ্টি ফল পরিমিত পরিমাণে খানঃ গর্ভাবস্থায় যেকোনো মিষ্টি ফলই সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, এবং লিচুর ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি প্রযোজ্য।
হিমায়িত ও ক্যানজাত ফল
- সহজলভ্য ও তাজা ফলের বিকল্পঃ হিমায়িত এবং ক্যানজাত ফল সহজে পাওয়া যায় এবং অনেক সময় তাজা ফলের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়।
- গর্ভাবস্থায় সতর্ক থাকা উচিতঃ গর্ভাবস্থায় এই ধরনের ফল খাওয়ার সময় কিছু বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
- কৃত্রিম সংরক্ষক ও রাসায়নিক থাকতে পারেঃ হিমায়িত ও ক্যানজাত ফল সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম সংরক্ষক এবং রাসায়নিক ব্যবহার করা হতে পারে।
- রাসায়নিক উপাদান ক্ষতিকর হতে পারেঃ এই রাসায়নিক উপাদানগুলো গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সংরক্ষক অ্যালার্জির কারণ হতে পারেঃ কিছু কৃত্রিম সংরক্ষক অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্যানজাত ফলে অতিরিক্ত চিনি থাকেঃ ক্যানজাত ফলে প্রায়শই চিনি মেশানো থাকে।
- অতিরিক্ত চিনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
- হিমায়িত ফলে প্রক্রিয়াকরণের রাসায়নিক থাকতে পারেঃ হিমায়িত ফলে সরাসরি চিনি না থাকলেও প্রক্রিয়াকরণের সময় কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হতে পারে যা স্বাস্থ্যকর নয়।
- তাজা ও প্রাকৃতিক ফলই সবচেয়ে ভালোঃ গর্ভাবস্থায় তাজা এবং প্রাকৃতিক ফল খাওয়াই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।
- উপাদান ভালোভাবে দেখে নিশ্চিত হনঃ যদি হিমায়িত বা ক্যানজাত ফল খেতেই হয়, তবে প্যাকেজের উপাদানগুলো ভালোভাবে পড়ে নিশ্চিত হোন যে তাতে ক্ষতিকর কিছু মেশানো নেই এবং চিনির পরিমাণ কম।
পরিশেষে, গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে নিরাপদ হলো তাজা, মৌসুমী ফল খাওয়া। এগুলো প্রাকৃতিক এবং এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো থাকার সম্ভাবনা কম। ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিন। যদি হিমায়িত বা ক্যানজাত ফল খাওয়ার বিষয়ে কোনো দ্বিধা থাকে, তবে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
কেন এই ফলগুলো এড়ানো উচিত?
গর্ভাবস্থায় কিছু ফল এড়িয়ে যাওয়া উচিত, কারণ এগুলোতে থাকা কিছু উপাদান মায়ের শরীর ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যেমনঃ
- পেটের ভেতরের পেশি কুঁচকে যাওয়া ও বাচ্চা নষ্ট হওয়ার ভয়ঃ কাঁচা অথবা আধা পাকা পেঁপে এবং আনারসের মধ্যে এমন কিছু জিনিস থাকে যা মায়ের পেটের ভেতরের মাংসপেশিকে সংকুচিত করে ফেলতে পারে, মানে কুঁচকে দিতে পারে। পেটের ভেতরের পেশি যদি এমনভাবে কুঁচকে যায়, তাহলে গর্ভের বাচ্চার জন্য খুবই খারাপ হতে পারে। এমনকি এর কারণে বাচ্চা পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
- রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়াঃ আঙুর এবং লিচুর মতো মিষ্টি ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিনি বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় যদি বেশি পরিমাণে এই ফলগুলো খাওয়া হয়, তাহলে মায়ের রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। রক্তে চিনি বেড়ে গেলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- বদহজম অথবা শরীরে অ্যালার্জিঃ আঙুর খেলে অনেকের পেটে হজমের সমস্যা হতে পারে, যেমন গ্যাস বা পেট খারাপ লাগা। এছাড়াও, কারো কারো শরীরে আঙুরের কারণে অ্যালার্জির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই অনেক শারীরিক পরিবর্তন হয়, তার উপর যদি হজমের সমস্যা বা অ্যালার্জি হয়, তাহলে মা এবং বাচ্চা দুজনই খুব অস্বস্তিতে পড়তে পারে।
- ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের খারাপ প্রভাবঃ হিমায়িত (ফ্রিজে রাখা) এবং ক্যানজাত ফল অনেকদিন পর্যন্ত ভালো রাখার জন্য কিছু রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো গর্ভবতী মায়ের শরীর এবং পেটের ভেতরের ছোট্ট বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু রাসায়নিকের কারণে মায়ের শরীরে অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, ক্যানজাত ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত চিনি মেশানো থাকে, যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও উপায়ঃ বিস্তারিত আলোচনা
গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ সময়, যখন মায়ের সঠিক খাদ্যাভ্যাস গর্ভের শিশুর সুস্থ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফল প্রকৃতির এক অসাধারণ দান, যা ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই সময় ফল খাওয়া মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে কখন এবং কীভাবে ফল খাওয়া উচিত, তা জানা জরুরি। নিচে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
কোন সময়ে ফল খাওয়া সবচেয়ে ভালো?
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যা হজম এবং পুষ্টির সঠিক শোষণের জন্য সহায়ক হতে পারেঃ
- সকালের নাস্তার ঘন্টাখানেক পরঃ দিনের শুরুতে, যখন আপনার শরীর দীর্ঘ রাতের বিশ্রাম শেষে খাবারের জন্য প্রস্তুত হয়, তখন ফল খাওয়া একটি চমৎকার অভ্যাস। রাতের দীর্ঘ বিরতির পর আপনার পেট খালি থাকে এবং এই সময় ফল খেলে তা খুব সহজেই হজম হয়। ফলে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত আপনার শরীরে শক্তি যোগায় এবং দিনের কার্যক্রম শুরু করতে সাহায্য করে। তবে, নাস্তা করার অন্তত এক ঘণ্টা পর ফল খান, যাতে অন্যান্য খাবারের সাথে এর পুষ্টি উপাদান মিশে যেতে পারে।
- দুপুরের খাবারের প্রায় এক ঘন্টা আগে অথবা দুই ঘন্টা পরেঃ দুপুরের খাবারের আগে ফল খেলে তা আপনাকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ফলে থাকা ফাইবার পেট ভরা অনুভব করায়। অন্যদিকে, দুপুরের খাবারের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ফল খেলে তা হজমের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় এবং খাবারের অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা দেয় না।
- বিকেলের নাস্তা হিসেবেঃ বিকেলবেলা যখন হালকা ক্ষুধা লাগে এবং আপনি চা বা স্ন্যাকসের জন্য উৎসুক হন, তখন ফল একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। এটি চিনিযুক্ত বা ভাজা খাবারের পরিবর্তে আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। ফল আপনাকে সতেজ রাখতে এবং পরবর্তী খাবারের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
- দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময়েঃ সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার অথবা দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের মাঝে ফল খাওয়া একটি বুদ্ধিমানের কাজ। এই সময়ে ফল খেলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এটি আপনার হজম প্রক্রিয়াকেও সচল রাখতে সাহায্য করে।
- ঘুমের ঠিক আগে নয়ঃ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে ফল খাওয়া উচিত। ফলে থাকা প্রাকৃতিক চিনি আপনার শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতে পারে, যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়াও, রাতের বেলা হজম প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে ধীর থাকে, তাই ফল খেলে অ্যাসিডিটি বা বুক জ্বালার মতো সমস্যা হতে পারে, যা আপনার রাতের ঘুমকে নষ্ট করতে পারে।
খালি পেটে ফল খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?
খালি পেটে ফল খাওয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে, তবে সাধারণভাবে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিতঃ
- সকালে খালি পেটে ফল খাওয়াঃ অনেকের জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ফল খাওয়া উপকারী হতে পারে। দীর্ঘ রাত পেট খালি থাকার পর ফল খেলে এর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব দ্রুত এবং সরাসরি আপনার শরীরে শোষিত হতে পারে। এটি হজমতন্ত্রকে সচল করতেও সাহায্য করে।
- কিছু ক্ষেত্রে অস্বস্তিঃ তবে, কিছু গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে খালি পেটে ফল খাওয়া অস্বস্তিকর হতে পারে। যদি আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে বা আপনি টক জাতীয় ফল (যেমন লেবু, তেঁতুল) খালি পেটে খান, তাহলে বুক জ্বালা বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে। এছাড়াও, কিছু মিষ্টি ফল খালি পেটে খেলে কারো কারো বমি বমি ভাবও হতে পারে।
- নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করাঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খালি পেটে ফল খাওয়ার পর আপনার শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা লক্ষ্য করা। যদি কোনো অস্বস্তি महसूस হয়, তাহলে নাস্তার পরে বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খান। নিজের শরীরের সংকেত বোঝা এবং সেই অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ফলের সাথে অন্য খাবার খাওয়ার নিয়মঃ
ফলের পুষ্টিগুণ সঠিকভাবে পেতে এবং হজমের সুবিধা জন্য কিছু নিয়ম মেনে ফল খাওয়া উচিতঃ
- অন্য খাবারের কিছুক্ষণ আগে বা পরেঃ ফল সাধারণত অন্য ভারী খাবার (যেমন ভাত, রুটি, মাছ, মাংস) খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে অথবা দুই ঘণ্টা পরে খাওয়া উচিত। এর কারণ হলো, ফল দ্রুত হজম হয়। খাবারের সাথে মিশে গেলে বা ভারী খাবারের পরপরই খেলে তা হজমে বেশি সময় নিতে পারে এবং গ্যাস বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- দই বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে মিশিয়েঃ ফলকে দই, ওটমিল, সালাদ বা স্মুদির সাথে মিশিয়ে খাওয়া একটি চমৎকার উপায়। এতে খাবারের স্বাদ বাড়ে এবং আপনি ফলের পাশাপাশি দই বা অন্যান্য খাবারের পুষ্টিগুণও লাভ করেন। তবে খেয়াল রাখবেন, অতিরিক্ত চিনি মেশানো খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের সাথে ফল মেশানো উচিত নয়।
- খাবার হজমে সাহায্যকারী ফলঃ কিছু ফলে প্রাকৃতিক এনজাইম থাকে যা খাবার হজমে সাহায্য করে। যেমন, পাকা পেঁপে এবং আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা প্রোটিন হজমে সহায়ক। তাই ভারী খাবার খাওয়ার পর অল্প পরিমাণে পাকা পেঁপে বা আনারস খাওয়া যেতে পারে (তবে গর্ভাবস্থায় এই ফলগুলো খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে)।
- বিভিন্ন রঙের ও ধরনের ফলঃ প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন রঙের ও ধরনের ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রতিটি ফলের নিজস্ব বিশেষ পুষ্টিগুণ থাকে। বিভিন্ন রঙের ফল খেলে আপনি বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন, যা আপনার এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বঃ ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ফলের গায়ে লেগে থাকা ধুলো, ময়লা বা কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে তারপর ফল খান।
- পরিমিত পরিমাণে গ্রহণঃ যদিও ফল স্বাস্থ্যকর, তবে গর্ভাবস্থায় যেকোনো খাবারই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত ফল খাওয়াও স্বাস্থ্যকর নয়, কারণ এতে প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি থাকতে পারে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিনের ফলের পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং গর্ভের শিশুর বিকাশের কথা মাথায় রেখে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
ফল খাওয়ার পর যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়া সাধারণত খুবই উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে ফল খাওয়ার পর কিছু অপ্রত্যাশিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত সতর্ক হওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে এমন কিছু লক্ষণ আলোচনা করা হলোঃ
- অ্যালার্জি বা চুলকানিঃ ফল খাওয়ার পর যদি আপনার শরীরে কোনো ধরনের অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন চুলকানি, ত্বকে লালচে ভাব বা ফুসকুড়ি ওঠা, মুখ বা ঠোঁট ফুলে যাওয়া, অথবা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, তাহলে তা অবশ্যই অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের লক্ষণ। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে অ্যালার্জি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মা ও শিশু উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে ফল খাওয়া বন্ধ করুন এবং দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আগে কখনো কোনো ফলে অ্যালার্জি না থাকলেও, গর্ভাবস্থায় শরীরের সংবেদনশীলতা বাড়তে পারে এবং নতুন করে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
- পেট ব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়াঃ ফল খাওয়ার পর যদি আপনি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, পেট ফাঁপা বা গ্যাস হওয়ার সমস্যা বেড়ে যায়, অথবা ডায়রিয়া শুরু হয়, তাহলে বুঝতে হবে ফলটি আপনার হজম হচ্ছে না অথবা এতে কোনো সমস্যা আছে। কিছু ফল, যেমন বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত ফল অথবা অপরিষ্কার ফল খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। তবে, যদি এই লক্ষণগুলো তীব্র হয় বা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে তা অন্য কোনো সংক্রমণের লক্ষণও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা সাধারণ হলেও, তীব্র পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া ডিহাইড্রেশন এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- বমি বা অস্বস্তিঃ ফল খাওয়ার পর যদি আপনার বমি বমি ভাব লাগে বা বমি হয়, অথবা সাধারণ অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে হতে পারে ফলটি আপনার শরীরে সহ্য হচ্ছে না। গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব স্বাভাবিক হলেও, যদি কোনো নির্দিষ্ট ফল খাওয়ার পরেই এই সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেই ফলটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এছাড়াও, যদি ফলটি ভালোভাবে পাকা না থাকে বা তাতে কোনো জীবাণু থাকে, তাহলেও বমি বা অস্বস্তি হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ বারবার দেখা দিলে কারণ নির্ণয় এবং সঠিক পরামর্শের জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা লক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ফল একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও, যদি এটি খাওয়ার পর কোনো অপ্রত্যাশিত বা অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আপনার এবং আপনার গর্ভের শিশুর সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার