কোমর ব্যাথা সারানোর জন্য সহজ ব্যায়াম গুলো কি কি?

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ ব্যায়াম

কোমর ব্যথা প্রায় সবাইকেই কোনো না কোনো সময় ভোগ করতে হয়। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে একটা হলো আমাদের মেরুদণ্ড আর তার পাশের মাংসপেশি ও রগের দুর্বলতা বা আঘাত। বেশি ওজন, ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানো, অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা, ভারী জিনিস তোলা আর কোনো রকমের ধাক্কা লাগলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও, সায়াটিকা, স্পাইনাল স্টেনোসিস আর আর্থ্রাইটিসের মতো কিছু রোগের কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে। কোমর ব্যথার সাধারণ লক্ষণ হলো পিঠে ধারালো বা হালকা ব্যথা, যা হাঁটু বা পায়ের দিকে যেতে পারে, মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, নড়াচড়া করতে সমস্যা হওয়া এবং বেশিক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া। কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ ব্যায়াম নিয়ে আজ আলোচনা করবো।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে কোমর ব্যথা কমে এবং বারবার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। ব্যায়ামের মাধ্যমে কোমর ও তার আশপাশের মাংসপেশি শক্তিশালী হয়, যা মেরুদণ্ডকে সোজা রাখতে ও চাপ কমাতে সাহায্য করে। শক্তিশালী মাংসপেশি আমাদের বসার ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি ঠিক রাখে, ফলে কোমর ও মেরুদণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। এছাড়াও, ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল বাড়ে, যা ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় অক্সিজেন ও খাবার পৌঁছায় এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত স্ট্রেচিং ও যোগা করলে মাংসপেশি ও রগের নমনীয়তা বাড়ে, যা কোমরের আড়ষ্টতা কমায় এবং সহজে নড়াচড়া করা যায়।

কোমর ব্যথা কমানোর জন্য কঠিন ব্যায়াম করার দরকার নেই। কিছু সহজ আর হালকা ব্যায়াম নিয়ম করে করলেই অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই ধরনের ব্যায়ামগুলো সাধারণত বাড়িতে বা অফিসে সহজেই করা যায় এবং এর জন্য কোনো দামি জিনিসের প্রয়োজন হয় না। সহজ ব্যায়ামের ভালো দিক হলো এগুলো শরীরে বেশি চাপ দেয় না, তাই ব্যথা বাড়ার ভয় কম থাকে এবং এগুলো রোজ করাও সহজ। যেমন পেলভিক টিল্ট, হাঁটু বুকের দিকে টানা, লোয়ার ব্যাক রোটেশন আর ব্রিজ পোজ। এই ব্যায়ামগুলো ধীরে ধীরে এবং ঠিকভাবে করলে কোমর ব্যথার যন্ত্রণা কমে এবং রোজকার কাজকর্মে ফেরা যায়।

কোমর ব্যথা সারানোর সহজ ব্যায়াম

কোমর ব্যথা কমানোর জন্য কিছু সহজ ব্যায়াম রয়েছে যা আপনারা বাড়িতেই করতে পারেন। তবে, যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। নিচে প্রতিটি ধাপ সহজ ভাষায় আলোচনা করা হলো:

  • সাধারণ নির্দেশাবলী: কোমর ব্যথার জন্য ব্যায়াম শুরু করার আগে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা ভালো। প্রথমত, তাড়াহুড়ো করবেন না। ধীরে ধীরে এবং শান্তভাবে ব্যায়াম শুরু করুন। ঝাঁকুনি দিয়ে বা খুব দ্রুত কোনো মুভমেন্ট করবেন না। প্রতিটি ব্যায়ামের সময় আপনার শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন। যদি কোনো ব্যায়াম করার সময় ব্যথা অনুভব করেন, তবে তৎক্ষণাৎ সেটি বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, তাড়াহুড়ো করে বা ভুলভাবে ব্যায়াম করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
  • ব্যায়াম শুরুর পূর্বে কিছু সতর্কতা: ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার শরীরের অবস্থা বিবেচনা করা জরুরি। যদি আপনার কোমর ব্যথা খুব তীব্র হয় বা কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো নতুন ব্যায়াম শুরু করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় বা অন্য কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতেও ব্যায়াম করার আগে ডাক্তারের মতামত নেওয়া আবশ্যক। হালকা গরম পানিতে গোসল অথবা হালকা গরম সেঁক নিলে পেশীগুলো কিছুটা শিথিল হতে পারে এবং ব্যায়াম করতে সুবিধা হতে পারে।
  • ধীরে ধীরে শুরু করা: যখন আপনি ব্যায়াম শুরু করবেন, তখন খুব বেশি চাপ নেবেন না। প্রথম দিকে অল্প সংখ্যক বার প্রতিটি ব্যায়াম করুন এবং ধীরে ধীরে পুনরাবৃত্তি বাড়ান। আপনার শরীরকে নতুন রুটিনের সাথে মানিয়ে নিতে সময় দিন। প্রথম দিন হয়তো আপনি সামান্য অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন, তবে সেটি যদি তীব্র ব্যথায় পরিণত হয়, তবে ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। ধীরে ধীরে শুরু করলে আপনার পেশী এবং লিগামেন্টগুলো শক্তিশালী হওয়ার সময় পাবে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমবে।
  • শরীরের কথা শোনা (ব্যথা অনুভব করলে থামানো): ব্যায়াম করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার শরীরের কথা শোনা। যদি কোনো ব্যায়াম করার সময় আপনি তীক্ষ্ণ বা অসহ্য ব্যথা অনুভব করেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যায়ামটি থামিয়ে দিন। হালকা অস্বস্তি এবং ব্যথার মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি। হালকা টান বা সামান্য অস্বস্তি স্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু তীব্র ব্যথা কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়। ব্যথা অনুভব করলে বিশ্রাম নিন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিজের শরীরের সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করবেন না।
  • সঠিকভাবে ব্যায়াম করা: প্রতিটি ব্যায়াম সঠিকভাবে করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুলভাবে ব্যায়াম করলে উপকার তো হবেই না, বরং কোমর ব্যথার সমস্যা আরও বাড়তে পারে। আপনি যদি কোনো ব্যায়ামের নিয়ম সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তবে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। তারা আপনাকে সঠিক পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারবেন। অনলাইনে অনেক নির্ভরযোগ্য ভিডিও টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায়, তবে সেগুলো অনুসরণ করার সময়ও সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং ধীরে ধীরে করার চেষ্টা করুন। সঠিক ফর্ম বজায় রেখে ব্যায়াম করলে পেশীগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে এবং উপকার পাওয়া যাবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা: কোমর ব্যথার উন্নতি এবং তা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা অপরিহার্য। সপ্তাহে কয়েক দিন নির্দিষ্ট সময় বের করে ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। একদিন বা দুদিন ব্যায়াম করে ছেড়ে দিলে তেমন কোনো উপকার পাওয়া যাবে না। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার কোমরের পেশী শক্তিশালী হবে, নমনীয়তা বাড়বে এবং ব্যথা কমে আসবে। একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে সেটি মেনে চলার চেষ্টা করুন।
  • প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (যদি থাকে): কোমর ব্যথার জন্য বেশিরভাগ সহজ ব্যায়ামের জন্য কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে আপনি ম্যাট বা তোয়ালের মতো নরম কিছুর সাহায্য নিতে পারেন, যা মেঝেতে শুয়ে ব্যায়াম করার সময় আরাম দেবে। কিছু স্ট্রেচিং বা হালকা ব্যায়ামের জন্য ছোট বালিশ বা ফোম রোলারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে, এই ব্যায়ামগুলো করার জন্য তেমন কোনো দামি বা বিশেষ সরঞ্জামের দরকার নেই।

সহজ ব্যায়ামের তালিকা

কিছু সহজ ব্যায়াম আছে যা রোজ করলে কোমর ব্যথা কমে আর বারবার হওয়ার ভয়ও থাকে না। এই ব্যায়ামগুলো ঘরে বসেই করা যায়, আর এর জন্য দামি কিছুও লাগে না। নিচে কোমর ব্যথার জন্য কয়েকটা সহজ ব্যায়ামের নাম আর এগুলো করার সময় কী মনে রাখতে হবে তা বলা হলো। এটা আপনাদের কোমর ব্যথা কমাতে আর সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

পেটের ব্যায়াম (Abdominal Exercises)

পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী হলে কোমরকে সাপোর্ট দেয়, তাই ব্যথা কমে।

  • পেটের পেশী টান করা (Pelvic Tilt): চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে পা মাটিতে রাখুন। এবার পেটের মাংসপেশি টেনে কোমর সামান্য উঁচু করুন যাতে কোমরের নিচের দিকটা মাটিতে লাগে। কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার আগের মতো করুন।

  • ব্রিজ (Bridge): চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা মাটিতে রাখুন। হাত দুটো পাশে সোজা রাখুন। এবার নিতম্ব মাটি থেকে উপরে তুলুন, যেন কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা সরলরেখা হয়। কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার নিতম্ব নামিয়ে আনুন।

  • পা উপরে তুলে পেটের পেশী টান করা (Dead Bug): চিৎ হয়ে শুয়ে হাত দুটো উপরের দিকে তুলুন। হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা উপরের দিকে রাখুন। এবার ধীরে ধীরে ডান হাত মাথার দিকে নামান আর বাঁ পা সোজা করে মেঝের কাছাকাছি নিয়ে যান (কিন্তু ছোঁয়াবেন না)। কোমর যেন মাটি থেকে না ওঠে। আবার হাত পা আগের মতো করুন। একইভাবে বাঁ হাত আর ডান পায়ের সাথে করুন।

পিঠের ব্যায়াম (Back Exercises)

পিঠের মাংসপেশি শক্তিশালী করা কোমর ব্যথার জন্য খুব দরকারি।

  • বিড়ালের মতো ভঙ্গি (Cat-Cow Stretch): প্রথমে উপুড় হয়ে হাত আর হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসুন। এরপর, প্রথমে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিঠ উপরের দিকে গোল করুন আর মাথা নিচু করুন যেন বিড়াল পিঠ বাঁকাচ্ছে। এরপর শ্বাস নিতে নিতে পিঠ নিচের দিকে নামান (কোমর সামান্য নিচু হবে) আর মাথা উপরের দিকে তুলুন। এভাবে কয়েকবার করুন।

  • পিঠের পেশী প্রসারিত করা (Child’s Pose): প্রথমে হাঁটু মুড়ে বসুন। আপনার পশ্চাৎদেশ যেন আপনার পায়ের গোড়ালির উপর থাকে। এরপর আস্তে আস্তে আপনার শরীরকে সামনের দিকে ঝোঁকান। আপনার বুক হাঁটুর কাছে নিয়ে যান। হাত দুটো হয় সামনে ছড়িয়ে দিন, না হয় শরীরের পাশে রাখুন। কিছুক্ষণ এভাবে থাকুন। তারপর ধীরে ধীরে উঠে বসুন।

  • সুপারম্যান (Superman) – হালকাভাবে: উপুড় হয়ে শুয়ে হাত দুটো সামনের দিকে সোজা রাখুন। শ্বাস নিতে নিতে হাত ও পা দুটোই হালকা করে মাটি থেকে উপরে তুলুন (বেশি উঁচুতে তোলার দরকার নেই)। কোমর যেন মাটিতে থাকে। কিছুক্ষণ ধরে রেখে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত পা নামিয়ে আনুন। ব্যথা লাগলে এটা করবেন না।

হিপ ফ্লেক্সর স্ট্রেচ (Hip Flexor Stretch)

এই পেশী টাইট থাকলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এটা টানলে আরাম পাওয়া যায়।

  • নীচু হয়ে এক হাঁটু মাটিতে রেখে অন্য পায়ের পাতা সামনে রেখে কোমর প্রসারিত করা (Kneeling Hip Flexor Stretch): এক হাঁটু মাটিতে রেখে অন্য পা সামনে ভাঁজ করে রাখুন। এবার সামনের পায়ের দিকে হালকা ঝুঁকুন, যতক্ষণ না পিছনের থাইয়ের উপরে আর কুঁচকির কাছে টান লাগে। কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার আগের মতো করুন। অন্য পায়ের সাথেও করুন।

হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ (Hamstring Stretch)

এই পেশী টাইট থাকলেও কোমর ব্যথা হতে পারে। এটা টানলে আরাম পাওয়া যায়।

  • সোজা হয়ে বসে পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করা (Seated Hamstring Stretch): প্রথমে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। এরপর ধীরে ধীরে কোমর থেকে ঝুঁকে হাত দিয়ে পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখবেন হাঁটু যেন ভাঁজ না হয়। যতটুকু পারেন ঝুঁকুন এবং সেই অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকুন। তারপর আস্তে আস্তে সোজা হয়ে বসুন। এই ব্যায়ামটি আপনার পায়ের পেছনের পেশী টানতে সাহায্য করবে।

  • দাঁড়িয়ে এক পা সামান্য উঁচুতে রেখে হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পায়ের পেছনের পেশী প্রসারিত করা (Standing Hamstring Stretch): সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এক পা সামান্য উঁচু করে কোনো কিছুর উপর রাখুন (হাঁটু একটু বাঁকানো থাকতে পারে)। এবার কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকুন যতক্ষণ না উঁচু করা পায়ের পেছনের দিকে টান লাগে। কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার সোজা হন। অন্য পায়ের সাথেও করুন।

লোয়ার ব্যাক টুইস্ট (Lower Back Twist)

এটা করলে কোমরের পেশী হালকা হয় আর নড়াচড়া করতে সুবিধা হয়।

  • সোজা হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে একদিকে কাত করে কোমর মোচড়ানো (Supine Spinal Twist): চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু দুটো ভাঁজ করে উপরের দিকে তুলুন। হাত দুটো দুই পাশে সোজা রাখুন। এবার ধীরে ধীরে ভাঁজ করা হাঁটু দুটো একদিকে (যেমন ডান দিকে) মেঝের দিকে নামান। কাঁধ যেন মাটিতে লেগে থাকে। আপনি চাইলে মাথা উল্টো দিকে (বাম দিকে) ঘোরাতে পারেন। কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার হাঁটু মাঝখানে আনুন। একইভাবে অন্য দিকেও করুন।

এই সহজ ব্যায়ামগুলো নিয়ম করে করলে কোমর ব্যথা কমতে পারে এবং আরাম পাওয়া যায়। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা

কোমর ব্যথার জন্য ব্যায়াম খুব কাজের হলেও, কয়েকটা জিনিস মনে রাখা দরকার। প্রথমত, যদি খুব বেশি ব্যথা হয়, কোনো চোট লেগে থাকে, অথবা ব্যথা পায়ের দিকে নামে, পা ঝিনঝিন করে বা দুর্বল লাগে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার ভালো করে দেখে বলতে পারবেন কী করতে হবে। শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না, সাথে সাথে বসার ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি ঠিক রাখতে হবে, যাতে কোমরের উপর বেশি চাপ না পড়ে। যাদের ওজন বেশি, তাদের ওজন কমালে কোমর ব্যথা কম হতে পারে। আর দুশ্চিন্তা কমিয়ে শান্তিতে থাকলে ব্যথা কম বোধ হয়।

ধৈর্য ধরুন আর রোজ ব্যায়াম করুন

কোমর ব্যথা কমানোর জন্য তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। কয়েক দিন ব্যায়াম করেই ফল পাবেন না। রোজ নিয়ম করে ব্যায়াম করতে হবে, তবেই ধীরে ধীরে কোমরের মাংসপেশি জোরদার হবে, শরীর নমনীয় হবে আর ব্যথা কমবে। হয়তো ভালো হতে কয়েক সপ্তাহ বা মাসও লাগতে পারে। মন খারাপ না করে নিয়ম মেনে ব্যায়াম করতে থাকুন আর ডাক্তারের কথা শুনুন। মনে রাখবেন, কোমর ব্যথা কমানো একটু সময় লাগে, আর নিয়ম করে ব্যায়াম করলে অবশ্যই উপকার পাবেন।

শেষ কথা

আসলে, কোমর ব্যথা খুব চেনা একটা সমস্যা, যা অনেক সময় ধরে আমাদের সাথে থাকতে পারে। কিন্তু ভালো খবর হলো, কিছু সহজ আর রোজকার ব্যায়াম করলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। এই ব্যায়ামগুলো এমন যে এগুলো ঘরে বসেই করা যায় আর এর জন্য কোনো কঠিন জিনিসপত্রেরও দরকার নেই। যেমন পেলভিক টিল্ট, ব্রিজ, বিড়ালের মতো ভঙ্গি, হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ আর লোয়ার ব্যাক টুইস্টের মতো ব্যায়ামগুলো ধীরে ধীরে কোমর আর তার পাশের মাংসপেশিকে জোরদার করে, মেরুদণ্ডকে শক্ত করে আর শরীরকে নমনীয় করে তোলে। এর ফলে কোমর ব্যথা কমে যায় আর রোজকার কাজকর্ম করতেও সুবিধা হয়।

তবে এখানে একটা জরুরি কথা মনে রাখতে হবে – ধৈর্য আর নিয়ম করে ব্যায়াম করা। কোমর ব্যথা একদিনে ভালো হওয়ার মতো নয়। এই সহজ ব্যায়ামগুলোর উপকার পেতে হলে রোজ আর ধৈর্য ধরে এগুলো করতে হবে। প্রথমে হয়তো তেমন কিছু মনে হবে না, কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী হবে আর ব্যথা কম লাগবে। মনে রাখবেন, রোজ ব্যায়াম করাই আসল কাজ।

আমরা সবাই একটা সুস্থ আর ব্যথামুক্ত জীবন চাই। কোমর ব্যথা সেই পথে একটা বড় বাধা হতে পারে। কিন্তু রোজ ব্যায়াম করা, বসার ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি ঠিক রাখা আর একটা ভালো জীবনযাপন করার মাধ্যমে আমরা সেই বাধা পেরোতে পারি। ব্যায়াম শুধু কোমর ব্যথাই কমায় না, এটা আমাদের পুরো শরীর আর মনের শান্তির জন্যও খুব দরকারি। এটা আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বাড়ায়, দুশ্চিন্তা কমায় আর আমাদের আরও চনমনে করে তোলে। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এই সহজ ব্যায়ামগুলোকে আমাদের প্রতিদিনের কাজের মধ্যে নিয়ে আসি আর একটা সুস্থ, সবল ও ব্যথামুক্ত জীবনের দিকে এগিয়ে যাই। মনে রাখবেন, নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া নিজের হাতেই।

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 103

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *