অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কি, কেন হয়, কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

Table of Contents

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কি?

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস (Avascular Necrosis) এমন একটি সমস্যা যেখানে আপনার হাড়ের টিস্যুতে রক্ত চলাচল কমে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত ছাড়া হাড়ের টিস্যু বাঁচতে পারে না, তাই ধীরে ধীরে সেগুলো মরে যেতে শুরু করে। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এটি এমন একটি অবস্থা যা সময়মতো চিকিৎসা না করালে হাড়ের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এই রোগটি অস্টিওনেক্রোসিস (Osteonecrosis) নামেও পরিচিত। এই নামটি চিকিৎসকদের মধ্যে বেশি প্রচলিত এবং এটি অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসেরই আরেকটি প্রতিশব্দ।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস শরীরের বিভিন্ন হাড়ে হতে পারে, তবে সাধারণত লম্বা হাড়ের শেষ অংশগুলোতে এটি বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় নিতম্বের জয়েন্ট (হিপ জয়েন্ট), যা আপনার কোমর ও পায়ের সংযোগস্থলে থাকে। এছাড়া, হাঁটু, কাঁধ, হাতের হিউমেরাস (বাহুর উপরের হাড়), গোড়ালি এবং চোয়ালের হাড়েও এই সমস্যা হতে পারে। এই স্থানগুলোতে রক্ত সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় এটি নেক্রোসিসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কেন ও কী কারণে হয়

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস কেন ও কী কারণে হয়?

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের মূল কারণ হলো হাড়ে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়া বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া। আমাদের হাড়ের টিস্যু বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন। যখন রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, তখন হাড়ের কোষগুলো অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাবে মারা যেতে শুরু করে, যার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ কারণসমূহ

কিছু নির্দিষ্ট কারণ বা পরিস্থিতি অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলোকে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখি:

আঘাত (ট্রমা)

হাড় বা জয়েন্টে আঘাত অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের একটি সাধারণ কারণ। যখন হাড় ভেঙে যায়, বিশেষ করে জয়েন্টের কাছাকাছি, তখন সেই অঞ্চলের রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একইভাবে, যদি কোনো জয়েন্ট স্থানচ্যুত হয় (যেমন হিপ ডিসলোকেশন), তাহলে রক্তনালীগুলো ছিঁড়ে যেতে পারে বা চাপ খেয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের আঘাতের কারণে হাড়ের রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

স্টেরয়েড বা কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার

বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড (যেমন প্রেডনিসোলন বা কর্টিসোন) দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। স্টেরয়েড কীভাবে এই সমস্যা তৈরি করে তা পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও, ধারণা করা হয় যে এটি রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে বা রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন

দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মদপান অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের একটি পরিচিত ঝুঁকি। অ্যালকোহল শরীরের রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা রক্তনালীগুলোতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি হাড়ের রক্ত সরবরাহকে প্রভাবিত করে এবং হাড়ের টিস্যুগুলোর মৃত্যু ঘটাতে পারে।

রক্তের রোগ

কিছু রক্তের রোগ অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। সিকেল সেল অ্যানিমিয়া এমন একটি অবস্থা যেখানে লোহিত রক্তকণিকাগুলো অস্বাভাবিক আকৃতির হয় এবং ছোট রক্তনালীগুলোকে ব্লক করে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। লিউকেমিয়া, গাউচার রোগ এবং রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাগুলোও রক্ত প্রবাহকে ব্যাহত করে হাড়ের ক্ষতি করতে পারে।

অটোইমিউন ও অন্যান্য রোগ

বিভিন্ন অটোইমিউন রোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থাও অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের কারণ হতে পারে। সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমেটোসাস (লুপাস), হাইপারলিপিডেমিয়া (রক্তে উচ্চ চর্বি), ডায়াবেটিস এবং প্যানক্রিয়াটাইটিস (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ) হলো এর কয়েকটি উদাহরণ। এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে, সম্ভবত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং ব্যবহৃত কিছু ওষুধের কারণে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতিও অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। রেডিয়েশন থেরাপি বা বিকিরণ চিকিৎসা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার সময় সুস্থ টিস্যুর রক্তনালীগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একইভাবে, কেমোথেরাপি এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন (বিশেষ করে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর ব্যবহৃত ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধের কারণে) অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

জীবনধারা ও পেশা

কিছু নির্দিষ্ট জীবনধারা এবং পেশাগত কারণেও এই রোগ হতে পারে। ডুবুরি এবং খনি শ্রমিকদের মতো পেশায় যারা উচ্চ চাপের পরিবেশে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে শরীরের রক্তনালীতে বায়ু বুদবুদ তৈরি হতে পারে। এই বুদবুদগুলো রক্তনালীকে ব্লক করে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়, যা ডিকম্প্রেশন সিকনেস নামে পরিচিত এবং এটি অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের একটি পরিচিত কারণ।

এই কারণগুলো একটি বা একাধিক সমন্বিতভাবে অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদি আপনার इनमें থেকে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কারণ থাকে, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিত।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের লক্ষণ ও উপসর্গ

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের লক্ষণ ও উপসর্গ

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে সেগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

প্রাথমিক লক্ষণ

প্রথম দিকে অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো জয়েন্টে ব্যথা, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই ব্যথা শুরুতে হালকা থাকতে পারে এবং কেবল নড়াচড়ার সময় অনুভূত হতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি আরও তীব্র হয় এবং অবিরাম ব্যথা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

  • কুঁচকি, ঊরু, নিতম্বে ব্যথা: যদি নিতম্বের জয়েন্ট (হিপ জয়েন্ট) আক্রান্ত হয়, তাহলে ব্যথা শুধুমাত্র হিপেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং কুঁচকির অংশে (গ্রোইন), ঊরুর সামনের দিকে (থাই), এমনকি হাঁটুর দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্যান্য জয়েন্টে (যেমন কাঁধ, হাঁটু) হলে ব্যথা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে।

অগ্রসর অবস্থায় লক্ষণ

রোগ যখন আরও অগ্রসর হয় এবং হাড়ের আরও ক্ষতি হয়, তখন লক্ষণগুলো আরও গুরুতর এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে শুরু করে:

  • হাঁটাচলা বা ওজন বহন করলে ব্যথা বেড়ে যাওয়াঃ আক্রান্ত জয়েন্টের ওপর শরীরের ওজন পড়লে বা হাঁটাচলা করলে ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। সিঁড়ি ভাঙা, দৌড়ানো বা এমনকি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটি দৈনন্দিন কার্যক্রম যেমন বাজার করা বা কাজ করার ক্ষমতাকে সীমিত করে দেয়।
  • বিশ্রামে বা রাতে ব্যথা অনুভব করাঃ রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে, ব্যথা কেবল নড়াচড়ার সময়ই নয়, এমনকি বিশ্রামরত অবস্থায় বা রাতে ঘুমানোর সময়ও অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিতে পারে।
  • জয়েন্ট শক্ত বা অবশ মনে হওয়া: আক্রান্ত জয়েন্টটি শক্ত বা অনড় মনে হতে পারে, যার ফলে জয়েন্টের নড়াচড়ার পরিধি (range of motion) কমে যায়। জয়েন্টকে নড়াচড়া করাতে কষ্ট হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে অবশ ভাবও অনুভূত হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর এই শক্ত ভাব বেশি অনুভূত হতে পারে।
  • ক্রস পায়ে বসতে বা স্কোয়াট করতে অসুবিধা: যদি হিপ জয়েন্ট আক্রান্ত হয়, তাহলে ক্রস পায়ে বসা (যেমন পদ্মাসনে বসা) বা স্কোয়াট করা (গোড়ালি ভেঙে বসা) অনেক কষ্টকর বা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এটি হিপ জয়েন্টের নমনীয়তা হারানোর একটি স্পষ্ট লক্ষণ।
  • আক্রান্ত পা বা হাত ছোট হয়ে যাওয়া: খুব গুরুতর অবস্থায়, হাড়ের ব্যাপক ক্ষতির কারণে আক্রান্ত পা বা হাত তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে যেতে পারে। এটি হাড়ের গঠনগত পরিবর্তনের চূড়ান্ত পরিণতি এবং এর ফলে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
  • লিম্পিং বা খোঁড়া হাঁটা: ব্যথার কারণে এবং জয়েন্টের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি লিম্পিং বা খোঁড়া হয়ে হাঁটতে শুরু করেন। এটি শরীরের ওজন বহন করার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে।

যদি আপনার এই ধরনের কোনো লক্ষণ থাকে, তবে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করা গেলে হাড়ের বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। আপনার চিকিৎসক বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা এবং ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমে এই রোগ শনাক্ত করতে পারেন।

শারীরিক পরীক্ষা

প্রাথমিকভাবে, আপনার চিকিৎসক একটি শারীরিক পরীক্ষা করবেন। এই পরীক্ষায় তারা আক্রান্ত জয়েন্টটি পরীক্ষা করে দেখবেন। এর মধ্যে রয়েছে:

  • জয়েন্টের কোমলতা (Tenderness): জয়েন্টের আশেপাশে হাত দিয়ে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব হচ্ছে কিনা, তা পরীক্ষা করা হবে। যদি জয়েন্ট স্পর্শকাতর হয় বা চাপ দিলে ব্যথা হয়, তাহলে এটি প্রদাহ বা ক্ষতির লক্ষণ হতে পারে।
  • নড়াচড়া (Range of Motion): চিকিৎসক জয়েন্টের নড়াচড়ার ক্ষমতা পরীক্ষা করবেন। এটি কতটুকু বাঁকানো বা ঘোরানো যায়, তা দেখে জয়েন্টের সীমাবদ্ধতা বোঝা যাবে। যদি জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায় বা নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়, তবে এটি অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের একটি লক্ষণ হতে পারে।
  • ব্যথার মূল্যায়ন: কোন অবস্থানে বা কোন নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়ে বা কমে, তা বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করা হবে। যেমন, হাঁটার সময়, ওজন বহন করার সময়, বা রাতে বিশ্রামের সময় ব্যথা কেমন থাকে, এসব তথ্য রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।

ইমেজিং টেস্ট

শারীরিক পরীক্ষার পর, অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস নিশ্চিত করতে এবং রোগের তীব্রতা বোঝার জন্য বিভিন্ন ইমেজিং টেস্ট করা হয়।

  • এক্স-রে (X-ray): এক্স-রে হলো হাড়ের ছবি তোলার একটি সাধারণ পদ্ধতি। এই পরীক্ষায় হাড়ের গঠনে কোনো পরিবর্তন, যেমন হাড়ের ক্ষয় বা ভেঙে যাওয়া দেখা যায়। তবে, অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের প্রাথমিক পর্যায়ে এক্স-রেতে তেমন কোনো পরিবর্তন নাও দেখা যেতে পারে, কারণ হাড়ের ক্ষয় শুরু হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। তাই, প্রাথমিক নির্ণয়ের জন্য এটি সবসময় যথেষ্ট নয়।
  • এমআরআই (MRI – Magnetic Resonance Imaging): অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস নির্ণয়ে এমআরআই হলো সবচেয়ে কার্যকর পরীক্ষা। এক্স-রেতে পরিবর্তন আসার আগেই এমআরআই-এর মাধ্যমে হাড়ের মজ্জার (bone marrow) পরিবর্তন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে হাড়ের রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হওয়া শনাক্ত করা যায়। এটি হাড়ের ভেতরের টিস্যুর বিস্তারিত ছবি দেখায় এবং রোগের সঠিক অবস্থা নির্ণয়ে সাহায্য করে। তাই, চিকিৎসকরা প্রায়শই এমআরআই-কেই অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিক ইমেজিং পরীক্ষা হিসেবে ব্যবহার করেন।

রক্ত পরীক্ষা

যদিও রক্ত পরীক্ষা সরাসরি অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস নির্ণয় করে না, তবে এটি রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।

  • রক্ত পরীক্ষা করে রক্তের রোগ যেমন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, লিউকেমিয়া বা রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সমস্যা আছে কিনা, তা দেখা হয়।
  • এছাড়াও, অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণ যেমন উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা অটোইমিউন রোগ (যেমন লুপাস) আছে কিনা, তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। এসব তথ্য অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের কারণ সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়ক হয়।

এই সব পরীক্ষার ফলাফল একসাথে বিশ্লেষণ করে চিকিৎসক অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস নির্ণয় করেন এবং আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করেন।

বিশেষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও প্রতিকার

এই রোগের বিশেষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও প্রতিকার

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে বা অস্ত্রোপচারের পর। ফিজিওথেরাপির মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা কমানো, জয়েন্টের কার্যকারিতা বজায় রাখা এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর অবস্থা বুঝে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করেন। নিচে এর বিভিন্ন দিক বিস্তারিতভাবে সহজ ভাষায় আলোচনা করা হলো:

ফিজিওথেরাপির প্রাথমিক লক্ষ্যসমূহ

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির কয়েকটি প্রধান লক্ষ্য থাকে:

  • ব্যথা নিয়ন্ত্রণ: ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টের ব্যথা কমানো।
  • জয়েন্টের নমনীয়তা ও গতিশীলতা বজায় রাখা: জয়েন্টকে শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচানো এবং এর স্বাভাবিক নড়াচড়ার ক্ষমতা ধরে রাখা।
  • পেশী শক্তি বাড়ানো: জয়েন্টের চারপাশের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা।
  • ওজন বহন নিয়ন্ত্রণ: ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়া রোধ করা, যাতে হাড়ের আরও ক্ষতি না হয়।
  • দৈনন্দিন কাজকর্মে স্বাবলম্বী করা: রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সাহায্য করা।

বিশেষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:

ব্যথা ব্যবস্থাপনা (Pain Management)

  • তাপ বা ঠান্ডা সেঁক (Heat or Cold Packs): ব্যথার তীব্রতা এবং ফোলা কমানোর জন্য আক্রান্ত স্থানে তাপ বা ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করা হয়। তাপ রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, আর ঠান্ডা ফোলা ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  • ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন (TENS): এটি একটি ছোট যন্ত্র, যা ত্বকের উপর দিয়ে মৃদু বৈদ্যুতিক প্রবাহ পাঠায়। এই প্রবাহ ব্যথার সংকেতকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধা দেয়, ফলে ব্যথা কমে। এটি সাধারণত ব্যথার জন্য একটি অস্থায়ী সমাধান।

জয়েন্টের নড়াচড়ার ব্যায়াম (Range of Motion – ROM Exercises)

  • প্যাসিভ মোবিলাইজেশন (Passive Mobilization): ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর জয়েন্টকে আলতোভাবে বিভিন্ন দিকে ঘোরান বা বাঁকান। রোগী নিজে কোনো শক্তি প্রয়োগ করেন না। এর মাধ্যমে জয়েন্টের নমনীয়তা বজায় থাকে এবং শক্ত হয়ে যাওয়া রোধ হয়। এটি রক্ত সরবরাহ বাড়াতেও সাহায্য করে।
  • অ্যাক্টিভ অ্যাসিস্টেড বা অ্যাক্টিভ ব্যায়াম (Active Assisted or Active Exercises): যখন রোগী কিছুটা শক্তি ফিরে পান, তখন তাকে ফিজিওথেরাপিস্টের সহায়তায় বা নিজে নিজেই জয়েন্ট ঘোরানোর বা বাঁকানোর ব্যায়াম করতে শেখানো হয়। এগুলো জয়েন্টের গতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়াম (Strengthening Exercises)

  • আইসোমেট্রিক ব্যায়াম (Isometric Exercises): এগুলো এমন ব্যায়াম যেখানে পেশী সংকুচিত হয় কিন্তু জয়েন্টের নড়াচড়া হয় না। যেমন, পেশী শক্ত করা এবং ধরে রাখা। এটি জয়েন্টের উপর চাপ না ফেলেই পেশী শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রগ্রেসিভ রেসিস্টেন্স ব্যায়াম (Progressive Resistance Exercises): যখন রোগী সুস্থ হতে শুরু করেন এবং জয়েন্টের অবস্থা ভালো হয়, তখন ধীরে ধীরে রেসিস্টেন্স (যেমন হালকা ওজন বা রেসিস্টেন্স ব্যান্ড) ব্যবহার করে পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়াম করানো হয়। এতে জয়েন্টের চারপাশের পেশী আরও শক্তিশালী হয়, যা জয়েন্টকে সুরক্ষা দেয়। হিপ জয়েন্টের ক্ষেত্রে কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিং এবং গ্লুটিয়াল পেশীগুলো শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ।

ওজন বহন নিয়ন্ত্রণ এবং সহায়তা (Weight-Bearing Control and Aids)

  • হাঁটার সরঞ্জাম ব্যবহার: রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে বা যখন হাড় দুর্বল থাকে, তখন জয়েন্টের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্য ক্রাচ (Crutches), ওয়াকার (Walker) বা হুইলচেয়ার (Wheelchair) ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হাড়কে সুস্থ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেয় এবং আরও ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচায়। ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীকে সঠিকভাবে এই সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করার কৌশল শেখান।
  • আংশিক ওজন বহন (Partial Weight-Bearing): কিছু ক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ ওজন বহন না করে আংশিক ওজন বহন করে হাঁটার কৌশল শেখানো হয়, যাতে জয়েন্টের উপর চাপ কম পড়ে।

কার্যকরী প্রশিক্ষণ (Functional Training)

  • হাঁটাচলার প্রশিক্ষণ (Gait Training): ব্যথার কারণে বা জয়েন্টের দুর্বলতার জন্য রোগীর হাঁটার ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্ট সঠিক উপায়ে হাঁটার কৌশল শেখান, যাতে জয়েন্টের উপর চাপ কম পড়ে এবং ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • ভারসাম্য ব্যায়াম (Balance Exercises): আক্রান্ত জয়েন্টের কারণে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। ভারসাম্য ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীর স্থিতিশীলতা এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমানো হয়।
  • দৈনন্দিন কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ (Activities of Daily Living – ADL Training): দৈনন্দিন কাজ যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা, বসা-উঠা, পোশাক পরা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল শেখানো হয়, যা জয়েন্টের উপর চাপ কমিয়ে দেয় এবং স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।

অন্যান্য বিশেষ পদ্ধতি

  • হাইড্রোথেরাপি (Hydrotherapy): পানিতে ব্যায়াম করাকে হাইড্রোথেরাপি বলে। উষ্ণ পানিতে ব্যায়াম করলে পেশী শিথিল হয় এবং ব্যথা কমে। এছাড়াও, পানির উচ্ছ্বাস (buoyancy) শরীরের ওজনকে কমিয়ে দেয়, যার ফলে জয়েন্টের উপর চাপ না পড়েই ব্যায়াম করা সম্ভব হয়। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং জয়েন্টের নমনীয়তা উন্নত করতে খুব কার্যকর।
  • ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন (Electrical Stimulation): কিছু ক্ষেত্রে, হাড়ের নতুন কোষ তৈরি এবং রক্তনালী বৃদ্ধির জন্য বৈদ্যুতিক স্টিমুলেশন ব্যবহার করা হয়। এটি হাড়ের সুস্থতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
  • জয়েন্ট সুরক্ষা কৌশল (Joint Protection Techniques): ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীকে শেখান কীভাবে দৈনন্দিন কাজ করার সময় জয়েন্টকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। যেমন, ভারী জিনিস তোলার সঠিক পদ্ধতি, দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে না থাকা, এবং ব্যথা বাড়লে বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা রোগীর রোগের পর্যায়, আক্রান্ত জয়েন্ট এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া হতে পারে এবং রোগীর নিয়মিত ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশ মেনে চলা খুবই জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে, ফিজিওথেরাপি অস্ত্রোপচারের বিকল্প হিসেবে বা অস্ত্রোপচারের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাজ করে।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস প্রতিরোধের উপায়

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস একটি গুরুতর অবস্থা, তবে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। মূলত, যেসব কারণে এই রোগ হয়, সেগুলোকে এড়িয়ে চলাই হলো প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এড়ানো

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ সরাসরি দায়ী। এগুলো এড়িয়ে চলতে পারলে রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে:

  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এড়ানো: অতিরিক্ত মদপান রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তনালীতে জমাট বাঁধার ঝুঁকি তৈরি করে, যা হাড়ে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত করে। তাই, মদপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিমিত করা বা সম্পূর্ণ ত্যাগ করা অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
  • স্টেরয়েড বা কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার এড়ানো: স্টেরয়েড জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হতে পারে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী বা উচ্চ মাত্রার ব্যবহার অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যদি আপনার স্টেরয়েড ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে এর সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করুন এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় মাত্রায় ও সময়ের জন্য ব্যবহার করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই নিজে নিজে স্টেরয়েড গ্রহণ করা উচিত নয়।

আঘাত থেকে সতর্কতা

হাড় বা জয়েন্টে গুরুতর আঘাত অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের একটি বড় কারণ। তাই আঘাত থেকে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি:

  • খেলাধুলা বা কাজের সময় সতর্কতা অবলম্বন: খেলাধুলা বা যেসব পেশায় আঘাত লাগার ঝুঁকি বেশি, সেখানে যথাযথ সুরক্ষা সরঞ্জাম (যেমন হেলমেট, প্যাড) ব্যবহার করা উচিত। ভারী কাজ করার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম নেওয়াও জরুরি, যাতে হাড় বা জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
  • হাড় ভাঙা বা জয়েন্ট স্থানচ্যুতির দ্রুত চিকিৎসা: যদি কোনো কারণে হাড় ভেঙে যায় বা জয়েন্ট স্থানচ্যুত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা রক্তনালীর ক্ষতি কমাতেও সাহায্য করে।

অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণ

কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই রোগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি কমানো যায়:

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা রক্ত প্রবাহকে প্রভাবিত করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে রক্তনালীর ক্ষতি কমানো যায় এবং অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকিও কমে।
  • রক্তের রোগ নিয়ন্ত্রণ: সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, লিউকেমিয়া বা রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এই রোগগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা রক্ত প্রবাহের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • অটোইমিউন রোগ নিয়ন্ত্রণ: লুপাসের মতো অটোইমিউন রোগগুলো রক্তনালী এবং টিস্যুর প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত ফলো-আপ অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য অপরিহার্য।
  • উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা রক্তনালীতে চর্বি জমতে সাহায্য করে, যা রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে ওষুধের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

সচেতনতা এবং সঠিক জীবনযাপন অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। যদি আপনার এই রোগের কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কারণ থাকে, তাহলে নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

উপসংহার

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিস, যা অস্টিওনেক্রোসিস নামেও পরিচিত, হাড়ের একটি গুরুতর সমস্যা। এই রোগে হাড়ের টিস্যুতে রক্ত চলাচল কমে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে হাড়ের কোষগুলো মারা যায় এবং ধীরে ধীরে হাড় ভেঙে যায়। মূলত, শরীরের যেকোনো হাড়েই এটি হতে পারে, তবে নিতম্ব (হিপ), হাঁটু এবং কাঁধের মতো বড় জয়েন্টগুলোর হাড়ে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়।

এই রোগের প্রধান কারণ হলো হাড়ে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হওয়া, যা বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। যেমন: হাড়ে আঘাত লাগা, দীর্ঘদিন ধরে বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, কিছু নির্দিষ্ট রক্তের রোগ (যেমন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া), এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা (যেমন ডায়াবেটিস বা লুপাস)। এর প্রধান লক্ষণ হলো আক্রান্ত জয়েন্টে ব্যথা, যা সময়ের সাথে বাড়ে এবং নড়াচড়ায় তীব্র হয়। জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, নড়াচড়ায় অসুবিধা এবং খুঁড়িয়ে হাঁটাও এই রোগের সাধারণ লক্ষণ।

অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের চিকিৎসা রোগের পর্যায় এবং তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে ওষুধ, ফিজিওথেরাপি (যা ব্যথা কমাতে, জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়াতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে), এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্রোপচার (যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হাড় অপসারণ বা সম্পূর্ণ জয়েন্ট প্রতিস্থাপন) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি। যেমন, অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও স্টেরয়েড পরিহার করা, আঘাত থেকে সতর্ক থাকা এবং ডায়াবেটিস বা অন্যান্য গুরুতর রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে অ্যাভাসকুলার নেক্রোসিসের জটিলতা কমানো সম্ভব এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

 

আমাদের কাছে পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 115

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *