বেলস পালসি কি?
বেলস পালসি মুখের পেশির প্যারালাইসিস যার ফলে মুখ বেকিয়ে যায়। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে আসা ৭ নম্বর ক্রেনিয়াল নার্ভের নাম ফেসিয়াল নার্ভ, যা মুখের পেশির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এটি আংশিক অথবা পুরোপুরি ভাবে প্যারালাইজড হয়ে যায়, তখন মুখের ঐ অংশটাকে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস অথবা বেলস পালসি বলা হয়ে থাকে।
গবেষণায় দেখা যায় প্রতি ১লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৫-২০ জনের হয়ে থাকে। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের হতে পারে তবে মহিলাদের হওয়ার প্রবনতা বেশী।আর শীত কালে বেলস পালসি বেশী হয়।
বেলস পালসি কেন হয়?
এটি সাধারনত বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে তবে এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারন হলোঃ
ঠান্ডা বা আঘাতজনিত কারন, ভাইরাস সংক্রমন, মস্তিষ্কের স্ট্রোক, মুখে টিউমার, হেড ইঞ্জুরি, মুখে অস্ত্রোপচার এর পরবর্তী জটিলতায় ও হতে পারে।
কখন বুঝবেন আপনার বেলস পালসি হয়েছে?
আপনি বেশ মাথা ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ বুঝতে পারলেন আপনার মুখটা ভার ভার লাগছে। কুলি করার সময় মুখে পানি ধরে রাখতে পারছেন না। আয়নার সামনে গিয়ে দেখলেন- মুখের একদিকে বাঁকা হয়ে গেছে। তখন বঝবেন আপনার বেলস পালসি হয়েছে।
কী কী লক্ষন দেখা দেয় এই রোগের?
- আক্রান্ত রোগীর মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া
- আক্রান্ত চোখ বন্ধ না হওয়া এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া
- খাবার গিলতে ও কপাল ভাঁজ করতে কষ্ট হওয়া।
- মুখের একপাশ থেকে খাবার পড়ে যাওয়া
- মুখের পেশীর উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে মুখ ঝুলে পড়া
- তরল পদার্থ দ্বারা কুলি করতে গেলে পানি অন্য পাশে চলে যায়
- মুখের অভিব্যক্তি তৈরি করতে সমস্যা হওয়া
- দীর্ঘ সময় কথা বলতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি
বেলস পালসির ঝুঁকিতে কারা বেশি আছে?
গর্ভবতী মহিলা (বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময়), ডায়াবেটিস রোগী, ফুসফুসের সংক্রমণ আছে এমন ব্যক্তি, উচ্চ রক্তচাপ ভুগছেন এমন রোগী, অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তি, রোগটি পরিবারের কারো হয়েছিল এমন ব্যক্তি। শরীরে ভিটামিন-সি এর ঘাটতি থাকলে।
আরও দেখুনঃ বেলস পালসির চিকিৎসা বা ব্যায়াম
আরও পড়ুনঃ সেরিব্রাল পালসি-সিপি
বেলস পালসির ধাপ বা গ্রেট সমূহঃ
আমরা Bell’s palsy কে ৬ টি গ্রেটে বা ধাপে বিভক্ত করে থাকি। নিম্নে ধাপগুলি বর্ণনা করা হল।
গ্রেট ১ : সবকিছু নরমাল থাকবে।
গ্রেট ২ : এবার আক্রান্ত ব্যাক্তি তার ভ্রুর উপর নিচের মুভমেন্ট খুব ভালোভাবে করতে পারবে।
চোখ ভালোভাবে বন্ধ করতে পারবে এর জন্য অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হবে না তবে দুই চোখ জোর করে বন্ধ করে আঙুল দিয়ে জোর করে খুলতে চাইলে আক্রান্ত পাশের চোখ আগেই খুলে যাবে।
গ্রেট ৩ : এবার ভ্রুর মুভমেন্ট হাল্কা আসবে। চোখ পুরোপুরি বন্ধ হবে কিন্তু অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হবে। হাসার সময় আক্রান্ত ব্যাক্তি ভালোভাবেই হাসবে কিন্তু মনোযোগ দিয়ে দেখলে তার মুখ বেঁকে যাওয়া বুঝতে পারবেন। (Mild)
গ্রেট ৪ : ভ্রুর মুভমেন্ট হবে না।
চোখ বন্ধ হবে কিন্তু চোখের নিচে অল্প অংশ ফাঁকা থাকবে। এবার হাসতে পারবেন, কিন্তু হাসার সময় মুখ বেঁকে যাবে। (Moderate)
গ্রেট ৫ : এখানে সাধারণত আপনার চোখের ভ্রু মুভমেন্ট হবে না। চোখ হাল্কা বন্ধ হবে কিন্তু পুরোপুরি নয়, ঠোটে হাল্কা মুভমেন্ট আসবে।(Severe)
গ্রেট ৬ : আপনার আক্রান্ত পাশের ভ্রুর মুভমেন্ট ও চোখ বন্ধ হবে না। আপনি হাসতে পারবেন না বা আপনার হাসার সময় ঠোঁট প্রসারিত হবে না।( serious )
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
ধাপ ১, ২ এর রোগীরা কোন রকম চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে যাবেন । কিন্তু যারা ৩,৪,৫ এবং ৬ এ আছেন তাদেরকে অবশ্যই কনজার্ভেটিভ ট্রিটমেন্টের (ঔষধ) পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। প্রসঙ্গত, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে ২-৩ সপ্তাহে নিরাময় সম্ভব। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১-২ মাস সময় লাগতে পারে।
এক্ষেত্রে, অবশ্যই একজন বিপিটি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা এবং পরামর্শ নিতে হবে ।তিনি আপনার গ্রেট এবং রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট প্লান তৈরি করবেন এবং সে অনুযায়ী আপনার ফিজিওথেরাপি বা চিকিৎসা চলবে।
রোগীর কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে রোগীকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।
যেমন-
- ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে
- ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম ও ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করতে হবে।
- বাইরে বা রোদে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে যেন আক্রান্ত চোখে ময়লা না ঢুকতে পারে।
- রাতে ঘুমানোর সময় আক্রান্ত চোখের ওপর নরম কাপড় বা রুমাল দিয়ে রাখতে হবে যাতে কোনোকিছু চোখের মধ্যে না পড়ে।
- ফিজিওথেরাপিষ্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যয়াম করতে হবে।
সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ
[sc_fs_multi_faq headline-0=”h3″ question-0=”বেলস পালসি কোন বয়সে হয়?” answer-0=”এটি সাধারণত ১৫-৬০ বছর বয়সী যেকোনো মানুষের হতে পারে। তবে মহিলাদের হওয়ার প্রবনতা বেশী।” image-0=”” headline-1=”h3″ question-1=”বেলস পালসি হলে কোন ডাক্তার দেখাবো?” answer-1=”আপনার বেলস পালসি হলে অবশ্যই একজন নিউরোলজিষ্ট ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরনাপর্ণ হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।” image-1=”” headline-2=”h3″ question-2=”বেলস পালসি রোগের ব্যায়াম?” answer-2=”আপনাকে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিষ্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে।” image-2=”” count=”3″ html=”true” css_class=””]
লিখেছেন-
ডাঃ আরাফাত হোসেন, পিটি
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
ভিশন ফিজিওথেরাপী সেন্টার, উত্তরা শাখা