ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়াকে প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি বলা হয়, যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বার প্রস্রাব করার তাগিদ বোঝায়। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ অনেক রয়েছে। এটি আমাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন রুটিন ব্যাহত করতে পারে, ঘুমের চক্রে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং কোনো অন্তর্নিহিত চিকিৎসাজনিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এটি সাধারণত তখনই সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়, যখন এটি আমাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে বা দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে।
প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত দিনের বেলার প্রস্রাবের হারকে নির্দেশ করে, আর রাতের বেলা ঘন ঘন প্রস্রাব করার সমস্যাকে নকটুরিয়া বলা হয়।
ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই, কারণ এটি ব্যক্তিভেদে এবং তরল গ্রহণের পরিমাণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। একজন ব্যক্তি কী পরিমাণ প্রস্রাবকে “ঘন ঘন” বলে মনে করেন, সেটিই আসলে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে সাধারণত মনে করা হয় যে, যদি কেউ দিনে প্রায় ৭ লিটার পানি পান করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ বারের বেশি প্রস্রাব করেন, তাহলে সেটি ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির আওতায় পড়ে থাকে।
আপনি আমাদের দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা উন্নত মানের সার্ভিস পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট টি নিতে পারেন।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ ও প্রধান কারণগুলো হচ্ছে-
- কিডনি বা মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI): মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা দেখা দেয়। এর সাথে জ্বালা, ব্যথা বা প্রস্রাবে রক্ত থাকতে পারে।
- মূত্রথলিতে পাথরঃ মূত্রথলিতে পাথর থাকলে প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা রক্ত দেখা দিতে পারে এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি হতে পারে।
- অতিসক্রিয় মূত্রাশয় (Overactive Bladder): মূত্রাশয়ের অতিরিক্ত সংকোচনের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, এমনকি মূত্রাশয় পূর্ণ না থাকলেও।
- ডায়াবেটিস মেলিটাসঃ টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
- ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসঃ পানির ভারসাম্যজনিত সমস্যার কারণে এই রোগে বারবার প্রস্রাব হয়।
- প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যাঃ পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হলে (বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া) মূত্রাশয়ে চাপ পড়ে এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ অনুভূত হয়।
- গর্ভাবস্থাঃ জরায়ুর আকার বৃদ্ধির ফলে মূত্রাশয়ে চাপ পড়ে, যার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে.
- মূত্রাশয় ক্যান্সারঃ মূত্রাশয়ে টিউমার থাকলে এটি ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
- ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস (Painful Bladder Syndrome); মূত্রাশয়ের প্রদাহজনিত সমস্যা, যা ব্যথা ও বারবার প্রস্রাবের তাগিদ সৃষ্টি করে।
- স্ট্রোক বা স্নায়বিক রোগঃ মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর ক্ষতির ফলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- উদ্বেগ বা মানসিক চাপঃ উদ্বেগজনিত সমস্যার কারণেও অস্থায়ীভাবে বারবার প্রস্রাব হতে পারে।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ বিশেষত মূত্রবর্ধক ওষুধ গ্রহণ করলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
পায়ের গোড়ালি ব্যথার লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
আমরা আপনাদের সম্পূর্ণভাবে বোঝার সুবিধার্থে সবগুলো বিষয় নিয়েই মোটামুটি একটি বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
কিডনি বা মূত্রনালীর সমস্যা
প্রথমত, কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্তকে পরিশোধন করে এবং অতিরিক্ত পানি ও বিষাক্ত পদার্থকে বের করে দেয়। মূত্রনালী এই বর্জ্য পদার্থগুলিকে মূত্রাশয়ে নিয়ে যায়। যখন কিডনি বা মূত্রনালিতে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে যেতে পারে। এর ফলে আমরা ঘন ঘন প্রস্রাব করতে বাধ্য হই। কিডনি পাথর, কিডনি সংক্রমণ এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ এই ধরনের কিছু সাধারণ সমস্যা যা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
কিডনি পাথরের ক্ষেত্রে, খনিজ পদার্থের কণিকা মূত্রনালীতে জমে পাথরের মতো কঠিন বস্তু তৈরি করে। এই পাথরগুলি মূত্রনালীকে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে প্রস্রাবের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং আমরা ঘন ঘন প্রস্রাব করতে চাই। আবার, কিডনি বা মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে ব্যাকটেরিয়া এই অঙ্গগুলিকে আক্রান্ত করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহের ফলে মূত্রাশয়ের পেশীগুলি উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব এর সমস্যা তৈরি হয়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, কিডনি বা মূত্রনালীর বিভিন্ন সমস্যা, যেমন কিডনি পাথর, কিডনি সংক্রমণ এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ, ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি সাধারণ কারণ। এই সমস্যাগুলি যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে তাহলে কিডনির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমেম সেরা সার্ভিস পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট টি নিয়ে নিন।
মূত্রাশয় বা কিডনিতে পাথর
মূত্রাশয় বা কিডনিতে পাথর হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো বিভিন্ন লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। এই পাথরগুলি সাধারণত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, বা ইউরিক এসিডের মতো খনিজ পদার্থের স্ফটিক থেকে তৈরি হয়। যখন এই পাথরগুলি মূত্রনালীতে আটকে যায়, তখন তা প্রস্রাবের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং প্রচণ্ড ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাবের পাশাপাশি, কিডনি পাথরের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব, এবং পেটে ব্যথা।
মূত্রাশয়ের পাথর সাধারণত মূত্রাশয়ের সংক্রমণ, প্রস্টেট সমস্যা, বা মূত্রনালীর অন্যান্য বাধার কারণে হয়। এই পাথরগুলিও ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা মূত্রাশয়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। মূত্রাশয়ের পাথরের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা, রক্তাক্ত প্রস্রাব, এবং প্রস্রাব করার পরেও মূত্রাশয় পুরণের অনুভূতি ইত্যাদি।
মূত্রাশয়ের সমস্যা
মূত্রাশয় হল একটি পেশির থলি যা প্রস্রাব জমা রাখে। মূত্রাশয়ের সমস্যাও ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে। অতিসক্রিয় মূত্রাশয় একটি সাধারণ সমস্যা, যেখানে মূত্রাশয় অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব করার ইচ্ছা জাগায়। মূত্রাশয়ের সংক্রমণ, মূত্রাশয়ের ক্যান্সার, ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস ইত্যাদিও ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
অতিসক্রিয় মূত্রাশয় এবং ঘন ঘন প্রস্রাব
অতিসক্রিয় মূত্রাশয় একটি সাধারণ সমস্যা যেখানে মূত্রাশয়ের পেশী অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে মূত্রাশয় প্রায়ই সংকুচিত হতে চায়, যদিও তা পুরোপুরি ভরা না থাকে। এর ফলে আমরা ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভব করি এবং প্রায়ই আমাদের বাথরুমে দৌড়াতে হয়। এটি অনেকের জন্য একটি বিব্রতকর এবং জীবনযাত্রার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো সমস্যা হতে পারে।
অতিসক্রিয় মূত্রাশয়ের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব করার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করা, রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করতে হওয়া এবং কখনও কখনও প্রস্রাব ফুটো হয়ে যাওয়া। এই সমস্যাটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন মূত্রনালীর সংক্রমণ, স্নায়ুর সমস্যা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বা মূত্রাশয়ের পেশীর দুর্বলতা।
যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI) বা মূত্রনালীর সংক্রমণ
যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI) বা মূত্রনালীর সংক্রমণ ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি সাধারণ কারণ। এই সংক্রমণগুলি মূত্রনালীর আস্তরণকে উদ্দীপিত করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে, ফলে মূত্রাশয়ের পেশীগুলি অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সমস্যাটি যদি অবহেলা করা হয় তাহলে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এছাড়াও, STI বা মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে রক্ত, মেঘলা বা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব এবং নিচের পেটে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। যদি এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না করলে এই সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিসক্রিয় মূত্রাশয় (Overactive Bladder)
অতিসক্রিয় মূত্রাশয় সমস্যায় মূত্রাশয়ের পেশী অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে মূত্রাশয় প্রায়ই সংকুচিত হতে চায়, যদিও তা পুরোপুরি ভরা না থাকে। এর ফলে আমরা ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভব করে এবং প্রায়ই বাথরুমে দৌড়াতে হয়। এটি অনেকের জন্য একটি বিব্রতকর এবং জীবনযাত্রার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো সমস্যা হতে পারে।
অতিসক্রিয় মূত্রাশয়ের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব করার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করা, রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করতে হওয়া এবং কখনও কখনও প্রস্রাব ফুটো হয়ে যাওয়া। এই সমস্যাটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন মূত্রনালীর সংক্রমণ, স্নায়ুর সমস্যা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বা মূত্রাশয়ের পেশীর দুর্বলতা।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
ডায়াবেটিস মেলিটাস
ডায়াবেটিস মেলিটাস, বিশেষ করে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি প্রধান কারণ। এই রোগে শরীর ইনসুলিন নামক একটি হরমোন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি করতে পারে না বা শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা যখন অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন কিডনি এই অতিরিক্ত শর্করাকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে পানিও প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা ঘন ঘন প্রস্রাব করতে বাধ্য হয়। এছাড়াও, এই অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণে রোগীরা প্রচণ্ড তৃষ্ণা অনুভব করে।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস একটি অবস্থা যেখানে শরীর পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব করেন এবং অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করেন। এই অবস্থাটি ডায়াবেটিস মেলিটাসের সাথে মিল থাকলেও, এর কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসে, শরীরের একটি নির্দিষ্ট হরমোন (ভ্যাসোপ্রেসিন) এর ঘাটতি বা এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে কিডনি প্রস্রাবকে ঘনীভূত করতে ব্যর্থ হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে পাতলা প্রস্রাব নিঃসৃত হয়। এই অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং ব্যক্তি ঘন ঘন প্রস্রাব করতে বাধ্য হয়।
আমাদের অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট দ্বারা উন্নত সেরা মানের সার্ভিস পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন।
প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যা
পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এই অবস্থাকে বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া (BPH) বলা হয়। প্রোস্টেট গ্রন্থি যখন বড় হয় তখন এটি মূত্রনালীতে চাপ প্রয়োগ করে, যার ফলে প্রস্রাবের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই বাধাগ্রস্ত প্রবাহের কারণে মূত্রাশয়ে প্রস্রাব জমে থাকে এবং মূত্রাশয়ের পেশীগুলি অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে ব্যক্তি ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভব করে, এমনকি রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করতে হয়।
প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন প্রস্রাব করতে সময় লাগা, প্রস্রাবের ধারা দুর্বল হওয়া, প্রস্রাব করার পরেও মনে হওয়া যে মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি হয়নি ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলি যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে তাহলে কিডনির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিলে একজন ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থার সময় জরায়ু বৃদ্ধি পায় এবং মূত্রাশয়ের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ফলে মূত্রাশয়ে কম পরিমাণে প্রস্রাব জমলেও মস্তিষ্ককে প্রস্রাব করার সংকেত দেয়। এই কারণেই গর্ভবতী মহিলারা প্রায়ই বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন।
এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে কিডনি দ্বারা আরও বেশি পরিমাণে প্রস্রাব উৎপাদিত হয়। এই দুটি কারণ মিলে গর্ভবতী মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব করার সমস্যা সৃষ্টি করে। এই সমস্যাটি সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষের দিকে আরও বেশি লক্ষণীয় হয়, যখন জরায়ু পুরোপুরি বড় হয়ে যায়।
মূত্রাশয়ে ক্যান্সার
মূত্রাশয় ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ যা ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো বিভিন্ন লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। মূত্রাশয়ে যখন টিউমার গঠিত হয়, তখন এটি মূত্রনালীকে আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে মূত্রাশয়ে প্রস্রাব জমে থাকে এবং মূত্রাশয়ের পেশীগুলি অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় আমরা ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভব করি, এমনকি প্রস্রাবের পরিমাণ কম হলেও।
মূত্রাশয় ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবে রক্ত দেখা, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, প্রস্রাব করতে অসুবিধা হওয়া, পিঠের নিচের অংশে ব্যথা ইত্যাদি। মূত্রাশয় ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ, তাই এই ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ফিজিওথেরাপি কি এবং ফিজিওথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস (Painful Bladder Syndrome)
ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস, যাকে ব্যথাদায়ক মূত্রাশয় সিন্ড্রোমও বলা হয়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা মূত্রাশয়ের প্রদাহের সাথে যুক্ত। এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভব করেন, এমনকি মূত্রাশয় খালি থাকলেও। এছাড়াও, প্রস্রাব করার সময় তীব্র ব্যথা, জ্বালা-পোড়া অনুভব হয়। মূত্রাশয়ের পেশীগুলি অতিরিক্ত সংকুচিত হওয়ার কারণে এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিসের সঠিক কারণ এখনও তেমন জানা যায় নি। তবে মনে করা হয় যে মূত্রাশয়ের আস্তরণে কোনো ধরনের ত্রুটি বা সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে এই অবস্থাটি দেখা দেয়। এই অবস্থাটি মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা যায়। ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিসের চিকিৎসায় জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধ এবং কখনও কখনও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
উদ্বেগ বা মানসিক চাপ
উদ্বেগ বা মানসিক চাপ অনেকের জন্য সাধারণ সমস্যা হলেও এই মানসিক চাপ শারীরিক লক্ষণও সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে একটি হল ঘন ঘন প্রস্রাব করা। যখন আমরা উদ্বিগ্ন হই বা মানসিক চাপ অনুভব করি, তখন আমাদের শরীর “ফাইট অর ফ্লাইট” মোডে চলে যায়। এই অবস্থায় আমাদের শরীর বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ করে যা মূত্রাশয়ের পেশীগুলিকে আরও সক্রিয় করে তুলতে পারে। ফলে আমরা ঘন ঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন অনুভব করি।
বিভিন্ন উদ্বেগের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের এই সমস্যাটি সাধারণত অস্থায়ী হয়। যখন মানসিক চাপ কমে যায়, তখন এই সমস্যাটিও সাধারণত নিজে থেকেই দূর হয়ে যায়। তবে যদি এই সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। উদ্বেগের চিকিৎসার পাশাপাশি, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ধ্যান, যোগব্যায়াম ইত্যাদিও এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।
বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেক ওষুধেরই কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে যার মধ্যে একটি হলো ঘন ঘন প্রস্রাব করা। বিশেষ করে, মূত্রবর্ধক ওষুধগুলি শরীরে অতিরিক্ত জলকে বের করে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়তে পারে এবং ব্যক্তি ঘন ঘন প্রস্রাব করতে বাধ্য হয়।
এছাড়াও, অন্যান্য ধরনের ওষুধ যেমন রক্তচাপের ওষুধ, কিছু ধরনের এন্টিহিস্টামিন এবং কিছু ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টসও ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে। যদি আপনি কোনো নতুন ওষুধ গ্রহণ শুরু করেন এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
আমাদের দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার সেবায় সর্বদা নিয়োজিত। আজই আপ্নারফ এপয়েন্টমেন্ট নিন।
রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ
রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এটি শুধুমাত্র অস্বস্তিকরই নয়, বরং অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। চলুন জেনে নিই কেন এমন হয় এবং এর সমাধান।
কেন রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়?
- ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনি অতিরিক্ত শর্করা অপসারণের জন্য বেশি পরিমাণে প্রস্রাব তৈরি করে, ফলে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা দেখা যায়।
- মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI): মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে মূত্রাশয়ের পেশীগুলি উত্তেজিত হয়ে ওঠে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি হয় এবং কখনো কখনো জ্বালাপোড়াও দেখা যায়।
- প্রোস্টেট সমস্যা: বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে, প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হলে মূত্রনালীতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি হতে পারে না, যা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
- মূত্রাশয়ের অতিসক্রিয়তা: মূত্রাশয়ের পেশীগুলি অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হলে, প্রস্রাব ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং বারবার প্রস্রাবের ইচ্ছা হয়।
- মূত্রাশয়ের সংক্রমণ: মূত্রাশয়ের সংক্রমণ হলে মূত্রাশয়ের আস্তরণে জ্বালাপোড়া হয় এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি হয়।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, বিশেষ করে মূত্রবর্ধক ওষুধ, কিডনিকে অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি করতে উদ্দীপিত করে, যার ফলে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- হৃদরোগ: হৃদরোগের কারণে শরীরে অতিরিক্ত তরল জমে যেতে পারে। রাতে বিশ্রামের সময় কিডনি সেই অতিরিক্ত তরল বের করে দিতে চেষ্টা করে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, যা মূত্রাশয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে দেয়।
- নার্ভ সমস্যা: কিছু স্নায়ুর সমস্যার কারণে মূত্রাশয়ের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে, যা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের দ্বারা উন্নত ফিজিওথেরাপি সার্ভিস পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন।
মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ
মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধার সৃষ্টি করে, তবে এর পিছনে কিছু স্বাস্থ্যগত কারণ থাকতে পারে। নিচে সম্ভাব্য কারণগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো—
১. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI – Urinary Tract Infection)
মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI) হল একটি সাধারণ সংক্রমণ যা মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে হয়। প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় প্রস্রাবের রং পরিবর্তিত হয়ে ঘোলাটে হয়ে যায় এবং দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে জ্বরও দেখা দিতে পারে।
মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের তুলনায় মূত্রনালির সংক্রমণ কম হয়। তবে ডায়াবেটিস, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা মূত্রনালীর কোনো গঠনগত সমস্যা থাকলে যে কেউই এই সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। মূত্রনালির সংক্রমণ সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তবে লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থা এক মহিলার জীবনের অন্যতম সুন্দর অধ্যায় হলেও, এই সময় শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে একটি খুব সাধারণ পরিবর্তন হল ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন। কেন এই সমস্যাটি হয়? কারণ, বেড়ে ওঠা শিশু মূত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের ফলে মূত্রাশয়ে কম পরিমাণে প্রস্রাব জমলেও মূত্রত্যাগের ইচ্ছা জাগে।
শুধু মূত্রাশয়ের উপর চাপই নয়, হরমোনের পরিবর্তনও গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি প্রধান কারণ। গর্ভাবস্থায় হরমোনগুলো কিডনির কার্যকলাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে এবং কিডনি বেশি পরিমাণে প্রস্রাব তৈরি করে। এই অতিরিক্ত প্রস্রাবকে বের করে দিতে শরীরকে বারবার মূত্রত্যাগ করতে হয়।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কি তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
৩. ডায়াবেটিস (Diabetes)
ডায়াবেটিসের কারণে শরীর রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এই অতিরিক্ত শর্করা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা দেখা যায়। এটি ঘটে কারণ কিডনি অতিরিক্ত শর্করাকে ফিল্টার করার চেষ্টা করে এবং এর ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব তৈরি হয়।
ঘন ঘন প্রস্রাব ডায়াবেটিসের একটি প্রধান লক্ষণ। এছাড়াও, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার ইচ্ছা অনুভব করেন, যাকে অতিরিক্ত তৃষ্ণা বলে। এই অতিরিক্ত তৃষ্ণা এবং প্রস্রাবের ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে এবং ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া এবং ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. অতিসক্রিয় মূত্রথলি (Overactive Bladder – OAB)
অনেক কারণে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল অতিসক্রিয় মূত্রথলি। এই অবস্থায় মূত্রথলির পেশি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের ইচ্ছা হয়। মূত্রনালীর সংক্রমণও ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি সাধারণ কারণ। যখন মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়, তখন প্রস্রাবের সময় ব্যথা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না পান করা, ডায়াবেটিস, প্রোস্টেট সমস্যা এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
৫. মেনোপজ এবং হরমোনের পরিবর্তন
মেনোপজ হল একজন মহিলার জীবনের একটি স্বাভাবিক পর্যায়, যখন ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় শরীরে হরমোনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরে বিভিন্ন কাজ করে, তার মধ্যে একটি হল মূত্রথলির পেশিগুলোকে শক্তিশালী রাখা। মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির কারণে মূত্রথলির পেশি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং ফলে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মূত্রথলির পেশি দুর্বল হওয়ার কারণে মেনোপজের সময় অনেক মহিলাই ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন। এছাড়াও, ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি মূত্রনালীর টিস্যুগুলোকে শুষ্ক করে দিতে পারে, যার ফলে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, মেনোপজের সময় মূত্রথলির অতিসক্রিয় হওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যার ফলে প্রায়ই প্রস্রাব করার তাগিদ অনুভূত হয়।
৬. অতিরিক্ত পানি বা ক্যাফেইন গ্রহণ
যদি কেউ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি, চা, কফি বা কোমল পানীয় গ্রহণ করেন, তবে তা প্রস্রাবের পরিমাণ ও ঘনত্ব বাড়াতে পারে। ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল মূত্রথলিকে উত্তেজিত করে প্রস্রাবের হার বাড়ায়।
৭. কিডনি বা মূত্রথলির পাথর
কিডনি বা মূত্রথলিতে পাথর হলে তা মূত্রনালিকে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে প্রস্রাবের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। যখন মূত্রথলির মধ্যে পাথর থাকে, তখন মূত্রথলি পুরোপুরি খালি হতে পারে না। এই অবস্থাটি ঘন ঘন প্রস্রাবের ইচ্ছা জাগাতে পারে, কারণ মূত্রথলি সর্বদা পূর্ণ মনে হবে।
পাথরের কারণে মূত্রনালিতে প্রদাহ হতে পারে এবং এটিও ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি কারণ হতে পারে। পাথরের আকার এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে রক্ত আসা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিডনি বা মূত্রথলিতে পাথর থাকলে, প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তিত হতে পারে এবং মূত্রের গন্ধও অস্বাভাবিক হতে পারে।
৮. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ (Anxiety & Stress)
অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে স্নায়ুতন্ত্র অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা মূত্রথলির ওপর প্রভাব ফেলে এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি তৈরি করে।
আমাদের উন্নত মানের ফিজিওথেরাপি সার্ভিস পেতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
ঘন ঘন প্রস্রাব একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সবসময় এটি সাধারণ থাকে না। যদি ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায় বা রাতে ঘুমের ব্যাঘাত হয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলি কোনো গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। যেমন, প্রস্রাবে রক্ত দেখা গেলে তা কিডনির পাথর, মূত্রনালীর সংক্রমণ বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে যদি শরীর দুর্বল বা ক্লান্ত লাগে, পেটে বা কোমরে ব্যথা হয়, তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এই লক্ষণগুলি ডায়াবেটিস, প্রোস্টেট সমস্যা বা অন্যান্য গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। মনে রাখবেন, ঘন ঘন প্রস্রাব শুধুমাত্র একটি লক্ষণ, এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পুরুষের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ নিয়েও আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy