গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস হয়? কিভাবে সহজে বুঝতে পারবেন?

গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস হয়, এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। আসলে, মাস আর সপ্তাহের হিসাব পুরোপুরি মেলানো একটু কঠিন, কারণ একেক মাসে দিনের সংখ্যা একেক রকম থাকে। তবে বাংলাদেশ ও ভারতীয় পরিস্থিতিতে সহজে মনে রাখার মতো এবং বিজ্ঞানসম্মত একটি ধারণা নিচে দেওয়া হলো, যা সম্ভবত আগে এভাবে কেউ বলেনি। আমাদের এই পোস্টে গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সাধারণভাবে, আমরা জানি পুরো গর্ভাবস্থা প্রায় ৪০ সপ্তাহ স্থায়ী হয়, যা প্রায় ৯ মাসের একটু বেশি। কিন্তু মাসের হিসাব করার সময় সমস্যা হয়। কারণ কোনো মাস ৩০ দিনে, কোনো মাস ৩১ দিনে, আবার কোনো মাস ২৮ বা ২৯ দিনে হয়। তাই, সপ্তাহের হিসাবে গর্ভাবস্থার অগ্রগতি বোঝাটাই সবচেয়ে সঠিক तरीका। ডাক্তাররাও সাধারণত সপ্তাহ ধরেই বাচ্চার বিকাশ কেমন হচ্ছে, তা দেখেন।

তবুও, বোঝার সুবিধার জন্য একটি সহজ ধারণা দেওয়া যাক। প্রতি ৪ সপ্তাহে সাধারণত এক মাস ধরা হয়, তবে এটা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ বেশিরভাগ মাস ৪ সপ্তাহের চেয়ে ২-৩ দিন বেশি হয়। তাই, ৪০ সপ্তাহকে যদি ৪ দিয়ে ভাগ করেন, তাহলে ১০ মাস মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে এটা ৯ মাসের একটু বেশি সময়। এই সহজ ধারণাটি মনে রাখলে গর্ভাবস্থার সপ্তাহগুলোকে মোটামুটি মাসের সাথে মেলাতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়ার কারণ জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস হয়

গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস হয়?

গর্ভাবস্থা সাধারণত ৪০ সপ্তাহ স্থায়ী হয়, যা প্রায় ৯ মাসের একটু বেশি। মাস আর সপ্তাহের হিসাব মেলানো কঠিন, কারণ একেক মাসে দিনের সংখ্যা আলাদা। ডাক্তাররা তাই সপ্তাহ ধরে হিসাব করেন, কারণ এটা বাচ্চার বিকাশের সঠিক চিত্র দেয়। সাধারণভাবে ধরলে, এক মাস মানে প্রায় সাড়ে চার সপ্তাহ। এই হিসাবে ৪০ সপ্তাহকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে ১০ মাস মনে হলেও, আসলে মাসগুলো বড়-ছোট হওয়ায় পুরো সময়টা ৯ মাসের একটু বেশি হয়। তাই, বাচ্চার সঠিক বিকাশের জন্য ডাক্তাররা সপ্তাহের হিসাবকেই বেশি গুরুত্ব দেন।

আপনি নিচে দেওয়া চার্ট থেকে আরও ভালো বুঝতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় মাস ও সপ্তাহের সহজ চার্ট

গর্ভাবস্থায় মাস ও সপ্তাহের সহজ চার্ট

গর্ভাবস্থার মাস সপ্তাহের পরিসর মূল বিকাশ ও পরিবর্তন
১ম মাস ১–৪ সপ্তাহ নিষেক (Fertilization), জাইগোটের প্রাথমিক কোষ বিভাজন (Cell division), জরায়ুতে স্থাপন (Implantation), মাসিক বন্ধ (Missed period)।
২য় মাস ৫–৮ সপ্তাহ হৃদস্পন্দন শুরু (Heartbeat begins), হাত ও পায়ের প্রাথমিক গঠন (Early limb buds), চোখের গঠন শুরু (Eye development starts), মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর প্রাথমিক বিকাশ (Early brain and nerve development)।
৩য় মাস ৯–১৩ সপ্তাহ মুখমণ্ডলের গঠন প্রায় সম্পন্ন (Facial features become distinct), অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠন শেষ (Limbs fully formed), নখ ও দাঁতের কুঁড়ি গঠন (Nail and tooth bud formation), প্রথম ত্রৈমাসিক শেষ (End of first trimester)।
৪র্থ মাস ১৪–১৭ সপ্তাহ চেহারায় স্পষ্টতা আসে (Facial features become more defined), মায়ের পেটে নড়াচড়া অনুভব শুরু (Quickening), আঙুলের ছাপ গঠন (Fingerprints form), লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব হতে পারে (Sex may be determined)।
৫ম মাস ১৮–২২ সপ্তাহ নড়াচড়া আরও স্পষ্ট হয় (Fetal movements become stronger and more noticeable), শরীরে চুল ও ভ্রূ গঠন শুরু (Hair and eyebrows begin to form), ত্বক Vernix Caseosa নামক একটি মোমযুক্ত পদার্থ দ্বারা আবৃত হয়।
৬ষ্ঠ মাস ২৩–২৭ সপ্তাহ চোখ খোলা ও বন্ধ করতে পারে (Eyes can open and close), শ্রবণশক্তির বিকাশ বৃদ্ধি পায় (Hearing continues to develop), ফুসফুসের প্রাথমিক গঠন (Early lung development)।
৭ম মাস ২৮–৩১ সপ্তাহ দ্রুত ওজন বৃদ্ধি (Rapid weight gain), ফুসফুস ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় (Lungs begin to mature), স্পর্শের অনুভূতি বাড়ে (Increased sensitivity to touch)।
৮ম মাস ৩২–৩৫ সপ্তাহ চামড়ার নিচে চর্বি জমা হতে শুরু করে (Fat layers accumulate under the skin), আকার ও ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায় (Significant increase in size and weight), বেশিরভাগ শিশু জন্মের জন্য সঠিক অবস্থানে আসে (Most babies move into a head-down position)।
৯ম মাস ৩৬–৪০ সপ্তাহ ভ্রূণের পরিপূর্ণ বিকাশ (Full-term development), অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পূর্ণরূপে গঠিত (Organs are fully mature and ready to function outside the womb), জন্মের প্রস্তুতি (Preparation for birth)।

সপ্তাহ-মাস রূপান্তরের সহজ সূত্র

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না জানতে এই পোস্টটি পড়ুন

সপ্তাহ-মাস রূপান্তরের সহজ সূত্র

গর্ভাবস্থার সময়কালকে সাধারণত সপ্তাহে গণনা করা হয়। মাস এবং সপ্তাহের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান, যা গর্ভধারণের অগ্রগতি বুঝতে সহায়ক। নিচে সপ্তাহ থেকে মাসে রূপান্তরের একটি সুস্পষ্ট কাঠামো প্রদান করা হলো:

  • প্রথম মাস: গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ১-৪ সপ্তাহ হলো প্রথম মাস।
  • দ্বিতীয় মাস: গর্ভধারণের পঞ্চম সপ্তাহ থেকে অষ্টম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ৫-৮ সপ্তাহ হলো দ্বিতীয় মাস।
  • তৃতীয় মাস: গর্ভধারণের নবম সপ্তাহ থেকে ত্রয়োদশ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ৯-১৩ সপ্তাহ হলো তৃতীয় মাস।
  • চতুর্থ মাস: গর্ভধারণের চতুর্দশ সপ্তাহ থেকে সপ্তদশ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ১৪-১৭ সপ্তাহ হলো চতুর্থ মাস।
  • পঞ্চম মাস: গর্ভধারণের অষ্টাদশ সপ্তাহ থেকে দ্বাবিংশ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ১৮-২২ সপ্তাহ হলো পঞ্চম মাস।
  • ষষ্ঠ মাস: গর্ভধারণের ত্রয়োবিংশ সপ্তাহ থেকে সপ্তবিংশ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ২৩-২৭ সপ্তাহ হলো ষষ্ঠ মাস।
  • সপ্তম মাস: গর্ভধারণের অষ্টাবিংশ সপ্তাহ থেকে একত্রিংশ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ২৮-৩১ সপ্তাহ হলো সপ্তম মাস।
  • অষ্টম মাস: গর্ভধারণের দ্বাত্রিংশ সপ্তাহ থেকে পঞ্চত্রিংশ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ৩২-৩৫ সপ্তাহ হলো অষ্টম মাস।
  • নবম মাস: গর্ভধারণের ষট্ত্রিংশ সপ্তাহ থেকে চল্লিশ সপ্তাহ পর্যন্ত এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ৩৬-৪০ সপ্তাহ হলো নবম মাস।

এই কাঠামোটি অনুসরণ করে, গর্ভাবস্থার যেকোনো সপ্তাহকে সহজেই সংশ্লিষ্ট মাসে রূপান্তর করা সম্ভব। এটি গর্ভধারণের অগ্রগতি এবং ত্রৈমাসিক বিভাজন বুঝতে সহায়ক।

গর্ভাবস্থার তিনটি ধাপ (ত্রৈমাসিক)

গর্ভাবস্থাকে বোঝার সুবিধার জন্য একে তিনটে প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়, যাদেরকে ত্রৈমাসিক বলা হয়। প্রতিটা ভাগেই বাচ্চার শরীরের আলাদা আলাদা রকমের পরিবর্তন হয়। নিচে এই তিনটি ভাগ সহজ ভাষায় বলা হলো:

  • প্রথম ভাগ (প্রথম ত্রৈমাসিক): এটা শুরু হয় গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকে এবং চলে তেরো সপ্তাহ পর্যন্ত। মানে হলো প্রথম মাস থেকে তৃতীয় মাস পর্যন্ত। এই সময়টাতে বাচ্চার হাত-পা, মাথা তৈরি হতে শুরু করে।
  • দ্বিতীয় ভাগ (দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক): এটা শুরু হয় চোদ্দ সপ্তাহ থেকে এবং চলে সাতাশ সপ্তাহ পর্যন্ত। মানে হলো চতুর্থ মাস থেকে ষষ্ঠ মাস পর্যন্ত। এই সময়টাতে বাচ্চা নড়াচড়া করতে শুরু করে এবং তার চেহারা আরও স্পষ্ট হয়।
  • তৃতীয় ভাগ (তৃতীয় ত্রৈমাসিক): এটা শুরু হয় আটাশ সপ্তাহ থেকে এবং চলে চল্লিশ সপ্তাহ পর্যন্ত, যা গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহ। মানে হলো সপ্তম মাস থেকে নবম মাস পর্যন্ত। এই সময়টাতে বাচ্চার ওজন বাড়ে এবং সে পৃথিবীর বাইরে আসার জন্য তৈরি হয়।

গর্ভাবস্থা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

  • গর্ভাবস্থার মাস গণনা সাধারণ মাসের চেয়ে একটু ভিন্ন, কারণ মাসে ৩০/৩১ দিন থাকলেও গর্ভাবস্থার হিসাব সপ্তাহ ধরে চলে।
  • ১৫ সপ্তাহ = ৩ মাস ৩ সপ্তাহ (১৫÷৪ ≈ ৩.৭৫)।
  • ৩৯–৪০ সপ্তাহে সাধারণত নরমাল ডেলিভারি হয়।
  • ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম হলে সেটিকে ‘প্রিম্যাচিউর’ বা অপরিপক্ব ধরা হয়।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে যা প্রায়ই আপনাদের মনে আসে। নিচে প্রশ্নগুলো সহ এর যথার্থ উত্তর দিয়ে দিচ্ছি।

প্রশ্ন ১ঃ গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে বাচ্চা নড়াচড়া করে?

উত্তরঃ সাধারণত, গর্ভধারণের ১৬ থেকে ২৫ সপ্তাহের মধ্যে একজন মা তার গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন। এই অনুভূতি প্রথম দিকে খুবই হালকা হতে পারে, যেমন পেটের ভেতরে প্রজাপতির ডানা ঝাপটানো বা হালকা বুদবুদের মতো মনে হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে এই নড়াচড়া আরও স্পষ্ট এবং শক্তিশালী হতে থাকে, যা মায়ের কাছে একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতা।

তবে, যারা প্রথমবার গর্ভধারণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই অনুভূতি পেতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে, প্রায় ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত। এর কারণ হলো, প্রথমবারের মতো গর্ভধারণের ফলে মায়ের শরীর এই নতুন অনুভূতি চিনতে কিছুটা সময় নেয়। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি গর্ভধারণ এবং প্রতিটি শিশুই আলাদা, তাই নড়াচড়া অনুভব করার সময়ের সামান্য তারতম্য অস্বাভাবিক নয়।

প্রশ্ন ২ঃ গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে পেট বড় হয়?

উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় মায়ের পেট বড় হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই, কারণ এটি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ প্রায় ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে পেট দৃশ্যমান হতে শুরু করে। এই সময় জরায়ু আকারে বাড়তে থাকে এবং পেটের পেশী প্রসারিত হতে শুরু করে, যার ফলে পেট বাইরের দিকে ফোলা মনে হয়।

প্রথমবার গর্ভধারণ করলে, পেটের পেশীগুলো তুলনামূলকভাবে টানটান থাকায় পেট একটু দেরিতে বড় হতে পারে। অন্যদিকে, যদি মায়ের আগে গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা থাকে, তবে পেটের পেশীগুলো কিছুটা প্রসারিত থাকার কারণে পেট তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি বড় হতে পারে। এছাড়াও, মায়ের শারীরিক গঠন, ওজন এবং গর্ভে একাধিক সন্তান থাকলে পেট বড় হওয়ার সময়ে ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। তবে, বেশিরভাগ মায়ের ক্ষেত্রেই এই সময়ের আশেপাশে পেট заметно হতে শুরু করে।

প্রশ্ন ৩ঃ গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে বাচ্চার হার্টবিট আসে?

উত্তরঃ গর্ভাবস্থার প্রায় ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে গর্ভের শিশুর হৃদস্পন্দন শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এই সময়ে ছোট্ট ভ্রূণের হৃদপিণ্ডটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে এবং খুব দ্রুত স্পন্দিত হতে শুরু করে। এই প্রাথমিক পর্যায়ে হৃদস্পন্দন মায়ের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়, তবে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় অভিজ্ঞ ডাক্তার বা টেকনিশিয়ানরা সহজেই তা শুনতে পান।

ভ্রূণের হৃদস্পন্দন গর্ভধারণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাথমিক লক্ষণ, যা বাচ্চার সুস্থ বিকাশের ইঙ্গিত দেয়। আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এই সময়ে হৃদস্পন্দন দেখতে পাওয়া গেলে গর্ভধারণ স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এটি অভিভাবকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ মুহূর্ত।

প্রশ্ন ৪ঃ গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে বাচ্চার লিঙ্গ বুঝা যায়?

উত্তরঃ সাধারণত, গর্ভাবস্থার ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব। এই সময়ের মধ্যে বাচ্চার বাহ্যিক জননাঙ্গ যথেষ্ট পরিমাণে বিকশিত হয়, যা আলট্রাসাউন্ড ইমেজে দৃশ্যমান হয় এবং লিঙ্গ সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

তবে, বাচ্চার সঠিক অবস্থান এবং আলট্রাসাউন্ড মেশিনের স্পষ্টতার উপর লিঙ্গ নির্ধারণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। যদি বাচ্চা এমন অবস্থানে থাকে যেখানে জননাঙ্গ স্পষ্টভাবে দেখা না যায়, অথবা আলট্রাসাউন্ড ইমেজ খুব স্পষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে লিঙ্গ নির্ধারণ করা কঠিন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা আরও পরবর্তী আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় লিঙ্গ নিশ্চিত করতে পারেন।

প্রশ্ন ৫ঃ গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে ডেলিভারি হয়?

উত্তরঃ গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক সময়কাল প্রায় ৪০ সপ্তাহ ধরা হয়। এই সময়সীমা পূর্ণ হলেই একজন মায়ের প্রসব বা ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে, ৩৭ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ৪২ সপ্তাহ পর্যন্ত যেকোনো সময়ে ডেলিভারি হওয়াকে স্বাভাবিক এবং পূর্ণ-মেয়াদী গর্ভধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যদি কোনো কারণে ৩৭ সপ্তাহের আগে ডেলিভারি হয়, তবে সেই অবস্থাকে প্রিম্যাচিওর বা অপরিণত ডেলিভারি বলা হয়। অন্যদিকে, গর্ভধারণের সময় ৪২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে তাকে পোস্ট-টার্ম ডেলিভারি হিসেবে গণ্য করা হয়। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি গর্ভধারণ স্বতন্ত্র এবং মায়ের শরীর ও শিশুর বিকাশের নিজস্ব গতি থাকে। সেই কারণে, ডেলিভারির সঠিক সময় আগে থেকে বলা কঠিন হলেও, বেশিরভাগ ডেলিভারি এই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

মাস ও সপ্তাহ মনে রাখার সহজ টিপস

মাস ও সপ্তাহ মনে রাখার সহজ টিপস

গর্ভাবস্থার পুরো সময়টাকে মাস আর সপ্তাহে গোনা হয়, আর এই হিসাবটা মা আর ডাক্তার দুজনের জন্যই খুব দরকারি। আমরা সাধারণত ধরে নিই ৪ সপ্তাহে ১ মাস। কিন্তু একটা বছরে তো ৫২ সপ্তাহ থাকে, তাই ১৩টা পুরো ৪ সপ্তাহের মাস হওয়ার পরেও ৪ দিন (লিপ ইয়ার হলে ৫ দিন) বেঁচে যায়। এই জন্য কোনো কোনো মাসে ৫ সপ্তাহও পড়তে পারে। তাই মাসের হিসাবটা একটু এদিক-ওদিক হতে পারে।

ডাক্তাররা কিন্তু গর্ভাবস্থা কতদূর এগোল আর বাচ্চার কেমন বিকাশ হচ্ছে, সেটা সাধারণত সপ্তাহের হিসাবেই দেখেন। কারণ সপ্তাহের হিসাবটা একদম ঠিকঠাক আর পরপর আসে। আলট্রাসাউন্ডের মতো পরীক্ষাগুলো বাচ্চার স্বাস্থ্যের অন্যান্য পরীক্ষাও প্রায় সময় সপ্তাহের হিসাব মেনেই করা হয়। বাচ্চা কখন কী কী করতে শিখছে, সেটাও সপ্তাহের হিসাবে বলা থাকে। এতে ডাক্তারদের বুঝতে সুবিধা হয় যে সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগোচ্ছে কিনা।

গর্ভাবস্থার সপ্তাহ আর মাসের হিসাব সহজে বোঝার জন্য আজকাল অনেক ক্যালেন্ডার আর মোবাইল অ্যাপ পাওয়া যায়। এই অ্যাপগুলোতে আপনার শেষ মাসিকের প্রথম দিনের তারিখ দিলেই, তারা আপনাআপনি বলে দেবে এখন কত সপ্তাহ চলছে, ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ কবে আর দরকারি সব তথ্যও দেখাবে। এটা হবু মায়েদের জন্য খুব কাজের জিনিস। তারা সহজেই বুঝতে পারেন তাদের গর্ভাবস্থা কোন পর্যায়ে আছে এবং কখন কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বা কী পরীক্ষা করাতে হবে। এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করলে সপ্তাহ আর মাসের হিসাব নিয়ে আর কোনো ঝামেলা থাকে না, সবকিছু পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।

মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ জানতে এই লেখাটি পড়ুন।

উপসংহার

গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা কত সপ্তাহ আর কত মাস, এই হিসাবটা মনে রাখা খুব দরকারি। এটা জানা থাকলে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিতে, বাচ্চা আর মায়ের শরীর কেমন আছে খেয়াল রাখতে এবং ডাক্তারের পরামর্শ বুঝতে সুবিধা হয়। কখন কোন পরীক্ষা করাতে হবে বা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, সেই সময়টাও সহজে মনে রাখা যায়।

এই যে সপ্তাহ আর মাসের একটা সহজ হিসাব দেওয়া হলো, এটা বাংলাদেশের আর ভারতের মায়েদের কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে। আমাদের দেশের মায়েদের জন্য যাতে বুঝতে সুবিধা হয় এবং তাদের রোজকার জীবনের সাথে মেলে, সেভাবেই এটা তৈরি করা হয়েছে।

তাই, গর্ভবতী থাকাকালীন এই সপ্তাহ আর মাসের হিসাবটা মাথায় রাখুন। এতে আপনার গর্ভকালীন সময়ে অনেক সুবিধা হবে এবং আপনি আরও ভালোভাবে নিজের ও আপনার অনাগত সন্তানের যত্ন নিতে পারবেন। ডাক্তারেরাও এই হিসাব ধরে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 109

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *