ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয়? ফিজিওথেরাপির উপকারিতা এবং একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাজ কি?

ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয়?

ফিজিওথেরাপি হলো এমন একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন স্বতন্ত্র ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি যা আঘাত, অসুস্থতা বা অক্ষমতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শরীরকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। এটি শুধু ব্যথা কমিয়ে দেয় না, বরং শরীরের নড়াচড়া এবং কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধারেও সহায়তা করে। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আপনি আপনার আঘাত বা রোগের ঝুঁকি কমাতে পারবেন। এটি একটি স্বাস্থ্যসেবা পেশা যা রোগীর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করে, সমস্যার নির্ণয় করে এবং তারপর চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলে। ফিজিওথেরাপি শুধু চিকিৎসাই নয়, এটি রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

ফিজিওথেরাপি একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন স্বতন্ত্র ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। যেই চিকিৎসায় ঔষধের ব্যবহার খুবই অল্প পরিমাণ করা হয়। কারণ ঔষধের অনেক খারাপ প্রভাব রয়েছে। যেমন কেউ যদি দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষধ সেবন করে, তাহলে তার কিডনি, ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় এমন কোন প্রতিক্রয়া নেই। এর মাধ্যমে খুব সহজেই বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা বিশেষ করে কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, পিএলআইডি, পিআইডি, ফ্রোজেন শোল্ডার, টেনিস এলবো, গলফার এলবো, সেরিব্রাল পালসি, বেলস পালসি, অপারেশন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সমস্যা, আথ্রাইটিস ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করা হয়। এ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী ব্যথা বা সমস্যা থেকে মুক্তি পায় এবং পুনরায় তার কাজে ফিরে আসতে পারে। আমরা ফিজিওথেরাপির উপকারিতা নিয়েও আলোচনা করবো।

ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টারে উন্নতমানের সেবা পেতে এখনই আপনার এপয়েন্টমেন্ট টি নিয়ে নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয়?

অ্যাসেসমেন্ট বা মূল্যায়ন করতে

ফিজিওথেরাপি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা বিভিন্ন আঘাত, ব্যথা, অসুস্থতা, অক্ষমতা কমিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক কাজে ফিরিয়ে আনে এবং তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করে। এছাড়াও যেই যেই চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় তা হলোঃ

ব্যথা কমাতে

ব্যথা কমানোর সবচেয়ে কার্যকারী চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি। এইজন্য ফিজিওথেরাপিস্টকে ব্যথা কমানোর ডাক্তার বলা হয়। এ চিকিৎসায় ব্যথা কমানোর জন্য টেনস, শক ওয়েভ থেরাপি, মাইক্রো ওয়েভ থেরাপি, আইআরআর ইত্যাদি ইলেকট্রোথেরাপি ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ব্যথা কমানোর জন্য থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ দেওয়া হয়।

প্রতিবন্ধী চিকিৎসায়

প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য যেমন সেরিব্রাল পালসি, পারকিনসন ডিজিজ, ডাউন সিনড্রোমে অন্যান্য চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকরী। কারণ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক খুব কাছে থেকে তত্ত্বাবধানে করে প্রতিবন্ধী বাচ্চাকে দৈনন্দিন কাজ করার ট্রেইনিং দিয়ে থাকেন।

নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুবিক  সমস্যায়

স্ট্রোক, বেলস পালসি, প্যারালাইসিস, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, নার্ভ ইনজুরি, স্পাইনা বিফিডা, ব্রেইন ইনজুরি, পেরিফেরাল স্নায়ুর সমস্যা, মায়োপ্যাথি, মাসকুলার ডিসট্রফি মেনিনজাইটিস, মটর নিউরন ডিজিজ, স্পাইনাল স্টেনোসিস, সহ প্রভৃতি স্নায়ুবিক সমস্যায় ফিজিওথেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কারণ এ রোগগুলোতে অনেক সময় নার্ভের সমস্যায় মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যায় এবং ভালোভাবে নড়াচড়া করতে পারে না। ফিজিওথেরাপি দিলে মাংসপেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা ফিরে আসে ।  যার ফলে জয়েন্টগুলো স্বাভাবিক কর্মক্ষম হয়ে পড়ে। তাই নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুবিক সমস্যা দূর করতে ফিজিওথেরাপি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

অর্থোপেডিক বা হাড় ও মাংসপেশির সমস্যায় ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপি দিতে কত টাকা লাগে, এর ব্যায়াম সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

অর্থোপেডিক বা হাড় ও মাংসপেশির সমস্যায়

অনেক সময় দূর্ঘটনায় হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। আর এই ভাঙা হাড় জোড়া লাগানোর জন্য দীর্ঘ সময় প্লাস্টার করে রাখা হয়। আর যখন প্লাস্টার খোলা হয়, তখন সেই প্লাস্টার করা অংশের মাংসপেশি ও জয়েন্ট ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আর তখন ফিজিওথেরাপি দেওয়ার মাধ্যমে রোগীর সুস্থতা আনয়ন করা হয়। এছাড়াও ফুট ড্রপ, সফট টিস্যু ইনজুরি, গাউট বা গেটে বাত, ব্রাসাইটিস, এসিএল ইনজুরি, ফ্রোজেন শোল্ডার, বেদনাদায়ক আর্ক সিনড্রোম ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে যারা ভুগছেন তাদের জন্য ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকরী।

বার্ন বা পোড়া রোগীদের ক্ষেত্রে

পোড়া রোগীদের মাংসপেশি খাটো হয়ে যায়। যার ফলে কনট্রাকচার তৈরি হয়। এছাড়াও জয়েন্টর স্বাভাবিক যে মুভমেন্ট থাকা দরকার তা কমে যায়। রেসপিরেটরি বা শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত নানা সমস্যা দেখা দেয়। আর এ সকল সমস্যা দূর করার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন। বিশেষ করে রেসপিরেটরি সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত ব্রিদিং এক্সারসাইজ খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও মাংসপেশির ম্যাসাজ, স্ট্রেচিং পোড়া রোগীদের সুস্থতা ফিরিয়ে আনার জন্য গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পেডিয়েট্রিক বা শিশুদের জন্য ফিজিওথেরাপি

অনেক সময় কিছু বাচ্চা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। যেমন সেরিব্রাল পালসি বা সিপি বাচ্চা, মেরুদন্ডের স্পাইনা বিফিডা, ক্লাব ফুট, বিভিন্ন হাড়ের ত্রুটি ইত্যাদি। আর এ সকল বাচ্চাদের জন্য ফিজিওথেরাপি আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে। কারণ এ বাচ্চাদের দৈনন্দিন কাজগুলো যেমন খাওয়া, গোসল, ঘুমানো ইত্যাদি শেখানোর জন্য ফিজিওথেরাপি খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ, করণীয় ও প্রতিরোধের উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

জেরিয়েট্রিক বা বার্ধক্যজনিত সমস্যায়

মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে হাড় ও মাংসপেশি তত দূর্বল হতে থাকে। অস্টিওপোরেসিস, মাংসপেশির দূর্বলতা, ব্যথা, জয়েন্টের নড়াচড়া সমস্যাসহ নানাবিধ রোগব্যাধি দেখা দেয়। এ অবস্থায় স্বাভাবিক চলাফেরায় প্রচুর ব্যঘাত ঘটে। আর এ সমস্যা দূর করতে  ফিজিওথেরাপি অপরিহার্য । অন্যথায় বয়স্ক মানুষ তার স্বাভাবিক কাজ করতে না পেরে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যায়। এ অবস্থায় তাকে দেখাশোনার জন্য আলাদা কেয়ারটেকার এর প্রয়োজন পড়ে, যা সকল ফ্যামিলি ঠিকমতো বহন করতে পারে না। তাই এ সকল সমস্যা দূর করার জন্য ফিজিওথেরাপি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কার্ডিয়ো-পালমোনারি বা হার্ট ও ফুসফুসের চিকিৎসা

এমফাইসেমা, নিউমোনিয়া, হার্ট অ্যাটাক, সিওপিডি, ব্রংকাইটিস, লাং এবসেস, সিস্টিক ফ্রাইবোসিস ইত্যাদি রোগের জন্য ফিজিওথেরাপি খুুবই কার্যকরী। কারণ এ রোগীদের শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কফ জমা নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায়। আর এ জটিলতা দূর করতে ব্রিদিং এক্সারসাইজ, পোস্টুরাল ড্রেনেজ টেকনিক ব্যবহার করা হয়। যার ফলে রোগীর লাং ক্যাপাসিটি, ভাইটাল ক্যাপাসিটি, বুকে ব্যথা, শ্বাস-কষ্ট, কফ অনেকাংশে কমে যায়।

সার্জারির বা অপারেশনের আগে ও পরবর্তী জটিলতা দূর করতে

একটি রোগীর অর্থোপেডিক, নিউরোলজিক্যাল বা অন্য কোন কারণে  সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। আর এ অস্ত্রোপাচারের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে মাংসপেশি অনেক শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে জয়েন্টগুলো তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। আর এ সকল সমস্যা দূর করার জন্য ফিজিওথেরাপি অনেক বেশি ভুমিকা রাখে।স্পোর্টস বা খেলাধূলায় ফিজিওথেরাপি

স্পোর্টস বা খেলাধূলায় আঘাত পেলে

ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, হকি, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলাধূলায় নানা ধরনের ইনজুরি হয়। যেমন স্প্রেইন, স্ট্রেইন, ব্রার্সাইটিস, টেন্ডিনাইটিস ইত্যাদি । আর এ ইনজুরিগুলো দূর করার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই কাজে আসে। অনেক সময় দেখা যায় খেলার মাঝখানে একজন খেলোয়ার ব্যথা পায়। আর সাথে সাথে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট মাঠে দৌড়ে যান। আর অল্প সময় পরে খেলোয়ার তার খেলা শুরু করতে পারে। এর মধ্যে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তা হল ফিজিওথেরাপি। স্পোর্টসের যে কোন সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চুম্বকের মত কাজ করে।

আইসিউতে নানা সমস্যা দূর করতে

ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিউ) এর মধ্যে থাকা রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা দূর করার জন্য ফিজিওথেরাপি খুবই প্রয়োজন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ানোর জন্য আইসিউতে ফিজিওথেরাপি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ফিজিওথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় তা বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

পঙ্গুত্বের চিকিৎসায়

অনেক সময় নানা দূর্ঘটনায় হাত,পা বা শরীরে বিভিন্ন অংশের অঙ্গহানি হয়। তখন রোগীকে তার স্বাভাবিক কাজে ফিরিয়ে নিতে কৃত্রিম হাত, পা লাগানো হয়। আর এ অবস্থায় রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

গাইনোকলজিক্যাল চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি

গাইনোকলজি ফিজিওথেরাপি পেলভিক পেশিকে শক্তিশালী ও তার কার্যকারীতা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে নরমাল বাচ্চা জন্মগ্রহণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।  বর্তমান সময়ের অধিকাংশ বাচ্চা ডেলিবারিতে জন্মগ্রহণ করে। আর এ কারণে মায়ের পরবর্তীতে নানারকম অসুবিধা হয। এক্ষেত্রে কোন মা যদি বাচ্চা ধারণের পর একজন গাইনোকলজিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করে, তাহলে ইনকন্টিনেন্স, প্রোলাপস, লেবার পেইন এর মত জটিল সমস্যা দূর হয়ে যায়।

মানুষের জীবনের রোগের কোনো শেষ নেই। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের রোগে আমরা আক্রান্ত হই। আর এমন অনেক রোগ আছে যেগুলোর চিকিৎসা ঔষধ দিয়ে করা যায় না। নন মেকানিক্যাল পেইনের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি। যার মাধ্যমে খুব সহজে নানা ধরনের ব্যথা নিরাময় করা যায়। হাড়, মাংসপেশি, নার্ভ, টেনডন, লিগামেন্ট, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস সহ নানা ধরণের সমস্যা আমাদের নিত্যনৈমিত্তক ব্যাপার। এ সমস্ত সমস্যা দূর করতে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যিনি প্রদান করেন তাকে ফিজিওথেরাপিস্ট বলা হয়। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট মেডিক্যাল সাইন্সের এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, সাইকোলজি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, সাইকেয়েট্রি সহ অন্যান্য ফিজিওথেরাপি স্পেশালাইজড বিষয়ে পড়াশুনা করেন। আর এ সকল বিষয় অধ্যয়নের মাধ্যমে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, আথ্রাইটিস, অস্টিওআথ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস ইত্যাদি সমস্যার চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন।

বাংলাদেশের মানুষের স্বভাব হলো কোন ব্যথা হলেই পেইন কিলার খেয়ে নেওয়া। যার ফলে ব্যথা সাময়িক সময়ের জন্য উপশম হলেও দীর্ঘমেয়াদি হার্ট, লাং এর ক্ষতি সাধন করে। এজন্য ব্যথা নিরাময়ের প্রথমে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করত তাহলে আর এ সমস্যাগুলো  হত না। কারণ ফিজিওথেরাপিতে এমন কিছু টেকনিক আছে যেগুলো ব্যথা নিরাময়ে খুবই কার্যকরী।

অন্যান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায়

এদেশের স্ট্রোকে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অভাবে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেককেই দেখা যায় প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে যেতে। যদি তারা সঠিকভাবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করতো তাহলে তাদের আর এ কষ্ট সহ্য করতে হতো না। পিএলআইডি, পিআইডি, সায়াটিকা সহ নার্ভের বহু সমস্যা প্রতিনিয়ত দেখা যায়। আর এ সকল নার্ভের সমস্যা সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি একটি অন্যতম চিকিৎসা। ইলেকট্রোথেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ম্যানুয়াল থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে খুব সহজে তা নিরাময় করা যায়।

একজন মানুষ যখন বয়স্ক হয়ে যায় নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায়। ঠিকভাবে দাঁড়ানো থেকে বসতে পাড়েন না। আবার বসা থেকে দাঁড়াতে পাড়েন না। টয়লেটে যাওয়া ও নিজের খাবার খেতে অনেক অসুবিধা হয়। আর এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় গড়ে উঠেছে একটি বিশেষায়িত শাখা জেরিয়েট্রিকস ফিজিওথেরাপি।

যেই শাখায় বয়স্ক মানুষের জন্য বিশেষ কেয়ারিং ব্যবস্থাপনা করা হয়। যার মাধ্যমে বয়স্ক মানুষ তার জটিল জটিল সমস্যা মুক্তি পেতে পারে। অপারেশনের আগে ও পরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায়। ‍যেমন মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া ও জয়েন্টের মুভমেন্ট করতে অসুবিধা সহ আর নানা সমস্যা দেখা দেয়। যার জন্য রোগীকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরত্ব অপরিসীম।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার জানতে এই পোস্টটি দেখুন।

ফিজিওথেরাপি কত প্রকার

ফিজিওথেরাপি কত প্রকার?

ফিজিওথেরাপি এমন চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে ইনজুরি প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং শারিরীক শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি

যারা স্পোর্টসের সাথে জড়িত তাদের নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়, যেমন মাংসপেশির স্প্রেইন, টেনডন ইনজুরি ইত্যাদি। আর এ সকল সমস্যা দূর করার জন্য থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ইলেকট্রোথেরাপি, ট্যাপিং, ম্যাসাজ থেরাপি দেওয়া হয়।

জেরিয়েট্রিক ফিজিওথেরাপি

বয়স্ক মানুষের মাংসপেশির শক্তি, রিফ্লেক্স কমে যাওয়া, ভারসাম্য ও সমন্বয়ে সমস্যা দেখা যায়। যার ফলে আথ্রাইটিস, গতিশীলতা হ্রাস পাওয়া, আলজেইমার ডিজিজ দেখা যায়। আর এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকরী চিকিৎসা।

অর্থোপেডিক ফিজিওথেরাপি

পিঠ, ঘাড় ও হাঁটুতে ব্যথার কারণে দীর্ঘমেয়াদী ক্রোনিক পেইন সৃষ্টি করে। যার ফলে দূর্বলতা এবং গতিহীনতা তৈরি হয়। আর এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থোপেডিক ফিজিওথেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পেডিয়েট্রিক ফিজিওথেরাপি

পেডিয়েট্রিক ফিজিওথেরাপি ফিজিওথেরাপির একটি গুরত্বপূর্ণ  শাখা।  যা শিশুদের রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা করে। ফিজিওথেরাপিস্ট এক্সারসাইজ ও এডভান্স টেকনিক ব্যবহার করে সেরেব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম ও বংশগতির বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন। যার ফলে মাংসপেশি শক্তিশালী ও মটর ফাংশন উন্নত হয়।

নিউরোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপি

স্নায়ুবিক ইনজুরি দূরবর্তী নার্ভ, ব্রেইন,  স্পাইনাল কর্ডকে প্রভাবিত করে। যার প্রেক্ষিতে ভারসাম্যে সমস্যা, জয়েন্টের রেন্জ অব মোশন কমে যাওয়া এবং মাংসপেশির শক্তি হ্রাস পায়। বিশেষ করে এ সমস্যাগুলো স্ট্রোক, পার্কিনসনস ডিজিজ,  সেরেব্রাল পালসি অথবা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস দেখা যায়। আর সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিউরোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যবহৃত হয়। যার মাধ্যমে পেইন, চাপ কমানো, গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হয়।

কার্ডিয়োভাস্কুলার ফিজিওথেরাপি

কার্ডিওভাস্কুলার ফিজিওথেরাপিস্ট টেস্ট এবং যথাযথ এক্সারসাইজ প্রেসক্রাইভের মাধ্যমে হার্ট ও ফুসফুস ঠিক রাখতে সহায়তা করেন। এছাড়াও অ্যাজমা এবং বুকের সিক্রেশন কমাতে কার্ডিওভাস্কুলার ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিহার্য।

ভেস্টিবুলার ফিজিওথেরাপি

ভেস্টিবুলার ফিজিওথেরাপি শরীরের ভারসাম্য এবং সমন্বয় বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের কাজ করার সময় ভারসাম্য বজায় রাখি। কিন্তু কোনো কারণে ভারসাম্যের সমস্যা হলে আমাদের দৈনন্দিন কাজে অনেক অসুবিধা হয়। ভেস্টিবুলার ফিজিওথেরাপি বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি শুধুমাত্র ভারসাম্যই বাড়ায় না বরং চলাফেরা স্বাভাবিক করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

হ্যান্ড ফিজিওথেরাপি

হাতের বিভিন্ন সমস্যা যেমন আঘাত, অস্ত্রোপচারের পরের জটিলতা, আর্থ্রাইটিস বা কারপেল টানেল সিন্ড্রোমের মতো সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য হ্যান্ড ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম, ম্যানুয়াল থেরাপি, জয়েন্ট মোবাইলাইজেশন, তাপ ও শীত চিকিৎসা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্প্লিন্ট বা ব্রেস ব্যবহার করে হাতের পেশী শক্তিশালী করা, নড়াচড়া বাড়ানো এবং ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা হয়। ফলে, হাতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং দৈনন্দিন কাজ সহজে করা যায়।

উন্নত মানের ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করে বিস্তারিত জেনে নিন।

ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাজ কি

ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাজ কি?

ফিজিওথেরাপিস্ট একজন আঘাতপ্রাপ্ত, অসুস্থতা বা অক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে এক্সারসাইজ, মুভমেন্ট, ম্যানুয়াল থেরাপি, এডুকেশন এবং উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে সহায়তা করেন। তারা সকল বয়সের মানুষের পেইন ম্যানেজমেন্ট এবং রোগসমূহকে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে। ফিজিওথেরাপিস্ট রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং পুর্নবাসন সেবা বাস্তবায়ন করে থাকেন।

ফিজিওথেরাপিস্টরা থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যাসাজ থেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি, ওজন থেরাপি, ইনফিলট্রেশন প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। তারা সাধারণত যেসব রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন তা হলোঃ

  • কোমর ব্যথা,
  • হাঁটু ব্যথা,
  • ঘাড় ব্যথা,
  • স্ট্রোক,
  • প্যারালাইসিস,
  •  পিএলআইডি,
  • পিআইডি,
  • ফ্রোজেন শোল্ডার,
  • টেনিস এলবো,
  • গলফার এলবো, 
  • সেরিব্রাল পালসি,
  • বেলস পালসি,
  • অপারেশন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সমস্যা,
  • আথ্রাইটিস,
  • সায়াটিকা,
  • স্পোর্টস ইনজুরি,
  • অ্যান্কেল স্প্রেইন,
  • এসিএল ইনজুরি,
  • হাতে ইনজুরি,
  • পেলভিক ফ্লোর পেইন ইত্যাদি।

ফিজিওথেরাপিস্ট প্রথমে রোগীর একটি অ্যাসেসমেন্ট বা মূল্যায়ন করেন। সেই মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে চিকিৎসা পরিকল্পনা করেন। আর তারপর চিকিৎসা সেবা বাস্তবায়ন করেন।

সময়ের সাথে চিকিৎসা শাস্ত্রেরও ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়েছে। এক সময় মানুষ স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতো। ব্যথার ঔষধ খেতে খেতে কিডনি, ফুসফুসের রোগ তৈরি করে ফেলতো। যুদ্ধাহত মানুষ যথাযথ চিকিৎসার অভাবে কাটাতো অনেক কষ্ট। আর এ কষ্টগুলো দূর করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে আধুনিক চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি। যার মাধ্যমে বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্ট্রোক, প্রতিবন্ধীতা, বেলস পালসি, টেনিস এলবো, গলফার এলবো সহ নানা ধরনের রোগের মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ , চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং পুর্নবাসন সেবা বাস্তবায়ন করা হয়। আর এ চিকিৎসায় থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ম্যানুয়াল থেরাপি, মোবিলাইজেশন, ইলেকট্রোথেরাপি, ওজন থেরাপি, আকুপাংচার ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

ফিজিওথেরাপি দেওয়া নির্ভর করে সাধারণত রোগ এবং তার মাত্রার উপর। তবে সাধারণত ফিজিওথেরাপি অ্যাসেসমেন্ট,পরিকল্পনা এবং চিকিৎসা এই তিনটি সিস্টেম অনুসরণ করে দেওয়া হয়।

আমাদের দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে আপনার এপয়েন্টমেন্ট টি নিয়ে নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

অ্যাসেসমেন্ট বা মূল্যায়ন

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক প্রথমে রোগীর সামগ্রিক অবস্থাকে পর্যবেক্ষণ করবেন। তারপর খেয়াল করবেন কোন রোগ কতটুকু বৃদ্ধি পেয়ছে। বিভিন্ন স্পেশাল টেস্ট করে রোগ সম্পর্কে আইডিয়া নিবেন। তা নোট করে রাখবেন।

ট্রিটমেন্ট প্ল্যান বা চিকিৎসা পরিকল্পনা

অ্যাসেসমেন্টের উপর ভিত্তি করে ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। এই প্ল্যানের মধ্যে থাকতে পারে এক্সারসাইজ,  ম্যানুয়াল থেরাপি,  ইলেকট্রোথেরাপি ইত্যাদি।

ট্রিটমেন্ট বা চিকিৎসা

চিকিৎসা প্লান বা পরিকল্পনা অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ক্লিনিক,  হাসপাতালে বা বাড়িতে ফিজিওথেরাপি দিতে পারেন।

ডায়াগনোসিস টেস্ট

চিকিৎসায় রোগ কতটুকু ভালো হয়েছে বা খারাপ হয়েছে তা জানার জন্য বিভিন্ন  ডায়াগনোসিস টেস্ট করা হয়। আর এই টেস্ট বা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজন চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়।

ফিজিওথেরাপি একটি স্বতন্ত্র ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। আর এই চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ন্যূনতম গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট হতে হবে। আর দেহের রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য হট থেরাপি, কোল্ড থেরাপি , হাইড্রোথেরাপি এবং ম্যানুপুলেশন থেরাপি দেওয়া হয়।

বর্তমান সময়ে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অনেক উন্নতি হয়েছে। যেখানে ফিজিওথেরাপিস্ট বিশেষায়িত শাখাগুলো যেমন অর্থোপেডিক,নিউরোলজি, মাস্কুলোস্কেলেটাল, কার্ডিয়াক, জেরিয়েট্রিক, স্পোর্টস সেক্টরে কাজ করে থাকেন।

সেরা মানের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা আমাদের +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

ফিজিওথেরাপিস্ট কি ডাক্তার 

ফিজিওথেরাপিস্ট কি ডাক্তার? 

ফিজিওথেরাপি স্বতন্ত্র ও বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক  চিকিৎসা পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপি শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। একটি ফিজিক্যাল আর অপরটি হল থেরাপি। ফিজিক্যাল শব্দটি এসেছে ফিজিক্স থেকে। আর এর অর্থ হল ভৌত। অপরপক্ষে থেরাপি মানে চিকিৎসা। একসাথে অর্থ দাঁড়ায় ভৌত চিকিৎসা। অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ ডিকশনারি অনুযায়ী থেরাপি শব্দটির সমার্থক শব্দ চিকিৎসা। যিনি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করেন তাকে ফিজিওথেরাপিস্ট বা ভৌত চিকিৎসক বলা হয়।

ফিজিওথেরাপিস্টরা কি ডাক্তার লিখতে পারবে কি? এ নিয়ে বাংলাদেশে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা যায়। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসককে মেডিক্যাল সাইন্সের বেসিক বিষয় এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, সাইকোলজি, ফার্মাকোলজি বিষয় পড়ার পাশাপাশি কাইনেসোলজি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ইলেকট্রোথেরাপি, রেডিওলজি, অর্থোপেডিক মেডিসিন, অর্থোপেডিক এন্ড রিউমাটোলজি, পেডিয়েট্রিক, নিউরোলজি, সাইকেয়েট্রি, রিহেবিলিটেশন মেডিনসিন ইত্যাদি সহ চারটা প্রফে  ৪৫টি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। যা অন্যান্য মেডিক্যাল সাইন্সের তুলনায় অনেক বেশি বিষয়ে অধ্যয়ন করতে হয়। তারপরও কেউ কেউ ফিজিশিয়ান, ডেন্টিস্ট ও ডিএমএফদের জন্য নির্মিত আইন বিএমডিসি দিয়ে ফিজিওথেরাপিস্টদের বিবেচনা করতে চায়। যা মূলত আইনবিরোধী ও কল্পনা প্রসুত।

বিষয়টি আর একটু সহজভাবে বুঝা যাক, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখার জন্য পুলিশবাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানাবাহিনী রয়েছে। সবাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাথে জড়িত থাকলেও সবার আইন ভিন্ন ভিন্ন। যেমন পুলিশের আইন দিয়ে সেনাবাহিনী চলে না। আবার সেনাবাহিনীর আইন দিয়ে পুলিশ চলবে না। প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা আইন রয়েছে। ঠিক তেমনি  ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসকদের জন্য বাংলাদেশ রিহেবিলিটেশন আইন কাউন্সিল আইন রয়েছে। এই আইনই নির্ধারণ করবে ফিজিওথেরাপিস্টরা ডাক্তার লিখবে কি না লিখবে না। যেহেতু এই আইনের কার্যক্রম এখনো প্রক্রিয়াধীন, তাই মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টদের ডাক্তার লিখে প্রাকটিস করার অনুমতি রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ফিজিওথেরাপি একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। যেখানে ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং পুনর্বাসন সেবা বাস্তবায়ন করেন। এখানে দেখা যাচ্ছে ফিজিওথেরাপিস্টরা  যাচ্ছে অন্যান্য ফিজিশিয়ানদের মত পড়াশোনা করেন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। সেই হিসেবে ও মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টরা ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারেন।

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য জানতে এই পোস্টটি পড়ে বিস্তারিত জেনে নিন।

এক সময় গির্জায় যারা বাইবেল পড়ত, তাদেরকে সম্মান হিসেবে ডাক্তার বলত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ফিজিশিয়ানদের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু হয়। তবে ফিজিওথেরাপি যেহেতু আধুনিক মেডিকেল সাইন্স এবং তাদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আছে, সেই হিসেবে ডা. পদবী ফিজিওথেরাপিস্টরা ব্যবহার করতে পারে।

ইংল্যান্ডের যারা সার্জন তারা ডা. পদবী ব্যবহার করেন। কারণ তাদের অ্যানাটমির জ্ঞান অনেক ভালো। যার ফলে তারা দেহ কাটা-ছেড়া করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। অপরদিকে ফিজিওথেরাপিস্টদের অ্যানাটমি জ্ঞান অনেক ভালো। যার ফলে তারা কাটা-ছেড়া ছাড়াই দেহের বাইরে থেকে চিকিৎসা প্রদান করেন। সেই হিসেবে ফিজিওথেরাপিস্টরা আরো আগেই ডা. লেখার অধিকার আছে।

বাংলাদেশের রিহেবিলিটেশন কাউন্সিল অনুযায়ী,  যারা চার বছরের ফিজিওথেরাপি গ্রাজুয়েট ডিগ্রি ও এক বছরের ইন্টার্ণশীপ ডিগ্রি অর্জন করবে তারাই ফিজিওথেরাপিস্ট। তবে বিআরসি আইন পূর্ণাঙ্গ হলেই তারা নির্ধারণ করে দিবে ফিজিওথেরাপিস্টরা কি পদবী ব্যবহার করবে? তবে এখন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টরা ডাক্তার পদবী ব্যবহারের অধিকার রয়েছে।

ফিজিওথেরাপির উপকারিতা

ফিজিওথেরাপির উপকারিতা

ফিজিওথেরাপি দেহের গতিশীলতা ও কার্যকারীতা বাড়ানোর জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা। এটি অনেক জেনারেল  স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। যখন একজন মানুষ ব্যথায় ভুগেন তখন একজন ফিজিশিয়ান পেইন কিলার প্রেসক্রাইব করে থাকেন। এ ঔষধ ব্যথাকে ভালো করতে পারে না, কিছু সাময়িক সময়ের জন্য উপশম দিয়ে থাকে। পেইন কিলার খাওয়া বন্ধ করলে আবার ব্যথা শুরু হয়। অপর দিকে ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎকসা শুরু ‍করলে তা স্থায়ীভাবে  পেইনকে কমিয়ে দেয়। আবার একই সাথে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

ফিজিওথেরাপি আস্তে আস্তে ফলাফল দেয়, কিন্তু এর উপকার দীর্ঘস্থায়ী। এটি শুধু রোগকে ভালো করে না, বরং পুনরায় যাতে রোগটি ফিরে আসতে না পারে সেই বিষয়টা নিশ্চিত করে। ফিজিওথেরাপিস্ট শুধু কিছু লক্ষণ দেখে চিকিৎসা করে না , বরং রোগটি কোন কারণে হয়েছে তা দেখে চিকিৎসা প্রদান করে। একইসাথে এটি মানসিক স্বাস্থ্য, আবেগ প্রবণ অবস্থা এবং দেহের গুরত্বপূর্ণ ফাংশনগুলোর উন্নতি সাধন করে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পানা এবং পুর্নবাসন সেবা বাস্তবায়ন করেন। কোন আঘাতপ্রাপ্ত, অক্ষম বা অসুস্থ ব্যাক্তিকে তার কাজে পুনরায় ফিরে যেতে সহায়তা করে।

বেশিরভাগ রোগী বিভিন্ন চিকিৎসা নিয়ে যখন সুস্থ হতে পারে না, তখন ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আবার যখন অন্য চিকিৎসক তাকে সুস্থ করতে পারছেন না তখন ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে রেফার্ড করে থাকেন। যে ভাবেই রোগী আসুক না কেনো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নানাভাবে উপকার প্রদান করে।

ফিজিওথেরাপি উপকারি দিক সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

ব্যথা কমাতে

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সবচেয়ে উপকারি দিক ব্যথা কমানো। আর এ ব্যথা কমানোর জন্য থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, মোবিলাইজেশন টেকনিক, ট্যাপিং, আল্ট্রাসাউন্ড, ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন দেওয়া হয়। যা একই সাথে ব্যথা কমাতেএবং জয়েন্টের ফাংশন বাড়াতে সাহায্য করে। অনেকসময় পুনরায় যাতে ব্যথা ফিরে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সহায়তা করে।

মুভমেন্টের উন্নতিতে

ফিজিওথেরাপি স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ এবং স্ট্রেনথিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে মুভমেন্টকে উন্নতি করে। ক্ষেত্রবিশেষ ক্রাচ ব্যবহার করা হয় যা হাঁটতে সহায়তা করে। যে সকল মানুষের বসতে , উঠতে, দাঁড়াতে অসুবিধা হয় তাদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে উন্নতি করা হয়।

ভারসাম্য রক্ষায়

মানুষের বয়স বাড়ার সাথে ভারসাম্য রক্ষায় নানা অসুবিধা হয়। এছাড়াও হাড়ের ঘনত্ব দিন দিন কমতে থাকে এবং মাংসপেশি নিয়মিত দূর্বল হতে থাকে। যার ফলে দেহের ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হয়। ফিজিওথেরাপি পড়ে যাওয়া এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়তা করে। মাংসপেশি শক্তিশালী করতে ফিজিওথেরাপি সর্বদা সহায়তা করে।

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

বয়স্ক মানুষের সাহায্যের কাজে

বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, জয়েন্টের ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তুলতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।

ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে, ব্যথা কমাতে পারে এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম, ম্যানুয়াল থেরাপি এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে বয়স্কদের চিকিৎসা করেন। এই চিকিৎসাগুলো শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে, পেশী শক্তিশালী করতে এবং ভারসাম্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে, বয়স্ক ব্যক্তিরা দৈনন্দিন কাজগুলো সহজে করতে পারে এবং স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারে।

সার্জারি এড়াতে ফিজিওথেরাপি

সার্জারি এড়াতে

পেইন কমানোর জন্য সার্জারির প্রয়োজন পড়ে না। যদিও খুব অল্প পরিমাণে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে। সেইক্ষেত্রে প্রিঅপারেটিভ ফিজিওথেরাপি দ্রুত সুস্থ হতে উপকার করে। স্পোর্টসের যে কোন ইনজুরি প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি: খেলাধূলা করতে গিয়ে নানা ধরনের ইনজুরি হতে দেখা যায়। যেমন টেনিস এলবো, কনকাশন ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকরী

নিউরোলজিক্যল চিকিৎসায়

স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন স্পাইনাল কর্ড ডিসঅর্ডার, স্ট্রোক, ব্রেইন ইনজুরি ইত্যাদি, মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সমস্যাগুলোর কারণে শারীরিক কার্যক্ষমতা, ভারসাম্য, এবং স্বাধীনতা হারিয়ে যেতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।

নিয়মিত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোকে পুনর্বাসন করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপিস্টরা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম, ম্যানুয়াল থেরাপি এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেন। ফলে, রোগীরা তাদের দৈনন্দিন কাজগুলো সহজে করতে পারে এবং স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারে।

কার্ডিয়োপালমোনারি সমস্যা দূর করতে

হৃদরোগ এবং ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশেষ করে, শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির মতো সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত উপকারী। ফিজিওথেরাপিস্টরা বিভিন্ন ধরনের শ্বাসকষ্টের ব্যায়ামের মাধ্যমে ফুসফুসের পেশীকে শক্তিশালী করতে এবং ফুসফুসে জমে থাকা জল বের করে দিতে সাহায্য করেন। এছাড়াও, ফিজিওথেরাপি হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে, রোগীরা দৈনন্দিন কাজ সহজে করতে পারেন এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে, হৃদপিণ্ডের চাপ কমে যায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে শরীরের ওজন কমানো, স্ট্রেস কমানো এবং মোটামুটি একটি সুস্থ জীবনযাত্রা বজায় রাখা যায় যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাই, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ইনজুরি প্রতিরোধে

ফিজিওথেরাপি শুধু আঘাতের পরে চিকিৎসার জন্যই নয়, বরং আঘাত প্রতিরোধেও খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপিস্টরা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং চিকিৎসার মাধ্যমে আমাদের শরীরের মাংসপেশীকে শক্তিশালী করতে, নমনীয়তা বাড়াতে এবং ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করেন। এতে আমাদের শরীর বিভিন্ন ধরনের আঘাতের জন্য আরও প্রস্তুত হয়ে ওঠে। তবে, ফিজিওথেরাপি সব ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। তাই কোনো ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে

দেহের সুস্থতার জন্য অবশ্যই শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়। কেউ যদি শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়, তাহলে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ফিজিওথেরাপি শারিরীক সমস্যাকে দূর করে জীবন আনন্দময় করে তুলে। স্প্লিন্টিং, ক্ষত কেয়ার, ফোলা সহ হাতের নানা ধরনের জটিলতা দূর করার জন্য হ্যান্ড ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকরী।

আমাদের থেকে ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কলে বিস্তারিত জেনে নিন।

ফিজিওথেরাপির অপকারিতা

ফিজিওথেরাপির অপকারিতা

ফিজিওথেরাপি একটি বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।  তবে অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন যাবৎ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিচ্ছেন,  কিন্তু সুফল পাচ্ছেন না৷ এর পিছনে অন্যতম কারণ হল আপনি হয়তো ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে পারে নি। ফিজিওথেরাপিস্ট হওয়ার জন্য ফিজিওথেরাপিতে ন্যূনতম গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি থাকতে হবে। এ দেশে অনেক দুই- চার মাসের ট্রেইনিং করে নিজেকে ফিজিওথেরাপিস্ট দাবি করে বসে। যার ফলে উনার কাছে না বুঝে গরম বা ঠান্ডা ছেঁক দিয়ে দিবে।  আসলে ফিজিওথেরাপি এ ঠান্ডা ও গরম ছেঁক নয়। এই চিকিৎসার রয়েছে বৈজ্ঞানিক সত্যতা।

যেখানে ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং পুনর্বাসন সেবা দিয়ে থাকেন।  প্রথমে আপনার রোগ নির্ণয় করতে হবে। তারপর সেই রোগের জন্য কোন থেরাপি কেমন ডোজে দিবেন তা ফিজিওথেরাপিস্ট নির্ধারণ করবে।

কোয়াক/ ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে গেলে না জেনে ইলেকট্রোথেরাপি বা ব্যায়াম করাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। মনে করেন আপনি একজন ভুয়া ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাছে গেলেন, যার ফিজিওথেরাপিতে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি নেই। এখন আপনার স্পাইনের ডিস্কের সামনে সমস্যা,  সেইক্ষেত্রে থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ পেছনে করতে হবে। এখন কোয়াক যিনি সে তো এই বিষয়গুলো বুঝবে না। আপনি ডিস্কের সামনের এক্সারসাইজগুলো করিয়ে দিলো। এতে তো আপনার সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। এইজন্য আপনাকে অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, কেউ যদি শারিরীক ম্যানুপুলেশন না বুঝে দেয়,  সেইক্ষেত্রে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক্সারসাইজের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে।

ফিজিওথেরাপি সত্যিকার্থে একটি স্বাস্থ্যসেবা উন্নতকারী একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।  এটি ব্যথা কমায়, ইনজুরি ভালো করে, জয়েন্টের রেন্জ অব মোশন বাড়ায়, ক্রোনিক অবস্থা থেকে রক্ষা করে। ফিজিওথেরাপি যদিও খারাপ অবস্থা দেহকে সুস্থতা দান করে।  তারপরও এর কিছু অপকারি দিক আছে।

শকওয়েভ থেরাপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

ব্যথা

ফিজিওথেরাপি সাধারণত পেইন কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী চিকিৎসা। তারপরও ফিজিওথেরাপি দেওয়ার জন্য রোগীর দেহকে এক জায়গা থেকে অন্য জাশগায় স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে৷ সেইক্ষেত্রে অনেক সময় পেইন হতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসার কোন সেশন শেষে পেইন হতে পারে।  তা পুনরায় সুস্থতা আনয়নে সাহায্য করে।

ফ্যাটিগ

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি অনেক সময় শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং চিকিৎসার মাধ্যমে পেশীগুলোকে কাজ করানো হয়, যার ফলে অনেক সময় রোগীরা ফ্যাটিগ বা ক্লান্তি অনুভব করেন। একই ধরনের ব্যায়াম বারবার করার ফলে নির্দিষ্ট পেশীগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং ফলে ফ্যাটিগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফিজিওথেরাপি নেওয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে প্রায়ই একই ধরনের কাজ বা ব্যায়াম বারবার করতে হয়, যা পেশীকে ক্লান্ত করে এবং ফ্যাটিগের কারণ হতে পারে।

টেনডারনেস

অনেক সময় ফিজিওথেরাপি একটি সেশন নেওয়ার পরে যেই জায়গায় ফিজিওথেরাপি নেওয়া হয়েছে,  সেই অংশে ব্যথা অনুভব হতে পারে। রোগী তার পরবর্তী সেশন নেওয়ার আগে অবশ্যই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসককে এ ব্যাপারে জানাতে হবে। 

মাংসপেশির ব্যথা

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়ার পর অনেক সময় মাংসপেশিতে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া। কারণ, ফিজিওথেরাপির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং চিকিৎসা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা আমাদের শরীরের পেশীগুলোকে কাজ করিয়ে তোলে। এই কারণেই ব্যায়ামের পর কিছুটা ব্যথা অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক। তবে, যদি ব্যথা অতিরিক্ত হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই আপনার ফিজিওথেরাপিস্টকে জানাতে হবে। তিনি আপনার জন্য ব্যায়ামের তীব্রতা কমাতে পারেন বা বিশ্রামের সময় বাড়াতে পারেন।

কোমর ব্যথা

কোমর ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়া হলে অনেক সময় কোমরের ব্যথা বাড়তে পারে। এটি একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া। কারণ, কোমর আমাদের শরীরের একটি কেন্দ্রীয় অংশ এবং এর সাথে শরীরের অন্যান্য অংশও যুক্ত থাকে। ফিজিওথেরাপির সময় কোমরের পেশী এবং জোড়গুলোকে কাজ করানো হয়, যার ফলে প্রথম দিকে ব্যথা বাড়তে পারে। তবে, যদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার পর কোমরের ব্যথা বেড়ে যায় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই ফিজিওথেরাপিস্টকে জানাতে হবে। তিনি আপনার চিকিৎসা পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন।

ফোলে যাওয়া

অনেক সময় হিট থেরাপি দেওয়ার সময় দেহের কোন অংশ ফোলে যেতে পারে। সেইক্ষেত্রে হিট থেরাপি দেওয়ার সময় রোগীর পাশে একজন কম্পাউন্ডার অবশ্যই থাকতে হবে।

মাইগ্রেন দূর করার বিশেষ উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

সাইকোলজিক্যাল সমস্যা

ফিজিওথেরাপি সাধারণত দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করে। যার ফলে রোগী অনেক সময় হতাশ হয়ে যেতে পারে।  এসমস্যা তৈরি হলে রোগীর ফিজিওথেরাপিস্ট পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

দুশ্চিন্তা

ফিজিওথেরাপি দেওয়ার আগে রোগীর বিভিন্ন অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট করতে হয়। যা দেখে রোগী অনেক সময় দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতে পারে।

ফিজিওথেরাপি, অন্যান্য যে কোনো চিকিৎসার মতো, কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে আসে। তবে, যখন এটি একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তখন এর উপকারিতা অনেক বেশি। সার্বিকভাবে, ফিজিওথেরাপির উপকারিতা এর ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি। যখন এটি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তখন ফিজিওথেরাপি অনেক রোগ এবং অবস্থার চিকিৎসায় একটি কার্যকর এবং নিরাপদ উপায় হতে পারে।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

ফিজিওথেরাপি সেশনে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত, ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে এবং তারপর ব্যক্তিগতভাবে তৈরি করা চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রদান করেন। এই পরিকল্পনাটিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম, ম্যানুয়াল থেরাপি এবং অন্যান্য পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া করতে, নির্দিষ্ট ব্যায়াম করতে এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এই ব্যায়ামগুলি আপনার সাধারণ স্বাস্থ্য এবং গতিশীলতা উন্নত করতে এবং আপনার শরীরের নির্দিষ্ট অংশগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, ফিজিওথেরাপিস্ট তাদের হাত ব্যবহার করে ম্যানুয়াল থেরাপি দিয়ে ব্যথা এবং শক্ততা উপশম করতে এবং শরীরের আরও ভাল নড়াচড়াকে উত্সাহিত করতে পারেন।

ফিজিওথেরাপি হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে শারীরিক যন্ত্রণাকারী ব্যাধি ও বিভিন্ন অসুস্থতার চিকিৎসা করা হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কৌশল ব্যবহার করে করা হয়। এই কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম, ম্যানুয়াল থেরাপি, তাপ চিকিৎসা, শীত চিকিৎসা, বিদ্যুৎ চিকিৎসা এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশী শক্তিশালী করা, নমনীয়তা বাড়ানো এবং চলাচলের পরিধি বাড়ানো হয়। ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের নড়াচড়া বাড়ানো এবং পেশির টান কমানো হয়। তাপ ও শীত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথা কমানো হয়।

আপনার প্রথম ফিজিওথেরাপি অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাধারণত ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট স্থায়ী হয়। এই সময়ের মধ্যে, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার সাথে কথা বলবেন, আপনার সমস্যাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন এবং আপনার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করবেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে, তিনি আপনার জন্য একটি ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন। এই পরিকল্পনাটি আপনার সাথে আলোচনা করে এবং আপনার সম্মতি নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে।

ফিজিওথেরাপি বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে, খেলাধুলায় আহত ব্যক্তিরা, যেমন টেনিস এলবো, পেশির টান বা মচকানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হতে পারেন। এছাড়াও, স্নায়বিক সমস্যা যেমন স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, স্ট্রোক, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, পারকিনসন'স ডিজিজ, মাথার আঘাত এবং ভারসাম্যের সমস্যা থাকা ব্যক্তিরাও ফিজিওথেরাপির সাহায্য নিতে পারেন। শিশুদের মধ্যে পেশীবহুল ডিস্ট্রোফি, সেরিব্রাল পলসি এবং বিকাশের বিলম্বের মতো সমস্যা থাকলে ফিজিওথেরাপি তাদের শারীরিক বিকাশকে সহায়তা করতে পারে।

প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা আলাদা হওয়ায় সপ্তাহে কতবার ফিজিওথেরাপি করা উচিত তাও ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। তবে সাধারণত, বেশিরভাগ মানুষের জন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ফিজিওথেরাপি করা উপযুক্ত হয়। আপনার জন্য কত ঘন ঘন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়া উচিত তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার শারীরিক অবস্থা, আঘাতের ধরন এবং চিকিৎসার অগ্রগতি বিবেচনা করবেন।

Author - Dr Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Dr. Saiful Islam
Dr. Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Articles: 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *