হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য কি? হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায় ও কি খেলে হার্ট অ্যাটাক হয়?

হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) হলো একপ্রকার হৃদরোগ কে বোঝায়, যা হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ঘটে। এটি একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে। হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ হলো করোনারি ধমনীতে চর্বিজমা হওয়া, যা রক্তের প্রবাহকে ব্যাহত করতে সাহায্য করে।

হার্ট অ্যাটাকের সময়, হৃৎপিণ্ডের কোনো একটি অংশ পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে ঐ অংশের পেশি স্থায়ীভাবে নষ্ট হতে পারে। ফলে, পুরো হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমি আমার আগের পোস্টে হার্ট অ্যাটাক কি, কেন হয়, হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ ও হলে করণীয় কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। অনেকে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক বিষয়টা এক করে ফেলেন। তাই আমরা এই পোস্টে এই দুটির মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করবো।

ঘাড় ও পিঠে ব্যথার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার এই পোস্টটি পড়ুন।

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক দুটোই মানুষের জীবন ধ্বংসকারী মারাত্মক দুটি জটিল রোগ। অনেকেই হার্ট অ্যাটাক কে স্ট্রোক আবার স্ট্রোককে হার্ট অ্যাটাক বলে ভুল করেন। যার ফলে চিকিৎসা নিতে কোথায় যেতে হবে? তা নিয়ে ইতস্ততা করেন। আর এ রোগ দুটির সফলতা নিভর্র করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার উপর। তাই সাধারণ মানুষের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রার্থক্য কী? সেটা জানা জরুরী।

হার্ট অ্যাটাকঃ হার্টের কোষ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না পেয়ে মারা যাওয়াকে ‘হার্ট অ্যাটাক‘ বলা হয়। অস্থির অ্যানজাইনামায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন এ খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

স্ট্রোকঃ মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে এটি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিড়ে বা রক্ত জমাট বেঁধে এমন ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।

হার্ট অ্যাটাক

হার্টে রক্ত সরবরাহের জন্য করোনারি ধমনী রয়েছে। চর্বি জমে বা অন্য কোন কারণে হার্টের ধমনীগুলো ৭০ ভাগ বা তার বেশি ব্লক হলে হার্টের মাংসপেশি পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। আর হার্ট অ্যাটাকের কারণে বুকের ঠিক মাঝখানে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। এছাড়াও মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম দেখা যায়। এ অবস্থায় রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে ইসিজি, ইকো এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করা হয়। আর পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা হয়। এভাবে হার্টের ক্ষতি এড়ানো যায়।

স্ট্রোক

স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। সাধারণত মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিড়ে বা ব্লক হয়ে গেলে এ সমস্যা হয়। যার ফলে শরীরের একপাশ অবশ হতে থাকে। এছাড়াও মাথা ব্যথা, মুখ বেকে যাওয়া, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখার মত অসুবিধা হতে পারে। এ অবস্থায় অতি দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে মাথার সিটি স্ক্যান করতে হবে। আর নিউরোলজি চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে সবচেয়ে কার্যকারী হয়। 

সহজ ভাষায় হার্ট অ্যটাক হল হৃদপিন্ডের রোগ আর স্ট্রোক হল মস্তিষ্কের রোগ। হার্টের রক্তনালী করোনারি ধমনীতে চর্বি জমে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক হয়। আর মস্তিষ্কের ধমনী ছিড়ে গেলে বা ব্লক হলে স্ট্রোক হয়। আর দুটি রোগের চিকিৎসা সঠিক সময়ে না করা হলে রোগী যে কোন সময় মারা যেতে পারে। 

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ মানুষ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ রোগ দুটি সাধারণত বয়স্ক মানুষদেরই বেশি হয়। তবে ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাই বেশি। আর যারা মোটা, ধুমপায়ী, মাদকসেবি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি খাবার গ্রহণকারী ব্যক্তিদের এ রোগ দুটি হওয়ার ঝুকি বেশি।

আমাদের অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে উন্নত মানের সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় হল স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করা। অধিকাংশ হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হল স্বাস্থ্যহীন জীবন যাপন করা। তবে হার্ট অ্যাটাক কমিয়ে আনতে হলে অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, চর্বিযুক্ত খাবার যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে, ফাস্ট ফুড (যেমনঃ বার্গার, চিকেন ফ্রাই, চিকেন চাপ, নুডুলস ইত্যাদি)  ও জাঙ্ক ফুড (যেমনঃ মিছরি, বেকারির পণ্য, কোমল পানীয় ইত্যাদি) পরিহার করতে হবে, নিজেকে যতটুকু পারা যায় মানসিক  চাপমুক্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার অভ্যাস করতে হবে। আর এগুলো হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হল পাঁচটি। এ উপায়গুলো হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের পাশাপাশি ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধে খুবই ফলপ্রসু ভূমিকা পালন করে। এ উপায়গুলো হলো-

১) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
২) ধূমপান পরিহার করা।
৩) সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট মেনে চলা।
৪) ওজন নিয়ন্ত্রণ।
৫) মদ্যপান পরিহার।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত রক্তচাপ হার্টের ধমনীর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার খেতে হবে। খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। কারণ লবণের মধ্যে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

তাই দৈনিক দেড় গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। যদি সহজ হিসেবে বলা হয়, তা পৌনে এক চামচ লবণ। আর সুষম খাবারের মধ্যে আঁশযুক্ত খাবার ( যেমন: অধিক পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি,  লাল আটা বা হোলগ্রেইন আটার রুটি , লাল চাল, পাউরুটি ও পাস্তা) লো ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনে।

এছাড়া শরীরকে সুস্থ রাখতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্প নেই। সাইকেল চালানো,  সাঁতার কাটার মতো হালকা শরীরচর্চাগুলো করতে হবে। যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে ভারী কঠিন শরীরচর্চাগুলো পরিহার করতে হবে।

ধূমপান পরিহার
হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোকের প্রধাণ কারণ হল ধূমপান করা। ধূমপান করলে হার্টের করোনারি ধমনীগুলো সরু ও শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে হার্টের মাংসপেশি পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না এবং মারা যায়। আর তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। 

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে। আর এ নেশা ছাড়তে প্রয়োজনে একজন চিকিৎসক পরামর্শ নিতে হবে। কারণ হঠাৎ করে ধূমপান ছাড়লে কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়। যা চিকিৎসক এর পরামর্শে কিছু ঔষধ সেবন করলে ভালো হয়ে যায়।

সায়াটিকা কি, কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার জরুরী

সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
যে সকল কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হল চর্বিযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া। অতিরিক্ত এ খাবার খাওয়ার ফলে হার্টের রক্তনালী সরু ও শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয় না। আর তা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।

 হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই যে সকল খাবার অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ (যেমন: দুধ, মাখন, শুয়োরের মাংস, রান্নার তেল ইত্যাদি) যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।  এই কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার নিয়মিত অত্যাধিক খেলে রক্তনালী প্লাক জমে ব্লক হতে পারে। যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন হার্ট অ্যাটাক কে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের ওজন বিএমআই ব্যবহার করে নির্ণয় করা যায়। বিএমআই হলো দেহের ওজন নির্ণয়ের ক্যালকুলেটার। অর্থাৎ দেহের ওজনকে কিলোগ্রামে রেখে উচ্চতা দিগুণ করে ভাগ করলে যে ফলাফল পাওয়া যায় তাই বিএমআই। তবে এক্ষেত্রে দেহের উচ্চতা মিটারে নিয়ে ভাগ করতে হবে। বিএমআই এর স্বাভাবিক মান (১৮-২৪)। কারো বিএমআই এর থেকে বেশি হলে বুঝতে হবে সে স্থুলতায় ভুগতেছে ও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে বিএমআই নির্ণয়ঃ একজন মানুষের ওজন ৬৫ কেজি,  তার উচ্চতা ১.৫ মিটার। অতএব বিএমআই:৬৫÷(১.৫×১.৫)= ২৮।  এই হিসাব থেকে বলা যায় রোগীটি স্থুলতায় ভুগতেছে। তার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

মদ্যপান পরিহার
মদ পান করলে দেহে কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ বেড়ে যায়।  যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মদ পানকারী ব্যক্তি তা ছেড়ে দিলে অন্যান্য একটানা মদ গ্রণকারী তুলনায় হার্ট অ্যাটাক কম হয়ে থাকে। তাই হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে মদপান অবশ্যই ছাড়তে হবে।

কোমর ব্যথা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের অভিজ্ঞ থেরাপিস্টদের লেখা এই পোস্টটি পড়ুন।

কি খেলে হার্ট অ্যাটাক হয়

কি খেলে হার্ট অ্যাটাক হয়?

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ। বর্তমানে হার্ট অ্যাটাকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। হার্টের মাংসপেশি যখন ভালোভাবে কাজ করে না, তখন হার্ট অ্যাটাক হয়।কোলেস্টেরল ও ফ্যাট দেহের মধ্যে বেড়ে গিয়ে ধমনীতে প্লাক সৃষ্টি করে। যা স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়।

এছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার, স্থুলতার কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এছাড়াও স্যাচুরেটেড ফ্যাট, অতিরিক্ত লবণ এবং খারাপ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেশি। তবে কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়া না ছেড়ে দিলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়-

কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয় পান করলে
বিয়ে বাড়ি, পার্টি, গেট টুগেদারসহ যে কোন অনুষ্ঠানে কোল্ড ড্রিংকস না খেলে আমাদের খাবারই হজম হয় না। কিন্তু এ কোমল পানীয়তে প্রচুর চিনি রয়েছে। প্রতি বারো আউন্স সোডাসমৃদ্ধ ড্রিংকসে দশ চা চামচ চিনি রয়েছে। এ কৃত্রিম চিনি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলে দেহের ওজন বেড়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

সাদা ময়দা ও চাল খেলে
বাজারে যে সাদা চাল ও ময়দা পাওয়া যায় তার অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাতকৃত। এ খাবারে পুষ্টি তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এ খাবারগুলো খেলে ক্ষুধা আরো বেড়ে যায়। দেহের ওজন এবং ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কারণ এ খাবারগুলোতে অত্যাধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও লবণ থাকে। অপরদিকে অপ্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে রক্তনালীর কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা নিয়ে আমাদের সেরা ফিজিওথেরাপিস্টদের সাথে পরামর্শ নিতে এই +8801932-797229 নম্বরে সরাসরি কল করুন।

অতিরিক্ত লাল মাংস সেবন করলে

বিশেষ করে গরুর মাংসে, ছাগলের মাংসে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এ মাংসগুলো একদিন অত্যাধিক খেয়ে ফেললে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৪২ পার্সেন্ট পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ মাংসগুলো যখন প্রক্রিয়াজাত করা হয়, সেটা আরো খারাপ।  কারণ প্রসেসিং মাংসে অতিরিক্ত ফ্যাট ও লবণ থাকে। যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।

খাবার লবণ বেশি পরিমাণে খেলে

লবণ কম হলে আমরা খেতে পারি না। আবার বেশি হলেও খেতে পারি না। খাবারের স্বাদের জন্য লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে ক্যানের মধ্যে থাকা খাবারগুলোতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। আর লবণের মধ্যে থাকা সোডিয়াম রক্তনালীকে সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই গবেষণা অনুযায়ী দৈনিক ছয় গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।

ফাস্ট ফুড খেলে হার্ট অ্যাটাক হয়

আমাদের সেরা মানের ফিজিথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে জীবনে স্বস্তি ফিরে পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন।

অপ্রয়োজনীয় ফাস্ট ফুড খেলে

বার্গার, পিৎজা, চিকেন ফ্রাই, রুল প্রভৃতি ফাস্ট ফুড প্রায় সকলের প্রিয় খাবার। ফাস্ট ফুড ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না। কিন্তু এ খাবারগুলোতে অত্যাধিক পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল,  চিনি, প্রসেসিং মাংস এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি থাকে। যা হার্ট অ্যাটাকের পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। তাই হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে ফাস্ট ফুড অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

ঘন ঘন আইসক্রিম খেলে
আইসক্রিম ছোট-বড় সকলের পছন্দের খাবার। আর গরমে আইসক্রিমের ঝুরি নেই। কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত চিনি থাকে। এছাড়াও ফ্যাট, কোলেস্টেরল ও ক্যালোরি থাকে। যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। 

স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার খেলে
দই, চিজ, লাল মাংস, মাখন, বিস্কিট ও নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এ ফ্যাট শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তাই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে আনস্যাচুরেটেড খাবারগুলো (যেমন: বাদাম, তেল সমৃদ্ধ মাছ, অলিভ অয়েল তৈরি রান্না)  বেশি বেশি খেতে হবে। আর দুধ খেলে তার থেকে চর্বি সরিয়ে খেতে হবে। দুধে চিনি মিশিয়ে খাওয়া পরিহার করতে হবে।

বেশি পরিমাণে চিনি খেলে
চকলেট, কেক, বিস্কুট, পাউরুটি প্রভৃতি খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রসেসিং চিনি ব্যবহৃত হয়। যথাসম্ভব চিনিযুক্ত এ খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। কারণ এ খাবারগুলোতে ব্যবহৃত চিনি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিয়ে থাকে।

এছাড়াও কিছু খাবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। সেগুলো হলো-

  • ভাজাপোড়া যুক্ত খাবার
  • ডালডা
  • ঘি
  • মাখন
  • কনডেন্সড মিল্ক
  • পেস্ট্রি
  • ক্রিম বা ননী
  • সসেজ

হার্ট অ্যাটাক হলে প্রাথমিক লক্ষ্য হল হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ পুনরস্থাপন করা। এটি ওষুধ বা সার্জারির মাধ্যমে করা হয়। এই প্রাথমিক চিকিৎসার পর, দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য জীবনধারণে পরিবর্তন আনা হয়। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান বর্জন এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট হার্টকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওষুধের মাধ্যমেও হৃদযন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা হয়।

হার্ট অ্যাটাক একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে এর ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। যদি হার্ট অ্যাটাকের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দ্রুত চিকিৎসা এবং সুস্থ জীবনযাপন হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।

লিখেছেন,
ডা. সাইফুল ইসলাম,
কনসাল্টেন্ট ফিজিওথেরাপিস্ট,
বিপিটি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), এমপিটি ( অর্থো ),
পিজিসি আকুপাঙ্কচার ( ইন্ডিয়া )
ওজোন থেরাপিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

 

তথ্যসূত্র

Adventist Health Northwest Heart Center- What’s the Difference Between a Heart Attack and a Stroke?

Healthline- Stroke vs. Heart Attack: What’s the Difference?

Columbus Regional Health- Strokes and Heart Attacks Symptoms: What’s the Difference?

Verywell Health- The Difference Between a Stroke and a Heart Attack

Neurolutions- What is the Difference Between a Stroke and a Heart Attack?

American Heart Association- Heart Attack, Stroke and Cardiac Arrest Symptoms

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

যদি কেউ হার্ট অ্যাটাকের পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যেমনঃ সবচেয়ে প্রথম কাজ হল দ্রুত এম্বুলেন্স কল করুন। রোগীর কণ্ঠনালীতে কোনো বাধা না থাকলে, তার কব্জিতে বা ঘাড়ে পালস পরীক্ষা করুন। যদি পালস না পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে। যদি পালস না পাওয়া যায়, তাহলে অবিলম্বে CPR শুরু করতে হবে। CPR হল একটি জীবনরক্ষাকারী পদ্ধতি যা হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসকে কৃত্রিমভাবে কাজ করাতে সাহায্য করে। যদি আপনি CPR করতে না জানেন, তাহলে এম্বুলেন্স আসার আগ পর্যন্ত রোগীর পাশে থাকুন এবং তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন।

অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, হার্ট অ্যাটাক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা যে কারও জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে, যেমন বুকে চাপ বা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম ছুটে পড়া ইত্যাদি। এই লক্ষণগুলি উপেক্ষা করা মারাত্মক হতে পারে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, হার্ট অ্যাটাক শুধুমাত্র দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা ব্যক্তিদেরই হয় তা নয়; আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ ব্যক্তিরও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং কোনো অস্বস্তি অনুভব হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা বা হার্ট ফেইলিউর একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা হৃদপিণ্ডের পাম্প করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত, এই রোগের ফলে মৃত্যুদর বেশ উচ্চ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৯০% হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা রোগী কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, অর্থাৎ হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীর সমস্যার কারণে মারা যান। এই মৃত্যুর কারণগুলি মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় যা প্রগতিশীল হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা (এই ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত রোগী মারা যায়।) প্রায় ৫০% হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা রোগীর মৃত্যুর কারণ এটি। অন্যদিকে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে অ্যারিথমিয়া এবং ইস্কেমিক ঘটনা {যার কারণে রোগীরা হঠাৎ করে হৃদস্পন্দনের গতি বা তালে ব্যাঘাত ঘটা (অ্যারিথমিয়া) অথবা হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া (ইস্কেমিক ঘটনা) এর কারণে মারা যান।}

Author - Dr Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Dr. Saiful Islam
Dr. Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Articles: 17