টেনিস এলবো কিঃ কেন হয়, ব্যায়াম, চিকিৎসা ও বিশেষ ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট

টেনিস এলবো কি?

টেনিস এলবো, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘এপিকন্ডাইলাইটিস’ (Epicondylitis) নামে পরিচিত, একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথার সৃষ্টি করে। যদিও এর নামে “টেনিস” শব্দটি রয়েছে, তবে শুধুমাত্র টেনিস খেলোয়াড়েরাই এই সমস্যায় আক্রান্ত হন না। বরং, কবজি ও বাহুর পেশীগুলির অতিরিক্ত ব্যবহার বা হঠাৎ কোনো আঘাতের কারণে যে কেউই এই অবস্থার সম্মুখীন হতে পারেন। এটি মূলত সেইসব পেশী এবং টেন্ডনের প্রদাহের ফল যা আমাদের কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত বিস্তৃত এবং হাত ও কবজির নড়াচড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা টেনিস এলবো কি, কেন হয়, ব্যায়াম ও বিশেষ চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কনুইয়ের বাইরের দিকে একটি হাড়ের উঁচু অংশ থাকে, যাকে ‘ল্যাটারাল এপিকন্ডাইল’ (Lateral Epicondyle) বলা হয়। টেনিস এলবোর প্রধান কারণ হলো এই ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলের সাথে যুক্ত টেন্ডনগুলির ক্ষুদ্র ছিঁড়ে যাওয়া বা প্রদাহ। ভারী জিনিস তোলা, বারবার মোচড়ানো বা ঘোরানো, যেমন স্ক্রু ড্রাইভার ব্যবহার করা অথবা দীর্ঘক্ষণ ধরে টাইপ করার মতো কাজগুলি এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ব্যথা সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং কনুইয়ের বাইরের দিক থেকে শুরু হয়ে বাহু ও কবজি পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

এই সমস্যার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথা ও স্পর্শকাতরতা, যা কোনো জিনিস ধরা বা মোচড়ানোর সময় আরও বাড়ে। এছাড়া, হাত মুঠো করতে, দরজা খুলতে বা কোনো কিছু তুলতে অসুবিধা হতে পারে। অনেক সময় রাতে ব্যথা বেড়ে যায় এবং আক্রান্ত কনুই শক্ত হয়ে যেতে পারে। টেনিস এলবোর সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

টেনিস এলবো এর চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

টেনিস এলবো কেন হয়

টেনিস এলবো কেন হয়?

টেনিস এলবো হওয়ার প্রধান কারণ হলো কনুইয়ের বাইরের দিকের পেশী এবং টেন্ডনের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা বা সেগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার। আমাদের হাতের কবজি এবং আঙুলগুলির নড়াচড়া মূলত এই পেশী এবং টেন্ডনগুলির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যখন এই পেশীগুলি খুব বেশি ব্যবহার করা হয় অথবা এদের উপর হঠাৎ করে বেশি চাপ পড়ে, তখন সেগুলোতে ছোট ছোট ছিঁড় বা প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এই প্রদাহের কারণেই টেনিস এলবোর ব্যথা অনুভূত হয়।

বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মের কারণে কনুইয়ের এই অংশে চাপ পড়তে পারে। যারা একই ধরনের হাতের কাজ বারবার করেন, যেমন দীর্ঘক্ষণ ধরে কম্পিউটারে টাইপ করা, ভারী জিনিস তোলা, স্ক্রু ঘোরানো, বাগান করা অথবা যারা রান্নার কাজ বেশি করেন, তাদের মধ্যে টেনিস এলবো হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়াও, টেনিস বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলাধুলায় র‍্যাকেট ধরার ভুল কৌশল অথবা অতিরিক্ত অনুশীলনের ফলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, শুধুমাত্র খেলোয়াড় নয়, দৈনন্দিন জীবনে যারা হাতের পেশীর উপর বেশি চাপ দেন, তারাও এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

টেনিস এলবো সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মানুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই বয়সে টেন্ডনগুলি স্থিতিস্থাপকতা হারাতে শুরু করে এবং ছোটখাটো আঘাত বা অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে অন্য বয়সের মানুষের টেনিস এলবো হবে না। যেকোনো বয়সের মানুষ, যারা উপরে উল্লেখ করা কারণগুলোর সম্মুখীন হন, তারা এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই, হাতের কাজের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রয়োজনে বিশ্রাম নেওয়া এই রোগ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

টেনিস এলবো এর উপসর্গ

টেনিস এলবো এর উপসর্গ

টেনিস এলবোর প্রধান উপসর্গ হলো কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথা অনুভব করা। এই ব্যথা সাধারণত হালকাভাবে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তীব্র হতে পারে। কনুইয়ের ঠিক যে জায়গায় হাড়ের উঁচু অংশটি (ল্যাটারাল এপিকন্ডাইল) রয়েছে, সেখানে চাপ দিলে বা স্পর্শ করলে বেশি ব্যথা লাগে। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যথা কনুইয়ের আশেপাশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

হাত ঘোরানো বা কোনো জিনিস শক্ত করে ধরার সময় এই ব্যথা আরও বেড়ে যায়। যেমন, কোনো বোতলের ছিপি খোলা, দরজার নব ঘোরানো অথবা কোনো ভারী জিনিস তোলার চেষ্টা করলে কনুইয়ের বাইরের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এমনকি, সামান্য ওজনের জিনিস ধরে রাখতেও কষ্ট হতে পারে। এই কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন রান্না করা বা কাপড় নিংড়ানোও ব্যথাদায়ক হয়ে ওঠে।

মাঝে মাঝে এই ব্যথা কনুই থেকে কবজি এবং বাহু পর্যন্তও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও ব্যথার মূল কেন্দ্র কনুইয়ের বাইরেই থাকে, তবে এর বিস্তৃতির কারণে পুরো হাতে একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। এই কারণে হাতের নড়াচড়া এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে। অনেক রোগী রাতেও এই ব্যথায় কষ্ট পান, যা তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

টেনিস এলবোর কারণে আক্রান্ত হাতের শক্তি কমে যেতে পারে। যেহেতু কনুইয়ের বাইরের দিকের পেশী এবং টেন্ডনগুলি কবজি ও আঙুলের নড়াচড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই সেগুলোতে প্রদাহ হলে হাতের স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে কোনো জিনিস শক্ত করে ধরা বা মুষ্টিবদ্ধ করতে অসুবিধা হতে পারে। দুর্বলতার কারণে অনেক সময় হাতে থাকা জিনিসপত্র পড়েও যেতে পারে। এই লক্ষণগুলি দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও রোগীর খাবার জানতে এই পোস্টটি বিস্তারিত পড়ে নিন।

টেনিস এলবো এর ব্যায়াম

টেনিস এলবো এর ব্যায়াম

কবজি এবং কনুইয়ের পেশী ও টেন্ডনকে সচল রাখা এবং শক্তিশালী করার জন্য কিছু ব্যায়াম অত্যন্ত উপযোগী হতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো টেনিস এলবোর ব্যথা কমাতে এবং পুনরায় এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করার সময় ধীরে ধীরে এবং সাবধানে মুভমেন্ট করা উচিত, যাতে কোনো প্রকার অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। যদি ব্যায়ামের সময় ব্যথা অনুভব হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কবজি এক্সটেনশন ও ফ্লেক্সন স্ট্রেচ একটি সহজ কিন্তু কার্যকর ব্যায়াম। প্রথমে আপনার হাত সোজা করে ধরুন, তালু নিচের দিকে মুখ করে থাকবে। এরপর অন্য হাত দিয়ে ধীরে ধীরে আপনার হাতের আঙুলগুলিকে ধরে নিচের দিকে টানুন, যতক্ষণ না আপনি আপনার ফোরআর্মে হালকা টান অনুভব করেন। কয়েক সেকেন্ড ধরে এই অবস্থায় থাকুন এবং তারপর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। একই ভাবে, তালু উপরের দিকে রেখে আঙুলগুলিকে ধরে পেছনের দিকে টানুন এবং ফোরআর্মে টান অনুভব করুন। এটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।

তোয়ালে মোচড়ানো বা হালকা ওজন নিয়ে কবজি ওঠানো-নামানো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম। একটি তোয়ালে লম্বালম্বিভাবে ধরুন এবং দুই হাত দিয়ে দুই প্রান্ত ধরে বিপরীত দিকে মোচড়ানোর চেষ্টা করুন, যেমন কাপড় নিংড়ানোর সময় করেন। এটি কয়েকবার করুন। এছাড়াও, এক বা দুই কেজি হালকা ওজন হাতে নিয়ে তালু উপরের দিকে রেখে কবজি দিয়ে ধীরে ধীরে উপরে ও নিচে ওঠানামা করুন। এরপর তালু নিচের দিকে রেখে একই ব্যায়াম করুন। এটি কবজির পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

ফোরআর্ম ঘোরানোর ব্যায়াম কনুই এবং কবজির নড়াচড়া বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার কনুই ৯০ ডিগ্রি ভাঁজ করে এবং শরীর ঘেঁষে রেখে তালু উপরের দিকে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে আপনার হাতটিকে ঘুরিয়ে তালু নিচের দিকে করুন। আবার ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরে যান। খেয়াল রাখবেন শুধু আপনার ফোরআর্ম এবং কবজি যেন ঘোরে, কনুই যেন স্থির থাকে। এই ব্যায়ামটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন। এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে কবজি ও কনুইয়ের পেশী শক্তিশালী হবে এবং টেনিস এলবোর সমস্যা থেকে উপশম পাওয়া যাবে।

আকুপাংচার কোন কোন রোগের চিকিৎসায় কাজ করে জানতে এই লেখাটি পড়ুন।

টেনিস এলবো এর চিকিৎসা

টেনিস এলবো এর চিকিৎসা

টেনিস এলবোর চিকিৎসার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আক্রান্ত হাতকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া। যে কাজ বা মুভমেন্টের কারণে ব্যথা শুরু হয়েছে বা বেড়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এর ফলে কনুইয়ের পেশী এবং টেন্ডনগুলি সেরে ওঠার সময় পাবে। অনেক সময় সাধারণ কাজকর্ম যেমন ভারী জিনিস তোলা বা মোচড়ানো থেকেও বিরত থাকা প্রয়োজন হতে পারে, যতক্ষণ না ব্যথা কমে আসে। বিশ্রাম না দিলে প্রদাহ কমবে না এবং নিরাময় প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে।

ব্যথা এবং ফোলাভাব কমানোর জন্য আক্রান্ত স্থানে বরফ লাগানো একটি কার্যকর পদ্ধতি। পাতলা কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে নিয়ে দিনে কয়েকবার, প্রায় ১৫-২০ মিনিটের জন্য কনুইয়ের বাইরের দিকে লাগাতে পারেন। বরফ ঠান্ডা হওয়ার কারণে রক্তনালী সংকুচিত হয় এবং প্রদাহ কমে আসে। সরাসরি ত্বকের উপর বরফ লাগানো উচিত নয়। বরফ লাগানোর পাশাপাশি, ব্যথা কমাতে এবং কনুইয়ের সাপোর্ট বাড়াতে ব্যান্ডেজ বা ব্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সাপোর্ট কনুইয়ের পেশী ও টেন্ডনের উপর অতিরিক্ত চাপ কমায় এবং হিলিং-এ সাহায্য করে।

প্রয়োজনে ব্যথা কমানোর জন্য ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপরোক্সেন সোডিয়াম গ্রহণ করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলি ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে, কোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে প্যাকেজের নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, ওষুধ শুধুমাত্র উপসর্গ কমায়, সমস্যার মূল কারণের চিকিৎসা করে না।

আক্রান্ত হাতের কাজ সীমিত করা টেনিস এলবোর চিকিৎসার একটি অপরিহার্য অংশ। দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক কাজ থাকে যা আমরা অজান্তেই করে থাকি এবং যা কনুইয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই, সচেতনভাবে সেই কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়া বা কমিয়ে আনা উচিত। যদি কোনো বিশেষ কাজের কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে, তবে সেই কাজটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা বা করার পদ্ধতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

যদি টেনিস এলবোর সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং বিশ্রাম, বরফ বা ব্যথানাশক ওষুধেও কোনো উন্নতি না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে কিছু ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর ক্ষেত্রে, ফিজিওথেরাপি, স্টেরয়েড ইনজেকশন বা এমনকি সার্জারির মতো চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই, সময় মতো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জটিলতা এড়াতে সহায়ক।

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

টেনিস এলবো এর বিশেষ ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট

টেনিস এলবো এর বিশেষ ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট

টেনিস এলবোর চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে বিশেষ কিছু ব্যায়াম করানো হয় যা কনুই এবং এর আশেপাশের পেশীগুলিকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী করতে এবং নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামগুলি সাধারণত রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয় এবং সঠিক পদ্ধতিতে করলে ব্যথামুক্ত জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব। ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীকে বাড়িতে করার জন্যেও কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দেন।

ম্যাসাজ এবং ম্যানুয়াল থেরাপি টেনিস এলবোর চিকিৎসায় ব্যবহৃত আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। ম্যাসাজের মাধ্যমে কনুই এবং ফোরআর্মের পেশীগুলির টান কমিয়ে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করা হয়, যা নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ম্যানুয়াল থেরাপির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হাতে করা টেকনিক অন্তর্ভুক্ত থাকে, যার মাধ্যমে জয়েন্টের মুভমেন্ট পুনরুদ্ধার করা এবং ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক নড়াচড়া ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

ব্যথা কমানোর জন্য ফিজিওথেরাপিস্টরা কিছু বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, যা উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে প্রদাহ কমাতে এবং টিস্যু হিলিং-এ সাহায্য করে। এছাড়াও, ট্রান্সকিউটানেউস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন (TENS) নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের মাধ্যমে মৃদু ইলেকট্রিক্যাল ইম্পালস পাঠিয়ে ব্যথা সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধা দেয়, ফলে ব্যথা অনুভূত হয় না।

ফিজিওথেরাপির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রোগীর হাতের জন্য একটি সঠিক ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করা। ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর পেশীর শক্তি, নমনীয়তা এবং ব্যথার মাত্রার উপর ভিত্তি করে ধাপে ধাপে ব্যায়ামের তীব্রতা বাড়ান। এই ব্যায়ামগুলির মধ্যে স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেনদেনিং উভয় ধরনের ব্যায়ামই অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা কনুইয়ের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্টরা আক্রান্ত কনুইয়ে ব্রেস বা টেপিং ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন। ব্রেস কনুইকে সাপোর্ট দেয় এবং অতিরিক্ত মুভমেন্ট সীমিত করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, টেপিং একটি বিশেষ ধরনের ব্যান্ডেজ যা পেশী এবং টেন্ডনের উপর হালকা চাপ প্রয়োগ করে সেগুলোকে সাপোর্ট দেয় এবং নিরাময় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপিস্টরাই রোগীকে কখন এবং কীভাবে ব্রেস বা টেপিং ব্যবহার করতে হবে তা শিখিয়ে দেন।

সারসংক্ষেপ

পরিশেষে বলা যায়, টেনিস এলবো মূলত কনুইয়ের বাইরের অংশের পেশী এবং টেন্ডনের অতিরিক্ত ব্যবহার অথবা ভুল মুভমেন্টের কারণে সৃষ্ট একটি সাধারণ সমস্যা। যদিও এর নামকরণ টেনিসের সাথে যুক্ত, তবে দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে এই অসুবিধা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

এই সমস্যার সমাধানে বিশ্রাম একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। আক্রান্ত হাতকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়ার পাশাপাশি বরফ লাগানো এবং প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কবজি ও কনুইয়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেনদেনিং ব্যায়াম নিয়মিত করলে পেশীগুলির শক্তি ও নমনীয়তা বাড়ে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে সঠিক ব্যায়াম এবং ম্যানুয়াল থেরাপি এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে।

তবে, যদি টেনিস এলবোর সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে শরীরে থাকে এবং সাধারণ চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে আরও বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই, হাতের যে কোনো অস্বাভাবিক ব্যথা বা কষ্টকে অবহেলা না করে সঠিক সময়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে টেনিস এলবোর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 109

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *