গ্যাসের ব্যথা বলতে পাকস্থলীতে গ্যাস আটকে পড়ার জন্য যে ব্যথা অনুভব হয় তাকে বুঝায়। এটা বিভিন্ন বয়সের মানুষের হতে পারে। পাকস্থলীতে গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়ফ্রাম পেশিতে চাপ পরে, যা বুকের উপরের দিকে ধাক্কা দিতে থাকে। আর তখনই বুকের বাম কিংবা ডানে অথবা পেটের উপরের অংশে ব্যথা অনুভূত হয়।
ছোট থেকে বড় কমবেশি প্রায় সকল মানুষের একটি কমন সমস্যা হল এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। কারণ আমাদের খাবারের মেন্যুতে ভাজাপোড়া থাকেই। এছাড়াও বাসাবাড়িতে যে রান্না করা হয় সেখানে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা হয়। আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ধুমপানের কারণেও গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। তবে এই গ্যাসের সমস্যার কারণে দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভব হয়। যার ফলে অনেক সময় বুঝার উপায় থাকে না, এটি কি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা না অন্য কোন সমস্যা?
গ্যাস্ট্রিক হলে পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মসলা জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, ঝাল জাতীয় খাবার, কার্বনেটেড পানীয় খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। কারণ এই খাবারগুলো হজমের জন্য প্রচুর এসিডের প্রয়োজন পড়ে। আর তখনই অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড তৈরি হয়।
টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
গ্যাসের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয়?
পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষ করে গ্যাস জমার সমস্যা, বাম দিকে বুকের ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে। যখন আমাদের পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে, তখন সেটি ডায়াফ্রাম নামক পেশিকে চাপ দেয়, যা বুকের উপরের অংশকে পেট থেকে আলাদা করে। এই চাপের ফলে বুকের বাম দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেকেই এই ধরনের ব্যথাকে হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে ভুল করলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি হৃদযন্ত্রের কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দেয় না।
সাধারণত, অ্যান্টাসিড বা অ্যান্টি-অ্যাসিড ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়। তবে, যদি ব্যথা তীব্র হয় বা অন্যান্য লক্ষণের সাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গ্যাসের ব্যথা পেটের একপাশে সীমাবদ্ধ থাকে না। পেট বা বুকের যে কোন পাশে গ্যাসের ব্যথা হতে পারে। গ্যাসের ব্যথায় বুকের আশেপাশে চাপ অনুভব হতে পারে।
- বুকের ডান পাশে কেউ যেন খোঁচা মারছে এমন ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- পেটের উপরের দিকে সারাদিনই অল্প অল্প ব্যথা অনুভব হবে।
- পেট ফোলা, ফাঁপা ও চাপ অনুভূত হবে। এছাড়াও গ্যাসের ব্যথায় পেট ফোলে যেতে পারে।
- তীক্ষ্ণ, ছুরিকাঘাত করার মত ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- বুকের বাম কিংবা ডানে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- বুকে ব্যথা, চাপ ও অস্বস্তি অনুভব।
- ব্যথা, চাপ ও অস্বস্তি উপরের ও পেছনের অংশে ব্যথা অনুভব হওয়া।
- খাবার খাওয়ার পরই ব্যথা অনুভব বেশি হতে পারে।
- পেটের মাঝখানে চিন চিন অনুভব হতে পারে।
বুকের ব্যথা কেন হয় ও ব্যথা হলে করণীয় কি কি তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
গ্যাসের ব্যথা কেনো হয়?
গ্যাসের কারণে বুকে ব্যথা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং অস্থায়ী হয়ে থাকে। গ্যাস বের হয়ে গেলে এবং জীবনমান পরিবর্তন করলেই এ ব্যথা ভালো হয়ে যায়। যদি বুকে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় আর সাথে শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরানো থাকে সেইক্ষেত্রে অতিদ্রুত হসপিটালে যাওয়া উচিত।
গ্যাসের ব্যথা ব্যাক্তিভেদে বুকের বিভিন্ন পাশে হতে পারে। আর এ ব্যথার তীব্রতা স্বল্প, মাঝারি কিংবা মারাত্মক হতে পারে। গ্যাসের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমনঃ
পেপটিক আলসার
পেপটিক আলসার হল পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্তের ভেতরের আস্তরণে এক ধরনের ক্ষত বা ঘা। সাধারণত, হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs) যেমন অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন ইত্যাদি ওষুধ সেবনের কারণে এই আলসার হয়। এই আলসারের কারণে পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্তের বিভিন্ন স্তরে ব্যথা অনুভূত হয়।
গ্যাসট্রাইটিস
গ্যাস্ট্রাইটিস হল একটি সাধারণ সমস্যা যেখানে আমাদের পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণে প্রদাহ হয়ে থাকে। এই প্রদাহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমনঃ ‘হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অতিরিক্ত মদ্যপান, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অ্যালার্জি বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা। গ্যাস্ট্রাইটিসের লক্ষণ হিসেবে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, অপচয়, এবং ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। যদি আপনি এই ধরনের লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা কি কি তা জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
গ্যাস্ট্রোইসুফেগাল রিফ্লেক্স ডিজিজ( গার্ড)
গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ, যা সাধারণত গার্ড নামে পরিচিত, এমন একটি অবস্থা যেখানে আমাদের পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালী দিয়ে উপরে উঠে আসে। এই অ্যাসিড খাদ্যনালীর আস্তরণকে জ্বালাতে পারে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে আমরা হার্টবার্ন, বুকে জ্বালা, এবং অন্যান্য অস্বস্তিকর লক্ষণ অনুভব করতে পারি। গার্ড বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খাওয়া, মোটা হওয়া, গর্ভাবস্থা, এবং কিছু ওষুধ সেবন করা।
খাবার খাওয়ার ফলে ব্যথা
অনেকের কাছেই খাবার খাওয়ার পর পেটে ব্যথা হওয়া একটি পরিচিত সমস্যা। কিছু নির্দিষ্ট খাবার এই ব্যথার কারণ হতে পারে। যেমন, দুধ, গ্লুটেন (যা গম, বার্লি, রাই ইত্যাদিতে পাওয়া যায়) এবং মসলাদার খাবার অনেকের ক্ষেত্রে পেটে গ্যাস এবং ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, ফাস্ট ফুড, কার্বনেটেড পানীয়, কফি এবং অ্যালকোহলও পেটের অস্বস্তি বাড়াতে পারে। এই ধরনের খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং পেটে গ্যাস জমে, ফলে ব্যথা অনুভূত হয়।
আইবিএস
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম হলো একটি সাধারণ পেটের সমস্যা। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত পেটে ব্যথা, ফোলাভাব এবং মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন অনুভব করেন। এই পরিবর্তনগুলি প্রায়ই দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হতে পারে এবং ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনকে বিঘ্নিত করতে পারে। আইবিএসের সঠিক কারণ এখনও অজানা হলেও, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস এবং হরমোনের পরিবর্তন এই রোগের উৎপত্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়।
ডায়াবেটিস রোগীর বিশেষ খাদ্য তালিকা ও খাবারের চার্ট পড়তে এই পোস্টটি পড়ুন।
ফুড পয়জনিং
খাদ্য বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং হলো দূষিত বা ফর্মালিনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে সৃষ্ট একটি সাধারণ সমস্যা। এই ধরনের খাবারে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা পরজীবী আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। খাদ্য বিষক্রিয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ হলো পেটে গ্যাস এবং ব্যথা। এই ব্যথা কখনো কখনো বুকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। খাদ্য বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে।
অতিরিক্ত মিষ্টি
অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত মিষ্টি সেবন পাকস্থলীর প্রদাহের কারণ হতে পারে। এই প্রদাহের ফলে আমরা পেটে গ্যাস, ব্যথা ইত্যাদি অনুভব করতে পারি। তাই স্বাস্থ্য সচেতন থাকার জন্য মিষ্টি খাবার কম খাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত কার্বনেশন
কার্বনেটেড পানীয় যেমন সোডা, টনিক ওয়াটার, স্পার্কলিং ওয়াটারে কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে। এই কার্বন ডাই অক্সাইড আমাদের পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করে। অতিরিক্ত পরিমাণে এই ধরনের পানীয় পান করলে পাকস্থলীতে গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং আমরা পেট ফোলা, গ্যাস, অস্বস্তি ইত্যাদি অনুভব করতে পারি। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য কার্বনেটেড পানীয় পরিহার করা বা পরিমাণ কমিয়ে খাওয়া উচিত।
ফিজিওথেরাপি কোর্স কোথায় করা যায় তা নিয়ে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
অতিরিক্ত পানীয় পান করার ফলে
কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত পানীয়, যেমন সোডা, টনিক ওয়াটার ইত্যাদি, আমাদের হজম ব্যবস্থাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই ধরনের পানীয়গুলোতে থাকা গ্যাস আমাদের পেটে জমে গিয়ে গ্যাসের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। আর এই ব্যথা কখনো কখনো বুকের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতিরিক্ত চুইং গাম চবানোও এই সমস্যার কারণ হতে পারে, কারণ চুইং গাম চবানোর সময় আমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে বাতাস গিলে ফেলি।
অতিরিক্ত ফাইবারযুক্ত খাবার
ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী, বিশেষ করে হজমের জন্য। তবে অতিরিক্ত ফাইবারযুক্ত খাবার খেলেও পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফাইবার হজম হতে কিছুটা সময় নেয় এবং অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলি ফাইবারকে ভেঙে ফেলার সময় গ্যাস উৎপন্ন করে। তাই সবজি, ফল ইত্যাদি খাওয়া খুবই ভালো, তবে পরিমাণে সতর্ক থাকা জরুরি।
কমন খাদ্য
আমরা সাধারণত যা খাই, যেমন মটরশুঁটি, ডাল, ফল এবং শাক-সবজি, এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী হলেও, অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। কারণ, আমাদের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলি ফাইবারকে ভেঙে ফেলার সময় গ্যাস উৎপন্ন করে। তাই এই ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই ভালো, তবে পরিমাণে সতর্ক থাকা জরুরি। অতিরিক্ত ফাইবার খাওয়ার ফলে পেট ফোলা, গ্যাস এবং অন্যান্য হজমের সমস্যা হতে পারে।
পিত্তথলিতে পাথর
পিত্তথলি হলো আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিভিন্ন কারণে পিত্তথলিতে পাথর তৈরি হতে পারে। এই পাথরগুলি শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন বুকে ব্যথা, অতিরিক্ত গ্যাস, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, বমি এবং মলের রঙের পরিবর্তন।
- পেটের ডান দিকে, বিশেষ করে পাঁজরের নিচে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- খাবার খাওয়ার পর পেটে ভার এবং অস্বস্তি বোধ করা।
- চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া।
- কখনো কখনো জ্বর আসতে পারে।
পিত্তথলিতে পাথরের কারণ
- রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে পিত্তথলিতে পাথর তৈরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- পিত্তের রঙ যখন ঘন হয়ে যায়, তখন পাথর তৈরির সম্ভাবনা থাকে।
- মোটা মানুষদের পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- যদি পরিবারে কারও পিত্তথলিতে পাথর থাকে, তাহলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয় ও এর উপকারিতা জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
গ্যাসের ব্যথা ও হার্টের ব্যথার পার্থক্য
গ্যাসের ব্যথাকে অনেক সময় অনেকে হার্টের সমস্যা মনে করে ভুল করেন। গ্যাসের ব্যথা ও হার্টের ব্যথার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে গ্যাসের ব্যথা ও হার্টের ব্যথার পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
গ্যাসের ব্যথা
গ্যাসের ব্যথা হলো একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকেই অনুভব করে থাকেন। সাধারণত এই ব্যথা পেটের মধ্যে বা বুকের নিচের দিকে, স্টার্নামের কাছে অনুভূত হয়। কখনো কখনো এই ব্যথা পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে আবার কখনো কখনো কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় অনুভূত হতে পারে। গ্যাসের ব্যথার প্রকৃতি সাধারণত নিস্তেজ বা খিঁচুনির মতো হয়। এছাড়াও, পেট ফাঁপা, ফোলা এবং অস্বস্তি বোধ করা গ্যাসের ব্যথার সাধারণ লক্ষণ।
গ্যাসের ব্যথা বাড়ার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। আমরা যে খাবার খাই, বাতাস গিলে ফেলা এবং পরিবেশের পরিবর্তন এই ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার, যেমন মটরশুঁটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি খেলে গ্যাসের সমস্যা বাড়তে পারে। খাওয়ার সময় দ্রুত খাওয়া, কার্বনেটেড পানীয় পান করা এবং চুইং গাম চবানোর ফলে আমরা বাতাস গিলে ফেলি, যা পেটে গ্যাস তৈরি করে।
হার্টের ব্যথা
হৃদরোগের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো বুকের ব্যথা। এই ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে অনুভূত হয় এবং কখনো কখনো ঘাড়, চোয়াল, কাঁধ, বাহু বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুকের উপর চাপ অনুভব করা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, বমিভাব এবং মাথা ব্যথাও হৃদরোগের অন্যান্য লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা, মানসিক চাপ এবং তৈলাক্ত খাবার এই ধরনের ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ফিজিওথেরাপি দিতে কত টাকা লাগে তা নিয়ে জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
গ্যাসের ব্যথা ডায়াগনোসিস করার উপায়
হিস্টোরি নেওয়া
একজন চিকিৎসক যখন কোনো রোগীর গ্যাসের ব্যথার সমস্যা নিয়ে পরীক্ষা করেন, তখন প্রথমেই তিনি রোগীর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। এই ইতিহাস গ্রহণের মাধ্যমে চিকিৎসক ব্যথার তীব্রতা, ব্যথার শুরুর সময়, ব্যথার অবস্থান, ব্যথার স্থায়িত্বকাল, ব্যথার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য লক্ষণ (যেমন বমিভাব, বমি, পেট ফোলা ইত্যাদি), ব্যক্তিগত ও পারিবারিক রোগ ইতিহাস এবং ব্যবহৃত ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। এছাড়াও, হৃদয় ও ফুসফুসের কোনো সমস্যা আছে কিনা তাও জানার চেষ্টা করেন। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে চিকিৎসক গ্যাসের ব্যথার কারণ সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে পারেন।
ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন
রোগীর ইতিহাস গ্রহণের পর চিকিৎসক রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষায় রোগীর রক্তচাপ, শ্বাসক্রিয়া, তাপমাত্রা ইত্যাদি মাপা হয়। এছাড়াও, চিকিৎসক রোগীর পেট, বুক এবং অন্যান্য অংশ পরীক্ষা করে কোনো কোনো কোমলতা বা ফোলাভাব আছে কিনা তা পরীক্ষা করেন। ফুসফুস, হৃদয় এবং অন্ত্রের শব্দ শুনে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখেন। এই শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক গ্যাসের ব্যথার কারণ হিসেবে কোনো অন্ত্রের সংক্রমণ, হৃদরোগ বা অন্যান্য কোনো সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয় করতে পারেন।
ইসিজি
ইসিজি বা ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের বিদ্যুৎ সিগন্যাল রেকর্ড করা হয়। যখন কারো বুকে ব্যথা হয়, তখন হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে বলে ইসিজি করা হয়। এই পরীক্ষাটি হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন হার্ট অ্যাটাক, অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন) এবং হৃদপেশীর ক্ষতি ইত্যাদি শনাক্ত করতে সাহায্য করে। ইসিজি-এর মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের বিদ্যুৎ সিগন্যালের কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে তা শনাক্ত করা যায়, যা হৃদরোগের উপস্থিতির ইঙ্গিত দিতে পারে।
ফিজিওথেরাপি কি এবং ফিজিওথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় তা জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
এন্ডোস্কপি
এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার মাধ্যমে পাচনতন্ত্রের ভিতরের অংশ পরীক্ষা করা হয়। একটি লম্বা, পাতলা এবং ফ্লেক্সিবল টিউব, যার মাথায় একটি ক্যামেরা থাকে, মুখ দিয়ে গলা ও খাদ্যনালী হয়ে পাকস্থলী এবং অন্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। এই ক্যামেরার মাধ্যমে পাচনতন্ত্রের ভিতরের অংশের ছবি তোলা হয় এবং ডাক্তাররা সেই ছবি পরীক্ষা করে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখেন। যখন কারো বুকে ব্যথা হয়, তখন এন্ডোস্কোপি করে পাকস্থলী, ডিউডেনাম এবং খাদ্যনালিতে কোনো প্রদাহ, আলসার বা হার্নিয়া আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এই সমস্যাগুলিও বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে।
রক্ত পরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষা হলো হৃদরোগ নির্ণয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদপেশীর ক্ষতি হলে যেসব এনজাইম নিঃসৃত হয়, সেগুলোর মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এছাড়াও, রক্তে বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা পরিমাপ করে হৃদরোগের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। এই পরীক্ষাগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা হৃদরোগের ধরন এবং তীব্রতা সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে পারেন।
রেডিওলজিক্যাল ইমেজিং
রেডিওলজিক্যাল ইমেজিং হলো বুক ও পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর ছবি তোলার একটি প্রক্রিয়া। বুকে ব্যথার কারণ নির্ণয়ের জন্য বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করা হতে পারে। এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ফুসফুসে কোনো সমস্যা (যেমন নিউমোথোরাক্স, নিউমোনিয়া), হৃদয়ের আকার এবং কাঠামো, এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রের কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এই ইমেজগুলো বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকরা বুকে ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারেন।
পিএইচ মনিটরিং
ইসোফেগাস পিএইচ মনিটরিং হলো একটি পরীক্ষা যা খাদ্যনালীর অম্লতার মাত্রা পরিমাপ করে। যখন আমাদের পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসে তখন এসিড রিফ্লাক্স হয়। এই অবস্থা বুকের ব্যথা, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে খাদ্যনালীতে কতবার এবং কতক্ষণ অ্যাসিড উঠে আসছে তা নির্ণয় করা হয়। এটি এসিড রিফ্লাক্সের তীব্রতা এবং এর উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণে সাহায্য করে। এই পরীক্ষাটি সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা ধরে করা হয় এবং রোগীকে তার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হয়।
পিঠে ব্যথার লক্ষণ ও কারণগুলো জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
গ্যাসের জন্য বুকে ব্যথার চিকিৎসা
গ্যাসের জন্য বুকে ব্যথা হয়ে থাকে তা দূর করার জন্য কিছু ঔষধ, জীবনমান পরিবর্তন,খাবারের পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
মেডিকেশন
অ্যাসিড কমানোর ওষুধ
যখন বুকের ব্যথার কারণ হিসেবে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা অম্বলের সমস্যা ধরা পড়ে, তখন চিকিৎসকরা সাধারণত অ্যাসিড কমানোর ওষুধ নির্ধারণ করেন। এই ওষুধগুলি পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং খাদ্যনালীতে উঠে আসা অ্যাসিডের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে বুকের ব্যথা ও জ্বালাপোড়া উপশম করতে সাহায্য করে।
ক্লট-বাস্টিং ওষুধ (থ্রম্বোলাইটিক্স)
হার্ট অ্যাটাকের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে রক্তের জমাট বাঁধার কারণে হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে ক্লট-বাস্টিং ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলি রক্তের জমাটকে ভেঙে দেয় এবং হৃদপেশীতে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। এই ওষুধগুলি সাধারণত হাসপাতালে জরুরি অবস্থায় দেওয়া হয়।
ধমনী শিথিল করার ওষুধ
হৃদরোগের চিকিৎসায় ধমনী শিথিল করার ওষুধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ওষুধগুলি ধমনীগুলিকে প্রসারিত করে, যার ফলে রক্ত স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে। ধমনী শিথিল হওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে যায় এবং হৃদপেশীকে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে। ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
রক্ত পাতলা করার ওষুধ
রক্ত পাতলা করার ওষুধ হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য দেওয়া হয়। এই ওষুধগুলি রক্তকে পাতলা করে দেয় যাতে রক্তের জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমে যায়। রক্তের জমাট বাঁধলে ধমনীতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। রক্ত পাতলা করার ওষুধ এই ধরনের জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস
যদি বুকের ব্যথার কারণ হিসেবে উদ্বেগ বা আতঙ্কের আক্রমণ ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসকরা সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ নির্ধারণ করেন। এই ওষুধগুলি মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য পুনরস্থাপন করে মেজাজ উন্নত করতে এবং উদ্বেগ ও আতঙ্কের অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। ফলে বুকের ব্যথা সহ অন্যান্য শারীরিক উপসর্গগুলিও কমতে পারে। এই ওষুধগুলি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও রোগীর খাবার সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
গ্যাসের ব্যথার ঔষধ
অ্যান্টাসিড
অ্যান্টাসিড হলো এমন ধরনের ওষুধ যা পাকস্থলীতে উৎপন্ন অতিরিক্ত অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করে। আমরা জানি, খাদ্য হজমের জন্য পাকস্থলীতে অ্যাসিডের প্রয়োজন হলেও, অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন হলে তা খাদ্যনালীতে উঠে এসে জ্বালাপোড়া, বুক জ্বালা এবং অন্যান্য অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টাসিড এই অতিরিক্ত অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করে এই সমস্যাগুলি দূর করতে সাহায্য করে।
সিমেথিকন
সিমেথিকন একটি উপাদান যা পাকস্থলীর গ্যাসের ফোটাকে ভেঙে দেয়। পাকস্থলীতে খাবার হজমের সময় গ্যাস তৈরি হতে পারে এবং এই গ্যাস ফোটার কারণে ফাঁপা ভাব, বদহজম এবং অস্বস্তি হতে পারে। সিমেথিকনযুক্ত ওষুধ (যেমন গ্যাস-এক্স, মাইলিকন) এই ফোটাকে ভেঙে দেয় এবং গ্যাসকে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। ফলে পাকস্থলীর গ্যাসজনিত সমস্যাগুলি কমে যায়।
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর হলো এমন ধরনের ওষুধ যা পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদনকারী কোষগুলোকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। যখন আমাদের পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন হয় এবং তা খাদ্যনালীতে উঠে আসে তখন অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়ে থাকে। এই অবস্থা বুক জ্বালা, গলায় জ্বালা এবং অন্যান্য অস্বস্তি সৃষ্টি করে। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর এই অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে।
H2 ব্লকার
H2 ব্লকার, যেমন রেনিটিডিন এবং ফেমোটিডিন, হলো এমন ধরনের ওষুধ যা পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদনকে কমিয়ে দেয়। এই ওষুধগুলি পাকস্থলীর কোষগুলোতে একটি নির্দিষ্ট রিসেপ্টরকে ব্লক করে, যার ফলে হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া কমে যায়। হিস্টামিন অ্যাসিড উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই H2 ব্লকার এই রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
খাদ্যভ্যাসের পরিবর্তন
ট্রিগার ফুড বাদ
যেসব খাবার খেলে আপনার পেটে গ্যাস বেড়ে যায়, সেগুলোকে ট্রিগার ফুড বলা হয়। এই ধরনের খাবারগুলোতে মসলাদার খাবার, সাইট্রাস ফল (লেবু, কমলা ইত্যাদি), কার্বনেটেড পানীয়, কফি, চা, এবং অ্যালকোহল অন্তর্ভুক্ত। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করতে পারে এবং ফলে পেট ফোলা, বদহজম এবং অস্বস্তি হতে পারে। তাই, পেটের গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই ধরনের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
অল্প খাবার খাওয়া
একবারে অনেক পরিমাণে খাবার খাওয়ার পরিবর্তে, ছোট ছোট করে এবং ঘন ঘন খাওয়া উচিত। যখন আমরা একবারে অনেক খাবার খাই, তখন আমাদের পাকস্থলীকে তা হজম করতে বেশি সময় লাগে এবং ফলে পেটে গ্যাস জমে যায়। তাই, অল্প অল্প করে খেলে পাকস্থলীকে হজম করতে সহজ হয় এবং গ্যাসের সমস্যা কম হয়।
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করে। যখন আমাদের পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন হয় এবং তা খাদ্যনালীতে উঠে আসে, তখন গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থা বুক জ্বালা, বদহজম এবং অন্যান্য অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই, গ্যাসের কারণে হওয়া বুকের ব্যথা কমাতে আমাদের খাওয়াদাওয়ার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পরিমিত খাবার গ্রহণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
চিবানো খাবার
আমরা প্রায়ই শুনি যে খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া খুবই জরুরী। খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। কিন্তু অনেকের ধারণা, খাবার ভালো করে চিবিয়ে খেলে পেটে গ্যাস বেশি হয়। আসলে, খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর খাবারকে আরও ভালোভাবে হজম করতে পারে এবং গ্যাসের সমস্যা কম হয়। তবে, কিছু কিছু খাবারে এমন উপাদান থাকে যা পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করে। তাই, এই ধরনের খাবার খাওয়ার সময় সাবধান থাকা উচিত।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ, লক্ষণ ও বিশেষ করণীয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
জীবনমান পরিবর্তন
খাওয়ার পর শুয়ে পড়বেন না
খাওয়ার পরপরই বিছানায় যাওয়া উচিত নয়। খাওয়ার পর কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা অপেক্ষা করা উচিত। কারণ খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়লে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসতে পারে এবং এতে গ্যাস, বুক জ্বালা এবং অন্যান্য অস্বস্তি হতে পারে।
মাথা উঁচুতে রাখা
ঘুমানোর সময় মাথাকে কিছুটা উঁচু রেখে শোয়া উচিত। বেড থেকে মাথা কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উপরে রাখার চেষ্টা করুন। এজন্য বিশেষ ধরনের বালিশ বা বিছানার মাথাটাকে উঁচু করে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে খাবারের টুকরা এবং অ্যাসিড খাদ্যনালী হয়ে গলায় উঠে আসতে পারে না।
ধুমপান ছেড়ে দেওয়া
ধূমপান গ্যাসের সমস্যা আরও জটিল করে তুলতে পারে। ধূমপানের কারণে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এটি খাদ্যনালীতে উঠে আসার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ফলে বুক জ্বালা, গলায় জ্বালা এবং অন্যান্য অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে। তাই, গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা উচিত।
চাপ নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ গ্যাসের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, তখন আমাদের শরীরে কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যা পাকস্থলীর কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে এবং গ্যাসের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই, গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মানসিক চাপ কমানো খুবই জরুরী। গভীর শ্বাস নেওয়া, যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদি আপনার মানসিক চাপ খুব বেশি হয়, তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
শক্ত / টানটান কাপড় পরিহার
আপনার পোশাকের ধরনও আপনার পেটের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। খুব টাইট বা শক্ত কাপড় পরিধান করলে পেটের উপর চাপ পড়ে এবং এতে গ্যাস জমার সমস্যা বাড়তে পারে। তাই, ঢিলেঢালা এবং আরামদায়ক কাপড় পরিধান করা উচিত। এতে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে এবং পেটে অস্বস্তি কমবে।
হাইড্রেশন
দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা শরীরের জন্য খুবই জরুরি। পানি শরীরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। তবে, কার্বনেটেড পানীয় যেমন কোলা, স্প্রাইট ইত্যাদি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এই ধরনের পানীয়তে কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। তাই, পানি ছাড়া অন্য কোনো পানীয় পান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
কোমর ব্যথা সারানোর সহজ উপায় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
কিছু বিশেষ পরামর্শ
বুকের বাম দিকে ব্যথা অনেকের মধ্যেই হয়ে থাকে। অনেকেই এই ব্যথাকে হৃদরোগের সাথে জড়িয়ে ফেললেও, সবসময় তা হয় না। ব্যথার ধরন, তীব্রতা এবং স্থান অনুযায়ী এর কারণ অনেক কিছু হতে পারে। হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে গুরুতর হৃদরোগ পর্যন্ত, বুকের বাম দিকে ব্যথার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে।
যদি বুকের বাম দিকে ব্যথার সাথে শ্বাসকষ্ট, ঘামা, মাথা ঘোরা বা অন্য কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, এই ধরনের উপসর্গগুলি কোনো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
বুকের ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন। তাই, নিজে নিজে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়া বা অন্য কোন চিকিৎসা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy