অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কারণ সমুহ

অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কারণ অনেক হতে পারে, তার মধ্যে প্রথম কারন মাংসপেশীর সমস্যা দ্বিতীয় কারন হাড়ের সমস্যা। আমাদের কোমরে বেশ কিছু মাংসপেশী আছে , লিগামেন্ট আছে, জয়েন্ট আছে, টেনড্রোম আছে এবং পাশাপাশি ২ টা হাড় আছে তার মধ্যে একটা ডিস্ক আছে এবং এটার মধ্যে ৭০% পানি থাকে। এই গঠন গুলোর যে কোন সমস্যা থেকে ব্যথা তৈরি হলে সেটাকেই আমরা কোমর ব্যথা বলি। কোমর ব্যথা সাধারণত মধ্য ও বৃদ্ধ বয়সের একটি সমস্যা হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে ২০২০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু, কিশোর-কিশোরীরা এবং তরুন-তরুনী কোমর ব্যথা অনুভব করেছে এবং তার মধ্যে প্রায় ৯%  তীব্র কোমর ব্যথার কথা জানিয়েছে।

জেনে নিন কোমর ব্যথার মূল দুইটা কারন।

মাংসপেশীর কারনে কোমর ব্যথা

এবার আসি কোমর ব্যথার শুরু কিভাবে হয়, যেমনঃ  হঠাৎ’ করে আপনি নিচ থেকে কোন কিছু তুলতে গেলেন কিন্তু সঠিক ভাবে যদি আপনি না তুলে থাকেন তাহলে পিছনের মাংসপেশীতে আঘাত প্রাপ্ত হতে পারেন এবং অল্প অল্প ব্যথা শুরু হয়ে থাকে।
বা দেখা যায় যারা খেলাধূলা করে তাদের আঘাত থেকেও ব্যথা হতে পারে।

আবার যারা ব্যগ নিয়ে থাকে সেই ব্যগ অনেক ভারী হয় এবং সঠিক ভাবে ব্যগ বহন না করার ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে। কারন মাংসপেশীতে চাপ পড়ে এই ব্যথা হয়ে থাকে।

আমাদের মধ্যে অনেক তরুন- তরুনী আছে যারা জিমে যাচ্ছে বা ব্যায়াম করছে সঠিক নিয়মে যদি ব্যায়াম করা না হয় তাহলে মাংসপেশীতে টান পড়ে। ফলে কোমর বা ঘাড় ব্যথা হতে পারে।

হাড়ে সমস্যার কারনে কোমর ব্যথা 

অনেক সময় দুর্ঘটনার কারনে হাড়ে আঘাত পেলে বা হাড়ে ফাটল ধরলে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু কিছু রোগেরের কারনে হাড়ে বা মেরুদন্ডে ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন বাত রোগের কারনে মেরুদন্ডে, কোমরে ব্যথা হতে পারে। আবার অনেক সময় হাড়ের মাঝে যে ডিস্ক থাকে তার মধ্যে পানি কমে গেলে কোমর ব্যথা হতে পারে। মেরুদন্ডের হাড় সরে গেলে বা বের হয়ে আসলে কোমর ব্যথা হয়।

অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কারণ

আরো পড়ুনঃ কোমরের ডান পাশে ব্যথা কেন হয়

কোমর ব্যথা প্রতিরোধ

শারীরিক অবস্থার উন্নতি করা বা ব্যথা কমানোর জন্য শরীরের গতিবিধি ঠিক রাখতে হয় এবং অনুশীলন করার মাধ্যমে কোমর ব্যথা প্রতিরোধে করা যায়।

ব্যায়ামঃ যে ব্যায়াম কোমরে চাপ দেয় না বা ঝাঁকুনি দেয় না এবং কোমরে শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়াতে পারে এবং পেশীগুলিকে আরও ভালভাবে কাজ করতে দেয় এই সব ব্যায়াম অনুশীলন করতে হবে। যেমন- হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং সাঁতার কাটা।

একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখাঃ অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরের পেশীতে চাপ পড়ে। তাই উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বজায় রাখতে হবে।

ধুমপান ত্যাগঃ ধূমপানের কারণে কাশি হয়, যা হার্নিয়েটেড ডিস্ক হতে পারে। ফলে ধূমপান কোমরের ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান ত্যাগ কোমরের ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

পেশীর শক্তি এবং নমনীয়তা তৈরিঃ পেট এবং পিঠের পেশীর ব্যায়াম করতে হবে, যা কোমরকে  শক্তিশালী করে, এই পেশীগুলিকে এমন অবস্থায় সাহায্য করে ফলে কোমরে সমর্থন পায়।

সোজা হয়ে দাড়ানোঃ দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকার সময়, নীচের পিঠ থেকে কিছুটা বোঝা সরানোর জন্য একটি নিচু ফুটস্টুলের উপর একটি পা রাখুন। সঠিক ভঙ্গিতে দাঁড়ালে  পিছনের পেশীগুলির উপর চাপ কমাতে পারে। ফলে কোমর ব্যথা হয় না।

সঠিক ভাবে বসাঃ পিঠের নিচের দিকে সাপোর্ট করে এমন আর্মরেস্ট এবং একটি সুইভেল বেস সহ একটি আসন বেছে নিন।
হাঁটু এবং নিতম্ব সমান রেখে বসবেন। অন্তত প্রতি আধা ঘন্টায় বসার অবস্থান পরিবর্তন করুন।

ভারী বহনে সতর্ক হনঃ সম্ভব হলে ভারী উত্তোলন এড়িয়ে চলুন। যদি আপনাকে ভারী কিছু তুলতেই হয় তবে আপনার পাকে কাজ করতে দিন। আপনার পিঠ সোজা রাখুন – মোচড় দেবেন না – এবং কেবল হাঁটুতে জোর দিন এবং বাঁকান। আপনার শরীরের কাছাকাছি লোড ধরে রাখুন।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

বেশিরভাগ কোমর ব্যথা সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঘরোয়া চিকিৎসা এবং স্ব-যত্নের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ভালো হয়। কোমর ব্যথার জন্য আপনি ডাক্তারের সাথে যে সময়ে যোগাযোগ করবেন:

  • ব্যথা কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।
  • গুরুতর এবং বিশ্রামের সাথে ব্যথা না কমলে।
  • এক বা উভয় পাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়লে।
  • ব্যথার সাথে জ্বর আসলে।
  • নতুন অন্ত্র বা মূত্রাশয় সমস্যা সৃষ্টি হলে।

সারসংক্ষেপ

কোমর ব্যথা বাচ্চা এবং কিশোরদের জন্য একটি সমস্যা হতে পারে এটা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো তাদের জন্য সাধারণ নয়। যে শিশুরা খেলাধুলা করে, স্কুলে ভারী ব্যাকপ্যাক টেনে নিয়ে যায় বা শরীরের ওজন বেশি তাদের কোমর ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।পেশীর আঘাত, স্ট্রেস ফ্র্যাকচার এবং ডিস্ক হার্নিয়েশন অল্প বয়স্কদের কোমর ব্যথা সাধারণ কারণ।

তবে বাচ্চাদের এবং কিশোর-কিশোরীদের কোমর ব্যথার বেশিরভাগ ভাল হয়ে যায় যদি তারা এটা সহজে করে নেয় এবং বিশ্রাম নেয় ঠিক করে। যদি কোমর ব্যথা ভালো না হয়, আরও খারাপ হয়, বা তাদের অন্যান্য উপসর্গ থাকে যা সমস্যাজনক, তাহলে তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহঃ

কেন অল্প বয়সীদের কোমর ব্যথা হয়?

পেশীর আঘাত, স্ট্রেস ফ্র্যাকচার এবং ডিস্ক হার্নিয়েশন হল অল্প বয়স্কদের কোমর ব্যথার সাধারণ কারণ। তবে, মেরুদণ্ডের সংক্রমণ এবং টিউমারের মতো গুরুতর অবস্থার কারণেও বাচ্চাদের কোমর ব্যথা হতে পারে।

আমার কোমরের ব্যথা গুরুতর কিনা তা আমি কীভাবে জানব?

কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে। গুরুতর এবং বিশ্রামের সাথে ব্যথার উন্নতি না হলে। এক বা উভয় পায়ে ছড়িয়ে পডলে, বিশেষ করে যদি ব্যথা হাঁটুর নিচে যায়।

গ্যাসের কারণে কি কোমর ব্যথা হতে পারে?

হ্যাঁ হতে পারে, পেটে গ্যাসের ব্যথা উপরের কোমরে অনুভূত হতে পারে এবং পেটের নিচের দিকে গ্যাসের ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

 

ব্যথা সংক্রান্ত যে কোন সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
বাসা ৪২, লেক ড্রাইভ রোড, সেক্টর ০৭, উত্তরা
ঢাকা-১২৩০
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 
মোবাইলঃ 01760-636324 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 147