পারকিনসন রোগ কি? পারকিনসন রোগের লক্ষণ কি এবং কেন হয়? এর লক্ষণ ও বিশেষ চিকিৎসা কি?

Table of Contents

নিউরো রিহ্যাবিলিটেশনের ক্ষেত্রে পারকিনসন রোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নিউরোলজিকাল সমস্যাটি প্রথম আবিষ্কার করেন জেমস পারকিনসন, যার নামেই এই রোগটির নামকরণ করা হয়েছে। পারকিনসন রোগ একটি সাধারণ ধরনের চলাচলজনিত সমস্যা, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চলাফেরা, ভারসাম্য রক্ষা এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ করতে কষ্ট অনুভব করেন। নিউরো রিহ্যাবিলিটেশনের মাধ্যমে এই রোগের লক্ষণগুলোকে কিছুটা হলেও কমাতে এবং রোগীর জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও রোগীর খাবার সম্পর্কে জানতে আমদের এই পোস্টটি পড়ুন

পারকিনসন রোগ কি

পারকিনসন রোগ কি?

পারকিনসন রোগ হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী মস্তিষ্কের অসুখ যা মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ, ডোপামিনের অভাবের কারণে হয়। ডোপামিন আমাদের শরীরের চলাচল, ভারসাম্য এবং মনে রাখার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই রোগে, মস্তিষ্কের বেসাল গ্যাংলিয়া নামক অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যহত হয়। এর ফলেই চলাফেরা, ভারসাম্য রক্ষা এবং মনে রাখার ক্ষমতা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।

পারকিনসন রোগের লক্ষণগুলি সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ হতে থাকে। এই রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল কাঁপুনি, ধীর গতি, শরীর জড় হয়ে যাওয়া, ভারসাম্য হারানো এবং মুখের অভিব্যক্তি কমে যাওয়া। এই রোগের কারণ এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি, তবে বয়স, পরিবারের ইতিহাস এবং কিছু পরিবেশগত কারণ এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকায় প্রায় ৯০,০০০ মানুষ পারকিনসন রোগে আক্রান্ত। ভবিষ্যতে তা দেড় লাখেও ছড়াতেও পারে। এই রোগটি সাধারণত ষাট বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। পুরুষ ও মহিলা উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যাদের পরিবারে পারকিনসন রোগের ইতিহাস আছে, তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দশ শতাংশ বেশি থাকে।

আমাদের দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে উন্নতমানের সেবা পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।পারকিনসন রোগ কেন হয়?

পারকিনসন রোগ কেন হয়?

পারকিনসন রোগ একটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ যা মূলত মস্তিষ্কের ডোপামিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতির কারণে হয়। ডোপামিন মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাজে, বিশেষ করে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডোপামিনের উৎপাদন কমতে থাকে এবং এটিই পারকিনসন রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ডোপামিন সাপ্লিমেন্ট দিয়ে রোগীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব হলেও রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে এই ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

পারকিনসন রোগের সঠিক কারণ এখনও অবধি পুরোপুরি জানা যায়নি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই রোগটি জিনগত ও পরিবেশগত বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে হতে পারে। জিনগত কারণের মধ্যে রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট জিনের মিউটেশন যা ডোপামিন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। পরিবেশগত কারণের মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা, মাথায় আঘাত ইত্যাদি। মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক প্রোটিনের জমা হওয়াও পারকিনসন রোগের সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়।

বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত পারকিনসন রোগের কিছু সম্ভাব্য কারণ শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জিনগত পরিবর্তন, অর্থাৎ জিনের কোনো ত্রুটির কারণে এই রোগ হতে পারে। আবার, কিছু পরিবেশগত কারণ যেমন কিছু বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা, মাথায় আঘাত ইত্যাদিও এই রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। এছাড়াও, শরীরে অস্বাভাবিক প্রোটিনের উপস্থিতি এবং আলফা-সিনুক্লিইন নামক এক ধরনের প্রোটিনের অস্বাভাবিক কার্যকলাপও পারকিনসন রোগের সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়।

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন

পারকিনসন রোগ কাদের বেশি হয়

পারকিনসন রোগ কাদের বেশি হয়?

পারকিনসন রোগ সাধারণত ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। পরিবারে যদি কারো এই রোগ থাকে, তাহলে অন্য সদস্যদেরও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসেন, যেমন কীটনাশক বা আগাছানাশক, তাদের মধ্যেও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হল, পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সঠিকভাবে বলতে গেলে-

  • বয়সঃ মাঝ বয়সের পরে এই রোগ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সাধারণত 60 বা তার বেশি বয়সের কাছাকাছি।
  • বংশগতিঃ পরিবারের কারোর যদি এই রোগ থাকে, তাহলে রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
  • যৌনতাঃ পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
  • বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শেঃ আগাছানাশক এবং কীটনাশকের দীর্ঘদিন ধরে সংস্পর্শে থাকলে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

হার্ট অ্যাটাক, এর লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি দেখুন

পারকিনসন রোগের লক্ষণ

পারকিনসন রোগের লক্ষণ

পার্কিনসন রোগ সাধারণত বুড়ো আঙুল ও তর্জনীতে হালকা কম্পন দিয়ে শুরু হয়, যাকে অনেকে “পিল-রোলিং” বলে। এই রোগ ধীরে ধীরে বাড়তে দেখা যায় এবং দশ থেকে বিশ বছরের মধ্যে আরো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। উন্নত পর্যায়ে রোগীরা মুখের অভিব্যক্তি হারাতে পারে, খাবার গিলতে সমস্যা হয়, গভীর বিষণ্ণতা, ডিমেনশিয়া এবং এমনকি পক্ষাঘাতের মতো সমস্যাও হতে পারে।

পারকিনসন রোগ হয়েছে এটা কিভাবে বুঝবো? কিছু কিছু লক্ষণ দেখলে বুঝা যায় যে এটা পারকিনসন রোগ। যেমনঃ

পার্কিনসন রোগের শুরুতে হাত কাঁপা, ধীর গতি এবং ভারসাম্যহীনতার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। রোগী নিজে হাত কাঁপা অনুভব না করলেও পরিবারের সদস্যরা তা লক্ষ্য করতে পারেন। দৈনন্দিন কাজ যেমন উঠে বসা, হাঁটাচলা বা অন্যান্য কাজগুলো ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অনেকেই পেছনের দিকে টাল খেয়ে পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন।

এছাড়া, এই রোগ মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে, যেমন বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং এমনকি ভ্রান্ত ধারণা (হ্যালুসিনেশন)। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে হাতের লেখার পরিবর্তন এবং কণ্ঠস্বরের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া এদের মধ্যে অন্যতম। এই রোগের নির্ণয়ের জন্য সাধারণত রক্ত পরীক্ষা বা স্ক্যানের পরিবর্তে, একজন নিউরোলজিস্টের ক্লিনিকাল মূল্যায়ন করা হয়।

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন

পারকিনসন রোগের প্রতিকার ও ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব

পারকিনসন রোগের প্রতিকার ও ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব

পারকিনসন রোগের চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিজিওথেরাপি রোগীর শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং দৈনন্দিন কাজগুলো স্বাধীনভাবে করতে সাহায্য করে। পারকিনসন রোগের লক্ষণগুলো যেমন কাঁপুনি, ধীর গতি, শক্ততা এবং ভারসাম্যহীনতা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে অনেকটা কমানো সম্ভব।

ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করেন। ফিজিওথেরাপি শুধুমাত্র শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও রোগীকে শক্তিশালী করে। এটি রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করে।

যদিও এই রোগের জন্য এখনো কোন নির্দিষ্ট নিরাময় নেই, তবে ফিজিওথেরাপি এই রোগের লক্ষণগুলোকে অনেকটাই কমাতে এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। যেমন-

  • পেশী শক্তি এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করেঃ পারকিনসন রোগে পেশী দুর্বল এবং অনমনীয় হয়ে পড়ে। ফিজিওথেরাপি এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশী শক্তি বাড়ানো হয় এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করা হয়।
  • ভারসাম্য এবং সমন্বয় বজায় রাখেঃ পারকিনসন রোগে ভারসাম্য এবং সমন্বয়ের সমস্যা দেখা দেয়। ফিজিওথেরাপিস্টরা বিভিন্ন ধরনের ভারসাম্য ব্যায়াম এবং অন্যান্য কৌশলের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করেন। ফলে রোগীরা নিজেদের আরো নিরাপদ বোধ করতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজগুলো স্বাধীনভাবে করতে পারে।
  • দৈনন্দিন কাজ সহজভাবে সম্পাদনে সহায়তা করেঃ ফিজিওথেরাপিস্টরা দৈনন্দিন কাজগুলো যেমন হাঁটা, খাওয়া এবং কাপড় পরা, কঠিন হতে পারে এমন রোগীদেরকে বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে সাহায্য করেন।
  • গতি এবং চলনশক্তি বাড়ায় পারকিনসন রোগে গতি কমে যায় এবং চলন কঠিন হয়ে পড়ে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
  • ব্যথা ও যন্ত্রণা কমায়ঃ পারকিনসন রোগের সাথে সাথে অনেক রোগী ব্যথা অনুভব করেন। ফিজিওথেরাপি সেবা এই ব্যথা ও যন্ত্রণা কমানোতে সাহায্য করে।

সায়াটিকা কেন হয়, সারানোর উপায় জানতে এখানে ক্লিক করুন

পারকিনসন রোগে ফিজিওথেরাপির কিছু সাধারণ কৌশল

পারকিনসন রোগে ফিজিওথেরাপির কিছু সাধারণ কৌশল

পারকিনসন রোগের লক্ষণগুলো কমাতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফিজিওথেরাপিস্টরা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে রোগীদের সাহায্য করেন।

  • ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম পেশী শক্তি বাড়াতে, নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে এবং ভারসাম্য উন্নত করতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম নির্ধারণ করেন।
  • পেশী দীর্ঘায়ন: পারকিনসন রোগে পেশী অনমনীয় হয়ে পড়ে। পেশী দীর্ঘায়ন ব্যায়াম এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের সঠিকভাবে পেশী দীর্ঘায়ন করতে শিখিয়ে থাকেন।
  • ভারসাম্য প্রশিক্ষণ: ভারসাম্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোগীদের ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ভারসাম্য ব্যায়াম এবং অন্যান্য কৌশলের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
  • দৈনন্দিন কাজের প্রশিক্ষণ: ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের দৈনন্দিন কাজ যেমন হাঁটা, খাওয়া, কাপড় পরা ইত্যাদি আরও সহজে করার জন্য বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে থাকেন।
  • গতি এবং চলন বাড়ানো: পারকিনসন রোগে গতি কমে যায় এবং চলন কঠিন হয়ে পড়ে। ফিজিওথেরাপি এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
  • বেদনা কমানো: পারকিনসন রোগের সাথে সাথে অনেক রোগী বেদনা অনুভব করেন। ফিজিওথেরাপি এই বেদনা কমানোতে সাহায্য করে।

উত্তরা এবং বনানী শাখায় ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে সেরা মানের চিকিৎসা পেতে আজই আপনার এপয়েন্টমেন্ট টি কনফার্ম করুন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।পারকিনসন রোগের ব্যায়াম এবং চিকিৎসা

পারকিনসন রোগের ব্যায়াম এবং চিকিৎসা

সাধারণত পারকিনসনের জন্য যেই চিকিৎসা দেয়া হয় সেটা হচ্ছে প্রধানত মেডিকেশন পদ্ধতি। কিন্তু এর জন্য আমাদের দরকার হচ্ছে একটা সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন অর্থাৎ পারকিনসন রোগীদের জন্য একটা সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম যা একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করবে। শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে এই রোগ কে ভালো করা সম্ভব নয়, কারণ ওষুধ সারা জীবন খেতে হয় আর একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে এই ওষুধ ভালোমতো কাজ করে না। একটা সময় গিয়ে আগের লক্ষণগুলো আবার ফিরে আসে। এইজন্যই ওষুধের পাশাপাশি রেগুলার একটি থেরাপি প্রোগ্রাম বা মেডিকেশান অর্থাৎ একটি সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম এর প্রয়োজন পড়ে।

তাই, একজন পারকিনসন রোগীর জন্য প্রয়োজন একজন দক্ষ কোয়ালিফাইড রিহ্যাবিলিটেশন ফিজিশিয়ান, যিনি সেই পেশেন্টকে সবসময় দেখবেন, দেখে ডায়াগনোসিস করবেন এবং ডায়াগনোসিস করার পরে রোগীর জন্য একটা সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম প্ল্যান করবেন। সেই প্ল্যানের ভিতর  থাকবে- পেশেন্টের কি কি দরকার, কি কি মেডিকেশন দরকার, তার কি ধরনের ব্যায়াম করা প্রয়োজন, তার কি ধরনের এসিস্টিভ ডিভাইস দরকার অর্থাৎ হাঁটার ক্ষেত্রে কোন ধরনের ওয়াকার দরকার হয় কিনা, পড়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে কিভাবে রক্ষা করতে পারি তার জন্য ব্যালেন্স ট্রেনিং, গেট ট্রেনিং করানো ইত্যাদি।

যেহেতু পারকিনসন রোগটি মস্তিষ্কের সমস্যা নিয়ে একটি রোগ তাই এই রোগের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হলো আরটিএমএস(রিপিটেটিভ ট্রান্সক্যানিয়াল ম্যাগনেটিক থেরাপি) থেরাপি। এই থেরাপির মাধ্যমে মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই থেরাপির মাধ্যমে ডিপ্রেশন, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মূলত এই সব কিছু নিয়েই একটা সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম সব পারকিনসন রোগীর ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জরুরী।

দ্রুত মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে এই পোস্ট থেকে ধারণা নিয়ে নিন

পারকিনসন রোগীর খাবার

পারকিনসন রোগীর খাবার 

পারকিনসন রোগীদের জন্য সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা খুবই জরুরি। একজন পুষ্টিবিদ আপনার জন্য ব্যক্তিগতকৃত একটি খাদ্যতালিকা তৈরি করতে পারবেন যা আপনার শারীরিক অবস্থা ও চাহিদার উপযোগী হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে আপনি এই রোগের লক্ষণগুলোকে আরও ভালভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, শস্যদানা, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।

পারকিনসন রোগীদের খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন টুনা, স্যামন, ফ্ল্যাক্সসিড, ওয়ালনাট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ডিপ্রেশন কমাতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি যেমন আম, আনারস, পিয়ারস, ফিগ, আঙ্গুর, গাজর, বিটরুট, বাধাকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন বিভিন্ন ধরনের বাদাম, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, ওটস, কিনোয়া, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি খাওয়া উচিত। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে যা পারকিনসন রোগীদের একটি সাধারণ সমস্যা। মস্তিষ্কের ডোপামিনের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্রাজিল নাটস, পিকান নাটস, আলমন্ড, সিসেমী সিড, চিকপিস, লেন্টিল ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও দুধ, চিজ, ব্রকলি, পালং শাক ইত্যাদি খেলে হাড়ের শক্তি বাড়তে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাও খুবই জরুরি।

পারকিনসন রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং বিভিন্ন শারীরিক কাজে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতেও পানি পান সাহায্য করে।

ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টারে সেরা মানের চিকিৎসা পেতে আজই আপনার এপয়েন্টমেন্ট টি নিয়ে নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

একটি সুষম খাদ্যতালিকার সুবিধা

একটি সুষম খাদ্যতালিকা পারকিনসন রোগীদের জন্য কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত করতে সাহায্য করে। একটি সুষম খাদ্যতালিকা রোগের লক্ষণ যেমন কাঁপুনি, ধীর গতি এবং ভারসাম্যহীনতা কমাতে পারে। এছাড়াও, পুষ্টিকর খাবার শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ডিপ্রেশন এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সামগ্রিকভাবে, একটি সুষম খাদ্যতালিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করে।

 

লিখেছেন,

ডাঃ সৌরভ রহমান, পিটি
বিপিটি (ঢাবি)
এমডিএমআর, ফেলো (এসএসটি)
ব্যথা, পক্ষাঘাত, খেলাধূলার আঘাত ও
পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ
ইনচার্জ ও সিনিয়র ফিজিওথেরাপিস্ট

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

 

তথ্যসূত্র

BBC- পারকিনসন্স: বাংলাদেশে এই রোগের বিস্তার কতটা? এর লক্ষণ ও প্রতিকার কী? – BBC News বাংলা

Britannica- পারকিনসন রোগ | সংজ্ঞা, কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা | ব্রিটানিকা

Science Daily- গবেষকরা পারকিনসন রোগের একটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

পারকিনসন্স রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, এটা সত্য। তবে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দীর্ঘকাল স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। ডায়াবেটিসের মতো, পারকিনসন্স রোগীদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হতে পারে এবং কিছু জীবনযাপনের পরিবর্তন আনতে হতে পারে।

বর্তমানে, পারকিনসন রোগের কোন প্রতিকার নেই। চিকিত্সা লক্ষণগুলি পরিচালনা এবং জীবনের মান উন্নত করার উপর খেয়াল রাখতে হবে।

পারকিনসন্স একটি প্রগতিশীল রোগ, যার অর্থ সময়ের সাথে সাথে লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয়। যাইহোক, অগ্রগতির হার ব্যক্তিদের মধ্যে পরিবর্তিত হয়।

হ্যাঁ, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, এবং শারীরিক থেরাপি পারকিনসন্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গতিশীলতা এবং সামগ্রিক সুস্থতার উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।

আলঝেইমার এবং পারকিনসন, উভয়ই মস্তিষ্কের নিউরন ক্ষয় হওয়ার কারণে হয়, তবে এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হল লক্ষণ। আলঝেইমারে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ভাষা সমস্যা এবং বিভ্রান্তি প্রধান লক্ষণ। অন্যদিকে, পারকিনসনে কাঁপুনি, ধীর গতি, ভারসাম্যহীনতা এবং শরীর নড়াচড়ায় কঠিনতা দেখা যায়। আলঝেইমারে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস এবং কর্টেক্স অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর পারকিনসনে সাবস্টানশিয়া নিগ্রা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও উভয় রোগের জন্যই এখনো কোন নির্দিষ্ট নিরাময় নেই, তবে ওষুধ ও থেরাপির মাধ্যমে লক্ষণগুলোকে কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করা যায়।

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 74