মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ হিসেবে কি কি বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে

নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ প্রায়শই পুরুষদের মতো গতানুগতিকভাবে প্রকাশ পায় না, যা রোগ নির্ণয়কে আরও কঠিন করে তোলে। বুকে তীব্র ব্যথা, যা সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়, নারীদের ক্ষেত্রে তেমনটা প্রকট নাও হতে পারে। এর পরিবর্তে, নারীরা শ্বাসকষ্ট, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি, বা হজমের সমস্যা অনুভব করতে পারেন। মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ হিসেবে অভিজ্ঞ ডাক্তারগণ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই ভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশের কারণে অনেক সময় নারীদের হৃদরোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। ফলে, রোগীরা সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন এবং জটিলতা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।

পুরুষদের তুলনায় নারীদের হৃদরোগ সাধারণত দেরিতে শনাক্ত হয়। গড়ে, একজন নারীর হৃদরোগ পুরুষের তুলনায় প্রায় দশ বছর পর ধরা পড়ে। এই বিলম্বের মূল কারণ হল লক্ষণগুলোর ভিন্নতা এবং অনেক ক্ষেত্রে নারী ও চিকিৎসক উভয়েরই এই বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব। দেরিতে রোগ নির্ণয়ের কারণে নারীদের রোগটি অনেক বেশি জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে যায়। যখন রোগ ধরা পড়ে, তখন প্রায়শই পরিস্থিতি এমন থাকে যে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং জটিলতাগুলো মোকাবেলা করা দুরূহ হয়ে ওঠে। তাই, সময়মতো সঠিক রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা নারীদের জীবন রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

হার্টের ব্যথা কেমন হয় ও হার্টের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয় তা বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

নারীদের বা মেয়েদের হার্টের সমস্যার বিশেষ লক্ষণ

নারীদের বা মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ

বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের মতো তীব্র নাও হতে পারে। অনেক সময় বুকে হালকা চাপ, টান বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, যা সহজেই উপেক্ষা করা যেতে পারে। এই অনুভূতি এতটাই মৃদু হতে পারে যে অনেকেই এটিকে হার্টবার্ন বা পেশির টান ভেবে ভুল করেন এবং গুরুত্ব দেন না। তবে, বুকের এই ধরনের অস্বাভাবিক অনুভূতিও হৃদযন্ত্রের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শ্বাসকষ্ট হওয়া

স্বাভাবিক অবস্থায় অথবা বিশ্রামরত অবস্থায়ও যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে এটি সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের একটি লক্ষণ হতে পারে। ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে এই ধরনের শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। যদি কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে এটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় এবং দ্রুত மருத்துவ সহায়তা চাওয়া উচিত।

আমাদের অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে সেরা মানের সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা আমাদের +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

চোয়াল, ঘাড়, পিঠ বা হাতে ব্যথা হওয়া

 সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা শুধু বুকেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। চোয়াল, ঘাড়, পিঠের উপরের অংশ অথবা এক বা উভয় বাহুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সাধারণত, এই ব্যথা বাম বাহুতে বেশি অনুভূত হয়। এই ধরনের ব্যথা অনেক সময় অন্য সাধারণ শারীরিক discomfort ভেবে ভুল করা হয়, কিন্তু এটি হৃদযন্ত্রের সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও রোগীর খাবার কি কি জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

অত্যধিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করা

অত্যধিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করা

কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই যদি অস্বাভাবিক এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয়, তবে এটি সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে। হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়, যার ফলে এই ধরনের তীব্র ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও যদি খুব বেশি দুর্বলতা লাগে, তবে তা অবহেলা করা উচিত নয়।

হজমের সমস্যা বা বমি বমি ভাব আসা

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হিসেবে হজমের সমস্যা, যেমন গ্যাস্ট্রিক, অম্বল বা বমি ভাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি বেশি দেখা যায় এবং অনেক সময় এটিকে সাধারণ পেটের সমস্যা মনে করে ভুল করা হয়। যদি এই ধরনের উপসর্গ ঘন ঘন দেখা দেয় এবং এর সাথে অন্য কোনো অস্বাভাবিক অনুভূতি থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বিশিষ্ট ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে উন্নত মানের সেরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেতে আপনার এপয়েন্টমেন্ট টি আজই নিয়ে নিন অথবা আমাদের +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

ঠান্ডা হয়ে ঘাম হওয়ার কারণে

হঠাৎ করে শরীর ঠান্ডা হয়ে ঘামতে শুরু করলে, এমনকি যখন কোনো শারীরিক পরিশ্রম করা হয়নি, তখন এটি হৃদযন্ত্রের সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের ঠান্ডা ঘাম সাধারণত অপ্রত্যাশিতভাবে আসে এবং এর সাথে অন্য উপসর্গও থাকতে পারে। এটিকে সাধারণ ঘাম মনে করে উপেক্ষা করা উচিত নয়।

মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা হওয়া

রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের সময় মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথার মতো অনুভূতি হতে পারে। মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হলে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর অনুভূতি হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ, লক্ষণ ও করণীয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

কেন সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বিপজ্জনক

কেন সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বিপজ্জনক?

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ এর লক্ষণগুলো অনেক সময় স্পষ্ট না হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার আশেপাশে থাকা মানুষেরা এটিকে গুরুত্ব দিতে পারেন না, ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি হয়। এই বিলম্বের কারণে হৃদপিণ্ডে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, একবার সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হলে ভবিষ্যতে আরও গুরুতর হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাই, নীরব লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সামান্যতম সন্দেহ হলেও দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বুকের বাম পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ তা বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

মেয়েদের হার্টের সমস্যার সমাধান

মেয়েদের হার্টের সমস্যার সমাধান

মেয়েদের হার্টের সমস্যা কমানো আর সুস্থ থাকার জন্য কিছু জরুরি কাজ করা দরকার। প্রথমত, ভালো খাবার খেতে হবে। রোজ অন্তত পাঁচটা ফল আর সবজি খাওয়া উচিত। বাদাম, শিম, ডাল আর আস্ত শস্যের মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ভালো। বেশি চর্বিওয়ালা লাল মাংস না খেয়ে মাছ খাওয়া উচিত। আর লবণ, চিনি আর প্যাকেটজাত খাবার কম খেতে হবে।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটলে বা অন্য কোনো ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যায়। সপ্তাহে দুবার শক্তি বাড়ানোর মতো ব্যায়াম করা উচিত। নিজের ওজন ঠিক রাখাটাও জরুরি (BMI ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে)। ধূমপান ছেড়ে দিলে মেয়েদের হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ধূমপান ছাড়তে অসুবিধা হলে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান করা, ভালোভাবে ঘুমানো আর স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। মন খারাপ লাগলে কারো সাথে কথা বলা বা পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। রক্তচাপ, কোলেস্টেরল আর রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করানো দরকার। পরিবারে যদি কারো হার্টের রোগ থাকে, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।

প্রয়োজনে ডাক্তার যে ওষুধ দেবেন, সেগুলো ঠিকমতো খেতে হবে। যেমন ব্লাড থিনার, নাইট্রোগ্লিস্যারিন বা স্ট্যাটিন। বেশি সমস্যা হলে এনজিওপ্লাস্টি, স্টেন্টিং বা বাইপাস সার্জারির মতো চিকিৎসা লাগতে পারে। আর সবশেষে, রোজ রাতে অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার, এতে হার্টের রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে মেয়েদের হার্টের রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং তারা সুস্থ জীবন কাটাতে পারে।

আমাদের অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে সেরা মানের সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা আমাদের +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 103

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *