পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ? পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কি ও এর প্রতিরোধে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

পিঠে ব্যথা বা থোরাসিক পেইন হলো আমাদের দেহের উপরের পিঠের অংশ, ঘাড়ের নিচ থেকে কোমরের উপরের অংশ পর্যন্ত, যেখানে অনুভূত হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এই অংশটিকে থোরাসিক অংশ বলা হয়। এই অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে ব্যথা হতে পারে, যেমন দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকা, ভারী বস্তু তোলা, মেরুদণ্ডের কোনো সমস্যা, বা পেশির টান। ব্যথার তীব্রতাও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কেউবা হালকা অনুভব করতে পারেন, আবার কেউবা খুব তীব্র ব্যথায় ভুগতে পারেন। এই পিঠের এরিয়ার কোন অংশে ব্যথাকে আমরা ‘থোরাসিক পেইন’ বা পিঠে ব্যথা বলি।

আমাদের অনেকেরই জীবনে একসময় না একসময় পিঠে ব্যথা হয়। এই ব্যথা কখনো কখনো খুবই তীব্র হতে পারে এবং ভয় দেখাতে পারে। তবে সাধারণত এই ধরনের ব্যথা গুরুতর কিছু নয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। অর্থাৎ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিঠের ব্যথার জন্য অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ?

 পিঠের ব্যথা সাধারণত ডিস্ক সার্জারির মতো আঘাত, ভারী ওজন তোলা, অতিরিক্ত চাপ, এবং ভুল ভঙ্গি থেকে হয়। দৈনন্দিন জীবনে এই কারণগুলোর সংমিশ্রণে পিঠের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ডিস্ক স্লিপ, ভারী ওজন তোলা, আঘাত, মানসিক চাপ, এবং বিভিন্ন ধরনের বাত এই ব্যথার জন্য দায়ী হতে পারে। আমাদের পিঠের জটিল কাঠামোটি হাড়, পেশি, ডিস্ক, টেন্ডন ও লিগামেন্ট দিয়ে গঠিত যা আমাদের শরীরের ওজন বহন করে এবং চলাচল করতে সাহায্য করে। এছাড়া, মেরুদণ্ডের সংক্রমণ, কিছু ধরনের ক্যান্সার, এবং মেরুদণ্ডের বিকৃতি যেমন কিফোসিস এবং স্কোলিওসিসও পিঠের ব্যথার অন্যতম লক্ষণ।

পিঠের ব্যথা, বিশেষ করে কোমরের ব্যথা আজকের দিনে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, ভুল ভঙ্গি, এবং শারীরিক অক্রিয়তা এর প্রধান কারণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি আরও বেড়ে যায়। আমাদের মেরুদণ্ড হাড়, পেশি, ডিস্ক, টেন্ডন এবং লিগামেন্ট দিয়ে তৈরি একটি জটিল কাঠামো। এই কাঠামোর কোনো অংশে সমস্যা হলেই পিঠের ব্যথা হতে পারে।

পিঠে ব্যথার প্রধান লক্ষণগুলো হলো-

ডিস্ক স্লিপ

আমাদের মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মাঝখানে নরম, জেলির মতো পদার্থ থাকে, একেই ডিস্ক বলে। বিভিন্ন কারণে যেমন ভারী ওজন তোলা, দুর্ঘটনা, বা দীর্ঘদিন একই ভঙ্গিতে থাকার কারণে এই ডিস্কগুলো নিজের জায়গা থেকে সরে যেতে পারে, একেই ডিস্ক স্লিপ বলে। যখন এই ডিস্ক সরে যায়, তখন সেটা আশেপাশের স্নায়ুর ওপর চাপ দেয় এবং এই চাপের কারণেই আমরা পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভব করি। ডিস্ক স্লিপের কারণে পিঠের ব্যথার পাশাপাশি কাঁধে, হাতে এবং পায়েও ব্যথা, ঝিনঝিন ভাব বা অসাড়তা হতে পারে।

দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে সেরা ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

স্পন্ডাইলাইটিস

এই স্পন্ডাইলাইটিস রোগে মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মধ্যবর্তী অংশে প্রদাহ হয়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে সেখানে হাড় জমে যায়। এর ফলে মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলো একে অপরের সাথে জুড়ে যেতে পারে এবং মেরুদণ্ডের নড়াচড়া কমে যায়। স্পন্ডাইলাইটিসের কারণে পিঠে ক্রমাগত ব্যথা, কঠিনতা, এবং পিঠ সোজা করতে অসুবিধা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, এই ব্যথা রাতে বা সকালে বেশি হয় এবং শারীরিক পরিশ্রমের পরে বাড়তে পারে। দীর্ঘদিন ধরে স্পন্ডাইলাইটিস থাকলে মেরুদণ্ডের আকৃতি বিকৃত হয়ে যেতে পারে এবং শারীরিক কার্যকলাপে সীমাবদ্ধতা আসতে পারে।

স্কোলিওসিসের কারণে পিঠে ব্যথা হয়

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

স্কোলিওসিস

সাধারণত মানুষের শরীরের মেরুদণ্ড সোজা হওয়া উচিত, কিন্তু স্কোলিওসিসে মেরুদণ্ড ‘S’ বা ‘C’ আকারে বেঁকে যায়। এই বক্রতার কারণে পেশি ও হাড়ের উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে, যার ফলে পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যথার তীব্রতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। অনেকেই স্কোলিওসিসের কারণে তেমন ব্যথা অনুভব না করলেও, বক্রতা যত বেশি হয়, ব্যথার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকে।

মেরুদণ্ডে আঘাত পেলে

মেরুদণ্ড আমাদের শরীরের মূল অংশ এবং এটি আমাদের শরীরের ওজন বহন করে। কোনো ধরনের আঘাত, দুর্ঘটনা, বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ফলে মেরুদণ্ডের হাড়, পেশি বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ক্ষতির ফলে পিঠে তীব্র ব্যথা, কঠিনতা এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ব্যথার তীব্রতা আঘাতের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। ছোটখাটো আঘাতে হালকা ব্যথা হতে পারে আবার গুরুতর আঘাতে অচল হয়ে পড়ার মতো অবস্থাও হতে পারে। মেরুদণ্ডে আঘাত পেলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ভারী বস্তু তুললে

যখন আমরা ভারী কিছু তুলি, তখন আমাদের পিঠের পেশি এবং মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে পেশি টান, ডিস্ক স্লিপ বা অন্যান্য মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে এবং ফলে পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ভুল ভঙ্গিতে ভারী বস্তু তোলা, দীর্ঘদিন ধরে একই ভঙ্গিতে কাজ করা, বা পেশির শক্তি কম থাকলে এই সমস্যা আরো বাড়তে পারে। ভারী বস্তু তোলার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, ধীরে ধীরে তোলা এবং যদি সম্ভব অন্য কারো সাহায্য নেওয়া উচিত।

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

একই ভঙ্গিতে বা একই জায়গায় বসে থাকার কারণে ব্যথা হয়

দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বা একই জায়গায় বসে থাকার কারণে

আজকালের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই কম্পিউটারের সামনে বা একই জায়গায় বসে কাজ করেন। এভাবে বসে থাকার কারণে পিঠের পেশি এবং মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ফলে পেশিতে টান, ডিস্ক স্লিপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং পিঠে তীব্র ব্যথা হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়া, শরীরচর্চা করা এবং সঠিক ভঙ্গিতে বসা খুবই জরুরী।

অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে

যখন আমরা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করি, তখন আমাদের পেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে পেশি টান, ডিস্ক স্লিপ বা অন্যান্য মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে এবং ফলে পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। নিয়মিত ব্যায়াম না করার পর হঠাৎ করে অনেক বেশি ব্যায়াম করা, ভারী ওজন তোলা বা দীর্ঘক্ষণ একই কাজ করলে এই সমস্যা আরো বাড়তে পারে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণে পিঠের ব্যথা থেকে বাঁচতে ধীরে ধীরে ব্যায়াম শুরু করা, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং যদি ব্যথা বেশি হয় তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানোর ফলে

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ভুল ভঙ্গি বজায় রেখে বসে থাকা, যেমন কম্পিউটারের সামনে বা গাড়িতে দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকা, বা ভারী বস্তু তুলতে ভুল ভঙ্গি করা ইত্যাদির কারণে মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের ফলে পিঠে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, নিয়মিত বিরতি নেওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রমের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা এই সমস্যা থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়।

ভিশন ফিজিওথেরাপিতে অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।স্ট্রেসের কারণে পিঠে ব্যথা হয়

স্ট্রেস

যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, তখন আমাদের শরীর বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। এর মধ্যে একটি হল পেশির টান। দীর্ঘদিন মানসিক চাপে থাকলে পিঠের পেশিগুলি ক্রমাগত সংকুচিত থাকে, যার ফলে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও, স্ট্রেসের কারণে শরীরে কোরটিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা পেশি এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই, পিঠের ব্যথার কারণ শুধু শারীরিক নয়, মানসিক কারণও হতে পারে।

এছাড়াও, স্ট্রেসের কারণে অনেকেই ভুল ভঙ্গিতে বসে থাকেন বা দাঁড়ান, যা পিঠের ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া

পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়া আমাদের শরীরের জন্য বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এর মধ্যে পিঠের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। যখন আমরা পর্যাপ্ত ঘুম পাই না, তখন আমাদের পেশিগুলি যথাযথভাবে শিথিল হতে পারে না। ফলে পেশি টান এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে, পিঠের পেশিগুলি দিনের বেলায় বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় এবং রাতে ঘুমের সময় শিথিল হওয়ার সুযোগ পায়। যদি এই শিথিলতা না হয়, তাহলে পিঠের ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে শরীরের হরমোনগুলিতেও পরিবর্তন আসতে পারে, যা পেশি এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সায়াটিকা সারানোর উপায়, ঔষধ, লক্ষণ, কারণ ও বিশেষ চিকিৎসা সম্পর্কে এই পোস্ট থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।

আরও অন্যান্য কারণ

এছাড়াও, আরও অন্যান্য অনেক কারণ রয়েছে যার কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। কারণগুলো আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে নিচে দেওয়া হলে-

সংক্রমণের কারণে পিঠে ব্যথা হয়

সংক্রমণের কারণে

যখন আমাদের শরীরের কোনো অংশে, বিশেষ করে পিঠের হাড়, পেশি বা মেরুদণ্ডে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অন্য কোনো জীবাণু সংক্রমণ ঘটে, তখন সেই স্থানে প্রদাহ হতে পারে এবং ফলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। মেরুদণ্ডে সংক্রমণ খুব গুরুতর হতে পারে এবং পিঠে তীব্র ব্যথা, জ্বর, এবং অন্যান্য লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। পেশিতে সংক্রমণ হলে সেই অংশে স্ফীতি, লালচে ভাব এবং তীব্র ব্যথা হতে পারে। হাড়ে সংক্রমণ হলে তা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং হাড়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ক্যান্সারের কারণে

ক্যান্সার কোষ যখন মেরুদণ্ডের হাড়, পেশি বা অন্যান্য কাঠামোতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা টিউমারের সৃষ্টি করে। এই টিউমারগুলো আশেপাশের টিস্যুতে চাপ প্রয়োগ করে এবং ফলে ব্যথা হয়। আবার, কিছু ধরনের ক্যান্সার হাড়কে দুর্বল করে এবং ভেঙে ফেলতে পারে, যাও পিঠে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া, ক্যান্সার কোষগুলি মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণ হতে পারে, যা পিঠে ব্যথা এবং অন্যান্য লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।

আর্থ্রাইটিস হলে

আর্থ্রাইটিস বা জোড়ের প্রদাহ মেরুদণ্ডের জোড়গুলোকে আক্রমণ করে পিঠে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগে জোড়ের তরুণাস্থি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে জোড় ফুলে ওঠে এবং পিঠে কাঁটা কাঁটা অনুভূতি, জ্বালাপোড়া এবং অনমনীয়তা হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও স্পন্ডাইলাইটিসের মতো আর্থ্রাইটিসের বিভিন্ন ধরন পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। বয়স, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা এই সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

পিঠে ব্যথার সাথে কাঁধে, হাতে বা পায়ে ব্যথা, অসাড়তা, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হলে তা গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। যেমন, মেরুদণ্ডের ডিস্ক স্লিপ হওয়া, নার্ভের চাপ, সংক্রমণ বা অন্য কোনো গুরুতর রোগ। এই ধরনের লক্ষণগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়। পিঠে ব্যথার সাথে এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় কি জানেন? না জানলে আমাদের লেখা এই পোস্টটি থেকে বিস্তারিত জানুন।

পিঠে ব্যথা হলে করণীয়

পিঠে ব্যথা হলে করণীয়

পিঠে ব্যথা হলে আমরা অনেকে নানা সমস্যায় পড়তে পারি। তাই এই ব্যথা প্রতিরোধ করতে বা কমাতে আপনি চাইলে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এমনকি আপনি দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের সহায়তায় বাড়িতে বসেও ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। আমরা ভিশন ফিজিওথেরাপির পক্ষ থেকে আপনাকে সঠিক নির্দেশনা ও কিছু বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করবো।

সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন

আপনার উপরের পিঠের ব্যথা কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা। বসার, দাঁড়ানো এবং ঘুমানোর সময় আপনার শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থানে রাখুন। কাজ করার সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকবেন না, মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে হাঁটাহাঁটি করুন। এই সহজ কৌশলগুলো আপনার পিঠের পেশীকে স্বস্তি দিতে পারে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

মজবুত পেশী গড়ে তুলুন

নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি আপনার পিঠের পেশীগুলোকে মজবুত করতে পারবেন। যোগব্যায়াম, সাঁতার এবং ওজন তোলা এই ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এই ব্যায়ামগুলো আপনার পিঠের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করবে এবং এর ফলে আপনার পিঠের ব্যথা অনেকটাই কমে যেতে পারে।

তাপ ও ঠান্ডা সেঁক দিন

ব্যথার প্রকৃতি অনুযায়ী ঠাণ্ডা না গরম সেঁক বেশি উপকারী হবে তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যদি আপনার পেশী কঠিন হয়ে গিয়ে থাকে এবং ব্যথা লাগে, তাহলে তাপ সেঁক দিলে উপকারী হতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনার পিঠে ফুলে যাওয়া বা প্রদাহ থাকে, তাহলে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। তবে, কোনটি ব্যবহার করবেন তা নিয়ে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। ডাক্তার আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেবেন।

পারকিনসন রোগের লক্ষণ কি এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

ভারী জিনিস তোলার সময় সাবধান থাকুন

ভারী জিনিস তোলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন

কখনোই সরাসরি নিচু হয়ে ভারী জিনিস তুলবেন না। বরং এর পরিবর্তে, হাঁটু বেঁকে এবং পিঠ সোজা রেখে ভারী জিনিস তুলুন। এইভাবে তুললে আপনার পিঠের উপর চাপ কম পড়বে এবং ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনাও কমবে। সবসময় অন্য কারো সাহায্য নিন যদি কোনো ভারী জিনিস একা তুলতে সমস্যা হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন

অতিরিক্ত ওজন আপনার পিঠের পেশী ও হাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ দেয়, যার ফলে পিঠের ব্যথা বাড়তে পারে। সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে পারেন। স্বাস্থ্যকর ওজন আপনার পিঠের ব্যথা কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করবে।

নিয়মিত তরল পানীয় পান করুন ও মানসিক চাপ কমান

পিঠের ব্যথা কমাতে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং ফলমূল খান। একইসাথে, মানসিক চাপও পিঠের ব্যথার একটি কারণ হতে পারে। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা অন্য কোন কৌশলের মাধ্যমে আপনি মানসিক চাপ কমিয়ে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই দুইটি উপায়ই আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করবে এবং পিঠের ব্যথা কমাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আমাদের দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করে আপনার এপয়েন্টমেন্টটি নিশ্চিত করুন।পিঠে ব্যথার বিশেষ চিকিৎসা

পিঠে ব্যথার চিকিৎসা

দীর্ঘদিন ধরে পিঠের ব্যথা ভোগা অনেকের জন্যই চিন্তার বিষয়। এর অন্যতম কারণ হতে পারে পেশী সংকোচন বা মাসল স্পাজম। এই সংকোচনের কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় ওষুধ খেয়েও ব্যথা কমতে চায় না। তবে আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় এমন অনেক কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে যা ওষুধ ছাড়াই পিঠের ব্যথার সমাধানে সহায়তা করে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো পেশীকে শিথিল করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ব্যথাকে কমিয়ে আনে। ফলে, দীর্ঘদিনের পিঠের ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।

দীর্ঘদিনের পিঠের ব্যথার কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন দক্ষ ও যোগ্য ফিজিওথেরাপিস্ট প্রথমেই বিস্তারিত মূল্যায়ন করে পিঠের ব্যথার সঠিক কারণ খুঁজে বের করবেন। পেশী সংকোচন, ডিস্ক সমস্যা, অথবা অন্য কোনো কারণে ব্যথা হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করে তিনি উপযুক্ত চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করবেন। সঠিকভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করার মাধ্যমে পিঠের ব্যথা থেকে দীর্ঘস্থায়ী মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পিঠের ব্যথা সমস্যার জন্য ম্যানুয়েল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার পাশাপাশি যেসব অত্যাধুনিক ট্রিটমেন্ট রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে -চ

আকুপাংচারের মাধ্যমে

পিঠের অতিরিক্ত পেশী সংকোচন বা মাসল স্পাজমের কারণে যে ব্যথা হয়ে থাকে, আকুপাংচার সেটি কার্যকরভাবে উপশম করতে পারে। আকুপাংচারের মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিন্দুগুলিতে সূঁচ লাগিয়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো হয়। এর ফলে পেশী শিথিল হয় এবং সংকোচন কমে যায়। ফলে পিঠের ব্যথা অনেকটা কমে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে আকুপাংচার পিঠের ব্যথার একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

পালস ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি (PEMF) এর মাধ্যমে

পালস ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি (PEMF) হলো একটি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শরীরে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ম্যাগনেটিক শক্তি প্রয়োগ করা হয়। এই ম্যাগনেটিক শক্তি শরীরের কোষগুলিকে সক্রিয় করে এবং ত্বকের নিচের টিস্যুগুলিতে পৌঁছে। ফলে, আহত বা ব্যথিত অংশে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং প্রদাহ কমে। ফলে, আঘাত বা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। এই থেরাপি বিভিন্ন ধরনের ব্যথা, যেমন পেশীর ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় কার্যকরী হতে পারে।

ওজোন থেরাপি দিয়ে পিঠের ব্যথার চিকিৎসা

ওজোন থেরাপি দিয়ে পিঠের ব্যথার চিকিৎসা

ওজোন থেরাপি একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে ওজোন গ্যাস শরীরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রবেশ করানো হয়। বিশেষ করে, ওজোন ইনজেকশন একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। বাত ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, হার্নিয়েটেড ডিস্ক, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত বা আঘাতের কারণে পিঠে যে ব্যথা হয়, ওজোন ইনজেকশন সেগুলোর জন্য কার্যকরী হতে পারে। ওজোন গ্যাসের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে, এটি ব্যথাকে কমাতে, প্রদাহ দূর করতে এবং টিস্যু হিলিংকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। ফলে, ওজোন থেরাপি পিঠের ব্যথার অনেক ক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান দিতে পারে।

পিঠের ব্যথা অনেকেরই পরিচিত একটি সমস্যা। এই ব্যথার কারণে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, এমনকি ঘুম পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। পেশী সংকোচন, ডিস্ক সমস্যা, বাত বা অন্যান্য কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। তাই পিঠে ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা নিলে ১০০% সুস্থ হওয়া সম্ভব।

অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা সেরা মানের ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

 

লিখেছেন,

ডাঃ সৌরভ রহমান, পিটি
বিপিটি (ঢাবি),
এমডিএমআর, ফেলো (এসএসটি),
ব্যথা, পক্ষাঘাত, খেলাধূলার আঘাত ও পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ,
ইনচার্জ ও সিনিয়র ফিজিওথেরাপিস্ট।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

হ্যাঁ, মানসিক চাপ এবং স্বাস্থ্যের সাথে পিঠের ব্যথার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, তখন আমাদের শরীর বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর মধ্যে একটি হল পেশী সংকোচন বৃদ্ধি পাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে পেশী সংকোচন থাকলে পিঠের ব্যথা হতে পারে। এছাড়া, মানসিক চাপ আমাদের ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে সামান্য ব্যথাও তীব্র মনে হতে পারে। যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং অন্যান্য শিথিলকরণ কৌশলের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমিয়ে পিঠের ব্যথার উপসম পাওয়া সম্ভব।

দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল হার্নিয়েটেড ডিস্ক, স্পাইনাল স্টেনোসিস, অস্টিওআর্থারাইটিস এবং ফাইব্রোমায়ালজিয়া। হার্নিয়েটেড ডিস্কের কারণে মেরুদণ্ডের ডিস্ক ফেটে গিয়ে স্নায়ুতে চাপ দেয়, স্পাইনাল স্টেনোসিসে মেরুদণ্ডের খাল সংকীর্ণ হয়ে যায়, অস্টিওআর্থারাইটিসে মেরুদণ্ডের জোড়গুলোতে ক্ষয় হয় এবং ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে পেশী ও জোড়গুলোতে ব্যথা সৃষ্টি করে।

সঠিক ধরনের ব্যায়াম পিঠের ব্যথা উপশমে বেশ কার্যকরী হতে পারে। একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা শারীরিক থেরাপিস্ট আপনার জন্য উপযুক্ত ব্যায়ামের একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন। এই ব্যায়ামগুলো সাধারণত মৃদু ধরনের হয় এবং পিঠের পেশীকে শক্তিশালী করতে এবং নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, কোন ধরনের ব্যায়াম আপনার জন্য উপযুক্ত তা নির্ধারণ করার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অযথা বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করা পিঠের ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, ধূমপান ত্যাগ করা এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা এই ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডে চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং পিঠের ব্যথা আরও বাড়াতে পারে। ধূমপান মেরুদণ্ডের ডিস্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ব্যথা বাড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, নিয়মিত ব্যায়াম পিঠের পেশীকে শক্তিশালী করে এবং নমনীয়তা বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

Author - Dr Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Dr. Saiful Islam
Dr. Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Articles: 16