ভূমিকা
গর্ভাবস্থার শুরুতে তলপেটে হালকা ব্যথা হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো নিষিক্ত ডিম্বাণুর জরায়ু প্রাচীরে স্থাপন (Implantation)। যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ু প্রাচীরে নিজেকে যুক্ত করে, তখন কিছু নারীর হালকা রক্তপাত বা অস্বস্তি হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ঘটে এবং কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত তীক্ষ্ণ না হয়ে হালকা মোচড়ানো বা টান লাগার মতো অনুভূত হয়। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন তা নিয়ে খোলাখুলি ভাবে জানতে পারবেন।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। এই সময় প্রোজেস্টেরন এবং অন্যান্য হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা জরায়ু এবং এর आसपासের পেশী ও লিগামেন্টগুলোকে প্রসারিত করতে শুরু করে। এই প্রসারণের কারণে তলপেটে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হজমের সমস্যা, যেমন – কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাস হতে পারে, যা পেটে অস্বস্তি এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম মাসের তলপেটের ব্যথা স্বাভাবিক, কিছু ক্ষেত্রে এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। একটোপিক প্রেগনেন্সি (Ectopic pregnancy), যেখানে ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে অন্য কোথাও স্থাপিত হয়, গর্ভপাতের হুমকি (Threatened miscarriage) বা ডিম্বাশয়ের সিস্টে (Ovarian cyst) জটিলতা সৃষ্টি হলে তলপেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে। তাই, যদি ব্যথা খুব বেশি হয়, लगातार থাকে বা এর সাথে রক্তপাত, জ্বর বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কোমর ব্যাথা সারানোর জন্য সহজ ব্যায়াম জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন?
হরমোনগত পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো হরমোনগত পরিবর্তন। গর্ভধারণের শুরু থেকেই মায়ের শরীরে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন এবং হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (এইচসিজি) নামক হরমোনগুলোর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই হরমোনগুলো গর্ভধারণকে টিকিয়ে রাখতে এবং ভ্রূণের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই হরমোনগত পরিবর্তনের প্রভাবে জরায়ু এবং এর आसपासের মাংসপেশি ও লিগামেন্টগুলোতে টান বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। প্রোজেস্টেরন জরায়ুর পেশীগুলোকে শিথিল করে এবং এর আকার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই প্রসারণের কারণে তলপেটে হালকা অস্বস্তি বা মোচড়ানোর মতো অনুভূতি হতে পারে। এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হজমের সমস্যা, যেমন – কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটে গ্যাস তৈরি হওয়াও তলপেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।
জরায়ুর বৃদ্ধি ও প্রসারণ
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথার আরেকটি স্বাভাবিক কারণ হলো জরায়ুর বৃদ্ধি ও প্রসারণ। গর্ভধারণের শুরু থেকেই জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে গর্ভের ক্রমবর্ধমান ভ্রূণকে ধারণ করার জন্য। যদিও প্রথম মাসে জরায়ুর আকার খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না, তবে এর পেশী এবং এর চারপাশে থাকা লিগামেন্টগুলোতে ধীরে ধীরে চাপ পড়তে শুরু করে।
এই কারণে তলপেটে হালকা ব্যথা বা টান টান ভাব অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা অনেকটা মাসিকের সময়কার ব্যথার মতো হতে পারে, তবে তা সাধারণত কম তীব্র হয়। জরায়ুর এই বৃদ্ধি এবং প্রসারণ একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এবং এটি গর্ভধারণের অগ্রগতির সাথে সাথে আরও স্পষ্ট হতে পারে। বিশ্রাম নিলে বা হালকা গরম সেঁক দিলে এই অস্বস্তি কিছুটা কমে যেতে পারে।
ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে জরায়ুতে স্থাপন (ইমপ্লান্টেশন)
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথার একটি সম্ভাব্য কারণ হলো ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর জরায়ুতে তার স্থাপন প্রক্রিয়া, যাকে ইমপ্লান্টেশন বলা হয়। যখন একটি ডিম্বাণু শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়, তখন এটি জরায়ুর দিকে অগ্রসর হয় এবং প্রায় ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে নিজেকে যুক্ত করে। এই সময় ডিম্বাণুটি জরায়ু প্রাচীরে সামান্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এই প্রক্রিয়ার ফলে কিছু নারীর তলপেটে হালকা ব্যথা বা ক্র্যাম্পিং অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত খুব তীব্র হয় না এবং কয়েক ঘণ্টা থেকে দুই দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সময় হালকা স্পটিং বা রক্তপাতও হতে পারে, যা ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং নামে পরিচিত। তবে, মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সকল গর্ভবতী নারী এই ধরনের ব্যথা বা রক্তপাত অনুভব করেন না।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
হজমজনিত সমস্যা
গর্ভাবস্থার শুরুতে মায়ের শরীরে হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এই সময়ে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রোজেস্টেরন হরমোন শরীরের বিভিন্ন পেশীকে শিথিল করার পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্রের পেশীগুলোর কার্যকারিতাও কিছুটা কমিয়ে দেয়। এর ফলে খাদ্যনালীর মধ্য দিয়ে খাবারের চলাচল ধীর হয়ে যায় এবং হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
হজমের এই ধীর গতির কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস জমা হলে পেট ফাঁপা অনুভব হয় এবং তলপেটে অস্বস্তি বা হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে, যেমন – সহজে হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করে এই সমস্যা কিছুটা কমানো যেতে পারে।
প্রস্রাবের সমস্যা
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আপনার দেওয়া প্রথম পয়েন্ট অনুসারে, জরায়ু বড় হওয়ার কারণে মূত্রাশয়ের ওপর চাপ পড়লে ঘন ঘন প্রস্রাব এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুতে, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। এই ক্রমবর্ধমান জরায়ু মূত্রাশয়ের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এটির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
মূত্রাশয়ের উপর এই চাপের ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভব হতে পারে। এমনকি সামান্য পরিমাণে প্রস্রাব জমা হলেই অস্বস্তি লাগতে পারে। এর পাশাপাশি, মূত্রাশয়ের উপর চাপের কারণে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়াও অনুভূত হতে পারে। তবে, শুধু জরায়ুর চাপের কারণে সাধারণত তীব্র ব্যথা হয় না।
আপনার দেওয়া দ্বিতীয় পয়েন্টে প্রস্রাবের সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের সংক্রমণ (Urinary Tract Infection বা UTI) একটি সাধারণ সমস্যা এবং এর কারণে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। সংক্রমণের ফলে মূত্রাশয় এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
এই প্রদাহের কারণে তলপেটের একদিকে বা মাঝখানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ এবং ঘোলাটে বা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাবও প্রস্রাবের সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। যদি আপনার প্রস্রাবে সংক্রমণ থাকে, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং চিকিৎসা করানো জরুরি।
সুতরাং, গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়ার পেছনে জরায়ুর বৃদ্ধি এবং মূত্রাশয়ের উপর তার চাপ একটি কারণ হতে পারে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব ও জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে। তবে, প্রস্রাবের সংক্রমণ থাকলে তলপেটে ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে। অন্যান্য কারণেও এই সময় তলপেটে ব্যথা হতে পারে, তাই সঠিক কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
অন্যান্য সাধারণ কারণ
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথার আরও কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে। আপনার উল্লেখ করা প্রথম কারণটি হলো শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তন, ক্লান্তি, অতিরিক্ত হাঁটা-চলা বা ভারী কাজের ফলে ব্যথা অনুভব হতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুতে শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে শরীর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। এই সময়ে সামান্য ক্লান্তি বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণেও তলপেটে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এছাড়াও, গর্ভাবস্থার আগে যদি কেউ খুব বেশি সক্রিয় না থাকেন এবং গর্ভধারণের পর হঠাৎ করে বেশি হাঁটাচলা করেন বা ভারী কাজ করেন, তবে তার প্রভাবেও তলপেটে টান লাগতে পারে এবং ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত হালকা হয় এবং বিশ্রাম নিলে কমে যায়।
দ্বিতীয় কারণটি হলো মানসিক চাপ ও উদ্বেগও তলপেটের ব্যথা বাড়াতে পারে। গর্ভাবস্থা একটি বড় শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই সময়ে অনেক নারীই বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপে বা উদ্বেগে ভুগতে পারেন।
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ শরীরের পেশীগুলোকে সংকুচিত করতে পারে, যার ফলে তলপেটেও ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি সরাসরি শারীরিক কারণ না হলেও, মানসিক অবস্থার প্রভাব শরীরের উপর পড়তে পারে এবং ব্যথার অনুভূতি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় শান্ত ও উদ্বেগমুক্ত থাকার চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং, গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়ার পেছনে শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তন, ক্লান্তি, অতিরিক্ত হাঁটা-চলা বা ভারী কাজ যেমন কারণ থাকতে পারে, তেমনই মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণেও এই ব্যথা বাড়তে পারে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত হালকা হয়, তবে যদি ব্যথা তীব্র হয় বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না জানতে আমাদের লেখা এই পোস্টটি পড়ুন।
সতর্কতামূলক লক্ষণ
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা অনুভব করা স্বাভাবিক হলেও, কিছু সতর্কতামূলক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আপনার প্রথম সতর্কতামূলক লক্ষণটি হলো ব্যথার সাথে প্রচুর রক্তপাত, জ্বর, বমি, মাথা ঘোরা অথবা তীব্র বা অসহ্য ব্যথা অনুভব করা। এই লক্ষণগুলো সাধারণ discomfort-এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর।
প্রচুর রক্তপাত গর্ভপাতের লক্ষণ হতে পারে এবং এর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। জ্বরের উপস্থিতি শরীরে সংক্রমণের ইঙ্গিত দিতে পারে, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে। তীব্র বমি বা ক্রমাগত মাথা ঘোরা অন্য কোনো জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যদি তলপেটে তীব্র বা অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়, তবে তা উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
আপনার দ্বিতীয় সতর্কতামূলক লক্ষণটি হলো এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ), গর্ভপাত বা সংক্রমণের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি একটি জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে, যেখানে ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে অন্য কোনো স্থানে স্থাপন হয়। এর প্রধান লক্ষণ হলো তলপেটে তীব্র ব্যথা এবং রক্তপাত।
এছাড়াও, গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকলে তলপেটে ব্যথা এবং রক্তপাত হতে পারে, যার জন্য দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। গর্ভকালীন সংক্রমণও মা ও শিশুর জন্য গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, যদি এই ধরনের কোনো ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে বা আপনি এই জাতীয় কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তবে কোনো প্রকার অবহেলা না করে অবিলম্বে மருத்துவ সহায়তা নেওয়া উচিত।
সুতরাং, গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা অনুভব করার সময় যদি এর সাথে প্রচুর রক্তপাত, জ্বর, বমি, মাথা ঘোরা, বা তীব্র ব্যথা থাকে তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। একইসাথে, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি, গর্ভপাত বা সংক্রমণের ঝুঁকির লক্ষণ দেখা দিলে কোনোভাবেই বিলম্ব করা উচিত নয়। আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহ, অর্থাৎ একেবারে শুরুতে, তলপেটে হালকা অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করাটা মোটেও বিরল কোনো ঘটনা নয়। বরং, অনেক গর্ভবতী নারীই এই সময়ে এমন অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন। এর প্রধান কারণ হলো, গর্ভাশয় ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে এবং এর আশেপাশের পেশী ও স্নায়ুতে কিছুটা চাপ পড়ে। এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও পেটে হালকা টান লাগতে পারে। তাই, যদি শুধু হালকা ব্যথা অনুভব করেন এবং অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ না থাকে, তবে সাধারণত এটি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। শরীর নতুন অবস্থার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, এটাই তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সব ধরনের পেটের ব্যথাই কিন্তু স্বাভাবিক নয়। গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি তলপেটের ব্যথা তীব্র হয়, ক্রমশ বাড়তে থাকে, অথবা যদি এমন মনে হয় যে ব্যথা সহ্য করা কঠিন, তাহলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। এর পাশাপাশি, যদি অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন যোনিপথে রক্তপাত (হোক তা হালকা বা বেশি), জ্বর আসা, শরীরে কাঁপুনি অনুভব করা, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব বা ঘন ঘন বমি হওয়া, অথবা প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালা অনুভব করা, তবে এগুলো কিন্তু সতর্কতামূলক লক্ষণ।
এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এগুলো গর্ভধারণের জটিলতা অথবা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, যার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
পরিশেষে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যে, একজন গর্ভবতী মহিলাকে সর্বদা নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। গর্ভাবস্থায় যেকোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিক অনুভূতি হলে তা হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। যদি কোনো কিছুই স্বাভাবিক মনে না হয়, অথবা যদি সামান্যতম সন্দেহও থাকে, তাহলে নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য এবং অনাগত সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা অনেক বড় জটিলতা এড়াতে সাহায্য করতে পারে। আপনার এবং আপনার সন্তানের সুস্থতাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার