আমাদের দেশে কোমর ব্যাথায় ভোগেন এমন মানুষের সমস্যা কম নয়। এই সংখ্যা দিন দিন কমছে না, বরং বেড়েই চলছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হলেও, কোমর ব্যথা হলে ঠিকমতো বসা বা চলাফেরা করা খুব কষ্টকর হয়। তবে, কোকোমর ব্যথার কারণমর ব্যথার হলে এর সাথে আমাদের শরীরে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এমন অনেকেই আছেন যারা ঠিকমতো বসতে পারেন না, বসলেও স্বাভাবিকভাবে উঠতে পারেন না। তাই এই সমস্যায় যারা আক্রান্ত বা বেশি ভুগছেন, তাদের অবশ্যই যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে এবং ব্যাথার সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক সমাধানও খুঁজে নিতে হবে। আজ আমি আপনাদের সাথে কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আমরা আমাদের আগের পোস্টে সায়াটিকা নিয়ে বিশেষভাবে ও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আবার অনেকে আছেন যারা না বুঝে কোমরে ব্যথা হলে নিজে নিজেই পেইনকিলার খেয়ে ফেলেন। দেখা যায়, পেইনকিলার খাওয়ার ফলে ব্যথা কিছু সময়ের জন্য চলে গেলেও কোনোভাবে এই ব্যথা ঠিক হয় না। আবার খাওয়া বন্ধ করে দিলে ব্যথা আগের মতো হবে বা আরও বেশিও হতে পারে। এজন্য ওষুধ খেলে সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। নয়তো, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য হিতে বিপরীতও হতে পারে।
কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ?
অনেকে কোমর ব্যথা বলতে কিডনির সমস্যাকে বুঝে ভুল করে থাকেন। যেমন- লাম্বার স্পনডোলাইসিস, অস্টিওপোরেসিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, মেরুদন্ডে ডিস্ক সমস্যা, ক্যান্সার, মাংসপেশিতে আঘাত ইত্যাদি। তাই কোমর ব্যথা মানেই কিডনির সমস্যা এ ধারণা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
লিগামেন্ট বলতে সুতার মতো দেখতে টিস্যুকে বোঝায় যা বিভিন্ন জয়েন্ট বা হাড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। কোন কারণে এই লিগামেন্ট ও মাংসপেশি আঘাতপ্রাপ্ত হলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও, কোমরের মেরুদন্ডের হাড়গুলোর মাঝখানে জেলির মত ডিস্ক বা চাকতি রয়েছে। লক্ষণ হিসেবে এই চাকতি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে সরে গেলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
বিশেষভাবে, শরীরের লিগামেন্ট ও পেশিতে হঠাৎ করে ব্যথা হলে এর পাশাপাশি কোমরে, কোমরের নিচে ও পায়ে ঝিম ঝিম করে, বোধশক্তি কমে যায় এবং সাথে দুর্বলতার মতো বিশেষ লক্ষণগুলো দেখা যায়। আবার কখনো কখনো নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই ব্যথা হতে পারে, যেমন- মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট ব্যথা।
আপনাদের সুবিধার জন্য এই কোমর ব্যথার লক্ষণগুলো বিশেষভাবে আলাদাভাবে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
- পেশী ও লিগামেন্টের আঘাতঃ কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হল পেশী ও লিগামেন্টের আঘাত। হঠাৎ করে কোমর বাঁকালে, ভারী জিনিস তুলতে গিয়ে কোমর ব্যথা হতে পারে।
- মেরুদণ্ডের ডিস্ক সমস্যাঃ মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝে থাকে ডিস্ক নামক নরম চাকতি। এই ডিস্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা বের হয়ে গেলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
- স্পন্ডিলাইসিসঃ মেরুদণ্ডের হাড়গুলো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা ক্ষয়ের কারণে স্পন্ডিলাইসিস হতে পারে, যা কোমর ব্যথার সাধারণ একটি কারণ।
- অস্টিওপোরোসিসঃমেরুদণ্ডের হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে অস্টিওপোরোসিস হয়। এটি কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
- ক্যান্সারঃ মেরুদণ্ডের ক্যান্সার হলে বা দেখা দিলে তা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসঃ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এই রোগে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ হয়। এর ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। কোমর ব্যথার সাথে আনুষঙ্গিক কিছু লক্ষণ দেখা দিলে তা অন্য গুরুতর কিছুর লক্ষণ হতে পারে। যেমন- জ্বর হওয়া, শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া, পায়ে অবশভাব বা দুর্বলতা অনুভব করা, পায়ে ঝিনঝিন অনুভব করা ইত্যাদি।
কোমর ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যথার উপশমকারী ওষুধ, ফিজিওথেরাপি এবং ব্যায়াম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় কি তা আমাদের জানতে হবে।
বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে এখানে ক্লিক করুন।
কোমর ব্যথা কেন হয়?
হাড় এবং জয়েন্টের সংযোগস্থলে রশির মত লিগামেন্ট টিস্যু রয়েছে । আর কোন কারণে এই লিগামেন্ট ও মাংসপেশি আঘাতপ্রাপ্ত হলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও কোমরের মেরুদন্ডের হাড়গুলোর মাঝখানে জেলির মত ডিস্ক বা চাকতি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে সরে গেলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও যেসব কারণে ব্যথা হতে পারে সেগুলো হলো-
লাম্বার স্পনডোলাইসিস
কোমড়ের মধ্যে পাঁচটি হাড় রয়েছে। বংশগত বা বয়সজনিত কারণে এ হাড়গুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, তখন তাকে লাম্বার স্পনডোলাইসিস বলে।
এলআইডি
এলআইডি এর পূর্ণরূপ হল লাম্বার ডিস্ক প্রোলাপস। আর এটি কোমর ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ। কোমড়ের হাড়গুলোর মাঝখানে জেলির মত পানীয় রয়েছে, এগুলোকে ডিস্ক বা চাকতি বলে। আর এই ডিস্কগুলো কোন কারণে বের হয়ে স্নায়ুর উপরে চাপ দিলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত ২৪ -৪০ বছর মানুষের বেশি হয়।
লো ব্যাক পেইন
দেহের গুরত্বপূর্ণ তিনটি অংশ হল মাংস, হাড় ও স্নায়ু। আর এই তিনটি অংশের মধ্যে সামঞ্জস্য নষ্ট হলে কোমর ব্যথা হতে পারে। আর এ সমস্যা সাধারণত যুবকদের বেশি হয়ে থাকে।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও কোমর ব্যথার আরও কারণ রয়েছে। যথা:
- অতিরিক্ত শারিরীক ওজন;
- মেরুদন্ডে যক্ষা হলে;
- মেরুদন্ডে টিউমার হলে;
- অতিরিক্ত বোঝা বহন করলে;
- মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে;
- মাংসপেশি দূর্বল হলে।
ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা নিয়ে ও ব্যথাহীন চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
কোমর ব্যথার কারণ
কোমর ব্যথার ছোটবড় মিলিয়ে নানা ধরনের কারণ রয়েছে। এই কারনবগুলোর মধ্যে কয়েকটি কারণ খুবই পরিচিত। যেমন-
নিয়মিত ব্যায়াম না করলে
নিয়মিত ব্যায়াম না করলে কোমরের পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এই দুর্বল পেশী মেরুদণ্ডকে সঠিকভাবে সাপোর্ট করতে পারে না, যার ফলে ব্যথা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, কোমরের পেশী শক্ত হয়ে যেতে পারে। শক্ত পেশী ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
হঠাৎ নড়াচড়া করলে
অন্যান্য সময়ের চেয়ে হঠাৎ শারীরিক নড়াচড়া করলে সেটি কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। এই বেশি নাড়াচাড়ার কারণে কোমরের পেশীতে টান লাগে বা ছিঁড়ে যেতে পারে, ফলে অনেক বেশি ব্যথা হতে পারে।
অতিরিক্ত ভারী জিনিস তুললে
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভারী জিনিস তুললে সেটি কোমর ব্যথার একটি বড় কারণ হতে পারে। যদি কোন জিনিসটি আপনার জন্য খুব ভারী মনে হয়, তাহলে এটি তুলতে সাহায্য করার জন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করুন। আপনি যদি একা জিনিসটি তুলতে থাকেন, তাহলে এটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে তুলুন। ভারী জিনিস তোলার সময় কোমর বেল্ট ব্যবহার করুন।
নরম বিছানায় বা উঁচু বালিশে ঘুমালে
নরম বিছানায় ঘুমালে সেটি মেরুদণ্ডের জন্য অনেক বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। এছাড়াও নরম বিছানায় কোমরের পেশীগুলিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। সাথে শরীরের ওজন বিছানায় সমানভাবে বিস্তৃত হয় না বলে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
উঁচু বালিশে শুলে ঘাড়ের ব্যথা, পিঠের উপর চাপ পড়ে, শেষে কোমরের উপর অনেক বাজেভাবে প্রভাব পড়ে।
শরীরের জন্য অনুপযোগী উচ্চতার বা আকারের কোথাও বসলে
নিজের শরীরের চেয়ে বেশি ছোট বা অনেক বেশি বড় আকারের চেয়ার বা সোফাতে বসার কারণে স্বাভাবিক ভাবে আমরা যেমন বসতে পারি না বা বসলেও আরাম পাওয়া যায় না, তেমনি বেশি নিচু জায়গায় বসলে মাঝেমাঝে কোমরের পেশীতে অনেক বেশি টান পড়ে। তাই নিচু জায়গা বা শরীরের জন্য অনুপযোগী উচ্চতায় বসলে তা কোমর ব্যাথার একটি প্রধান ও বিশেষ কারণ হতে পারে।
হঠাৎ বেশি পরিশ্রম বা ভারী ব্যায়াম করলে
হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভারী ব্যায়াম করলে কোমরের পেশীতে টান লাগতে পারে, মেরুদণ্ডের জয়েন্ট বা ডিস্কের ক্ষতি হতে পারে, কোমরের হাড়, লিগামেন্ট বা টেন্ডনের ক্ষতি হতে পারে, কোমরের পেশীতে স্প্যাজম তৈরি করতে পারে যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
হালকা ব্যায়াম না করে খেলাধুলা করলে
অনেকে আছেন যারা কোনোরকম হালকা ব্যায়াম করা ছাড়াই সরাসরি খেলতে বা ব্যায়ামের সময় ভারী জিনিস তুলে ফেলেন। এভাবে হঠাৎ কাজ করলে আমাদের শরীরের উপরেই অনেক বেশি চাপ পড়ে। ফলে দেখা যায়, কোমরের পেশীতে টান পড়ে এবং কোমর ব্যথা হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে
দীর্ঘ সময় বসে থাকলে কোমরের পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এই দুর্বল পেশী মেরুদণ্ডকে সঠিকভাবে সাপোর্ট করতে পারে না। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে কোমরের পেশী শক্ত হয়ে যেতে পারে। অনেকক্ষণ একই ভাবে বসে থাকলে যেমন ঝুকে থাকলে বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় মাথা নিচু করে বসে থাকলে কোমরে চাপ তৈরি হয়। এতে কোমরের পেশিতে রক্ত সঞ্চালন হ্রাস পায় এবং ব্যথা বাড়ে।
দেহভঙ্গি ঠিক না রেখে মোবাইল ফোন, টিভি দেখা বা কম্পিউটার চালালে
সঠিকভাবে না বসে থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য বাড়তি কাজ বা সময় কাটানো যেমন মোবাইল ফোন চালালে, কম্পিউটার চালালে বা টিভি দেখলে শরীরের উপর অতিরিক্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই অঙ্গভঙ্গি ঠিক না রেখে অর্থাৎ ঠিক পজিশনে শুয়ে বা বসে কাজ না করলে পিঠের উপর বেশি টান পড়ে।
আঘাত অথবা দুর্ঘটনার কারণে
বিশেষ কারণে বা কোন জায়গা থেকে পিঠে কোমরে আঘাত পেলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। অনেকে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কোমরে অথবা পিঠে অনেক বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হন যা কোমর ব্যাথার অন্যতম একটি প্রধান কারণ হতে পারে।
মহিলারা গর্ভবতী হলে
গর্ভাবস্থায় হরমোনগুলোর পরিবর্তনের ফলে শরীরের জোড়গুলো নরম হয়ে যায় এবং ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে পেটের বাচ্চার উপর চাপ পড়ে এবং পিঠের নার্ভের উপর ব্যথা হয়। যারা আগে থেকেই ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এটি আরো বাড়তে পারে।
কোমর ব্যাথার বিশেষ চিকিৎসায় ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে সেরা মানের ফিজিওথেরাপি সার্ভিস পেতে এখানে এপয়েন্টমেন্ট করুন।
এছাড়াও, বিভিন্ন রোগের কারণেও কোমরে অনেক বেশি ব্যথা হতে পারে। যেমনঃ
হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস
অস্টিওপোরোসিসে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই ভেঙে যায়। কোমরের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেলে তীব্র ব্যথা, কাঁটাচামচের মতো আকৃতির হয়ে যাওয়া এবং উচ্চতা কমে যাওয়া সহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভাঙা হাড়ের টুকরা আশেপাশের নার্ভকে চাপ দিতে পারে, যার ফলে ব্যথা বা অন্যান্য সংবেদনশীলতা হতে পারে।
সায়াটিকা
সায়াটিকা হলো একটি সাধারণ সমস্যা যেখানে কোমর থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথা সাধারণত একপাশেই হয় এবং কখনো কখনো পায়ের আঙুল পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।
মেরুদণ্ডের ফাটল, ইনফেকশন কিংবা জন্মগত সমস্যা
মেরুদণ্ডের কোনো ফাটল, ইনফেকশন বা জন্মগত সমস্যা থাকলেও কোমর ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে মেরুদণ্ডের ফাটল একটি গুরুতর সমস্যা যা প্রায়শই তীব্র কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। আমাদের মেরুদণ্ড হাড়ের একটি সিরিজ দিয়ে তৈরি, যা আমাদের শরীরকে সোজা রাখতে এবং মস্তিষ্ক থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংকেত বহন করতে সাহায্য করে। যখন এই হাড়গুলোর কোনো একটি ভেঙে যায়, তখন তা তীব্র ব্যথা, স্নায়ুর চাপ এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস
আর্থ্রাইটিস হলো জোড়ের প্রদাহজনিত রোগ। এটি কোমরের জোড়েও হতে পারে এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস রয়েছে যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, গাউট ইত্যাদি। পুরানো কোনো আঘাতের কারণে কোমরের জোড়ে আর্থ্রাইটিস হতে পারে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড রোগ ইত্যাদি মেটাবলিক রোগও কোমরে আর্থ্রাইটিসের কারণ হতে পারে। কিছু ধরনের সংক্রমণও জোড়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে আর্থ্রাইটিস হতে পারে।
অটোইমিউন রোগ
অটোইমিউন রোগ এক ধরনের রোগ যেখানে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের কোষকেই বিদেশি আক্রমণকারী মনে করে এবং তাদের আক্রমণ করে। এই আক্রমণের ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রদাহ হতে পারে এবং সেইসাথে কোমর ব্যথাও হতে পারে।
কিছু সাধারণ অটোইমিউন রোগ যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে, সেগুলো হচ্ছে- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস; যার ফলে শরীরের অনেক জোড়ে, বিশেষ করে হাতের এবং পায়ে, প্রদাহ হয়। কিন্তু অনেক সময় এটি কোমরের জোড়েও প্রদাহ সৃষ্টি করে। অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস রোগের কারণে মেরুদণ্ডের জোড়কে প্রধানত আক্রমণের শিকার হয়। এর ফলে কোমরে তীব্র ব্যথা, জমাকৃত অনুভূতি এবং পিঠে কুঁজ হয়ে যাওয়া লক্ষণ দেখা দিতে পারে। লুপাস রোগের ফলে শরীরের অনেক অঙ্গকে আক্রমণ করতে পারে এবং কোমর ব্যথা এর একটি সাধারণ লক্ষণ।
পলিমায়োসাইটিস এবং ডার্মাটোমায়োসাইটিস এই দুইটি রোগের কারণে শরীরের মাংসপেশি এবং ত্বকে আক্রমণ হয়। কোমরের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া এর একটি প্রধান কারণ।
ক্যান্সার
হাড়ে ক্যান্সার বা অন্য কোনো অঙ্গের ক্যান্সার হাড়ে ছড়িয়ে পড়লেও কোমর ব্যথা হতে পারে। যখন ক্যান্সার কোনো হাড়ে শুরু হয়, তখন সেই হাড়ে ব্যথা, ফোলা এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। কোমরের হাড়ে এই ধরনের ক্যান্সার হলে তীব্র কোমর ব্যথা হতে পারে। যখন শরীরের অন্য কোথাও শুরু হওয়া ক্যান্সার হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই হাড়ে ব্যথা, ফোলা এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। প্রোস্টেট, ফুসফুস এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রায়শই হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
কিডনি, অগ্ন্যাশয়, পিত্তথলি ও নারী প্রজননতন্ত্র বিষয়ক কিছু রোগ বালাই
কিডনি, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয় এবং নারী প্রজননতন্ত্রের কিছু রোগের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা একটি সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিডনির পাথর যখন মূত্রনালীতে আটকে যায় তখন তীব্র কোমর ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত পেট বা পেছনের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিডনির সংক্রমণের কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে। সাথে জ্বর, বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে কিডনির ক্যান্সারের কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে। পিত্তথলির পাথর যখন পিত্তনালীতে আটকে যায় তখন তীব্র কোমর ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত ডানদিকে উপরের পেটে এবং কোমরে অনুভূত হয়। অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের কারণে তীব্র কোমর ব্যথা, বমি বমি ভাব, জ্বর ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
নারী প্রজননতন্ত্র অর্থাৎ এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে কোমর এবং পেটের নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে। ডিম্বাশয়ের সিস্টের কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে। পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজের কারণে কোমর এবং পেটের নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে।
আমাদের ফিজিওথেরাপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সরাসরি কল করতে পারেন এই +8801932-797229 নম্বরে।
অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কারণ
অল্প বয়সে কোমর ব্যথার অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি হল:
- অভ্যাসঃ দীর্ঘ সময় ধরে একই ভঙ্গিতে বসে থাকা, দাঁড়ানো বা হাঁটা কোমরের পেশী এবং লিগামেন্টগুলিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।
- ভারি জিনিস তোলাঃ ভারী জিনিস তোলার সময় সঠিক পধতি ভঙ্গি না বজায় রাখা কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- আঘাতঃ কোমর বা মেরুদণ্ডের আঘাত, যেমন স্পাইনাল ইনজুরি বা স্পোর্টস ইনজুরি, কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী রোগঃ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন অস্টিওআর্থারাইটিস বা অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস, কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- অস্থি ক্ষয়ঃ অস্থির খনিজ ঘনত্ব হ্রাস পেলে অস্থি ক্ষয় হয়। এটি কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতাঃ মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা, যেমন স্কোলিওসিস বা কিউবিকোসিস কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- পেশী বা স্নায়ুর সমস্যাঃ পেশী বা স্নায়ুর সমস্যা, যেমন নার্ভ ব্লকেজ বা পেশীতে আঘাত পেলে তা ব্যথার কারণ হতে পারে।
কোনও ব্যক্তির কোমরে ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য একজন ডাক্তার রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করে থাকেন। প্রয়োজনে, ডাক্তার ইমেজিং পরীক্ষা, যেমনঃ এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান, করার পরামর্শ দিতে পারেন। অল্প বয়সে কোমরে ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর। সাধারণত, ব্যথা উপশমকারী ওষুধ, ফিজিওথেরাপি কোমরে ব্যথার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে সেরা সার্ভিসটি পেতে পেতে এখানে এপয়েন্টমেন্ট করুন।
কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়
অনেকে দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষধ খেয়েই যাচ্ছেন, কিন্তু কোমর ব্যথা ভালো হচ্ছে না। তার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে শরীরের পজিশন। আর এই পজিশন ঠিক না থাকায় কোমর ব্যথা দিন দিন বেড়েই যায়। কিন্তু এই পজিশন ও কোমর ব্যথা দূর করতে কিছু সহজ উপায় রয়েছে। চলুন, সেই বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক-
১। দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে থাকবেন না। আবার এক জায়গায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও থাকবেন ন। আর এতে কোমর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
২। নিয়মিত ব্যয়াম করবেন। আর শরীরচর্চার মধ্যে থাকবেন। তাহলে কোমর ব্যথা কমে যাবে।
৩। নরম বিছানায় ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন। উপুর হয়ে ঘুমানো পরিহার করুন। ঘুমানোর সময় ডান কাত হয়ে ঘুমান।
৪। যেকোন কাজ করুন না কেনো, চেষ্টা করুন ২০ মিনিট পর পর অবস্থান পরিবর্তন করার। যেমন, যদি দাঁড়িয়ে কাজ করেন তাহলে কিছু সময়ের জন্য বসে নেন। আর যদি কম্পিউটারে বসে কাজ করেন, তাহলে কিছু সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন। তারপর পুনরায় কাজ শুরু করুন।
৫। শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন। কারণ অতিরিক্ত ওজন কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ।
৬। নিয়মিত কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমান।
৭। ধুমপান পরিহার করুন।
৮। যথাসম্ভব মাটিতে বসে কাজ করা পরিহার করুন।
কোমরের ডান পাশে ব্যথা হলে করণীয়
ব্যথার তীব্রতা কমাতে প্রথমেই বিশ্রাম নিন। কোমরকে সোজা রেখে শুয়ে থাকুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ খান। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম করুন। এতে মাংসপেশি শিথিল হবে এবং ব্যথা কমবে। গরম পানি সেক দিন। এতে ব্যথা কমবে এবং মাংসপেশি শিথিল হবে। যদি ব্যথা দুই-তিন দিনের মধ্যে না কমে বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনার খুব জলদি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে যদি না আপনার যদি ব্যথা খুব তীব্র হয়, সাথে জ্বর, শীতকাপ, বমি, অথবা পায়ে দুর্বলতা দেখা দেয়, ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থাকে ও ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে।
কোমর ব্যথা নিয়ে আমাদের ফিজিওথেরাপিস্টদের থেকে যে কোন পরামর্শ নিতে এই নম্বরে +8801932-797229 কল করে বিস্তারিত সব কিছু জেনে নিন।
কোমরে জ্বালাপোড়া কেন হয় ?
কোমরে জ্বালাপোড়া হল একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।কোমরে জ্বালাপোড়ার কারণ নির্ণয় করার জন্য, একজন ডাক্তার রোগীর ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে, ডাক্তার ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান, করার পরামর্শ দিতে পারেন।
কোমর ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
সেঁক দিবেন
কোমর ব্যথায় সেঁক দিলে প্রাথমিকভাবে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ সেঁক দিলে মাংসপেশিতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। আর রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পেলে কোমর ব্যথা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। তবে সেঁক দেওয়ার জন্য ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করবেন। এতে অতিরিক্ত তাপ কোমরে লাগবে না।
তেল মালিশ
কালো জিরা, রসুন ও মেথি সরিষা তেলে ভেজে নিবেন। তারপর এই তেল একটি পাত্রে রাখবেন। হালকা গরম থাকা অবস্থায় কোমরের ব্যথার জায়গায় মালিশ করবেন।
আদা
কোমর ব্যথা দূর করতে আদা খুবই কার্যকারী। কারণ আদাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। আর এই পটাশিয়াম স্নায়ুর সমস্যাকে দূর করে। যার ফলে কোমর ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়। তাই নিয়মিত আদা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
হলুদ
নিয়মিত দুধ আর হলুদ একসাথে মিশিয়ে পান করুন। যার ধরুন কোমর ব্যথা কমতে পারে। হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদানটি শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অনেক ধরনের ব্যথার কারণই হলো শরীরে প্রদাহ। হলুদ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদ কিছু ধরনের ব্যথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মেথি বীজ
মেথি বীজ এবং গুড়া দুধ একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ করুন। তারপর কোমরের যে জায়গায় ব্যথা করে সে জায়গায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। তাহলে কোমর ব্যথা কমতে পারে।
বরফ
কোমরের মাংসপেশি ফুলে গেলে বরফ দিলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাদ্য
ক্যালসিয়াম আর ম্যাগনেসিয়াম হাড় গঠনে খুবই কার্যকর। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন ঘি, দুধ, চিজ, ফল, সবজি, কচু, বাদাম খাওয়া উচিত।
লেবুর শরবত
লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আর ভিটামিন সি কোমর ব্যথা কমাতে খুবই ফলপ্রসু।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার শরবত কোমর ব্যথা দূর করতে খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিন এ শরবত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ইতিবাচক মনোভাব
কোমর ব্যথা হলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া যাবে না। স্বাভাবিকভাবে ইতিবাচক মনোভাব কাজকর্ম চালিয়ে গেলে কোমর ব্যথা থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়া যাবে।
কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা
কোমর ব্যথায় ফিজিওিথেরাপি চিকিৎসা খুবই কার্যকারী। কারণ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সার্জারিবিহীন কোমর ব্যথা নিরাময় করা হয়। যেখানে ম্যানুয়াল কারেকশন টেকনিক, ম্যাকেঞ্জি টেকনিক, মলিগ্যান কনসেপ্ট, সিরিয়াক্স প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করানো হয়। যা কোমরের পেশিগুলোকে রিলিজ করে। এছাড়াও হিট ও কোল্ড থেরাপি ব্যবহৃত হয়। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপির চিকিৎসকের কাছ থেকে নিতে হবে। অন্যথায় অপচিকিৎসার সম্মুখীন হতে হবে।
কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণা কেন হয়?
ঘুম থেকে উঠার পর অনেকের কোমরে ব্যাথা করে। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অবশ অনুভূত হয়। কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণা, যা সায়াটিকা নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ সমস্যা। এটি সায়টিকা নামক একটি নার্ভের উপর চাপ বা আঘাতের কারণে হয়। সায়টিকা নার্ভ হল একটি বড় নার্ভ যা কোমর থেকে পায়ের দিকে নেমে যায়।
কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-
- কোমর এবং পায়ে ব্যথাঃ ব্যথা সাধারণত হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তীব্র হতে পারে।
- পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ হওয়াঃ ব্যথার সাথে সাথে পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ হতে পারে।
- পায়ে দুর্বলতাঃ ব্যথার সাথে সাথে পায়ে দুর্বলতা হতে পারে।
কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণা নির্ণয়ের জন্য, আপনার ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন। আপনার ডাক্তার আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান ও অর্ডার করতে পারেন।
কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম
সাঁতার
কোমর ব্যথা কমাতে সাঁতার খুবই কার্যকারী ব্যায়াম। যা কিছু পেশিকে শক্ত করে। আবার কিছু পেশিক নরম করে। যার ফলে কোমর ব্যথা থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
ইলাস্টিক স্ট্রেচিং
কোমর ব্যথা কমাতে ইলাস্টিক স্ট্রেচিং খুবই ফলপ্রসু। কারণ এই স্ট্রেচিং কোমরের মাংসপেশিকে নমনীয় করে।
কোর পেশি শক্তিশালী ব্যায়াম
আমাদের দেহের মধ্যে কতগুলো কোর পেশি রয়েছে। আর এই পেশিগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য কিছু ব্যয়াম রয়েছে। আর ব্যায়ামগুলোকে কোর স্ট্রেনথিং এক্সারসাইজ বলে। যেমন আপ এন্ড ডাউন এক্সারসাইজ, লং লিভিং ইত্যাদি।
ম্যানুয়াল থেরাপি
ম্যানুয়াল থেরাপি হল হাত দ্বারা পরিচালিত চিকিৎসা পদ্ধতি। যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে এমন যেকোনো অস্বাভাবিকতা বা অসামঞ্জস্যতা ঠিক করতে সাহায্য করতে পারে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল ম্যানুয়াল থেরাপি।
ইলেকট্রোথেরাপি
কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল ইলেকট্রোথেরাপি হল, এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি যা বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে ব্যথা কমাতে এবং কোমরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি
কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি।তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা কোমর ব্যথার রোগীদের জন্য উপযোগী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন। এই পরিকল্পনাটি রোগীর ব্যথার কারণ, তীব্রতা এবং অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থার উপর ভিত্তি করে হবে।
আমাদের ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টারে শহরের সবচেয়ে কার্যকরী মেশিন দিয়ে সেরা মানের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা কোমর ব্যথার জন্য অনেক বেশি উপকারী। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ইকুইপমেন্ট ওয়েবসাইটের এই পেইজটি ঘুরে আসতে পারেন এবং বাসায় ব্যায়ামের সময়েও এগুলো নিজে নিজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
কোমর ব্যথার ডাক্তার সম্পর্কে জানুন
কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার আছেন। আপনার কোমর ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে আপনার জন্য কোন ডাক্তার সবচেয়ে উপযুক্ত তা খুঁজে বের করতে হবে।
কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য যেসকল ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন:
- ফিজিওথেরাপিস্ট (Physiotherapist): একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে কোমর ব্যথার জন্য কি ধরণের ব্যায়াম এবং থেরাপির প্রয়োজন তার পরিকল্পনা দিতে পারেন।
- ব্যথা বিশেষজ্ঞ (Pain specialist): একজন ব্যথা বিশেষজ্ঞ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ। তিনি আপনার কোমর ব্যথার জন্য ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদান করতে পারেন।
- চিকিৎসক (General practitioner): একজন চিকিৎসক আপনার কোমর ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।
- রোগতত্ত্ববিদ (Orthopedic surgeon): একজন Orthopedic surgeon মেরুদণ্ডের সমস্যার বিশেষজ্ঞ। তিনি আপনার কোমর ব্যথার জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে পারে কিনা তা বলতে পারেন।
কোমর ব্যথার খাবার তালিকা
- ফল এবং শাকসবজি: ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাছ, বাদাম এবং বীজ।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: প্রোটিন পেশী এবং লিগামেন্টের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত পণ্য এবং ডাল।
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, বাদাম এবং বীজ।
কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কি?
কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করতে পারে। মেরুদণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ডিস্ক স্লিপ, স্পন্ডাইলাইটিস এবং স্টিনোসিস, প্রায়ই কোমর ব্যথার কারণ হয়ে থাকে। ডিস্ক স্লিপ হলে মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝখানে থাকা ডিস্ক ফেটে গিয়ে স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। আবার, স্পন্ডাইলাইটিস হল মেরুদণ্ডের জয়েন্টে প্রদাহ, যাওয়া যা ক্রমশ ব্যথা বাড়াতে পারে।
পেশি ও টেন্ডন সমস্যাও কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ভুল ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে পেশি টান পড়তে পারে এবং টেন্ডনাইটিস বা টেন্ডনের প্রদাহ হতে পারে। কিডনির সমস্যা, যেমন কিডনি সংক্রমণ বা পাথর, কোমরের দুই পাশে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
গর্ভাবস্থা, আর্থ্রাইটিস এবং ক্যান্সারও কখনো কখনো কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিবর্তনের ফলে অনেক মহিলাই কোমর ব্যথা অনুভব করেন। আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের প্রদাহও কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে, কোমরের ব্যথা ক্যান্সারের একটি লক্ষণও হতে পারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, কোমর ব্যথার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে এবং সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, একে কোনভাবেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক চিকিৎসা, নিয়মিত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এবং আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে এই কোমর ব্যথা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
তথ্যসূত্র
UC Davis Health- 8 tips to help ease your back pain
WebMD- 14 Ways to Relieve Back Pain
Jhons Hopkins Medicine- 7 Ways to Treat Chronic Back Pain Without Surgery
Harvard Health- Home remedies for low back pain
সাধারণ জিজ্ঞাসা
কোমরে ব্যথা কমানোর উপায় কি?
বিশ্রাম,ওষুধ,ফিজিওথেরাপি,স্পাইনাল স্ট্রেচিং,গরম বা ঠান্ডা সেঁক,মেনথল অয়েল ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।আপনার কোমরে ব্যথা যদি তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল?
কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল এই কথা বিবেচনায় আনলে বলা যায় যে, কোমরে ব্যথা করলে বিশ্রাম আশ্যক। এক্ষেত্রে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল তা নির্ধারণ করে রোগীর ব্যথার ধরণ ও অবস্থার উপর।
জ্বর ও কোমর ব্যথার কারণ কি হতে পারে?
কোমর ব্যথার সাথে যদি জ্বর আসে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসক দেখানো জরুরি৷ এই ধরনের লক্ষণগুলো সাধারণত প্যাথলজিক্যাল বড় সমস্যার কারণে হয়ে থাকে, এটা রেড এলার্ট।
স্ট্রেস কি কোমর ব্যথায় অবদান রাখতে পারে?
হ্যাঁ, স্ট্রেস এবং টেনশন পেশীর অসাড়তা সৃষ্টি করে,কোমর ব্যথাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল, লক্ষণগুলি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
লাইফস্টাইলের কোন পরিবর্তনগুলি কোমর ব্যথার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে?
সঠিক ওজন বজায় রাখা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, ভাল অঙ্গবিন্যাস অনুশীলন করা কোমর ব্যথা প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে।
কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল?
কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল এই কথা বিবেচনায় আনলে বলা যায় যে, কোমরে ব্যথা করলে বিশ্রাম আশ্যক। এক্ষেত্রে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল তা নির্ধারণ করে রোগীর ব্যথার ধরণ ও অবস্থার উপর।
Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy