পারকিনসন রোগ কেন হয় , এর লক্ষণ ও চিকিৎসা

পারকিনসন রোগ কি?

পারকিনসন রোগ হল একটি নিউরো-ডিজেনারাটিভ রোগ যা মস্তিষ্কের ডোপামিন নিউরনের ক্ষতির কারণে ঘটে। ডোপামিন হল একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা পেশী আন্দোলন এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পারকিনসন রোগে, ডোপামিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়, যার ফলে পেশী দুর্বলতা, কাঁপুনি, ধীর গতি এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়।

পারকিনসন রোগের কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে, জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির একটি সংমিশ্রণকে দায়ী বলে মনে করা হয়।

পারকিনসন রোগের কারণ

পারকিনসন রোগের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য কিছু কারণ হল:

বয়স: 60 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

জেনেটিক্স: পারকিনসন রোগের কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকে।

পরিবেশগত কারণ: কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক বা বিষাক্ত পদার্থ এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আরও জানুন : কোমর ব্যাথা নিরাময়ে আকুপাংচার যেন এক অনন্য চিকিৎসা

পারকিনসন রোগের লক্ষণ

এই রোগের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে সাথে খারাপ হতে থাকে। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • কাঁপুনি, সাধারণত হাত বা পায়ে
  • ধীর গতি এবং অঙ্গভঙ্গি
  • ভারসাম্য এবং সমন্বয় সমস্যা
  • কণ্ঠস্বর পরিবর্তন
  • মুখের পেশীগুলির অসাড়তা
  • ঘুমের সমস্যা
  • মানসিক পরিবর্তন, যেমন মেজাজ পরিবর্তন, মনোযোগের সমস্যা বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস

রোগের নির্ণয়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই। ডাক্তাররা রোগের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং অন্যান্য পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করেন।

পারকিনসন রোগের চিকিৎসা

পারকিনসন রোগের চিকিৎসার লক্ষ্য হল লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগের অগ্রগতি ধীর করা। ওষুধ হল এই রোগের চিকিৎসার প্রধান রূপ। ওষুধগুলি ডোপামিনের মাত্রা বাড়াতে বা ডোপামিনের মতো কাজ করে। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:

শারীরিক থেরাপি: পেশী শক্তি এবং নমনীয়তা উন্নত করতে সাহায্য করে।

থেরাপি: কথা বলা, হাঁটা এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজগুলিতে সহায়তা করতে পারে।

সার্জারি: কিছু ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচার ডোপামিনের মাত্রা বাড়াতে বা পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।
এই রোগের জন্য কোন নিরাময় নেই, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগের অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব।

পারকিনসন রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা

এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই। ডাক্তাররা রোগের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং অন্যান্য পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করেন।

রোগীর ইতিহাস

ডাক্তার রোগীর লক্ষণগুলির বিকাশ এবং তীব্রতার বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন। তারা রোগীর পারিবারিক ইতিহাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করবেন।

শারীরিক পরীক্ষা

ডাক্তার রোগীর পেশী শক্তি, সমন্বয় এবং ভারসাম্য পরীক্ষা করবেন। তারা রোগীর কাঁপুনি, অঙ্গভঙ্গি এবং অন্যান্য লক্ষণগুলিও পরীক্ষা করবেন।

অন্যান্য পরীক্ষা

ডাক্তার নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি বা একাধিকের পরামর্শ দিতে পারেন:

মাথার সিটি বা এমআরআই স্ক্যান: এই পরীক্ষাগুলি মস্তিষ্কে ডোপামিন নিউরনের ক্ষতি নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।

ডায়াগনস্টিক ব্রেন স্ক্যান: এই পরীক্ষাটি মস্তিষ্কে ডোপামিন নিউরনের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।

রক্ত পরীক্ষা: এই পরীক্ষাগুলি পারকিনসন রোগের সাথে যুক্ত অন্যান্য অবস্থার ruled out করতে সাহায্য করতে পারে।

এই রোগ নির্ণয় করা একটি জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে। ডাক্তাররা রোগ নির্ণয়ের আগে অন্যান্য সম্ভাব্য অবস্থাগুলি ruled out করার জন্য যত্ন নেবেন।

ওষুধ

পারকিনসন রোগের জন্য কোন নিরাময় নেই, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এবং রোগের অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব।ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই রোগের চিকিৎসার প্রধান রূপ হল ওষুধ। ওষুধগুলি ডোপামিনের মাত্রা বাড়াতে বা ডোপামিনের মতো কাজ করে।

ওষুধের ধরন

পারকিনসন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:

ডোপামিন এগোনিস্ট: এই ওষুধগুলি ডোপামিনের মতো কাজ করে।

লিভোডোপা: এই ওষুধটি ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়।

অ্যামিনোকিউটিক অ্যাসিড অক্সিডেজ ইনহিবিটরস (MAO-B ইনহিবিটরস): এই ওষুধগুলি ডোপামিনের ভাঙ্গন ধীর করে দেয়।

কার্বিকোলিনের রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট: এই ওষুধগুলি পেশী নড়াচড়া উন্নত করতে সাহায্য করে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

পারকিনসন রোগের ওষুধের কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল:

  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • হ্যালুসিনেশন
  • মনোযোগের সমস্যা
  • স্মৃতিশক্তি হ্রাস

আরও জানুন : পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও তার প্রতিকার

পারকিনসন রোগ এর অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি

পারকিনসন রোগের চিকিৎসার অন্যান্য পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:

এই রোগের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে:

নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম পেশী শক্তি এবং নমনীয়তা উন্নত করতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য: স্বাস্থ্যকর খাদ্য পেশীর ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম পেশীগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

চাপ কমাতে: চাপ এই রোগের লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।

ফিজিওথেরাপি পারকিনসন রোগের জন্য কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

ফিজিওথেরাপি এই রোগের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে এবং রোগীর স্বাধীনতা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা নিম্নলিখিত পধতিগুলির উপর ফোকাস করতে পারেন:

পেশী শক্তি এবং নমনীয়তা উন্নত করা: এই রোগে , পেশীগুলি দুর্বল এবং অনমনীয় হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা পেশী শক্তি এবং নমনীয়তা উন্নত করতে ব্যায়াম এবং অন্যান্য থেরাপির কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।

ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত করা: এই রোগে , ভারসাম্য এবং সমন্বয় সমস্যা হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা ভারসাম্য ব্যায়াম এবং অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করতে পারেন যা রোগীদের ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত করতে সাহায্য করে।

দৈনন্দিন কাজগুলিতে সহায়তা করা: এই রোগে , দৈনন্দিন কাজগুলি, যেমন হাঁটা, খাওয়া এবং কাপড় পরা, কঠিন হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা দৈনন্দিন কাজগুলিতে সহায়তা করার জন্য কৌশল এবং প্রযুক্তি শিখতে রোগীদের সাহায্য করতে পারেন।

পারকিনসন রোগে ফিজিওথেরাপির কিছু সাধারণ কৌশল

ব্যায়াম: এই রোগে, নিয়মিত ব্যায়াম পেশী শক্তি এবং নমনীয়তা উন্নত করতে এবং ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম প্রোগ্রাম তৈরি করতে সাহায্য করতে পারেন।

পেশী দীর্ঘায়ন: পেশী দীর্ঘায়ন পেশী অনমনীয়তা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের তাদের পেশীগুলিকে সঠিকভাবে দীর্ঘায়িত করতে শিখতে সাহায্য করতে পারেন।

ভারসাম্য প্রশিক্ষণ: ভারসাম্য প্রশিক্ষণ ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের ভারসাম্য ব্যায়াম এবং অন্যান্য কৌশল শিখতে সাহায্য করতে পারেন।

দৈনন্দিন কাজের প্রশিক্ষণ: দৈনন্দিন কাজের প্রশিক্ষণ রোগীদের দৈনন্দিন কাজগুলিতে আরও স্বাধীন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং কৌশল শিখতে সাহায্য করতে পারে।

পারকিনসন্সের প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কী কী?

প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে কম্পন, ব্র্যাডিকাইনেসিয়া (চলাচলের মন্থরতা), অনমনীয়তা এবং অঙ্গবিন্যাস অস্থিরতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। হাতের লেখা এবং মুখের অভিব্যক্তিতেও পরিবর্তন লক্ষণীয় হতে পারে।

পারকিনসন্স রোগের প্রতিকার আছে কি?

বর্তমানে, পারকিনসন রোগের কোন প্রতিকার নেই। চিকিত্সা লক্ষণগুলি পরিচালনা এবং জীবনের মান উন্নত করার উপর খেয়াল রাখতে হবে।

পারকিনসন রোগ সময়ের সাথে সাথে কীভাবে অগ্রসর হয়?

পারকিনসন্স একটি প্রগতিশীল রোগ, যার অর্থ সময়ের সাথে সাথে লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয়। যাইহোক, অগ্রগতির হার ব্যক্তিদের মধ্যে পরিবর্তিত হয়।

জীবনধারার পরিবর্তন কি পারকিনসনের উপসর্গগুলি পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে?

হ্যাঁ, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, এবং শারীরিক থেরাপি পারকিনসন্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গতিশীলতা এবং সামগ্রিক সুস্থতার উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।

ধন্যবাদন্তে –

ডাঃ আরাফাত হোসেন, পিটি
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
উত্তরা শাখা

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
https://visionphysiotherapy.com/appoi..

 

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 82