পিঠে জ্বালাপোড়া একটি খুবই পরিচিত সমস্যা। প্রায় অনেকেই জীবনে কোনো না কোনো সময় এই অস্বস্তি অনুভব করে থাকেন। এই জ্বালাপোড়া অনুভূতি হালকা হতে পারে, যা হয়তো তেমন অসুবিধা সৃষ্টি করে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি এতটাই তীব্র হতে পারে যে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নানা রকম বাধা আসতে শুরু করে।
এই জ্বালাপোড়া কেবল একটি শারীরিক অস্বস্তিই নয়, এটি আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মকেও ব্যাহত করতে পারে। হাঁটাচলা করতে, বসতে, এমনকি ঘুমাতে গেলেও সমস্যা হতে পারে। ফলে, আমাদের কাজের ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান খারাপ হতে পারে। পিঠে জ্বালাপোড়া করার কারণ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে
এই কারণে, পিঠে জ্বালাপোড়া কেন হয় তা জানা খুবই জরুরি। এই আউটলাইনের মূল উদ্দেশ্য হলো পিঠে জ্বালাপোড়া করার প্রধান কারণগুলো সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। এর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কোন কোন কারণে এই সমস্যা হতে পারে এবং কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পিঠে জ্বালাপোড়া করার কারণগুলো কি কি?
পেশী ও স্নায়ুর সমস্যা
পেশী টান বা খিঁচুনি (Muscle strain or spasm)
পিঠে জ্বালাপোড়ার একটা বড় কারণ হলো মাংসপেশিতে টান লাগা বা খিল ধরা। যখন আমরা হঠাৎ করে কোনো ভারী জিনিস তুলি অথবা শরীরটাকে অন্যরকমভাবে মোড়াই, তখন পিঠের মাংসপেশিতে বেশি জোর পড়ে। এই বেশি জোরের কারণে মাংসপেশির মধ্যে ছোটখাটো আঘাত লাগতে পারে অথবা মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে, যাকে আমরা খিঁচুনি বলি।
এইভাবে মাংসপেশিতে টান লাগলে বা খিল ধরলে পিঠে খুব ব্যথা করে। অনেক সময় এই ব্যথাটা আগুনের মতো মনে হয়। কারণ মাংসপেশিগুলো যখন শক্ত হয়ে যায়, তখন তার পাশের স্নায়ুতে চাপ দিতে পারে। এই চাপের জন্যই জ্বালা অনুভব হয়। একটু বিশ্রাম নিলে, গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিলে এবং হালকা ব্যথানাশক ওষুধ খেলে এই সমস্যা কমে যায়।
স্নায়ুর উপর চাপ (Nerve compression)
আমাদের মেরুদণ্ডের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো সরু তারের মতো জিনিস যায়, এগুলোকে স্নায়ু বলে। এই স্নায়ুগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে খবর পাঠায়। কোনো কারণে যদি এই স্নায়ুগুলোর উপর চাপ পড়ে, তাহলে পিঠে জ্বালাপোড়া সহ নানা ধরনের ব্যথা হতে পারে। স্নায়ুর উপর চাপ নানাভাবে পড়তে পারে, যেমন সায়াটিকা, হার্নিয়েটেড ডিস্ক এবং স্পাইনাল স্টেনোসিসের জন্য।
স্নায়ুর উপর কতটা চাপ পড়ছে এবং কোন স্নায়ুর উপর পড়ছে, তার উপর নির্ভর করে ব্যথার ধরন ও তীব্রতা কেমন হবে। অনেক সময় এই চাপ শুধু পিঠে থাকে না, শরীরের অন্য জায়গাতেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
সায়াটিকা (Sciatica)
সায়াটিকা হলো এমন একটা সমস্যা যেখানে নিতম্ব থেকে পায়ের দিকে যাওয়া একটা লম্বা স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে। এই স্নায়ুটাকে সায়াটিক নার্ভ বলে। যখন কোনো কারণে, যেমন ডিস্ক সরে গেলে বা মেরুদণ্ডের ভেতরের জায়গা সরু হয়ে গেলে, এই স্নায়ুতে চাপ লাগে, তখন নিতম্ব থেকে পা পর্যন্ত খুব ব্যথা করে এবং আগুনের মতো জ্বালা অনুভব হয়।
সায়াটিকার ব্যথা সাধারণত একটা পায়ে বেশি হয় এবং অনেক সময় পায়ের পাতা পর্যন্ত যেতে পারে। জ্বালাপোড়ার সাথে সাথে পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরা বা দুর্বল লাগাও অনুভব হতে পারে। বেশিক্ষণ বসে থাকলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে এই ব্যথা আরও বেড়ে যায়।
হার্নিয়েটেড ডিস্ক (Herniated disc)
আমাদের মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মাঝে নরম কুশনের মতো কিছু জিনিস থাকে, এগুলোকে ডিস্ক বলে। এই ডিস্কগুলো মেরুদণ্ডকে ধাক্কা থেকে বাঁচায় এবং শরীর নাড়াতে সাহায্য করে। যখন কোনো কারণে এই ডিস্কটা তার জায়গা থেকে একটু নড়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে চাপ দেয়, তখন তাকে হার্নিয়েটেড ডিস্ক বলে।
হার্নিয়েটেড ডিস্ক হলে পিঠে খুব ব্যথা করে এবং জ্বালা অনুভব হয়। কারণ সরে যাওয়া ডিস্কটা সরাসরি স্নায়ুর গোড়ায় চাপ দেয়। এই ব্যথা কোমর থেকে শুরু হয়ে নিতম্ব ও পায়ের দিকেও যেতে পারে। অনেক সময় পায়ে শক্তি কমে যাওয়া বা অবশ লাগাও দেখা যায়।
স্পাইনাল স্টেনোসিস (Spinal stenosis)
স্পাইনাল স্টেনোসিস মানে হলো মেরুদণ্ডের ভেতরের রাস্তা ছোট হয়ে যাওয়া। যেখানে স্নায়ুগুলো থাকে, সেই রাস্তাটা যদি কোনো কারণে সরু হয়ে যায়, তাহলে স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে। বয়স বাড়লে মেরুদণ্ডের হাড়ে কিছু বদল হয়, যার কারণে এটা হতে পারে। এছাড়াও অন্য কোনো রোগ থেকেও স্পাইনাল স্টেনোসিস হতে পারে।
মেরুদণ্ডের ভেতরের রাস্তা ছোট হয়ে গেলে স্নায়ুগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এর ফলে পিঠে ব্যথা, আগুনের মতো জ্বালা এবং অবশ ভাব হতে পারে। স্পাইনাল স্টেনোসিসের ব্যথা সাধারণত কোমর থেকে পায়ের দিকে যায় এবং হাঁটলে বা দাঁড়ালে ব্যথা বাড়ে, কিন্তু বসলে বা একটু ঝুঁকে দাঁড়ালে আরাম লাগে।
পোস্টুরাল সমস্যা ও দৈনন্দিন অভ্যাস
আমাদের রোজকার কিছু ভুল অভ্যাসের জন্য আমাদের শরীরের অঙ্গবিন্যাস বা পোস্টারে সমস্যা হতে পারে। যেমন, অনেকক্ষণ ধরে ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানো একটা বড় কারণ। যখন আমরা ঝুঁকে বসি বা দাঁড়াই, তখন আমাদের মেরুদণ্ড এবং শরীরের অন্য অংশে বেশি চাপ পড়ে। এতে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ভঙ্গি খারাপ হয়ে যায়। আবার, বেশি ওজন বহন করলেও আমাদের শরীরের উপর চাপ পড়ে এবং পোস্টারের সমস্যা হতে পারে।
ঘুমের সময়ও যদি আমরা ভুলভাবে শুই, তাহলেও সমস্যা হতে পারে। যেমন, উপুড় হয়ে শোওয়া বা খুব উঁচু বালিশে ঘুমালে আমাদের ঘাড় ও মেরুদণ্ড ঠিক থাকে না। এর ফলে ঘাড় ব্যথা, পিঠ ব্যথা এবং শরীরের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। তাই, ঠিকভাবে ঘুমানো এবং সঠিক বালিশ ব্যবহার করা আমাদের শরীরের অঙ্গবিন্যাস ঠিক রাখার জন্য খুব দরকারি।
আর্থ্রাইটিস ও অন্যান্য হাড়ের সমস্যা
পিঠে জ্বালাপোড়া করার অনেক কারণ থাকতে পারে। আমাদের মেরুদণ্ডের ভেতরে যে নার্ভ বা স্নায়ুগুলো আছে, সেগুলোতে কোনো সমস্যা হলে এমন হতে পারে। যেমন, সায়াটিকা নামের একটা রোগ আছে, যেখানে কোমর থেকে পায়ের দিকে যাওয়া নার্ভে চাপ পড়লে পিঠেও জ্বালা করে। আবার, পিঠের মাংসপেশিতে টান লাগলে বা আঘাত পেলে সেখানেও জ্বালা ও ব্যথা হতে পারে। হঠাৎ করে ভারী কিছু তুললে বা শরীর ঘোরালে এমনটা হতে পারে।
মেরুদণ্ডের নিজেরও কিছু রোগ থাকলে পিঠে জ্বালা করতে পারে। স্পন্ডাইলোসিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করলে বা হাড়ের জোড়ায় সমস্যা হলে এমন অনুভূতি হতে পারে। কোনো কোনো সময় ইনফেকশন বা হার্পিস জোস্টার (শিনগल्स)-এর মতো রোগের কারণেও নার্ভে প্রদাহ হয়ে পিঠে জ্বালা করতে পারে। তাই পিঠে জ্বালা করলে এর আসল কারণ খুঁজে বের করা এবং ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া খুব দরকারি।
সংক্রমণ ও প্রদাহ
পিঠে জ্বালাপোড়া করার আরও কিছু কারণের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ও প্রদাহ। যেমন, শিংলস(Shingles) নামের একটা রোগ আছে, যেটা হয় ভাইরাসের কারণে। এই ভাইরাস আমাদের শরীরের নার্ভ বা স্নায়ুতে আক্রমণ করে, যার ফলে পিঠে খুব জ্বালাপোড়া হতে পারে। এটা অনেকটা ফোস্কা ফোস্কার মতোও দেখাতে পারে। এছাড়াও, সরাসরি মেরুদণ্ডে যদি কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হয়(Spinal infection), তাহলেও পিঠে খুব ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। এই ধরনের সংক্রমণ হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি, যাতে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং সমস্যা আরও বাড়তে না পারে।
অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থা
পিঠে জ্বালাপোড়া হওয়ার পেছনে আরও কিছু শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। যেমন, ফাইব্রোমিয়ালজিয়া নামে একটা রোগ আছে, যেখানে সারা শরীরে অনেক দিন ধরে ব্যথা থাকে এবং ক্লান্তি লাগে। এই রোগের কারণে পিঠেও ব্যথা হতে পারে এবং সেটা জ্বালাপোড়ার মতো মনে হতে পারে। এছাড়াও, আমাদের কিডনিতে যদি কোনো রকম সমস্যা হয়, যেমন কিডনিতে ইনফেকশন হলে বা পাথর জমলে, তাহলেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা অনেক সময় জ্বালাপোড়ার মতো লাগে। এমনকি, পিত্তথলিতে কোনো সমস্যা হলে, যেমন পাথর হলে বা প্রদাহ হলে, কিছু ক্ষেত্রে পিঠের ডান দিকে জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। তাই, পিঠে জ্বালাপোড়া হলে শুধু মেরুদণ্ড নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সমস্যার কথাও ভাবতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
পিঠে জ্বালাপোড়া করলে কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত, তা বোঝা দরকার। যদি খুব বেশি জ্বালা করে এবং সেই জ্বালা কয়েক দিন ধরে না কমে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। এছাড়াও, যদি পায়ের দিকে দুর্বলতা লাগে, পা অবশ মনে হয় বা পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে, তাহলে বুঝতে হবে স্নায়ুতে কোনো সমস্যা হচ্ছে। এমন হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যদি জ্বালাপোড়ার সাথে সাথে পেট বা প্রস্রাবের রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়, যেমন নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়, অথবা যদি জ্বর আসে বা শরীর খারাপ লাগে, তাহলে মোটেও দেরি করবেন না। আর যদি কোনো আঘাত লাগার পরে পিঠে জ্বালা শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। এই লক্ষণগুলো দেখলে নিজেরা কিছু না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যান।
ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়
পিঠে জ্বালাপোড়ার কারণ শনাক্ত করার জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্ট প্রথমে রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করেন। তিনি রোগীর বসার ভঙ্গি, দাঁড়ানোর ভঙ্গি এবং হাঁটার ধরণ ভালোভাবে লক্ষ্য করেন। এছাড়াও, পিঠের বিভিন্ন অংশে হাত দিয়ে অনুভব করে দেখেন কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা অথবা কোনো বিশেষ জায়গায় চাপ দিলে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া বাড়ে কিনা। রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস জেনে, অর্থাৎ আগে কোনো আঘাত লেগেছে কিনা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কিনা, সে সম্পর্কেও ধারণা নেন। এই প্রাথমিক পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ফিজিওথেরাপিস্ট জ্বালাপোড়ার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করতে পারেন।
এরপর, ফিজিওথেরাপিস্ট কিছু বিশেষ শারীরিক পরীক্ষা করেন, যেমন বিভিন্ন ধরনের মুভমেন্ট বা অঙ্গ সঞ্চালনের পরীক্ষা। এর মাধ্যমে পিঠের মাংসপেশি, হাড় এবং স্নায়ু কতটা সচল আছে এবং কোন মুভমেন্টে জ্বালাপোড়া বাড়ে তা বুঝতে পারেন। প্রয়োজনে, ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীকে এক্স-রে, এমআরআই বা নার্ভ কনডাকশন স্টাডির মতো পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন, যা রোগ নির্ণয়ে আরও সাহায্য করে। এই সব তথ্য একত্রিত করে ফিজিওথেরাপিস্ট পিঠে জ্বালাপোড়ার সঠিক কারণ খুঁজে বের করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা করেন।
চিকিৎসা
পিঠে জ্বালাপোড়া হলে এর চিকিৎসার জন্য অনেক উপায় আছে। প্রথমে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে, যা জ্বালা এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ফিজিওথেরাপি খুব কাজের জিনিস। ফিজিওথেরাপিস্টরা কিছু ব্যায়াম এবং পদ্ধতির মাধ্যমে পিঠের মাংসপেশি ও স্নায়ুকে আরাম দেন, जिससे জ্বালাপোড়া কমে। অনেক সময় বরফ বা গরম জলের সেঁক দিলেও আরাম পাওয়া যায়। আর অবশ্যই, পিঠকে বিশ্রাম দেওয়া খুব জরুরি, যাতে চাপ না পড়ে এবং তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যদি ব্যথা বা জ্বালাপোড়া খুব বেশি হয় এবং ওষুধ বা ফিজিওথেরাপিতে না কমে, তখন ডাক্তাররা ইনজেকশন দিতে পারেন। এমনকি, খুব কম ক্ষেত্রে যদি মেরুদণ্ডে কোনো গুরুতর সমস্যা থাকে, তাহলে সার্জারি করারও দরকার হতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময়ই সাধারণ চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমেই পিঠের জ্বালাপোড়া কমানো যায়।
প্রতিকার
পিঠে জ্বালাপোড়া কমানোর উপায়গুলো বিস্তারিতভাবে নিচে দেওয়া হলো:
- সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা: বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখা এবং কোমর সামান্য বাঁকানো উচিত। চেয়ারে বসার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার পা মেঝেতে সমানভাবে থাকে এবং আপনার কাঁধ রিল্যাক্সড থাকে। দাঁড়ানোর সময়ও একইভাবে মেরুদণ্ড সোজা রাখুন এবং মাথা উঁচু করে তাকান। কুঁজো হয়ে বসা বা দাঁড়ালে পিঠের মাংসপেশি এবং স্নায়ুর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা জ্বালাপোড়ার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই, সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা এই সমস্যা এড়াতে সহায়ক।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা: পিঠের মাংসপেশিকে শক্তিশালী এবং নমনীয় রাখা খুব জরুরি। নিয়মিত যোগা, স্ট্রেচিং এবং কোর মাসল শক্তিশালী করার মতো ব্যায়াম করলে পিঠের সাপোর্ট বাড়ে এবং জ্বালাপোড়ার সম্ভাবনা কমে। তবে, কোনো নতুন ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে আপনি সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম করতে পারেন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে কোমরের অংশে। এই অতিরিক্ত চাপের কারণে স্নায়ু সংকুচিত হতে পারে এবং জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখলে পিঠের উপর থেকে এই বাড়তি চাপ কমানো যায়।
- ভারী জিনিস তোলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা: ভারী জিনিস তোলার সময় কোমর বাঁকানো উচিত না। বরং হাঁটু ভাঁজ করে এবং মেরুদণ্ড সোজা রেখে জিনিসটি তুলুন। জিনিস তোলার সময় এটিকে আপনার শরীরের যতটা সম্ভব কাছে রাখুন। হঠাৎ করে মোড় ঘোরানো বা ঝাঁকুনি দিয়ে ভারী জিনিস তোলা উচিত না, কারণ এতে পিঠের পেশি এবং লিগামেন্টে আঘাত লাগতে পারে, যা জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও ঘুমের সঠিক ভঙ্গি: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো শরীরের জন্য জরুরি। ঘুমের সময় আপনার মেরুদণ্ড যাতে স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উপুড় হয়ে শোওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে ঘাড় এবং পিঠের উপর চাপ পড়ে। চিৎ হয়ে বা একপাশে কাত হয়ে ঘুমানো ভালো। সঠিক সাপোর্টের জন্য একটি ভালো বালিশ এবং ম্যাট্রেস ব্যবহার করা উচিত।
- দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে বা দাঁড়িয়ে না থাকা: যদি আপনার কাজ এমন হয় যেখানে আপনাকে দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাহলে প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পর পর একটু বিরতি নিন এবং হালকা হাঁটাহাঁটি করুন বা স্ট্রেচিং করুন। একটানা একই অবস্থানে থাকলে পিঠের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হতে পারে, যা জ্বালাপোড়ার অনুভূতি বাড়াতে পারে।
উপসংহার
পিঠে জ্বালাপোড়া একটা খুব খারাপ অনুভূতি, যা আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম করতেও অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। এর অনেক রকম কারণ থাকতে পারে, আর একেকজনের ক্ষেত্রে কারণটা আলাদা হতে পারে। তাই, কেন এমন হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা আর ঠিকমতো চিকিৎসা করানো খুব দরকার। যদি আমরা ফেলে রাখি, তাহলে এই সমস্যা আরও বড় হতে পারে আর অনেক দিন ধরে ব্যথা থাকতে পারে।
আমরা এতক্ষণ ধরে পিঠে জ্বালাপোড়া করার কিছু প্রধান কারণের কথা জেনেছি। যেমন, ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানো, যা আমাদের শরীরের ভঙ্গি নষ্ট করে দেয়। এরপর হাড়ের সমস্যা, যেমন হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া। নার্ভের সমস্যাও হতে পারে, হয়তো কোনো নার্ভে চাপ লেগেছে। আবার কোনো জীবাণুর আক্রমণ বা ইনফেকশন থেকেও জ্বালাপোড়া হতে পারে। এছাড়াও, কিডনির সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতার কারণেও পিঠে জ্বালা অনুভব হতে পারে। এই কারণগুলো জানলে আমরা মোটামুটি বুঝতে পারি যে কেন এমনটা হচ্ছে।
সবশেষে এটাই বলার যে, পিঠে জ্বালাপোড়া হওয়ার অনেক কারণ আছে। এই লেখায় আমরা শুধু কয়েকটা প্রধান কারণের কথা বললাম। আসল কথা হলো, যদি আপনার পিঠে জ্বালা করে, তাহলে নিজের থেকে কিছু না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার ভালো করে দেখে বুঝতে পারবেন আপনার কী হয়েছে আর সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। নিজেরা চিকিৎসা করার চেষ্টা করলে হয়তো উপকার নাও হতে পারে, বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার