আমরা প্রায়ই মনে করি যে বুকের ব্যথা হলেই তা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। কিন্তু আসলে বুকের ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। ফুসফুস, মাংসপেশি, পর্শুকা বা স্নায়ুবিক সমস্যাও বুকের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথাগুলি খুবই গুরুতর এবং জীবন সংকটাপূর্ণ হতে পারে। তবে সবসময়ই এমন হতে হয় তা নয়। অনেক সময় এটি মারাত্মক কিছু নাও হতে পারে। তাই, বুকের ব্যথা অনুভব হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বুকের ব্যথা কেন হয়?
হার্টের সমস্যাজনিত কারণে বুকে ব্যথা
মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন বা হার্ট অ্যাটাক
হার্টে রক্তপ্রবাহের জন্য করোনারি ধমনী রয়েছে। আর এ ধমনিতে চর্বি জমলে হার্টে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। আর হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণই হলো বুকে ব্যথা।
মায়োকার্ডাইটিস
হার্টের মাংসপেশিতে বিভিন্ন কারণে প্রদাহ হতে পারে। আর এই প্রদাহজনিত কারণে অনেক সময় বুকে ব্যথা হয়। আর এই ব্যথাটা অনেকটা হার্ট অ্যাটাকের মতই হয়ে থাকে।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন এর তথ্য মতে:
ভাইরাসজনিত ইনফেকশনের কারণে মায়োকার্ডাইটিস হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
পেরিকার্ডাইটিস
হার্টের চারপাশে যে থলের মত জায়গা রয়েছে, ওইখানে প্রদাহ হলে পেরিকার্ডাইটিস হয়। আর এ সমস্যা হলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয় তা হলো:
- বুকে ব্যথা
- হার্টের চারপাশে ফ্লুইড বা তরল জমা
- শক হওয়া
বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, ক্যান্সার, অটোইমিউন ডিজিজ এর কারণে পেরিকার্ডাইটিস হয়ে থাকে।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ
করোনারি ধমনি কোন কারণে ব্লকেজ হয়ে গেলে হার্ট ঠিকমত রক্ত প্রবাহ পায় না। করোনারি আর্টারি ডিজিজ, বা হৃদপিণ্ডের ধমনীর রোগ, একটি সাধারণ অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলি সংকীর্ণ হয়ে যায়। এই সংকীর্ণতা সাধারণত ধমনীর দেয়ালে ফ্যাট জমার কারণে হয়। ফলে, হৃদপিণ্ডের পেশিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছায় না। এর ফলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যদি এই অবস্থাটি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো জীবনঘাতী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আর হার্ট রক্ত না পেলে বুকে ব্যথা হতে পারে।
মাইট্রাল ভালভ প্রোল্যাপস
বাম অলিন্দ ও নিলয়ের মাঝখানে মাইট্রাল ভালভ থাকে। কোন কারণে এই ভালভে সমস্যা হলে এটি ঠিকভাবে বন্ধ হতে পারে না। যার ফলে বুকে ব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন সহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত, এই ভালভ রক্তকে একদিকে প্রবাহিত হতে দেয় এবং ফিরে আসতে বাধা দেয়। কিন্তু মাইট্রাল ভালভ প্রোল্যাপসে এই ভালভটি ঠিকভাবে বন্ধ হতে পারে না, ফলে রক্ত কিছুটা পিছিয়ে যায়। এই অবস্থাটি অনেক মানুষের মধ্যে দেখা যায় এবং প্রায়শই কোনো লক্ষণ ছাড়াই থাকে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, এটি বুকে ব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, অস্বস্তি, এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও মাইট্রাল ভালভ প্রোল্যাপসের চিকিৎসা সবসময় প্রয়োজন হয় না, তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরূরী।
অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম ও বিচ্ছেদ
অ্যাওর্টা বা মহাধমনী হার্ট থেকে সারাদেহে রক্ত সরবরাহ করে। কোন কারণে অ্যাওর্টা ছিড়ে গেলে হার্ট থেকে সারাদেহে রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। আর অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজমে মহাধমনী অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়ে যায়। অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম ও বিচ্ছেদ উভয় কন্ডিশনে বুকে ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে।
অ্যানজাইনা
অ্যানজাইনা হল হৃদরোগের একটি প্রাথমিক লক্ষণ। যখন হৃদপিণ্ডের পেশী পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পায় না, তখন এই অবস্থা দেখা দেয়। অ্যানজাইনার সময় বুকে চাপ অনুভূত হয়, যেন কেউ বুকের উপর চেপে বসে আছে। এই ব্যথা কাঁধ, পিঠ, বাহু এবং চোয়াল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, অ্যানজাইনা হৃদরোগের একটি প্রাথমিক সঙ্কেত হিসেবে কাজ করে এবং যদি এটি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। করোনারি আর্টারি ডিজিজ, যা হৃদপিণ্ডের ধমনীতে প্লাক জমার কারণে হয়, অ্যানজাইনার একটি সাধারণ কারণ।
হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি
হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি হল একটি হৃদরোগ যেখানে হৃদপিণ্ডের পেশি, বিশেষ করে বাম নিলয়, অস্বাভাবিকভাবে ঘন হয়ে যায়। এই অবস্থাটি প্রায়শই পারিবারিক ইতিহাস বা জিনগত কারণে হয়। হৃদপিণ্ডের পেশি ঘন হওয়ার ফলে হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করতে অসুবিধা হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এই রোগের লক্ষণ হিসেবে বুকে ব্যথা, হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি এবং মাথা ঘোরা অনুভব হতে পারে। যদি এই অবস্থাটি সময়মত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি আরও খারাপ হতে পারে এবং জীবন সংকটাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
বুকে ব্যথা, হৃদস্পন্দন এর পরিবর্তন, শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা, হাত ও পা ফোলে যাওয়াসহ নানাধরণের অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। সময়ের সাথে অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে। সেইক্ষেত্রে অবশ্যই মেডিকেল ইমারজেন্সি চিকিৎসা নিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর বিশেষ খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
ফুসফুসের সমস্যাজনিত কারণে বুকে ব্যথা
ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা যেমন পালমোনারি হাইপারটেনশন, প্লুরেসি, নিউমোনিয়া, পালমোনারি এমবলিজম, যক্ষা, অ্যাজমাসহ নানা জটিলতায় বুকে ব্যথা হতে পারে।
পালমোনারি হাইপারটেনশন
পালমোনারি ধমনী হার্ট থেকে রক্ত ফুসফুসে সরবরাহ করে। পালমোনারি হাইপারটেনশন হল একটি রোগ যা ফুসফুসে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত হৃদপিণ্ড থেকে ফুসফুসে শুদ্ধি করার জন্য রক্ত যায় এবং পালমোনারি ধমনী এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই ধমনীতে বিভিন্ন কারণে সমস্যা হলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং এর ফলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়া এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এই অবস্থাটি যদি গুরুতর হয়ে পড়ে তাহলে হৃদপিণ্ডের উপর চাপ বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
প্লুরেসি
ফুসফুসের পর্দার মধ্যে প্রদাহ হলে প্লুরেসি হয়ে থাকে। এই রোগে সাধারণত বুক ও কাঁধে ব্যথা হয়, যা অনেক সময় নিস্তেজ ধরনের হয়। এই ব্যথার তীব্রতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যদি প্লুরেসির চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি জীবন সংকটাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। প্লুরেসির অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, এবং কাশি। এই রোগের কারণ হিসেবে নিউমোনিয়া, ক্যান্সার, বা হৃদরোগ ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে। সঠিকভাবে চিকিৎসা না নিলে জীবন বিপদাপন্ন হতে পারে।
নিউমোনিয়া
ফুসফুসের ইনফেকশনকে নিউমোনিয়া বলে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগী সাধারণত গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা অনুভব করে। নিউমোনিয়ার অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, ঘাম, রক্তাক্ত কাশি, দ্রুত শ্বাস এবং বমিভাব। এই রোগটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে হয়। যদি নিউমোনিয়া সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি ফুসফুসের পুঁজ জমে যাওয়া, রক্তে সংক্রমণ এবং শ্বাসকষ্টের মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত হাত ধোয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ এবং ফ্লু এবং নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। যদি আপনি নিউমোনিয়ার কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পালমোনারি এমবলিজম
যে সকল ধমনী ফুসফুসে পুষ্টি সরবরাহ করে, সেই ধমনীতে জমাট বাধা রক্ত আটকে গেলে পালমোনারি এমবলিজম হয়।
গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো হল:
- যখন শ্বাস নেওয়া হয়, তখন বুকে ব্যথা হয়,
- পিঠে ব্যথা হয়,
- কফের সাথে রক্ত আসলে,
- পায়ে ব্যথা,
- প্রচন্ড ঘেমে যাওয়া,
- আলোতে মাথা ব্যথা।
পালমোনারি এমবলিজম জীবন বিপদাপন্ন রোগ হলেই জরুরী চিকিৎসা না হলেও চলে।
যক্ষা
এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগী সাধারণত বুকে ব্যথা অনুভব করে, কফের সাথে রক্ত আসতে পারে, ওজন কমে যায়, জ্বর হয় এবং রাতে শরীর ঘামতে পারে। যদি যক্ষা সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। যক্ষা একটি সংক্রামক রোগ, তাই যক্ষা রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরী।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় জানেন? না জানলে আমাদের বিস্তারিত পোস্টটি পড়ুন।
অ্যাজমা
অ্যাজমা একটি সাধারণ দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শ্বাসনালিকে প্রভাবিত করে। শ্বাসনালির ভিতরে প্রদাহ হওয়ার কারণে শ্বাসনালি সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অ্যাজমার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি, হাঁচি, বুকে টান, শ্বাসকষ্ট, এবং বুকে শিশির ফোটার মতো অনুভূতি। এই লক্ষণগুলি সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম, ঠান্ডা বাড়ির বায়ু, ধূমপান, অ্যালার্জেন (যেমন ধুলো, পরাগ, পশুর লোম) বা কিছু খাবারের সংস্পর্শে আসার ফলে আরও খারাপ হতে পারে। অ্যাজমা একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও, উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ফুসফুস ধ্বংস হয়ে যাওয়া
নিউমোথোরাক্স হলো ফুসফুসের একটি অবস্থা যেখানে ফুসফুসের বাইরে বাতাস জমে যায়। সাধারণত ফুসফুসের চারপাশে একটি পাতলা আবরণ থাকে এবং এর ভিতরের চাপ বাইরের চাপের চেয়ে কম থাকে। কিন্তু নিউমোথোরাক্সে এই আবরণ ফেটে গেলে ফুসফুসের ভিতরে বাতাস চলে যায় এবং ফুসফুসটি ভেঙে পড়তে পারে। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই সমস্যার কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, বুকে শব্দ হওয়া, এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা যায়।
ব্রঙ্কোস্পাজম
ব্রঙ্কোস্পাজম হল একটি অবস্থা যেখানে ফুসফুসে শ্বাসনালির পেশীগুলি কেঁচোর মতো সংকুচিত হয়ে যায়। এই সংকোচনের ফলে শ্বাসনালি সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সাধারণত হাঁপানি এবং সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) রোগীদের এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।
ব্রঙ্কোস্পাজমের কারণে শ্বাসনালি সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। এর ফলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হুইজিং (সিটির মতো শব্দ), এবং বুকে টান অনুভূতি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, শারীরিক পরিশ্রম, ঠান্ডা বাড়ির বায়ু, ধূমপান, অ্যালার্জেন, বা কিছু খাবারের সংস্পর্শে আসার ফলে এই লক্ষণগুলি আরও খারাপ হতে পারে।
বুকের অন্যান্য সমস্যা
বুকের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। শুধু হৃদরোগ নয়, ফুসফুস, পাকস্থলী এবং অন্যান্য অঙ্গের সমস্যাও বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। বর্ষাকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এই ভাইরাসজনিত সংক্রমণ ফুসফুসকে প্রভাবিত করে এবং বুকে ব্যথা, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ছাড়াও, বুকে ব্যথার অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, পাঁজরের হাড়ের চোট, হৃদপিণ্ডের রোগ, এবং এমনকি অ্যাসিডিটিও। তাই বুকে ব্যথা অনুভব করলে অবহেলা করা উচিত নয়। একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পারকিনসন রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
পরিপাকতন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল সমস্যায় বুকে ব্যথা
অগ্নাশয়ে প্রদাহ
অগ্নাশয়ে প্রদাহ হলে প্যানক্রিয়েটাইটিস বলে। অ্যাকিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস পিত্তথলিতে পাথর এর কারণে হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি এ সমস্যা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে হয়ে থাকে।
এ সমস্যায় যে লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয় তা হলো:
পেটের উপরের অংশে ব্যথা অনুভূত হওয়া। যা হঠাৎ করে বা ধীরে ধীরে অল্প কিছুদিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়।
- পেট ফোলে যাওয়া,
- বমি করা,
- জ্বর,
- ব্যথা পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়া।
খাদ্যনালীতে সমস্যা
খাদ্যনালীর সংকোচন সমস্যা বলতে সাধারণত অন্ননালীতে স্পাজম বা কন্ট্রাকশনকে বুঝায়। যার ফলে বুকে ব্যথা, গিলতে অসুবিধা, পুনঃনিঃসরণ, বুকে জ্বালাসহ নানা ধরনের অসুবিধা হতে দেখা যায়।
অন্ননালীর হাইপারসেনসিটিভিটি
যে সকল মানুষের অন্ননালীতে অত্যাধিক সংবেদনশীলতা রয়েছে, তাদের ব্যথার অনুভূতি নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা এই বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি অবগড নন। কিন্তু পাকস্থলীর এই কোষগুলো এসিডের প্রতি খুবই সংবেদনশীল।
অন্ননালীর ক্ষত
যদি অন্ননালী বিদীর্ণ হয়ে যায়, তাহলে বুকে ব্যথা অত্যাধিক বেড়ে যেতে পারে। অন্ননালী ক্ষত সাধারণত ট্রমাটিক ইনজুরির কারণে হয়ে থাকে। বুকে ব্যথা ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয় তা হলো:
- বমি করা,
- ক্র্যাক সাউন্ড শুনা,
- শ্বাস প্রশ্বাসজনিত অসুবিধা,
- দ্রুত ব্রিদিং।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কি তা বিশেষভাবে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
পেপটিক আলসার
পেপটিক আলসার হলো পাকস্থলীর লাইনিং এ ব্যথা অনুভূত হওয়া। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন:
- পাকস্থলীতে ব্যথা অনুভব হওয়া,
- পেট ফোলে যাওয়া,
- পেটের উপরের অংশে পেইন হওয়া,
- বমি বমি ভাব,
- বমির সাথে রক্ত আসা।
পেপটিক আলসারে অনেক বেশি ব্যথা অনুভব হয় না। কিন্তু বুকে অস্বস্তি লাগতে পারে।
গ্যাস্ট্রো ইসুফেজিয়াল রিফ্লেক্স
গ্যাস্ট্রো ইসুফেজিয়াল রিফ্লেক্স বলতে খাবারগুলো পাকস্থলিতে আসার যে প্রক্রিয়াকে সেটাকে নির্দেশ করে।
যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে-
- বুকে ব্যথা,
- পুননিঃসরণ,
- বমি বমি ভাব,
- গিলতে অসুবিধা হওয়া,
- কাশি, হ্রস কন্ঠস্বর।
এ সমস্যা দূর করতে সাধারণত অ্যান্টাসিড জাতীয় ঔষধ সেবন করা হয়।
দুশ্চিন্তা
যারা অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করে সেক্ষেত্রে বুকের ব্যথা হতে পারে। সাইকোলজিকাল বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বিশেষ করে ডিপ্রেশন, ড্রাগ অ্যাডিকশন, ডিলিউশন প্রভৃতি কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
নিঃশ্বাস নিলে বুকে ব্যথা হয় কেন?
অনেকেই বলেন যে শ্বাস ছাড়ার সময় বুকের বাম পাশে ব্যথা হয়। অথবা বুকের বাম পাশে কোন কিছু একটা চেপে বসে আছে। এটা কি হার্টের সমস্যা? বুকে ব্যথা মানেই বা চেপে থাকা মানেই হার্টের সমস্যা বিষয় এমন নয়। পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটি, ফুসফুসের বিভিন্ন জটিলতা (যেমন: সিওপিডি, নিউমোনিয়া, প্লুরেসি, ব্রঙ্কাইটিস) প্রকৃতি কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। তাই এই বুকে ব্যথা হার্টের সমস্যা না অন্য কোন কারণে হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত এবং সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার অতি দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। তবে হার্টের ব্যথা বুঝার জন্য বুকের ঠিক মাঝখানের ব্যথাকে বিশেষ গুরত্ব প্রদান করা হয়।
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়?
হঠাৎ করে বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে অথবা ডান পাশে ব্যথা হলে বসে না থেকে দ্রুত হসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। বুকের ব্যথা মানেই যে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা এমন নয় এছাড়া অন্যান্য অনেক কারণে বুকের ব্যথা হতে পারে। তবে আপনার বুকের ব্যথা যে হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কারণে হয়েছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য হসপিটালে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। আর এ বিষয়টি কনফার্ম হওয়ার জন্য কিছু ডায়াগনোসিস টেস্ট করা হয়ে থাকে। যেমন:
ইসিজি
হার্টের ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটি দেখার জন্য সাধারণত ইসিজি করা হয়ে থাকে। আর এই টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় হার্টের কোন সমস্যা রয়েছে।
রক্ত পরীক্ষা
রক্তের কিছু প্রোটিনের অনুপস্থিতি উপর ভিত্তি করে হার্টের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়।
বুকের এক্সরে
বুকের ব্যথার জন্য এক্সরে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা টেস্ট। এর মাধ্যমে ফুসফুসের অবস্থান, কালার, আকার, আকৃতি দেখার মাধ্যমে ফুসফুসের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। ফুসফুর জনিত কোন সমস্যার কারণে বুকের ব্যথা হয়েছে কিনা? সেটা নিশ্চিত করার জন্য বুকের এক্সরে করা হয়।
সিটি স্ক্যান
বুকের ব্যথার কারণ হিসেবে ফুসফুসের কোন জায়গায় রক্ত জমাট বেধেছে কিনা? সেই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাধারণত সিটি স্ক্যান করা হয়ে থাকে।
ইকোকার্ডিওগ্রাম
শব্দকে ব্যবহার করে হার্টের একটা সুন্দর ছবি পাওয়ার জন্য ইকো-কার্ডিওগ্রাম করা হয়ে থাকে। হার্ট এর বিভিন্ন অংশের ছবি এর মাধ্যমে পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে হার্ট সমস্যা আছে কিনা? সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানা যায়।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়
প্রাথমিকভাবে বুকে ব্যথার সাথে সাথে একটু শুয়ে পড়বেন। বাসায় কোল্ড প্যাক থাকলে সেটা দিয়ে একটু চেপে ধরবেন। তারপর চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী বুকের মাঝখানে ব্যাথার জন্য মেডিকেশন, সার্জারি, রিহেবিলিটেশন করতে হবে।
মেডিকেশন
বুকে ব্যথার জন্য সাধারণত কয়েকটি কমম মেডিসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন:
আর্টারি রিলাক্সার
নাইট্রোগ্লিসারিনকে সাধারণত আর্টারি রিলক্সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ওষুধ হার্টের বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনীকে প্রসারিত করতে সহায়তা করে। এটি ট্যাবলেট আকারে জিহ্বার নিচে দেওয়া হয়।
অ্যাসপিরিন
আপনার হার্টের সমস্যার কারণে যদি বুকে ব্যথা হয়, সেইক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যাসপিরিন জাতীয় দিতে পারেন।
ক্লট ব্লাস্টিং ড্রাগস
যদি হার্ট অ্যাটাকে সম্ভবনা থাকে তাহলে এই জাতীয় ওষুধ প্রদান করা হয়। যা হার্টের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধাকে ভাঙতে সাহায্য করে।
রক্ত পাতলা করার ঔষধ
যেই ধমনীগুলো ফুসফুসে রক্ত নিয়ে যায়, সেই ধমবীতে ক্লট হয়ে গেলে রক্ত পাতলা করার জন্য কিছু ঔষধ প্রদান করা হয়।
অ্যাসডিটি কমানোর ঔষধ
বুকের মাঝখানে ব্যথা যদি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটির জন্য হয়, সেইক্ষেত্রে অ্যাসিড কমানোর ঔষধ প্রদান করা হয়। যেমন ওমিপ্রাজল, ইউসিমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল ইত্যাদি।
অ্যান্টিডিপ্রেশেন্ট
যদি বুকে অনেক বেশি বুকে ব্যথা থাকে সেইক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিডিপ্রেশেন্ট দিতে পারেন। যার ফলে ব্যথা কমতে পারে। কথা বলা, বুদ্ধিভিত্তিক থেরাাপিও দেওয়া যেতে পারে।
সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া
ওষুধের মাধ্যমে যে সকল বুকের ব্যথার সমস্যা সমাধান করা যায় না, সেই সকল ক্ষেত্রে সার্জারি করা হয়ে থাকে। যেমন:
অ্যানজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট প্লেসমেন্ট
অ্যানজিওপ্লাস্টি সাধারণত হার্টের করোনারি ধমনীগুলো ধমনি বন্ধ হয়ে গেলে বুকে মারাত্মক ব্যথা হলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আর এ পদ্ধতিতে বেলুনের মাথায় টিউব দিয়ে বন্ধ ধমনীর কাছে নিয়ে আসা হয়। আর বেলুনকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে হার্টের ধমনীকে প্রসারণ করা হয়। আর ধমনী প্রসারিত হয়ে গেলে বেলুনকে বের করে আনা হয়।
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি
হার্টে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী হলো করোনারি ধমনী। আর এই করোনারি ধমনী ব্লক হয়ে গেলে বাইপাস সার্জারি করা হয়। যেই জায়গায় ধমনী ব্লক হয়ে গিয়েছে, সেই জায়গা থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অংশ পর্যন্ত ধমনী সংযুক্তির মাধ্যমে রক্ত চলাচলকে চালু করা হয়। যার ফলে বুকে ব্যথা কমে যায়।
জরুরী হার্টের সার্জারি
কোন কারণে হার্টের অ্যাওর্টা ডিসেকশন হয়ে গেলে, সার্জারি বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। সেই ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তি হার্টের সার্জারি করা হয়।
ফুসফুসের পুনপ্রদাহ
কোন কারনে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ফুসফুসে টিউব ঢুকিয়ে সম্প্রসারিত করা হয়।
রিহেবিলিটেশন চিকিৎসা
সার্জারি পরবর্তী জন্য বুকে ব্যথা কমানোর জন্য পুনর্বাসন চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, সাইকো থেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাইগ্রেন সমস্যা কিভাবে তারাতারি দূর করবেন তা জানতে আমাদের এই বিস্তারিত পোস্টটি পড়ুন।
ব্যথার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
সার্জারিগুলো করার পর সাধারণত ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ব্যালেন্সিং এক্সারসাইজ কাউন্সিলিং থেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা ফুসফুস কে ভালো রাখতে সহায়তা করে। পরবর্তীতে যাতে বুকে ব্যথা না হয় সেই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফুসফুস ও হার্টের অপারেশনের পর কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন করানো হলে হার্ট ও ফুসফুসেের কার্যকারীতা অনেক বেড়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক এর কারণে যদি বুকে ব্যথা হয় তাহলে অপারেশন এর পরে ফিজিওথেরাপি নিলে হার্টে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, মাংসপেশি শক্তিশালী থাকে, কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়।
ফুসফুসের সমস্যার কারণে যদি বুকে ব্যথা হয় আর তার জন্য ব্রিদিং এক্সারসাইজ, পোশ্চারাল ড্রইনেজ করা হয়, তাহলে ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং ক্যাপাসিটি অনেক গুন বৃদ্ধি পায়।
সাইকোথেরাপি
মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে যে বুকে ব্যথা হয় তা কমানোর জন্য সাইকোথেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিপ্রেশন, ডিলিউশন, অধিক দুশ্চিন্তার কারণে বুকা ব্যথা হয়, তা কমানোর জন্য সাইকোথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সর্বোপরি, বুকে ব্যথার রোগীদের অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি ধূমপান,অ্যালকোহল, মাদক সেবন অবশ্যই পরিহার করতে হবে। সাথে চর্বি জাতীয় খাবার যেমন: ফাস্টফুড পিজ্জা, বার্গার, কোলড্রিংকস খাওয়া যথাসম্ভব বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
সাধারণ জিজ্ঞাসা
গ্যাসের জন্য কি বুকে ব্যথা হয়?
হ্যাঁ, গ্যাসের কারণে বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূতি হতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা, যা সাধারণত গুরুতর কিছু নয়। যখন আমরা খাবার খাই, তখন আমাদের শরীরে গ্যাস তৈরি হয়। কিন্তু যখন অতিরিক্ত গ্যাস জমা হয়, তখন এটি পেট এবং বুকের মধ্যবর্তী অংশে চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূতি দেয়। এই ব্যথা সাধারণত জ্বালাপোড়া বা চাপের মতো অনুভূত হয়।
দুশ্চিন্তার জন্য কি বুকে ব্যথা হয়?
অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের সময় বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি অ্যাটাক উভয়ই বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। এই দুই ধরনের আক্রমণের লক্ষণ অনেকটা একই রকম, যদিও একটি উদ্বেগ আক্রমণ সাধারণত কম তীব্র হতে পারে। উদ্বেগ আক্রমণগুলি প্রায়ই কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা পরিস্থিতির সাথে জড়িত থাকে, যাকে ট্রিগার বলে। অন্যদিকে, প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎ করে এবং কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই হতে পারে।
আলসার হলে কি বুকে ব্যথা হয়?
হ্যাঁ, আলসারের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। খাদ্যনালির সমস্যা, পেপটিক আলসার বা পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরে উঠে আসা এই ব্যথার সাধারণ কারণ। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত পাঁজরের নিচে মধ্যখানে অনুভূত হয়। খাবার খাওয়ার পরেও বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এছাড়া, ভয় বা আতঙ্কের কারণেও বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তাই বুকে ব্যথা অনুভব করলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বারবার বুকে ব্যথা মানে কি?
বারবার বুকে ব্যথা অনুভব করা একদমই সাধারণ একটি সমস্যা। এই ব্যথার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। হৃদরোগ, যেমন মহাধমনী বিচ্ছেদ, বা ফুসফুসের সমস্যা, যেমন নিউমোনিয়া, এই ব্যথার কারণ হতে পারে। আবার, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, যেমন অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বা হাড় এবং পেশীর সমস্যা, যেমন কস্টোকন্ড্রাইটিসও বুকে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, উদ্বেগ এবং আতঙ্কের আক্রমণের কারণেও বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তাই বারবার বুকে ব্যথা অনুভব করলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy