প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার কারণ

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা বা প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়ার প্রধান কারণ হল প্রস্রাবে ইনফেকশন। এছাড়া আরোও অনেক কারণে প্রস্রাব ক্লিয়ার না হতে পারে। প্রস্রাব না ধরে রাখতে পারা কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ।

Table of Contents

মেয়েদের প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়ার কারণ

মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক, জরায়ু ফেলে দেওয়া, গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব এ সকল কারণে পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি দুর্বল হতে পারে এবং নিচের দিকে ঝুলে যেতে পারে। এসব কারণে হয়ে মেয়েদের প্রস্রাব ক্লিয়ার  হয় না বা প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না ।

এছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়ার সময়, ওজন বৃদ্ধি হলে অথবা অন্য কোনো কারণে পেটের নিচের অংশে শিথিল হয়ে যেতে পারে। তখন মূত্রথলির প্রস্রাব ঠিকমতো ধরে রাখা সম্ভব হয় না। মূত্রথলি নিচে নেমে যে অংশগুলো মূত্রনালীকে চেপে রাখতে সাহায্য করে তাদের কাজে বেঘাত ঘটায়।

ছেলেদের প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়া বা ধরে রাখতে না পারার কারণ

পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার কারণ প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়া, প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে মূত্রথলি অথবা মূত্রনালির পেশির দুর্বলতা ঘটে থাকে, প্রস্রাব ধরে রাখার সাভাবিক ক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত ওজন বা কিছু স্নায়ুগত রোগ, যেমন: ব্রেইন টিউমার, পারকিনসন, স্ট্রোক, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি ইত্যাদি এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ এর ফলে প্রস্রাব ঝরতে পারে।

ছেলেদের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার কারণ প্রস্টেট গ্রন্থির সার্জারির কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। এ সার্জারির সময় স্নায়ু বা মূত্রনালীর চারপাশের পেশীগুলোতে আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেটা অকেজো হয়ে তার শক্তি কমে যেতে পারে। তখন মূত্রথলির উপর চাপ পড়লে প্রস্রাব আর ধরে রাখা সম্ভব হয় না।

মূত্রতন্ত্রের কোনো সংক্রমণ, প্রস্টেটের সমস্যা, মূত্রথলির ক্যানসার, স্ট্রোক, পারকিনসন ডিজিজ এসব কারণেও  প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যা  হতে পারে।

স্ট্রেস ও টেনশনের কারণে অনেক সময় এই সমস্যা দেখা দেয়। কোনো কারণে মূত্রথলিতে চাপ পড়ে দেখা দেয়। যে সব কারণে মূত্রথলিতে চাপ পড়তে পারে, যেমন: কাঁশি দিলে, হাঁচি দিলে, জোরে হাসলে বা ভারী ওজনের জিনিস উপরের দিকে তুললে অথবা নিচের দিকে নামালে।

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার কারণ

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার সমাধান

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার কারণ বা প্রস্রাব কেন ধরে রাখতে পারছেন না ,আগে সেই কারণ বের করতে হবে । প্রস্রাবে যদি ইনফেকশন থাকে , সেটা ইউরিন টেস্ট করে বের করতে হবে । তবে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হলে ধরে নেওয়া যায় , ইনফেকশনের জন্যই প্রস্রাব ধরে রাখতে পারছেন না , কিংবা প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হচ্ছে । সেই ক্ষেত্রে আপনাকে পর্যাপ্ত পানি পান  করতে হবে , প্রস্রাবের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে , মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের গরম পানি দিয়ে প্রস্রাবের রাস্তা পরিষ্কার করতে হবে । এছাড়া লক্ষ্য রাখতে হবে ঘামে ভিজে যেন প্রস্রাবের রাস্তা যেন ভেজা না থাকে ।

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার কারণ

পেলভিক ফ্লোর মাসলে সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিগল এক্সারসাইজ করতে হবে । নিচের ভিডিও দেখে এক্সারসাইজগুলো করবেন ।

নিজের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যদি ধুমপান করে থাকেন ত্যাগ করুন এবং সুস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। যে সকল খাবার গুলো আঁশযুক্ত সে সকল খাবার বেশি খান। নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করুন সমস্যা কিছুটা কমে যাবে। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম ও ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেটর এর মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোর মাংসপেশি শক্তি বৃদ্ধি করে ১ মাস থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব।

 

প্রতিরোধের উপায়

যে কোন সমস্যা শুরু হওয়ার আগে থেকেই সেটিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা উচিত। প্রস্রাব ঝরে পড়ার সমস্যা কমিয়ে নিতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন-

  • প্রস্রাব করার পর প্রস্রাবের রাস্তা ভাল্ভাবে পরিষ্কার রাখুন
  • বেশি করে পানি পান করুন
  • কিগল এক্সারসাইজ করুন
  • টেনশনমুক্ত থাকুন
  • মূত্রথলির মাংসপেশীকে শক্তিশালী করুন এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে
  • অতিরিক্ত কফি খাওয়া বা চা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করুন
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

প্রস্রাব ক্লিয়ার না হলে যেই ব্যায়ামগুলো করবেন

ব্রিজিং এক্সেরসাইজ

সোজা চিত হয়ে শুয়ে দুইটি পায়ের হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার কোমর দিক ওপরের দিকে ওঠান, ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখুন এবং ছাড়ে দিন। এভাবে দিনে ৪ বেলা এবং প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ বার করতে থাকুন।

ব্লাডার ট্রেনিং

প্রস্রাবের বেগ শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর প্রস্রাব করার অভ্যাস করুন। এই ব্যায়ামটি প্রস্রাব ধরে রাখতে সাহায্য করবে। তবে ধীরে ধীরে সময় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

হোল্ড রিল্যাক্স টেকনিক

এ ব্যায়ামটি করার সময় একটি পা স্ট্রেচ করে কিছুক্ষণ হোল্ড করুন, ঠিক একইভাবে অন্য পায়েরও একই ভাবে স্ট্রেচ করে কিছুক্ষণ হোল্ড করুন।

ডাবল ভোয়েডিং

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার কারণে এ প্রক্রিয়ায় প্রস্রাব করা শেষ হওয়ার পর কিছু সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং আবারও প্রস্রাব করার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া বেগ না এলেও ২ বা ৪ ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব করার চেষ্টা করতে হয়।

পেলভিক ফ্লোর মাসল এক্সারসাইজ

চেয়ারে বসে একটু সামনের দিকে ঝুঁকুন মেরুদণ্ড সোজা রেখে। এবার দরকারি মাংসপেশীগুলো সংকুচিত করুন এভাবে প্রস্রাব ধরে রাখার জন্য প্রিক্টিস করুন। এভাবে ৫ – ১০ সেকেন্ড থাকুন এবং সংকুচিত মাংসপেশী ছেড়ে দিন। ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করুন।

কেগেল এক্সারসাইজ

এ এক্সারসাজইটি করার জন্য মাটিতে চিত হয়ে সোজা ভাবে শুয়ে পড়ুন। পা দুটো ফাঁক করে রাখুন, হাত দুটি শরীরের দুই দিকে সোজা করে রাখুন। এবার বুকের নীচ থেকে নিতম্ব পর্যন্ত উপরের দিকে উঠিয়ে দিন। এ অবস্থায় থেকে ১ থেকে ১৫ পর্যন্ত গননা করুন। এ অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে অতি দ্রুত বা কম সময় শ্বাসপ্রশ্বাস পরিচালনা করার প্রয়োজন নেই। ধীরে ধীরে শরীর নীচের দিকে নামিয়ে নিন। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বার করুন এ ব্যায়ামটি।

রোগে আক্রান্ত হলে কোন সময় চিকিৎসা করা নিয়ে অবহেলা করবেন না। কারণ সুস্থ থাকার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা অতিব জরুরি। আপনাকে মনে রাখতে হবে প্রস্রাব ঝরে পড়ার সমস্যা যেহেতু পরবর্তী সময়ে আরও রোগের সৃষ্টি করতে পারে, সে জন্য যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আগেই সতর্ক রাখুন।

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা :

প্রস্রাব ধরে রাখতে পারছেন না এমন সমস্যায় যদি আপনি ভুক্তভোগী হোন তাহলে অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন পেল্ভিক চেয়ার ,  কিগল স্টিমুলেশন , কিগল এক্সারসাইজ , আকুপাংচারের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হতে পারবেন ।

সাধারণ জিজ্ঞাসা :

১ ঘন্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া কি স্বাভাবিক বলে ধরা হয়?

বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ বার প্রস্রাব করেন। আপনি যদি এর চেয়ে বেশি বা অস্বাভাবিক প্রস্রাব করার প্রয়োজন অনুভব করেন, বা প্রতি 30 মিনিটের মধ্যে ১ বার উঠতে থাকেন, তবে আপনি ঘন ঘন প্রস্রাব আক্রান্ত আছেন বলে ধরা হবে।

একজন মানুষ সারাদিনে কত লিটার প্রস্রাব করে?

প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে দৈনিক ০.৫ থেকে ২.৫ লিটার মূত্র উৎপন্ন হয়ে থাকে, তবে আপনি কতটুকু পানি পান করেছেন সেটার উপরে অনেক সময় নির্ভর করে।

সময়মত প্রস্রাব করতে না পারলে কি হয়?

আপনার মূত্রাশয় অথবা কিডনির ক্ষতি হতে পারে । এর কারণে আপনার মূত্রনালী থেকে প্রস্রাব বের করে দেয় এমন পথের বাধা বা আপনার মূত্রাশয়ের পেশীর অংশগুলোর কাজে সমস্যা হতে পারে।

কী পরীক্ষা দিয়ে প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারার সমস্যাটি নিশ্চিত হওয়া যায়?

৮০ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তাদের জীবনের ইতিহাস দিয়েই রোগ নির্ণয় করা যায়। এর মাধ্যমে পয়েন্ট আউট করা সম্ভব হয়, এবং রোগীর ঝুঁকি কতটুকু রয়েছে, সে কোন অবস্থায় রয়েছে, সে অবস্থা বোঝার জন্য ফিজিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। ২০ ভাগ ল্যাবের পরীক্ষা সাহায্য করে সমস্যাটি পুরোপুরি বুঝার জন্য।

প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারার অসুখটা প্রতিরোধযোগ্য?

জি অসুখটা প্রতিরোধযোগ্য। উন্নত বিশ্বের মানুষদের মধ্যে একই সমস্যা রয়েছে। তবে ব্যাপ্তিটা কম বা বেশি নয়। কারণ, অ্যান্টিনেটাল কেয়ার, পোস্ট নেটাল কেয়ার ওদের অনেক উন্নত হয়।

 

সম্পাদনায়
ডাঃ সাইফুল ইসলাম ,পিটি
বিপিটি ( ঢাবি – সিআরপি ), এমপিটি (অর্থো)
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
বাসা # ৪২, লেক ড্রাইভ রোড, সেক্টর # ৭,
উত্তরা, ঢাকা -১২৩০

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 

এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ Visionphysiotherapy.com

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 82