টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত কি কি খাওয়া উচিত নয়?

Table of Contents

টাইফয়েড জ্বর শুধুমাত্র একটি অসুস্থতা নয়, এটি একটি দীর্ঘ লড়াই। সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে এই রোগটি হয় এবং দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জ্বর, পেট ব্যথা, ক্লান্তি – এই লক্ষণগুলি আপনার জীবনকে স্থবির করে দিতে পারে। কিন্তু, আপনার পুনরুদ্ধারের যাত্রায় পুষ্টি একটি শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে।

একটি সঠিক খাদ্যতালিকা আপনার শরীরকে পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, জ্বর কমাতে সাহায্য করে এবং আপনার শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। কোন খাবার খাওয়া উচিত, কোনটি এড়াবেন এবং কেন – এই নিবন্ধে আমরা এই সব প্রশ্নের উত্তর দেব।

টাইফয়েড জ্বরে সঠিক খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। এটি শরীরকে শক্তি দেয় এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, হালকা এবং সহজে হজম হওয়ার মতো খাবার খাওয়া উচিত। এতে অনেক পরিমাণে পানি, জুস (বিশেষ করে কমলালেবু জুস), নারকেল পানি, চা এবং স্যুপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এর সাথে ওটমিল, তরল দুধ, বাদাম দুধ, মসুর ডালের স্যুপ, পাকা কলা এবং আপেল খাওয়া ভালো। প্রোটিনের জন্য ডিমের সাদা অংশ, হালকাভাবে রান্না করা মাছ এবং চিকেন খাওয়া যায়।

দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে ভিশন ফিজিপথেরাপি সেন্টারে উন্নতমানের সেবা পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

টাইফয়েড কিভাবে ছড়ায়

টাইফয়েড কিভাবে ছড়ায়?

ডা. সোহেল মাহমুদের মতে, টাইফয়েড জ্বর মূলত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। যদি কোনো খাবার বা পানিতে টাইফয়েডের জীবাণু থাকে এবং আমরা সেগুলো গ্রহণ করি, তাহলে আমরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারি। আবার, টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তির পায়খানা ও প্রস্রাবে এই জীবাণু থাকে। যদি এই পায়খানা বা প্রস্রাব কোনোভাবে পানি বা খাবারের সাথে মিশে যায়, তাহলে সেই পানি বা খাবার খেলেও আমরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারি।

টাইফয়েড ছড়ানোর অন্যান্য উপায়

টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাত ভালো করে না ধুয়ে খাবার খায় বা অন্যকে স্পর্শ করে, তাহলে সেই ব্যক্তির মাধ্যমেও টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় পানি পরিশোধন ব্যবস্থা ভালো নয় বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয় না, সেসব এলাকায় টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই টাইফয়েড থেকে নিজেকে বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং পরিষ্কার খাবার ও পানি গ্রহণ করা খুবই জরুরি।

বুকের ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত?

ডা. সাইফুল ইসলামের মতে, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খুবই জরুরি। জ্বরের কারণে শরীরের পানি কমে যায় এবং অনেকেরই ডায়রিয়া হয়, যা শরীরকে পানিশূন্য করে তোলে। এই কারণে, রোগীকে শরবত, স্যালাইন, ফলের রস, দুধ এবং ডিমের মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে শরীর দ্রুত সুস্থ হতে পারে।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। রোগের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাই শরীরকে সুস্থ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। বিশ্রাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে নিচে টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত, খাবারের নামসহ বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছি।

ডায়াবেটিস রোগীর বিশেষ নিষিদ্ধ খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

টাইফয়েড কমাতে ফলমূলের ভূমিকা

ফল

 টাইফয়েড থেকে সুস্থ হওয়ার সময় পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য ফল খাওয়া খুবই উপকারী। শরীর দুর্বল থাকলে এমন ফল বেছে নেওয়া উচিত যা পুষ্টির পাশাপাশি হাইড্রেশনও সরবরাহ করতে পারে। নিচে টাইফয়েডের সময় খাওয়া যেতে পারে এমন কিছু উপকারী ফলের বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

১. কলা

কলা টাইফয়েডের রোগীদের জন্য একটি আদর্শ ফল। এটি পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সহায়ক। কলা পটাসিয়ামে ভরপুর, যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, কলা খুব সহজে হজম হয় এবং এর মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি জোগায়। কলার মধ্যে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে, যা টাইফয়েডের সময় দুর্বল অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

২. ক্যান্টালুপস

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরকে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। এই সময় ক্যান্টালুপ খুবই উপকারী। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং অনাক্রম্যতা বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যান্টালুপে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এটি খাওয়া খুব সহজ হওয়ায় পেটে চাপ দেয় না। এছাড়া, এতে থাকা ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

৩. তরমুজ

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীর প্রচুর পরিমাণে পানি হারায়। এই অবস্থায় তরমুজ খাওয়া খুবই উপকারী। তরমুজের ৯০% এর বেশি অংশ পানি হওয়ায় এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া, তরমুজে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। টাইফয়েডের সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তরমুজের মতো হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার শরীরকে শক্তি জোগায়।

৪. আঙ্গুর

আঙ্গুর ছোট কিন্তু পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়। টাইফয়েডের সময় শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আঙ্গুর সহজেই শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। আঙ্গুর হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য, যা পেটে সান্ত্বনা দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

৫. পীচ

পীচ মিষ্টি ও রসালো একটি ফল, যা টাইফয়েডের সময় খাওয়া খুবই উপকারী। পীচে থাকা ফাইবার হজমকে সহায়তা করে এবং এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করে। পীচ খাওয়া সহজ এবং এটি পেটের উপর কোনো অতিরিক্ত চাপ ফেলে না, যা টাইফয়েড রোগীদের জন্য আদর্শ। মিষ্টি ও রসালো এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। পীচ খাওয়া খুব সহজ এবং পেটে কোনো চাপ দেয় না, যা টাইফয়েড রোগীদের জন্য আদর্শ।

৬. এপ্রিকটস

এপ্রিকট একটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল যা টাইফয়েডের সময় শরীরের জন্য উপকারী। এপ্রিকট একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল। এতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। এছাড়া, এপ্রিকটে থাকা পটাসিয়াম হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। টাইফয়েডের সময় শরীরকে শক্তিশালী করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এপ্রিকট একটি দারুণ খাবার।

এই ফলগুলো টাইফয়েডের সময় খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং পুষ্টিকর। এগুলো সহজে হজম হয় এবং পুষ্টির পাশাপাশি হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা রোগমুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

টাইফয়েড কমাতে তরল খাবারের ভূমিকা

তরল খাবার

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরের পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই সময় শরীর দুর্বল থাকে, তাই সঠিক তরল খাবার গ্রহণ করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। বিভিন্ন ধরনের তরল পানীয় শরীরকে শক্তিশালী করতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। নিচে টাইফয়েড থেকে সেরে ওঠার সময় কিছু উপকারী তরল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছেঃ

১. নারিকেলের পানি (Coconut Water)

নারকেল জল প্রাকৃতিকভাবে ইলেক্ট্রোলাইটে সমৃদ্ধ, যা টাইফয়েডের সময় খুবই উপকারী। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করে। নারিকেলের পানিতে প্রাকৃতিকভাবে পটাসিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং হারিয়ে যাওয়া লবণের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। এর হালকা মিষ্টি স্বাদ একে আরও উপকারী করে তোলে, ফলে টাইফয়েডের রোগীরা সহজেই এটি পান করতে পারে।

২. যবের পানি (Barley Water)

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় বার্লি জল অত্যন্ত উপকারী। বার্লি জল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং শক্তি জোগায়। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বার্লি জলে থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং পেটের সমস্যা দূর করে। টাইফয়েডের সময় বার্লি জল পান করা শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারে।

ফিজিওথেরাপি কোর্স কোথায় করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

৩. ইলেক্ট্রোলাইট-ফোর্টিফাইড ওয়াটার (Electrolyte Water)

ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানি টাইফয়েডের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডিহাইড্রেশন ঠেকাতে এবং শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করতে এটি কার্যকর। বিশেষত, ডিহাইড্রেশন রোধ করতে এবং শরীরের হারিয়ে যাওয়া সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো ইলেক্ট্রোলাইট পুনরুদ্ধার করতে এই পানীয়গুলো অত্যন্ত কার্যকর। এগুলি শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

৪. তাজা ফলের রস (Fresh Fruit Juice)

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রয়োজন হয়। এই দিক থেকে তাজা ফলের রস খুবই উপকারী। কমলালেবু, আপেল বা বেদানার মতো ফলের রসে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করতে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত চিনি মেশানো ফলের রস খাওয়া উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং রোগ সারাতে বাধা দিতে পারে।

৫. বাটারমিল্ক (Buttermilk)

বাটারমিল্ক বা মাখনযুক্ত দই টাইফয়েডের সময় অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রোবায়োটিক সরবরাহ করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। বাটারমিল্ক বা মাখনযুক্ত দই শরীরের জন্য এক মহৌষধের মতো কাজ করে। এতে থাকা প্রোবায়োটিক অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হজমের সমস্যা দূর করে। বাটারমিল্ক শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং পেটের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি শরীরের পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের স্তর উন্নত করে, যা টাইফয়েডের সময় অত্যন্ত জরুরি।

৬. বিশুদ্ধ পানি (Pure Hydrated Water)

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীর প্রচুর পরিমাণে পানি হারায়। এই হারিয়ে যাওয়া পানি পূরণ করার জন্য বিশুদ্ধ পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। বিশুদ্ধ পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলতে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাই টাইফয়েডের সময় নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।

ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয় তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

ভারী খাবার

ভাত

ভাতে প্রচুর পরিমাণে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই জটিল কার্বোহাইড্রেট শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি জোগায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। টাইফয়েড জ্বরে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাই তাকে ধীরে ধীরে শক্তি জোগান দেওয়া প্রয়োজন। ভাত এই কাজে সাহায্য করে

ভাত কেন টাইফয়েড জ্বরের জন্য উপযুক্ত একটি খাবার?

ভাত হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য হওয়ার কারণে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগীর জন্য খুব উপযুক্ত। টাইফয়েড জ্বরে অনেক রোগীরই হজমের সমস্যা হয়। ভাত হজমে সহজ হওয়ায় পেটে অস্বস্তি কম করে। এছাড়াও, ভাতে কোনো মসলা বা তেল থাকে না, যা পেটে আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই টাইফয়েড জ্বরে ভাত খাওয়া খুবই নিরাপদ এবং উপকারী।

টাইফয়েড কমাতে হালকা খাবারের ভূমিকা

হালকা খাবার

শরীর দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে কঠিন খাবার হজম করা কঠিন হয়ে পড়ে। হালকা খাবার খেলে পেটে তেমন সমস্যা হয় না এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ করে। নিচে টাইফয়েডের সময় উপকারী কিছু হালকা খাবারের বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

১. সাদা রুটি

সাদা রুটি হজমে সহজ হয় এবং পেটে অস্বস্তি কম করে। টাইফয়েড জ্বরে অনেক রোগীরই হজমের সমস্যা হয়। সাদা রুটি হজমে সহজ হওয়ায় পেটে অস্বস্তি কম করে এবং শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।

যখন রোগীর অবস্থা কিছুটা ভালো হতে শুরু করে তখন সাদা রুটি ধীরে ধীরে খাদ্য তালিকায় যোগ করা উচিত। কারণ, রোগের প্রথম দিকে পেট খুবই সংবেদনশীল থাকে। হঠাৎ করে অনেক পরিমাণে সাদা রুটি খেলে পেটে অস্বস্তি বাড়তে পারে। তাই ধীরে ধীরে খাওয়া শুরু করে এবং পরিমাণ বাড়িয়ে নেওয়া উচিত।

২. শাকসবজি

টাইফয়েড জ্বরের সময় সাধারণত হালকা ও সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া উচিত। শাকসবজি এসব খাবারের মধ্যে অন্যতম খাবার। বিশেষ করে ‘সেদ্ধ শাকসবজি’। পালংশাক, মূলা, গাজর ইত্যাদি শাকসবজি ভালো করে সেদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। এই শাকসবজিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে শক্তি জোগায়। সেদ্ধ শাকসবজি হজমে সহজ হয় এবং পেটে অস্বস্তি কম করে।

টাইফয়েড জ্বরে শাকসবজির স্যুপ খাওয়াও খুবই উপকারী। স্যুপ হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে। শাকসবজির স্যুপে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, স্যুপ খাওয়া হজমে সহায়তা করে এবং পেটে অস্বস্তি কম করে।

ফিজিওথেরাপি দিতে কত টাকা লাগে তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

৩ সেদ্ধ চাল

সাদা সেদ্ধ চাল খাওয়া খুবই উপকারী। এটি সহজে হজম হয় এবং শরীরকে দ্রুত শক্তি প্রদান করে। সেদ্ধ চালে থাকা কার্বোহাইড্রেট দুর্বল শরীরের জন্য শক্তির একটি চমৎকার উৎস। এটি হালকা এবং হজমে সহজ হওয়ায় অন্ত্রের উপর কোনো বাড়তি চাপ ফেলে না। সাদা সেদ্ধ চালকে শাক-সবজির স্যুপ বা সামান্য গলানো মাখনের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে খাবারের পুষ্টিমান আরও বাড়ে।

৪. বেকড আলু

বেকড আলু একটি সহজপাচ্য এবং স্টার্চি খাবার, যা টাইফয়েডের সময় শক্তির ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক। বেকড আলুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। আলুকে বেক করে বা সেদ্ধ করে হালকা লবণ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে, যা খাবারটিকে স্বাদিষ্ট এবং পুষ্টিকর করে তোলে। বেকড আলু পেটের উপর কোনো অতিরিক্ত চাপ না ফেলে শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

৫. নরম-সিদ্ধ বা সিদ্ধ ডিম

ডিম প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস এবং টাইফয়েডের সময় শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনর্গঠনে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিম প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। প্রোটিন শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে শক্তিশালী করে। নরম-সিদ্ধ বা সিদ্ধ ডিম সহজে হজম হয় এবং পেটের উপর কোনো চাপ ফেলে না। এছাড়া, ডিমে ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি১২-এর মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

৬. বেকড আপেল

বেকড আপেল এমন একটি খাবার যা পেটে কোনো চাপ না ফেলে শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। বেকড আপেলের প্রাকৃতিক মিষ্টতা খাবারে এক অনন্য স্বাদ যোগ করে এবং এটি সহজে হজম হয়। টাইফয়েডের সময় ফলের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরের পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৭. লাচ্ছি

লাচ্ছি একটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ পানীয়, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। টাইফয়েডের সময় প্রায়ই হজমে সমস্যা হতে পারে, আর লাচ্ছিতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া এই সমস্যা সমাধানে সহায়ক। টাইফয়েডের সময় হজমশক্তি কমে যাওয়ায় লাচ্ছিতে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, লাচ্ছিতে প্রোটিনও থাকে যা শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে শক্তিশালী করে। গরমের দিনে লাচ্ছি শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে।

পিঠে ব্যথা, প্রতিরোধ ও বিশেষ চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকলে যে যে খাবার গুলো খাবেন

আস্তে আস্তে টাইফয়েড জ্বর থেকে সুস্থ হতে থাকলে যে যে খাবার গুলো খাবেন

টাইফয়েড থেকে ধীরে ধীরে সেরে ওঠার সময় খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হওয়া উচিত। প্রথমদিকে হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া শুরু করা প্রয়োজন, পরে শরীর যখন আরও ভালো অনুভব করতে শুরু করবে তখন ধীরে ধীরে কঠিন খাবারগুলো পুনরায় চালু করা যেতে পারে। টাইফয়েডের রিকভারি স্টেজে শরীরকে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও শক্তি দিতে সহায়ক কিছু খাবারের বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. সহজে হজমযোগ্য ফল

টাইফয়েডের সময় এমন ফল খাওয়া উচিত যা সহজে হজম হয় এবং শরীরকে পুষ্টি ও শক্তি জোগায়।

  • কলাঃ কলা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ একটি ফল। পটাসিয়াম শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সহজে হজম হয়। কলা শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং পেটের জন্য উপকারী।
  • আপেলঃ আপেল ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আপেল খেলে পেটের উপর কোনো অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।
  • পেয়ারাঃ পেয়ারা একটি হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য ফল। এতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • আমড়াঃ আমড়া ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

২. সেদ্ধ শাকসবজি

সেদ্ধ শাকসবজি টাইফয়েডের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এগুলো সহজে হজম হয় এবং শরীরকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

  • গাজরঃ গাজর ভিটামিন এ-এর একটি ভাল উৎস। এটি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল এবং শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়।
  • পালংশাকঃ পালংশাক আয়রন এবং ভিটামিন কে-এর একটি ভাল উৎস। এটি রক্ত তৈরি করতে এবং হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • টমেটোঃ টমেটো ভিটামিন সি এবং লাইকোপিনে সমৃদ্ধ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ফুলকপিঃ ফুলকপি ভিটামিন সি, কে এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। এটি হজমের জন্য ভাল এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

৩. ভাত

সাদা ভাত টাইফয়েডের সময় খাওয়ার জন্য আদর্শ। এটি একটি জটিল কার্বোহাইড্রেটের উৎস যা শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে। ভাত হালকা ও সহজে হজম হয় এবং এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের এনার্জি লেভেল বাড়াতে সাহায্য করে।

৪. সাদা রুটি

সাদা রুটি টাইফয়েড রোগীদের জন্য উপযুক্ত একটি খাদ্য পণ্য। এটি হালকা, সহজে হজমযোগ্য এবং ধীরে ধীরে কঠিন খাবার পুনরায় চালু করার জন্য ভালো বিকল্প। রুটি হজমে সহজ এবং শরীরকে প্রাথমিক শক্তি সরবরাহ করে।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

৫. দই

দইতে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। টাইফয়েডের সময় অন্ত্রের সমস্যা হতে পারে, আর দই এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া, দইতে থাকা প্রোটিন শরীরকে শক্তি দেয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করে।

৬. ডিম

প্রোটিন আমাদের শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করে এবং নতুন কোষ তৈরি করে। তাই, কোনো রোগ বা অসুস্থতার পরে, যেমন টাইফয়েডের পরে, শরীরকে দ্রুত সুস্থ করতে ডিম খুবই উপকারী। ডিমে থাকা প্রোটিন শরীরকে শক্তি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ডিমে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয়। তাই, ডিমকে একটি সম্পূর্ণ খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

৭. মসুর ডাল

মসুর ডাল হালকা এবং সহজে হজম হয়, যার ফলে এটি অনেকের কাছেই পছন্দের খাবার। বিশেষ করে, টাইফয়েড বা অন্য কোন জ্বর জ্বালায় আক্রান্ত হলে মসুর ডালের স্যুপ বা খিচুড়ি শরীরকে দ্রুত শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ করে। এছাড়াও, মসুর ডালে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং, মসুর ডাল শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি একটি পুষ্টিকর খাবার যা সবার খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত।

লেগুম (ডাল জাতীয় শস্য)

৮. লেগুম (ডাল জাতীয় শস্য)

মুগ ডাল, ছোলা, মসুর ডালের মতো লেগুম প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। প্রোটিন শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করে এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। টাইফয়েডের পরে লেগুম খেলে শরীর দ্রুত শক্তি পায় এবং সুস্থ হয়।

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

৯. দুধ

দুধ হলো প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া একটি পুষ্টিকর খাবার, যা প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এই পুষ্টিগুণগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করে এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে, টাইফয়েড বা অন্য কোন রোগের পরে দুধ পান করলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে এবং হাড় মজবুত হয়।

১০. পনির (ভারতীয় পনির বা পনির)

নিরামিষভোজীদের জন্য পনির প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের একটি দারুণ উৎস। প্রোটিন শরীরের কোষগুলোকে মেরামত করে এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করে। টাইফয়েডের মতো অসুস্থতার পরে, শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে পনির খুবই উপকারী। পনিরে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সুতরাং, পনিরকে একটি সুষম খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

১১. মুগ ডাল (সিদ্ধ মুগ ডাল)

মুগ ডাল হলো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং হজমে সাহায্য করে। টাইফয়েডের সময় মুগ ডাল খেলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শরীর দ্রুত সুস্থ হয়।

১২. মধু

মধুতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে টাইফয়েডের মতো সংক্রমণজনিত রোগের সময় মধু খেলে শরীর দ্রুত শক্তি পায় এবং রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। মধু হজমে সহায়তা করে এবং শরীরকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও, মধু ঘুমের সমস্যা দূর করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং, মধুকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আপনি নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন।

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

১৩. সয়া বিনস

সয়া বিনস ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং দ্রুত নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, সয়া বিনস প্রোটিন এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ যা টাইফয়েডের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

১৪. টোফু

টোফু হলো সয়াবিন থেকে তৈরি একটি উচ্চমানের উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস। এটি শুধুমাত্র নিরামিষভোজীদের জন্যই নয়, সবার জন্যই একটি পুষ্টিকর খাবার। টোফুতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং দ্রুত নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। এটি সহজে হজম হয় এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। বিশেষ করে, টাইফয়েডের মতো অসুস্থতার সময় টোফু খেলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয় এবং শক্তি পায়। টোফুতে কলেস্টেরল নেই এবং এটি সোডিয়ামেও কম, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং, টোফুকে একটি সুষম খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

১৫. বাদাম

বাদাম স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। এই স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এবং এটি শরীরকে শক্তি দেয়। বাদামে থাকা প্রোটিন শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করতে সাহায্য করে। টাইফয়েডের সময় বাদাম খেলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয় এবং শক্তি পায়।

টাইফয়েড রোগীদের জন্য সঠিক ডায়েট

টাইফয়েড রোগীদের জন্য সঠিক ডায়েট (ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার)

টাইফয়েড জ্বরের সময় শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে সঠিক পুষ্টি এবং হালকা হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে এমন খাবার নির্বাচন করা উচিত যা সহজে হজম হয়, শরীরকে পর্যাপ্ত শক্তি দেয় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারের পরিকল্পনা করলে সেটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দ্রুত আরোগ্যের পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ ও রাতের খাবারে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সকালের নাস্তা (Breakfast)

দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার এই সকালের খাবার, তাই এটি এমন হতে হবে যা হালকা হলেও পুষ্টিতে ভরপুর। টাইফয়েড জ্বরের রোগীদের জন্য কিছু উপযুক্ত প্রাতঃরাশের আইটেম হতে পারে-

  • নরম-সিদ্ধ ডিমঃ এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডিম নরম করে সিদ্ধ করা হলে তা সহজে হজম হয়।
  • ওটমিলঃ এটি ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। ওটমিলের সাথে কিছু মধু মেশালে এটি আরো পুষ্টিকর হয়।
  • দইঃ: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যাও কমায়। মধু বা কলা যোগ করলে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায়।

সায়াটিকা সারানোর উপায় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

দুপুরের খাবার (Lunch)

দুপুরের সময় সময় এমন খাবার খেতে হবে যা শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে এবং হজমের জন্য সহজ হয়-

  • সেদ্ধ ভাতঃ ভাত দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। ভাতে সামান্য ঘি মেশালে এর পুষ্টিগুণ আরও বাড়ে।
  • বাষ্পে সেদ্ধ শাকসবজিঃ শাকসবজি ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। বাষ্পে সেদ্ধ করার ফলে পুষ্টিগুণ অটুট থাকে এবং সহজে হজম হয়।
  • চর্বিহীন প্রোটিনঃ চর্বিহীন মুরগি বা মাছ সেদ্ধ করে অথবা হালকা স্যুপের মধ্যে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে।

রাতের খাবার (Dinner)

রাতের খাবার হালকা ও সহজ হজমযোগ্য হওয়া উচিত, যাতে রাতে ভালো ঘুম হয় এবং শরীর বিশ্রাম নিতে পারে-

  • ভর্তা আলুঃ সেদ্ধ আলু সহজে হজম হয় এবং পেটকে আরাম দেয়। সামান্য লবণ এবং মাখন মিশিয়ে এটি তৈরি করা যেতে পারে।
  • হালকা সবজির স্যুপঃ বিভিন্ন শাকসবজি দিয়ে তৈরি হালকা স্যুপ পুষ্টি এবং হাইড্রেশন প্রদান করে। এতে সেদ্ধ মুরগির ছোট টুকরা যোগ করা যেতে পারে, যা প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে।
  • দই বা খিচুড়িঃ হালকা খিচুড়ি বা দই রাতের খাবারের ভালো বিকল্প হতে পারে। খিচুড়ি সহজে হজম হয় এবং পেটের গ্যাস বা অস্বস্তি কমায়।

ঘাড় ও পিঠে ব্যথা কেন হয়- এ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া যাবে না

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

টাইফয়েড জ্বরের সময় পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, কিছু খাবার উপসর্গগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারে, হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং রোগমুক্তির প্রক্রিয়া ধীর করে দিতে পারে। টাইফয়েড জ্বরের সময় নিম্নলিখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:

১. উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার

যদিও সাধারণত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার স্বাস্থ্যকর, তবে টাইফয়েডের সময় হজমের জন্য এগুলো কঠিন হতে পারে, কারণ দুর্বল হজম প্রক্রিয়া ফাইবার প্রক্রিয়া করতে অনেক সময় নেয়। এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়:

  • ওটস এবং বার্লি: এসব শস্যে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা টাইফয়েডে হজম করা কঠিন হতে পারে।
  • কাঁচা শাকসবজি এবং ফল: কাঁচা এবং খোসা ছাড়ানো শাকসবজি ও ফলগুলিতে জীবাণু থাকতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং হজম প্রক্রিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
  • কাঁচা লেটুস: লেটুস কাঁচা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা পেটের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

২. মসলাযুক্ত এবং তৈলাক্ত খাবার

মসলা এবং তেলসমৃদ্ধ খাবার টাইফয়েডের সময় হজম প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত:

  • মরিচ, গরম মসলা এবং গরম সস: এগুলো হজমে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং পেটের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • ঘি এবং মাখন: চর্বি সমৃদ্ধ দুগ্ধজাত পণ্য যেমন ঘি, মাখন এবং মোজারেলা পনির হজম করা কঠিন, তাই এগুলি এড়িয়ে চলা ভালো।

টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

৩. ফল

কিছু ফল টাইফয়েডের সময় খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এতে চিনি বা অ্যাসিড বেশি থাকতে পারে, যা দুর্বল হজম প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে:

  • কাঁচা বেরি, শুকনো ফল এবং আনারস: এসব ফলে চিনি এবং অ্যাসিডের মাত্রা বেশি, যা টাইফয়েডের সময় পেটের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৪. বাদাম

বাদাম সাধারণত স্বাস্থ্যকর, কিন্তু টাইফয়েডের সময় হজমের জন্য কষ্টকর হতে পারে। এগুলো হজমে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং পেটের ভারী ভাব বাড়িয়ে দিতে পারে:

  • আখরোট, ম্যাকাডামিয়া বাদাম এবং অন্যান্য বাদাম: টাইফয়েড থেকে সেরে ওঠার সময় এগুলি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলি হজমে অতিরিক্ত চাপ ফেলে।

৫. লেগুম

লেগুম বা ডাল জাতীয় খাবার হজম প্রক্রিয়ায় গ্যাস ও ফুলে যাওয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা টাইফয়েডের সময় অস্বস্তির কারণ হতে পারে:

  • কিডনি বিন, কালো মটরশুঁটি এবং ছোলা: এসব লেগুম গ্যাস এবং ফুলে যাওয়ার কারণে হজমের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।

৬. বীজ

বীজ পুষ্টিকর হলেও টাইফয়েডের সময় এগুলো হজম করা কঠিন হতে পারে। তাই, রোগমুক্তির সময় নিচের বীজগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:

  • শণ, কুমড়া এবং চিয়া বীজ: এসব বীজ হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

পারকিনসন রোগের বিশেষ লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

৭. চর্বিযুক্ত এবং জাঙ্ক ফুড

চর্বিযুক্ত এবং জাঙ্ক ফুডে পুষ্টির মান কম থাকে এবং চর্বি ও মশলার পরিমাণ বেশি থাকে, যা টাইফয়েডের জন্য একদমই উপযুক্ত নয়:

  • ফাস্ট ফুড, ভাজা খাবার: এসব খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয় না এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।

বিশেষ পরামর্শ

টাইফয়েডের পরে হজমশক্তি কমজোর থাকে। তাই, শুরুতে সহজে হজমযোগ্য খাবার যেমন তরল খাবার, স্যুপ, দুধ, এবং ফলের রস খাওয়া উচিত। কয়েকদিন পর ধীরে ধীরে কঠিন খাবার যেমন ভাত, ডাল, এবং সবজি চালু করা যেতে পারে। খাবার হালকা এবং পরিষ্কার রাখা উচিত। মশলাদার, তৈলাক্ত এবং ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

মনে রাখবেন, টাইফয়েডের পরে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি। কোনো ধরনের জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করা উচিত।

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।


পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

টাইফয়েড জ্বর হলে গোসল করা সম্পর্কে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। সাধারণত, জ্বর থাকলে গোসল করার ক্ষেত্রে অনেকেই সংশয়ী হয়ে পড়েন। টাইফয়েড জ্বরে গোসল করা সম্পূর্ণ নিষেধ নয়, তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। জ্বর কমানোর জন্য ঘাড় ও কপালে জলপট্টি দেওয়া বা কুসুম গরম পানিতে ভিজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছলে উপকার পাওয়া যায়। তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঠান্ডা পানিতে গোসল করা উচিত নয়, কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা আরও কমিয়ে দিতে পারে এবং অস্বস্তি বাড়াতে পারে।

টাইফয়েড জ্বরে ডাবের পানি খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। টাইফয়েডে ডায়রিয়া এবং বমি হওয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়, ফলে ডাবের পানি শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ডাবের পানিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।

চুম্বনের মাধ্যমে টাইফয়েড ছড়ানো সম্ভব নয়। টাইফয়েড সাধারণত দূষিত খাবার বা পানি খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগের জীবাণু মূলত মলের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়ায়। যদি কেউ দূষিত হাত দিয়ে খাবার তৈরি করে বা খায়, তখন অন্যরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই টাইফয়েড থেকে নিরাপদ থাকতে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং হাত ভালো করে ধোয়া জরুরি।

টাইফয়েড জ্বরে ভেষজ চা খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী। এই রোগে শরীরের পানিশূন্যতা দূর করার জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা জরুরি। ভেষজ চা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং কিছু ভেষজের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তুলসী চা, আদা চা ইত্যাদি ভেষজ চা টাইফয়েডের কিছু লক্ষণ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা এবং হজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, চা খাওয়ার আগে গরম করতে হবে এবং চিনি কম রাখা উচিত।

হ্যাঁ, টাইফয়েড জ্বরে লুজ মোশন বা ডায়রিয়া হওয়া খুবই সাধারণ। টাইফয়েড হলো একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা প্রায়শই দূষিত খাবার বা পানি খাওয়ার ফলে হয়। এই সংক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া। ডায়রিয়া ছাড়াও, টাইফয়েডে কাশি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়াও হতে পারে। যদি আপনি টাইফয়েডের এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

টাইফয়েড জ্বরে ঘি খাওয়া সাধারণত পরামর্শ দেওয়া হয় না। টাইফয়েডে হজমশক্তি কমে যায় এবং ঘি হজম করতে শরীরকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে, ঘি খাওয়ার ফলে অস্বস্তি, পেট ফোলা বা ডায়রিয়া হতে পারে। টাইফয়েডের সময় হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া উচিত যেমন- উধাও ভাত, সবজি স্যুপ, এবং ফলের রস। মাখন এবং ঘির মতো চর্বিযুক্ত খাবার এই সময় এড়িয়ে চলাই ভাল।

Author - Dr Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Dr. Saiful Islam
Dr. Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Articles: 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *