মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়?

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারন বা মেয়েদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এটা একটা সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মনে করে থাকি, প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়েছে এইজন্যই ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয় তবে সেই সাথে প্রস্রাবে অনেক জ্বালাপোড়াও হয়।

তাই ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া মানেই যে প্রস্রাবের ইনফেকশন বিষয়টা তা নয়। অনেক কারন আছে যেসব কারনে মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।

ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাগিদে বার বার বাথরুমে যেতে হয় এতে করে দৈনন্দিন কাজে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দৈনিক ছয় থেকে আটবার প্রস্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু এর বেশি প্রস্রাব হলে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। কেনো আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছে এর কারন আগে বের করতে হবে।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

ঘন ঘন প্রস্রাব বলতে কি বুঝায়? দৈনিক কতবার প্রস্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক?

ঘন ঘন প্রস্রাব মানে হচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বার প্রস্রাবের বেগ হওয়া বা বার বার প্রস্রাব হওয়া। গর্ভবতী মহিলা ছাড়া একজন স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ৬-৮ বার প্রস্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর বেশি যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব এবং ইনকনটিন্সের মধ্যে পার্থক্য কি?

ঘন ঘন প্রস্রাব মানে হলো বার বার প্রস্রাবের বেগ আসাকে বুঝায়, অন্যদিকে ইনকনটিনেন্স মানে হলো প্রস্রাব করার পরেও অনিচ্ছাকৃতভাবে ফোটা ফোটা প্রস্রাব বের হওয়া। এই দুটি সমস্যা সম্পূর্ণ আলাদা, আমরা অনেক সময় দুটিকে একই সমস্যা মনে করে থাকি । তাই এই দুটি সমস্যা আলাদাভাবে বুঝতে হবে এবং আপনার কোন সমস্যাটি হচ্ছে সেটা বের করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

আরো জানুন : ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারন

আরো জানুন : কোমর ও তলপেটে ব্যথার কারণ জেনে নিন

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারন :

বয়স, অভ্যাস এবং চিকিৎসা পরিস্থিতির উপর মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া নির্ভর করে। যেমন গর্ভবতী মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। বিভিন্ন কারনে মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হয় যেমন-

অনেক বেশী তরল পান করা :

আপনার শরীরে যতটুকু তরল বা পানির প্রয়োজন ততটুকুই খেতে হবে, যদি বেশী পরিমান তরল শরীরে যায় তাহলে তা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারন হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি বেশী পানি পান করা হয় তাহলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। আপনার দৈনন্দিন কাজের উপর আপনার পানি খাওয়ার পরিমান অনেকটা নির্ভর করে। বেশী পরিশ্রমের কাজ করলে রোদে কাজ করলে পানি একটু বেশী খেতে হয়। তবে অতিরিক্ত তরল বা পানি বেশী পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।

অ্যালকোহল বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার :

অ্যালকোহল বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবারকে মূত্রবর্ধক খাবার ধরা হয় যা খেলে আপনার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী বার প্রস্রাব হবে। আপনি যদি নিয়মিত এ ধরনের খাবার গ্রহন করে থাকেন তাহলে আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হবে।

ইউরিনারি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন(UTI):

ঘন ঘন প্রস্রাবের পাশাপাশি যদি শরীরে জ্বর হয় এবং তলপেটে ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে প্রস্রাবের নালীতে ইনফেকশন হয়েছে। এই সমস্যা হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

আরো দেখুন জানার জন্য : ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয় এবং এর সঠিক চিকিৎসা/ ঘন ঘন প্রস্রাব হলে করনীয়/ ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার উপায়

আরো দেখুন জানার জন্য : ঘন ঘন প্রস্রাবের স্থায়ী সমাধান / প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যায় করনীয় কি / প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারা

ভ্যাজিনাইটিস বা যোনি প্রদাহ :

ভ্যাজিনাইটিস হলো এক ধরনের যোনির প্রদাহ যা যোনিতে অস্বস্তি, চুলকানি, ব্যথা, স্রাব বের হওয়ার পাশাপাশি ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। এই সমস্যার ক্ষেত্রে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা চুলকানি অনুভব হতে পারে। মাছের গন্ধযুক্ত বা হলদে-সবুজ এবং ফেনাযুক্ত স্রাব বের হয়।

অতিসক্রিয় মূত্রাশয় বা ওভারঅ্যাকটিভ ব্লাডার (OAB):

এটি এমন একটি সমস্যা যার ফলে মূত্রাশয়ের পেশীগুলো অতিরিক্ত সংকোচন হয়ে যায় এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব করার তাড়না সৃষ্টি হয়। এই রোগের চিকিৎসা হিসেবে ব্লাডারকে ট্রেনিং করানো হয়, যাতে কোন ব্যক্তি মূত্রাশয়ের গতিবিধির উপর কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে।

ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস (IC):

ইন্টারস্টিসিয়াল সিস্টাইটিস হলো এক ধরনের যোনির প্রদাহ যার ফলে যোনি ও মলদ্বারের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়। এর সাথে ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং মূত্রাশয় পূর্ণ হলে ব্যথা হয়। এই সমস্যাটি মহিলা পুরুষ উভয়েরই হতে পারে তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এই সমস্যা বেশী হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থা:

গর্ভবতী মহিলাদের স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। এটি গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা। যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে সন্তান জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস : হঠাৎ করে যদি দেখেন যে ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছে তাহলে এটি ডায়াবেটিস এর লক্ষনও হতে পারে। কারন ডায়াবেটিস এর ফলে শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

পেলভিক ফ্লোর মাসলের দূর্বলতা :

গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময় এই পেলভিক ফ্লোর পেশী দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে মা হওয়ার পর অনেক মহিলাদেরই হাচি বা কাশি দেয়ার সময় প্রস্রাব বের হয়ে যায়। তাই এই পেশীকে ঠিক করতে কিছু ব্যায়াম করতে হয়।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় কখন ডাক্তার দেখাতে হবে :

আপনি যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন যে, আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব অতিরিক্ত পানি পান করা, ক্যাফেইনযুক্ত খাবার খাওয়া বা গর্ভাবস্থার কারনে হচ্ছে না অথবা আপনি যদি মনে করেন যে ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যার কারনে আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে সঠিক রোগ নির্ণয় করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব অনেক কারনে হয়ে থাকে এবং এটি জীবনযাত্রার জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন :

দিনে কতবার প্রস্রাব করা স্বাভাবিক?

সাধারণত একজন মানুষের দৈনিক ৬-৮ বার প্রস্রাব করাকে স্বাভাবিক ধরা হয়।

ডায়াবেটিস হলে দিনে কতবার প্রস্রাব হয়?

দৈনিক ৭-১০ বারের বেশী প্রস্রাব করলে টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর লক্ষন মনে করা হয়।

ইউরিনারি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এর প্রথম সাধারণ কারন কি?

ইউরিনারি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন এর প্রথম সাধারণ কারন হলো ব্যাকটেরিয়া।

কোন ধরনের খাবার ইউরিনারি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন দূর করতে পারে?

প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার ইউরিনারি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?

যদি ঘন ঘন প্রস্রাবের পাশাপাশি জ্বর, তলপেটে ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব এসব থেকে থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।

ধন্যবাদান্তে-
ডাঃ সৌরভ রহমান, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এম ডি এম আর (এস এস টি)
ইনচার্জ এন্ড সিনিয়র ফিজিওথেরাপিষ্ট
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 

এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ Visionphysiotherapy.com

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 79