হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার কি কি?

হার্ট অ্যাটাকের পর সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা হৃদরোগীর পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের রোগীর খাদ্য তালিকায় ফল, শাকসবজি, পুরো শস্য, মাছ এবং চিকন মাংস থাকতে হবে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল বাড়ানোর কারণে লবণ, চিনি, শক্তিজাতীয় চর্বি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে হার্ট অ্যাটাক রোগীরা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন। আমরা আমাদের আগের পোস্টে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পোস্টে আমরা হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ, লক্ষ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে আমাদের এই পোস্টটি বিস্তারিত পড়ে নিন।

হার্ট অ্যাটাকের বিশেষ চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার  মধ্যে বেলুন অ্যানজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি অন্যতম জনপ্রিয়  চিকিৎসা পদ্ধতি।  অ্যানজিওপ্লাস্টি এমন এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে হার্টের রক্তনালিতে জমা প্লাকগুলো ভাঙতে একটি বেলুন এবং স্টেন্ট ব্যবহার করা হয়। তবে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা নির্ভর করে সাধারণত কোন ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তার উপর।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো দেখা দিলে  অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তারপর হার্ট অ্যাটাক আসলে হয়েছে কিনা? তা জানার জন্য ইসিজি, ইকো, রক্ত পরীক্ষা, হার্টের এমআরআই পরীক্ষা করতে হবে। এরপর নিশ্চিত হতে হবে কোন টাইপের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে? হার্টের ব্লকগুলোর উপর ভিত্তি করে হার্ট অ্যাটাক তিন প্রকার –

১) এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (STEMI)
২) নন-এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (NSTEMI)
৩) করোনারি স্পাজম অথবা আনস্টেবল অ্যানজাইনা

এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (STEMI)
হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে মারাত্মক প্রকার হল এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (STEMI)। কারণ এই হার্ট অ্যাটাকে হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি ধমনী সম্পূর্ণরূপে ব্লক হয়ে যায়। যার ফলে হার্টের বড় একটি অংশ রক্ত সরবরাহ পায় না এবং অকেজো হয়ে পড়ে। “এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন” বলতে হার্টের ইলেকট্রিক সিগন্যালের পরিবর্তনকে বুঝায়। যা সাধারণত ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের মাধ্যমে জানা যায়।

নন-এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (NSTEMI)
নন-এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (NSTEMI) বলতে বোঝায়, যেখানে ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামে এসটি সেগমেন্টের উচ্চতার কোন পরিবর্তন দেখায় না এবং হার্টের করোনারি ধমনী আংশিক বা অস্থায়ী ব্লকেজ হয়। যার ফলে হার্টের মাংসপেশির তেমন ক্ষতি হয় না। তবে এ ধরনের হার্ট অ্যাটাক জানার জন্য রক্তের ট্রপোনিন পরীক্ষা করা হয়। কারণ হার্টের পেশি ক্ষতিগ্রস্থ হলে হার্ট থেকে ট্রপোনিন ক্ষরিত হয়।

অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা সেরা মানের ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

পিসিআই (প্রাইমারি পারকিউটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেনশন)
পিসিআই হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি।  কারণ ইমারজেন্সি অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। পিসিআই করার পূর্বে করোনারি অ্যানজিওগ্রাফি করে এটা নিশ্চিত হতে হবে যে, রোগী পিসিআই এর জন্য উপযুক্ত কিনা? যদি উপযুক্ত হয় তাহলে এ পদ্ধতির মাধ্যমে  ব্লক বা সরু হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনী প্রসারিত করতে হবে।

হার্টের রক্তনালী করোনারি ধমনীতে আরও রক্ত জমাট বা প্লাক গঠন যাতে না হয়, সেই জন্য রক্ত পাতলা মসৃণ করার ড্রাগস ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন অল্প ডোজে অ্যাসপিরিন ড্রাগস। পিসিআই করার পরেও অল্প কিছুদিন এই ঔষধগুলো চালিয়ে যেতে হয়।

করোনারি অ্যানজিওপ্লাস্টি
করোনারি অ্যানজিওপ্লাস্টি হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় খুবই জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। যদিও এ পদ্ধতি সম্পাদনের জন্য অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের সকল হাসপাতলে এ ধরনের অবস্থা নাই। তবে বিশেষ করে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট,  শাহবাগে বিএসএমএমইউ ( আগের পিজি হাসপাতাল) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি), মিরপুরে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশনে এ বিশেষ ধরনের সেবা চালু রয়েছে।

করোনারি অ্যানজিওপ্লাস্টিতে একটি ছোট নল বাহু বা কুঁচকির ভিতরে অবস্থিত রক্তনালীতে প্রবেশ করানো হয়। এই নলের মাথায় ছোট আঙুলের মত বেলুন ক্যাথেটার ব্যবহৃত হয়। আর এ ক্যাথেটারকে এক্সরের সহায়তায় বাইরে থেকে দেখে করোনারি ধমনী পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। ক্যাথেটার হার্টের করোনারি ধমনীর ব্লকের জায়গায় পৌঁছালে বেলুন ফোলানো হয়। যার ফলে ব্লকটি খুলে যায়।আবার যাতে এই জায়গায় ব্লক না হতে পারে, সে জন্য স্টেন্ট বা ধাতব মেশ ব্যবহার করা হয়। আর এ প্রক্রিয়াকে ‘রিং পরানো’ বলা হয়।

করোনারি স্পাজম অথবা আনস্টেবল অ্যানজাইনা

করোনারি স্পাজম অথবা আনস্টেবল অ্যানজাইনা
করোনারি স্পাজম বা অস্থির অ্যানজাইনা বলতে, যেখানে করোনারি ধমনীগুলো শক্ত ও সরু হয়ে যায়। যার ফলে হার্টের পেশিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। আর এ ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়। এ ধরনের হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় ক্যালসিয়াম ও নাইট্রেট চ্যানেল ব্লকার ব্যবহৃত হয়। এসটিই এমআই হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা সিস্টেম  অপর দুই প্রকার হার্ট অ্যাটাক থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর কোন ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং কত অল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে তার উপর।

  • রোগী যদি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয় তাহলে পিসিআই ( প্রাইমারি পারকিউটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেনশন) সিস্টেমে চিকিৎসা শুরু করতে হয়।
  • আর রোগী ১২ ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছালো ঠিকই কিন্তু ওইখানে পিসিআই সিস্টেমের ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে, সেইক্ষেত্রে রক্তনালীর ব্লক ভাঙার জন্য বিভিন্ন থ্রম্বোলাইটিক ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • আর যদি লক্ষন প্রকাশিত হওয়ার ১২ ঘন্টা পর হাসপাতালে আসে, সেইক্ষেত্রে একটু আলাদা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। যাতে রোগীর সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়। এক্ষেত্রে রোগীর হার্টের রক্তনালী করোনারি ধমনীগুলোর অ্যানজিওগ্রাম অথবা করোনারি অ্যানজিওগ্রাফি নামক টেস্ট করা হয়। এ টেস্ট দেখে সাধারণত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়। আর তা হতে পারে ঔষধ, পিসিআই বা বাইপাস সার্জারি।
  • রোগী যদি পিসিআই সিস্টেমের জন্য নির্বাচিত না হয়, সেই ক্ষেত্রে অ্যান্টপ্লাটিলেট ড্রাগস (যেমনঃ অ্যাসপিরিন, টিকাগ্রেরল, সিলোস্টাজল ও ক্লপিডগরেল) খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

শকওয়েভ থেরাপি ফিজিওথেরাপিতে ঠিক কিভাবে কাজ করে তা জানতে আমাদের বিস্তারিত পোস্টটি পড়ে নিন।

করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট (সিএবিজি)
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি নামে এটি বেশি পরিচিত। এটি এক ধরনের সার্জিক্যাল প্রক্রিয়ার নাম। যেখানে দেহের বিভিন্ন অংশের রক্তনালী ( যেমন: বাহু, পা, বুক) নিয়ে এসে হার্টের করোনারি ধমনীর যে অংশের মধ্যে ব্লক বা সংকুচিত  হয়েছে তার পাশ দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে হার্টের যে মাংসপেশি পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পেত না, তা ভালোভাবে রক্ত সরবরাহ পায়।

এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত হার্টের করোনারি ধমনীর বিভিন্ন অংশে ব্লক বা সংকুচিত থাকলে করা হয়। নতুন ভাবে সংযুক্ত হওয়া রক্তনালীকে গ্রাফট বলা হয়। এ গ্রাফটি হার্টের সংকুচিত বা ব্লক হওয়া হয়ে যাওয়া অংশের বিকল্প পথে রক্ত সরবরাহ করে। যার ফলে হার্ট পর্যাপ্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পায়। হার্টের মাংসপেশি শক্তিশালী হয়।

ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা
করোনারি ধমনীর মধ্যে যাতে রক্ত জমাট বাঁধতে না পারে সেইজন্য অ্যান্টিপ্লাটিলেট ও অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এ ঔষধগুলো ট্যাবলেট আকারে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যেগুলো রক্তনালীতে গিয়ে রক্তপ্রবাহকে মসৃণ করে। যার ফলে রক্ত জমাট বাধার সম্ভাবনা কমে যায়। তবে ঔষধগুলো অবশ্যই  চিকিৎসক এর পরামর্শে খেতে  হবে। অন্যথায় মারত্মক প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

জমাট রক্ত ভাঙতে ঔষধ 
ফাইব্রিন প্রোটিন জাল তৈরি করার মাধ্যমে রক্ত জমাট বাঁধায়। হার্টের করোনারি ধমনীর মধ্যে যাতে রক্ত জমাট বাঁধতে না পারে সেজন্য ঔষধ হিসেবে থ্রম্বোলাইটিক বা ফাইব্রোলাইটিক ব্যবহার করা হয়। এ ঔষধগুলো সাধারণত ইনজেকশন আকারে দেওয়া হয়। এই ঔষধগুলো ফ্রাইবিন জালকে ভেঙে দেয়। যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।

যেসব রোগীর ভবিষ্যতে পনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের ফাইব্রোলাইটিক বা থ্রম্বোলাইটিক ঔষধের পাশাপাশি ‘গ্লাইকোপ্রোটিন ২বি/৩বি ইনহিবিটর’ দেওয়া যেতে পারে। এ ঔষধটি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় না। বরং, রক্ত জমাট বাধার চলমান প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে। যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। আর এটি হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলোকে খারাপের দিকে যাওয়া থেকে রোধ করে।

নন-এসটিই এমআই ও আনস্টেবল অ্যানজাইনার চিকিৎসা 
ইলেট্রেকার্ডিওগ্রাম ( ইসিজি) করে নন-এসটিই এমআই বা আনস্টেবল অ্যানজাইনার জন্য রক্ত পাতলা মসৃণ করার ঔষধ (যেমন: লো-ডোজ অ্যাসপিরিন)  ব্যবহৃত হয়। তবে রোগী বিশেষ করোনারি অ্যানজিওপ্লাস্টি বা করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি করা হয়।

হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা ফিজিওথেরাপির যেকোনো সমস্যায় সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন এবং এই +8801932-797229 নম্বরে যোগাযোগ করুন।

হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার

হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার

হার্টকে সুস্থ রাখতে কমলা, বাদাম, বেরি, মাশরুম, টক  দই, বীজ জাতীয় খাবার, ওটমিল প্রভৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবারের পাশাপাশি যদি দেহের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমবে। হার্টকে সুস্থ রাখতে যে সকল খাবার খাবেন তা হলো-

সবুজ শাক-সবজি
পালং শাক ও লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। আর এ উপাদানগুলো রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে ও রক্তনালিকে সুরক্ষা প্রদান করে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, সবুজ শাক সবজি হার্টের বিভিন্ন রোগব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

রসুন
হার্টকে সুস্থ রাখতে রসুন খুবই উপকারী।  রসুনকে নিয়মিত তরকারিতে ব্যবহার করে খেলে হার্ট সতেজ থাকে। এছাড়াও কেউ যদি রসুনকে ছোট ছোট করে গরম পানিতে দুই  মিনিট ফুটিয়ে খায়,  তাহলে হার্ট সুস্থ থাকে।

কমলা
কমলায় পটাসিয়াম পাওয়া যায়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কমলায় ‘পেকটিন’ জাতীয় আঁশ পাওয়া যায়। যা দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একটি মধ্যম আকৃতির কমলায় প্রায় বাষট্টি গ্রাম ক্যালরি থাকে। তাই প্রতিদিন কমলা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

বাদাম
বাদাম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, আখরোট, হেজেলনাট পাওয়া যায়। এ বাদামগুলোতে ভিটামিন, প্রোটিন, আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ লবণ পাওয়া যায়। আর বিশেষ করে আখরোটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে থাকে।

বেরি
নিয়মিত বেরি ফল খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়। কারণ এই ফলে প্রচুর অ্যান্টঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। বাজারে বিভিন্ন রকমের বেরি পাওয়া যায়। যেমন: রাস্পবেরি, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি এবং ব্লাকবেরি।  এগুলো হার্টকে সতেজ রাখার পাশাপাশি প্রদাহ মুক্ত এবং মানসিক চাপ থেকে রক্ষা করে।

ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে সতেজ রাখে। যা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে থাকে।

মাশরুম
মাশরুম খুবই পুষ্টকর সবজি। যার মধ্যে রয়েছে প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তা হার্ট অ্যাটাক কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোমর ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সম্পর্কে পূর্ণ বর্ণনা জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

হার্ট অ্যাটাকের রোগীর জন্য টক দই

টকদই
টক দইয়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোবায়োটিক এবং ল্যাক্টোব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। যেগুলো হার্টকে সতেজ রাখার পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করে। দেহের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য টক দই খুবই উপকারী।

বীজ জাতীয় খাবার
চিয়া সিডস, শণ বীজে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা মস্তিষ্কের উন্নতি ও দেহের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে আনে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

ওটমিল
ওটমিলে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে আর প্রোটিন এবং ভোজ্য আঁশ বেশি থাকে। আর এটা লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন ( এলডিএল) নামীয়  খারাপ কোলেস্টরল কমিয়ে থাকে। যার ফলে রক্তনালীতে প্লাক গঠিত হতে পারে না। তাই ওটমিল খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

গ্রীন টি
গ্রীন টি রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে ধমনীতে রক্ত জমাট বাধতে পারে না। এছাড়াও এটি দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

সামুদ্রিক মাছ
রূপসা, লাক্ষা, কোরাল, রূপচাঁদা  প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। যা হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও বিদেশি কিছু সামুদ্রিক মাছ( যেমন: টুনা, স্যামন, ম্যাকারেল, সারডিন, হেরিং ইত্যাদি) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

টকজাতীয় ফল
টকজাতীয় ফলে (যেমন: লেবু, কমলালেবু, আঙুর, জাম্বুরা ইত্যাদি) প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড ও  ভিটামিন সি থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে।

ঢেড়শ ও বেগুন
ঢেড়শ ও বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে।  এগুলো নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।

অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল।  এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  দেহের মধ্যে থাকা অধিক মাত্রার কোলেস্টেরল কমাতে এটি খুবই কার্যকরী। এছাড়াও ডায়াবেটিস কমাতে এ ফলের অবদান ব্যাপক। এটি হার্টের প্রায় যে কোন রোগ কমাতে সক্ষম।

সায়াটিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

হার্ট অ্যাটাক রোগীর জন্য ব্যায়াম

হার্ট অ্যাটাক রোগীর জন্য ব্যায়াম ও এর প্রয়োজনীয়তা

হার্ট অ্যাটাক রোগীর ব্যায়াম সাধারণত ৬ সপ্তাহ পর থেকে শুরু করতে হয়। এ রোগীর চিকিৎসা হিসেবে যদি অ্যানজিওপ্লাস্টি করা হয় সেই ক্ষেত্রে প্রথম ১-২ সপ্তাহ ভারী জিনিস উঠানো, সাইকেল চালানো, অন্য কোন  ব্যায়াম করতে নিষধ করা হয়। যখন অ্যানজিওপ্লাস্টির পরে করোনারি ধমনী খুলে যায় ও হার্ট ঠিকমত কাজ করতে শুরু করে তখন ব্যায়াম করা যায়। তবে তা অবশ্যই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে করতে হবে।

আর যদি হার্ট অ্যাটাক রোগীর চিকিৎসা হিসেবে বাইপাস সার্জারি করা হয় সেইক্ষেত্রে এক-দেড়মাস পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর পরামর্শে ব্যায়াম শুরু করা যায়। যেমন: ঘরের সামনে হাঁটাহাঁটি করা, অল্প সিঁড়ি ওঠানামা করা, ঘরের মধ্যে হালকা নড়াচড়া করা, বাইরে একটু বের হওয়া। আস্তে আস্তে অফিস ওয়ার্ক, সকালের এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। তবে তা রুটিন করে করতে হবে। যেমন:

  • প্রথম সপ্তাহে ১৫ মিনিট করে নিয়মিত হাঁটলেন।
  • দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২০ মিনিট করে হাঁটলেন।
  • তৃতীয় সপ্তাহে ২৫ মিনিট করে হাঁটলেন।
  • চতুর্থ সপ্তাহ থেকে ৩০ মিনিট করে হাঁটলেন।

এভাবে ব্যায়ামের পরিমাণ আস্তে আস্তে বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও হার্ট ঠিকমত পাম্প করলে সাঁতার, জিম, ট্রেকিংও করা যেতে পারে। তবে হার্ট অ্যাটাক রোগীর ট্রেডমিল পরীক্ষা করে অবস্থা যাচাই করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ব্যায়াম করার অনুমতি দিয়ে থাকেন।

টেনিস এলবো সম্পর্কে বা এর চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

তবে সাধারণত এক-দেড় মাস পরে ব্যায়ামের অনুমতি দেওয়া হয়। হার্ট অ্যাটাক রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সাধারণত অ্যারোবিক এক্সারসাইজ এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন:

  • নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা।
  • সাঁতার কাটার অভ্যাস গড়ে তুলা।
  • জগিং বা বাইকিং করা।

হার্ট অ্যাটাক রোগী যদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর পরামর্শক্রমে ব্যায়াম শুরু করে, তাহলে তার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সময় কম লাগবে। অন্যথায় হার্টের পাশাপাশি দেহের অন্যান্য অংশের জটিলতা বেড়ে যাবে। তাই হার্ট অ্যাটাকের রোগীর ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ নিয়ে এক্সারসাইজ করা উচিত।

তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ব্যায়াম বন্ধ রাখতে হবে। যথা:

  • অনিয়মিত হার্ট বীট হলে;
  • প্রচন্ড মাথা ব্যথা করলে;
  • গলা ব্যথা হলে;
  • অস্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট হলে;
  • বুকে অস্বাভাবিক ব্যথা হলে;

অতএব ব্যায়াম নিজে নিজে না করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর সাজেশন নিয়ে করতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে।

টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে আপনার কি কি করা উচিত বা এর উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্ট এর ভূমিকা

হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্ট এর ভূমিকা

হার্ট অ্যাটাকের পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সাধারণত ব্রিদিং এক্সারসাইজ, অ্যারোবিক এক্সারসাইজ,  ব্যালেন্স ট্রেইনিং এক্সারসাইজ,  কাউন্সেলিং করে থাকেন। যার ভবিষ্যতে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

হার্ট অ্যাটাকের পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করলে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম উন্নত হয় এবং রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক শুধু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজই করান না, বরং এর সাথে পুষ্টি এবং মানসিক অবস্থা দেখে অন্যান্য রোগব্যাধি যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করেন।

ড. লিনডসে এন্ডারসন ২৮৯০ জন রোগীর উপর গবেষণা চালিয়ে বাইপাস সার্জারির পরবর্তী পুর্নবাসন চিকিৎসা (কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন) এর গুরুত্বের কথা বর্ণনা করেছেন। যেখানে একজন রোগী সপ্তাহে দুইটি সেশনে পঁয়তাল্লিশ মিনিট করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতি সেশনে প্রথম ১০ মিনিট মাংসপেশির স্ট্রেচিং এবং ট্রেডমিল এক্সারসাইজ,  পরে ১৫ মিনিট জোরে জোরে হেঁটেছেন, তারপর ১৫ মিনিট আস্তে আস্তে জগিং করেছেন। তারপর ৩-৫ বার কুল ডাউন করে জোরে নাক দিয়ে নি:শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে তিন মাস ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

হার্ট অ্যাটাকের পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১) এক্সারসাইজ কাউন্সেলিং এবং ট্রেইনিং।
২) রিস্ক ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা।
৩) মানসিক চাপ কমানো।

ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা নিয়ে কোনো কিছু জানতে এই পোস্ট থেকে জেনে নিন।

হার্ট অ্যাটাকের পরে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায় এবং কোয়ালিটি লাইফ পরিচালনা করা যায়। এছাড়াও গবেষণা থেকে যেই বিষয়গুলো জানা যায় তা হল:

  • ফুসফুসের ক্যাপাসিটি বেড়ে যায়।
  • হার্টের মাংসপেশি শক্তিশালী হয়।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • হার্ট উন্নত হয়।
  • কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
  • দেহের সহ্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়
  • অতিরিক্ত চাপ থেকে রক্ষা করে।
  • পুনরায় হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা করে।

তাই হার্ট অ্যাটাকের পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে এক্সারসাইজ করলে হার্ট ভালো থাকবে এবং পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

 

তথ্যসূত্র

MedicalNewsToday- Diet after heart attack: Foods to eat and avoid

Mayo Clinic- Heart-healthy diet: 8 steps to prevent heart disease

Community Medical Centers- What to Eat After a Heart Attack

Better Health Channel- Diet and heart disease risk

Harvard Health- Heart-healthy foods: What to eat and what to avoid

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 74