অস্টিওআর্থারাইটিস কেন হয়, কারণ, লক্ষণ ও এর চিকিৎসা

Table of Contents

অস্টিওআর্থারাইটিস মানে কি?

অস্টিওআর্থারাইটিস হল বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে সাধারণ ধরনের আর্থ্রাইটিস যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এই রোগটি তখন হয় যখন আমাদের হাড়ের মাঝখানে থাকা কার্টিলেজ ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়। এই কার্টিলেজ হাড়গুলোকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে। কার্টিলেজ নষ্ট হয়ে গেলে হাড়গুলো একে অপরের সাথে ঘষতে থাকে এবং এতে ব্যথা হয়। সাধারণত হাত, হাঁটু, নিতম্ব এবং মেরুদণ্ডের জয়েন্টগুলোতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

অস্টিওআর্থারাইটিস লক্ষণগুলি দূর করার জন্য নিজেকে সক্রিয় রাখা, একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগের বৃদ্ধি ধীর হতে পারে, ব্যথা এবং জয়েন্টের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে।

সাধারণত অস্টিওআর্থারাইটিসের লক্ষণগুলি প্রায়শই আস্তে আস্তে পরিলক্ষিত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ হয়।

অস্টিওআর্থারাইটিস মানে কি

গ্যাসের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয় ও কমানোর উপায় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

অস্টিওআর্থারাইটিস কেন হয়?

অস্টিওআর্থারাইটিস একটি সাধারণ অবস্থা যা সাধারণত বয়সের সাথে সাথে দেখা যায়। যখন আমরা বয়স্ক হই, তখন আমাদের অস্থিসন্ধিগুলির মধ্যকার কার্টিলেজ ক্ষয় হতে শুরু করে। এই কার্টিলেজ হাড়ের মাঝখানে কুশন হিসাবে কাজ করে এবং ঘর্ষণ কমায়। কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে গেলে, হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ বাড়ে এবং এতে ব্যথা, শক্ত হওয়া এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়।

অস্টিওআর্থারাইটিস শুধু বয়সের কারণে হয় তা নয়। অতিরিক্ত ওজন, পুরোনো আঘাত, বা একই কাজ বারবার করার ফলেও এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, কারো পরিবারে যদি কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে তারও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অস্টিওআর্থারাইটিসের প্রধান লক্ষণ হল ব্যথা।

আক্রান্ত অস্থিসন্ধিতে নড়াচড়া করলে বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়। শক্ত হওয়া, ফোলা এবং জয়েন্টের আকার বৃদ্ধি পাওয়াও এই রোগের সাধারণ লক্ষণ। দীর্ঘদিন এই রোগ থাকলে জয়েন্টের আকার এবং কার্যকারিতা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। অস্টিওআর্থারাইটিস সাধারণত হাঁটু, হিপ, মেরুদণ্ড এবং হাতের আঙুলে হয়। এই রোগটি দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা দেয় এবং জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয়।

অস্টিওআর্থারাইটিস এর লক্ষণ

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত কি কি খাওয়া উচিত নয় তা বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

অস্টিওআর্থারাইটিস এর লক্ষণ

অস্টিওআর্থারাইটিসের লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে এবং সময়ের সঙ্গে আরও প্রকট হয়। এই রোগটি মূলত জয়েন্টের কার্টিলেজ, যা হাড়ের সুরক্ষা করে, তা ধীরে ধীরে ক্ষয় করার ফলে সৃষ্টি হয়। ফলে হাড়গুলি একে অপরের সঙ্গে ঘষা খেয়ে অসহনীয় ব্যথা ও অস্বস্তি তৈরি করে। এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:

  1. ব্যথা: অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত চলাফেরার সময় বা শারীরিক কার্যকলাপের পর ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে এবং অবশেষে বিশ্রামেও অনুভূত হতে পারে। আক্রান্ত জয়েন্টে সামান্য কাজের পরও ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, যা দৈনন্দিন কাজকে প্রভাবিত করে।
  2. দৃঢ়তা: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘ সময় ধরে এক স্থানে বসে থাকার পর জয়েন্টে দৃঢ়তা অনুভব করা যায়। এই দৃঢ়তা সাধারণত কিছুক্ষণ চলাফেরা করার পর কমে যায়। তবে দীর্ঘক্ষণ নিষ্ক্রিয় থাকার পর এই সমস্যা আবার ফিরে আসতে পারে, বিশেষ করে হাঁটু, কোমর বা পিঠের জয়েন্টে।
  3. কোমলতা: আক্রান্ত জয়েন্ট বা তার চারপাশে চাপ প্রয়োগ করলে কোমলতা অনুভূত হতে পারে। এই কোমলতা ব্যথা বা অস্বস্তির রূপ নিতে পারে, যা সাধারণত জয়েন্টের ভিতরের অংশে হয়। বিশেষ করে হাঁটুর জয়েন্টে চাপ দিলে এই কোমলতা বেশি দেখা যায়।
  4. ঝাঁকুনি অনুভব: অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত জয়েন্টে চলাচলের সময় ঝাঁকুনি বা অস্বাভাবিক শব্দ যেমন “পপিং” বা “কর্কশ” শোনা যেতে পারে। এটি সাধারণত হাড় ও কার্টিলেজের মধ্যে ঘর্ষণের কারণে হয়, যা অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
  5. হাড় স্পার (হাড়ের বৃদ্ধি): অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত জয়েন্টের চারপাশে অতিরিক্ত হাড়ের বৃদ্ধি হতে পারে, যা স্পার নামে পরিচিত। এটি শক্ত পিণ্ড বা ফোলার মতো অনুভূত হয় এবং জয়েন্টের স্বাভাবিক গঠনকে বিকৃত করতে পারে। হাড় স্পারের কারণে জয়েন্টে ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়তে পারে।
  6. ফোলা: অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত জয়েন্টের চারপাশে নরম টিস্যুর প্রদাহের কারণে ফোলা দেখা দিতে পারে। এই ফোলার জন্য জয়েন্টের ভেতরে তাপ বা উত্তাপ অনুভূত হয় এবং মাঝে মাঝে লালচে ভাবও দেখা যায়।
  7. অস্টিওআর্থারাইটিস হাড়ের বিকৃতি: অনেক সময় কিছু ব্যক্তির জন্মগতভাবে বিকৃত জয়েন্ট বা ত্রুটিযুক্ত তরুণাস্থি থাকে, যা অস্টিওআর্থারাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ধরনের সমস্যা হলে রোগটি আরও দ্রুত বিকশিত হয় এবং ব্যথার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  8. কিছু বিপাকীয় রোগ: ডায়াবেটিস ও শরীরে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া (যেমন: হেমোক্রোমাটোসিস) অস্টিওআর্থারাইটিসের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। এই রোগগুলো শরীরের টিস্যুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা জয়েন্টের ক্ষয় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা অনুভব করেন, যা তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এই সমস্যা জয়েন্টে ব্যথা ও দৃঢ়তার ফলে শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণে বিষণ্ণতা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা রোগীর মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে।

অস্টিওআর্থারাইটিস এর ব্যায়াম

বুকের ব্যথা কেন হয় ও ব্যথা কমানোর উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

অস্টিওআর্থারাইটিস এর ব্যায়াম

অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সঠিক ব্যায়াম দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ করতে এবং ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে জয়েন্টের শক্তি, স্থিতিস্থাপকতা এবং চলাচল ক্ষমতা বাড়ে, যা অস্টিওআর্থারাইটিসজনিত সমস্যার জন্য উপকারী। নীচে অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জন্য কয়েকটি কার্যকরী ব্যায়াম বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. নমনীয়তার ব্যায়াম

নমনীয়তার ব্যায়াম অস্থিরতা ও শক্তি বাড়াতে সহায়ক এবং এটি জয়েন্টের গতিশীলতা উন্নত করে। নিয়মিত এই ধরনের ব্যায়াম করলে পেশি ও জয়েন্টে নমনীয়তা বাড়ে এবং চলাচলের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

  • পা প্রসারিত করা: মেঝেতে বসে এক পা সামনে প্রসারিত করে অন্য পা ভাঁজ করে রাখুন। এরপর সামনে প্রসারিত পায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে ধীরে ধীরে ঝুঁকে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ১০ সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
  • হাঁটু মোড়ানো: চেয়ারে বসে এক পা সামনে প্রসারিত করে এবং হাঁটুর দিকে বাঁকান। ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসুন। একে একে দুই পায়েই এই ব্যায়াম করুন।

২. শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম

শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম জয়েন্টকে সাপোর্ট করতে এবং প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে সহায়ক। এই ব্যায়ামগুলো পেশির ক্ষমতা বাড়ায়, যা অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত জয়েন্টের চাপ কমাতে সাহায্য করে।

  • পায়ের উত্তোলন (Leg Raise): মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে এক পা মাটি থেকে ৬-১২ ইঞ্চি উপরে তুলুন। কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখার পর আবার ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে আনুন। প্রতিদিন ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
  • হাঁটু ভাঁজ করে সোজা করা: চেয়ারে বসে এক পা সামনে প্রসারিত করে এবং হাঁটুর দিকে বাঁকান। প্রতিবার ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসুন। একে একে দুই পায়েই এই ব্যায়াম করুন।

৩. জয়েন্টের চাপ কমানোর ব্যায়াম (Aerobic Exercise)

জয়েন্টের চাপ কমানোর জন্য এই ধরনের হালকা ব্যায়ামগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। এটি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়তা করে, যা জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়া রোধ করে।

  • হাঁটা: হাঁটা অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট হালকা গতিতে হাঁটার অভ্যাস করুন। এটি হাঁটুর ও পায়ের জয়েন্টে চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।
  • সাইক্লিং: সাইক্লিং করতে পারলে হাঁটু ও কোমরের জয়েন্টকে সচল রাখতে সুবিধা হয়। স্থির বাইকে সাইক্লিং করা অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভালো, কারণ এটি জয়েন্টে মৃদু চাপ প্রয়োগ করে, যা ব্যথা ও অস্থিরতা কমাতে সহায়ক।
  • জল থেরাপি (Water Exercise): সুইমিং পুলে জলথেরাপি বা অ্যাকোয়াটিক ব্যায়াম অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। পানির ভাসমানতা জয়েন্টে চাপ কমায় এবং সহজে ব্যায়াম করতে সাহায্য করে। জলতাপ পরিবেশে সহজে ব্যায়াম করলে ব্যথা অনেক কম অনুভূত হয়।

৪. ভারসাম্য বৃদ্ধির ব্যায়াম (Balance Exercises)

অস্টিওআর্থারাইটিসের কারণে জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যায় এবং ভারসাম্য হারানোর সম্ভাবনা বাড়ে। তাই ভারসাম্য বৃদ্ধির ব্যায়াম জয়েন্টের স্থিতিশীলতা এবং শক্তি বাড়াতে সহায়ক।

  • এক পায়ে দাঁড়ানো: চেয়ার ধরে এক পায়ে দাঁড়ান এবং ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এটি পায়ের পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং জয়েন্টের ভারসাম্য উন্নত করে। প্রতিদিন ৫-১০ বার এই ব্যায়াম করতে পারেন।
  • হিল টু টো ওয়াক: একটি সোজা লাইনে হাঁটুন এবং প্রতিটি পদক্ষেপে হিল এবং পায়ের আঙ্গুল সংযোগ করার চেষ্টা করুন। এই ব্যায়ামটি ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং হাঁটুর জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।

৫. সঞ্চালন ব্যায়াম (Range of Motion Exercises)

এই ব্যায়ামগুলো জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং চলাফেরা সহজ করে। এর ফলে অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জয়েন্টের গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হন।

  • পায়ের তলায় বল ঘুরানো: চেয়ারে বসে এক পায়ের তলায় ছোট একটি বল রেখে ধীরে ধীরে বৃত্তাকার গতিতে ঘুরান। এটি পায়ের জয়েন্টে গতিশীলতা আনতে সহায়ক।
  • কোমর বাঁকানো (Hip Rotation): চেয়ারে বসে কোমর বাঁকিয়ে ডান এবং বাম দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করুন। প্রতিবার ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এটি কোমরের জয়েন্টে সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ব্যায়াম করার সময় সতর্কতা

অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত রোগীরা ব্যায়াম করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • অতিরিক্ত ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন এবং ব্যথা হলে বিশ্রাম নিন।
  • হালকা ও সহজ ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ান।
  • প্রতিটি ব্যায়াম করার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন।
  • ব্যায়াম করার পর হালকা গরম সেঁক নিতে পারেন, যা ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • সম্ভব হলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।

সঠিক ব্যায়াম অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ও সঠিকভাবে এই ব্যায়ামগুলো করলে জয়েন্টের নমনীয়তা, শক্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা ব্যথা ও অস্বস্তি কমিয়ে দেয়।

অস্টিওআর্থারাইটিস এর চিকিৎসা

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকায় কি কি রাখা যায় তা বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

অস্টিওআর্থারাইটিস এর চিকিৎসা

অস্টিওআর্থারাইটিসের চিকিৎসা মূলত ব্যথা ও অস্বস্তি কমানোর উপর ভিত্তি করে করা হয়, কারণ এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। তবে সঠিক চিকিৎসা, জীবনধারার পরিবর্তন এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে অস্টিওআর্থারাইটিসের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নীচে অস্টিওআর্থারাইটিসের বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. শারীরিক থেরাপি ও ব্যায়াম

শারীরিক থেরাপি: একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম শিখে নিয়ে নিয়মিত অভ্যাস করলে জয়েন্টের নমনীয়তা, শক্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। ফিজিওথেরাপি পেশিকে শক্তিশালী করতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক।

  • ব্যায়াম: অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জন্য হাঁটা, হালকা সাইক্লিং, ওয়াটার থেরাপি এবং হালকা স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ বেশ কার্যকরী। এই ব্যায়ামগুলো জয়েন্টের ওপর মৃদু চাপ দেয় এবং অতিরিক্ত ব্যথা ছাড়াই কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও জীবনধারার পরিবর্তন

অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে রাখলে হাঁটু, কোমর ও পিঠের জয়েন্টে চাপ কমে, যা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়ামের পরামর্শ দেওয়া হয়।

  • পুষ্টিকর খাদ্য: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রোটিন গ্রহণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ফল, সবজি, বাদাম এবং মাছের মতো খাদ্য শরীরের পুষ্টি বজায় রাখতে সহায়ক এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • জল বেশি পান করা: শরীরের হাইড্রেশন ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত, কারণ এটি জয়েন্টে তরল সঞ্চালন করতে সহায়ক।

৩. যন্ত্র ও সাপোর্ট ব্যবহার

অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের চলাফেরা সহজ করতে কিছু বিশেষ যন্ত্র বা সাপোর্ট ব্যবহার করা হয়, যা জয়েন্টের চাপ কমাতে সাহায্য করে।

  • ব্রেস এবং স্প্লিন্ট: হাঁটুর বা হাতের জয়েন্টের জন্য বিশেষ ব্রেস বা স্প্লিন্ট ব্যবহার করলে জয়েন্টের ওপর চাপ কমে এবং চলাচল সহজ হয়।
  • কেইন ও ওয়াকার: হাঁটার জন্য কেইন বা ওয়াকার ব্যবহার করলে জয়েন্টের ওপর চাপ কমে এবং ভারসাম্য বজায় থাকে।

৪. প্রাকৃতিক ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

অস্টিওআর্থারাইটিসের কিছু প্রাকৃতিক উপাদান এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধও প্রদাহ কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে এই ধরনের চিকিৎসা শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • গ্লুকোসামিন এবং কন্ড্রয়টিন: প্রাকৃতিক সম্পূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা কার্টিলেজের সুরক্ষা দিতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
  • আয়ুর্বেদিক ওষুধ: কিছু আয়ুর্বেদিক ঔষধ, যেমন হলুদ এবং আদা প্রদাহ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৫. তাপ এবং ঠাণ্ডা চিকিৎসা

তাপ এবং ঠাণ্ডা সেঁক অস্থায়ী ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এই পদ্ধতি সহজে বাড়িতেও করা যায়।

  • তাপ সেঁক: তাপ সেঁক জয়েন্টে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং পেশিকে শিথিল করে, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। গরম পানির ব্যাগ বা হট প্যাক ব্যবহার করে তাপ সেঁক নিতে পারেন।
  • ঠাণ্ডা সেঁক: বরফের সেঁক প্রদাহ কমাতে এবং জয়েন্টের ফোলা কমাতে কার্যকর।

৬. সার্জারি বা অস্ত্রোপচার

যখন সাধারণ চিকিৎসা বা থেরাপি কাজ করে না এবং রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চরমভাবে প্রভাবিত হয়, তখন অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। অস্ত্রোপচার রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের হতে পারে:

  • অ্যাথ্রোস্কোপিক সার্জারি: অ্যাথ্রোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে জয়েন্টের ভেতরে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু বা অতিরিক্ত কার্টিলেজ সরানো হয়।
  • হাঁটু প্রতিস্থাপন: হাঁটু প্রতিস্থাপন বা হিপ প্রতিস্থাপনের মতো বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টের বদলে কৃত্রিম জয়েন্ট স্থাপন করা হয়।

৭. মানসিক সহায়তা এবং পরামর্শ

দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার কারণে অনেক রোগী মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা অনুভব করেন। তাই মানসিক সাপোর্ট গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কাউন্সেলিং বা সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দেওয়া উপকারী হতে পারে।

অস্টিওআর্থারাইটিসের চিকিৎসা পরিকল্পনা ও জীবনধারা নিয়ন্ত্রণে রাখলে ব্যথা কমানো এবং জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা এবং নিয়মিত থেরাপি ও ব্যায়াম করলে অস্টিওআর্থারাইটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহজ হয়।

অস্টিওআর্থারাইটিসের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয় এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

অস্টিওআর্থারাইটিসের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই কার্যকরী। এটি ব্যথা কমানো, ফোলা রোধ করা এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক। অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জন্য বেশ কিছু আধুনিক ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি রয়েছে, যা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এবং ফলপ্রসূ। নিচে অস্টিওআর্থারাইটিসের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. হাঁটু ফোলা কমানোর জন্য পালসড ক্রায়োথেরাপি

পালসড ক্রায়োথেরাপি একটি প্রক্রিয়া, যা ঠান্ডা এবং চাপে কাজ করে জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা হ্রাস করতে সহায়ক। এই পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপিস্ট হিমায়িত বা ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় বিশেষভাবে ডিজাইন করা একটি যন্ত্রের মাধ্যমে জয়েন্টে পালসড ক্রায়ো প্রদান করে। এটি জয়েন্টের ফোলাভাব এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।

  • কীভাবে কাজ করে: পালসড ক্রায়োথেরাপিতে শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস করা হয়, যা ফোলা টিস্যুকে সংকুচিত করে এবং রক্ত প্রবাহ কমায়। এর ফলে ব্যথা এবং প্রদাহ কমে এবং জয়েন্ট কিছুটা শিথিল হয়।
  • উপকারিতা: এটি জয়েন্টের ফোলা দ্রুত কমায় এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক, যা হাঁটুর মতো জয়েন্টে অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্তদের জন্য বেশ উপকারী।

২. ইলেক্ট্রো আকুপাংচার থেরাপি

ইলেক্ট্রো আকুপাংচার থেরাপি একটি প্রাচীন পদ্ধতির আধুনিক রূপ। আকুপাংচারের মতোই এটি নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সূঁচ প্রবেশ করিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রয়োগ করে কাজ করে। এতে ব্যথা এবং অস্থিরতা কমানো যায়।

  • কীভাবে কাজ করে: নির্দিষ্ট কিছু একুপ্রেশার পয়েন্টে সূঁচ স্থাপন করে ইলেক্ট্রোড সংযোগ করা হয়, যা ব্যথানাশক হরমোন নিঃসরণ করতে সহায়ক এবং শরীরের মধ্যে নির্দিষ্ট স্নায়ুগুলোতে সাড়া প্রদান করে। ফলে রোগীর ব্যথা কমে এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বাড়ে।
  • উপকারিতা: ইলেক্ট্রো আকুপাংচার থেরাপি জয়েন্টের ব্যথা ও অস্থিরতা দ্রুত কমায় এবং শরীরের রক্ত প্রবাহ উন্নত করে, যা পেশি এবং জয়েন্টের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

৩. পি ই এম এস থেরাপি (PEMF Therapy)

পি ই এম এস থেরাপি (Pulsed Electromagnetic Field Therapy) একটি চৌম্বক শক্তি ব্যবহার করে অস্টিওআর্থারাইটিসের চিকিৎসার একটি আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করা হয়, যা জয়েন্টের অভ্যন্তরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।

  • কীভাবে কাজ করে: পি ই এম এস থেরাপির মাধ্যমে শরীরের কোষগুলোতে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক পালস পাঠানো হয়, যা কোষের পুনর্জন্ম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা কমাতে সহায়ক।
  • উপকারিতা: এই পদ্ধতি ব্যথা ও ফোলা দ্রুত কমায় এবং শরীরের জয়েন্ট এবং টিস্যুর পুনর্জন্ম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে, যা অস্টিওআর্থারাইটিসের দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসায় সহায়ক।

৪. ওজোন থেরাপি

ওজোন থেরাপি একটি বিশেষ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শরীরে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত ওজোন গ্যাস ব্যবহার করে। এটি প্রদাহ কমানো এবং টিস্যু পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এটি একটি কার্যকরী থেরাপি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

  • কীভাবে কাজ করে: ওজোন থেরাপিতে শরীরের আক্রান্ত অংশে ওজোন গ্যাস প্রয়োগ করা হয়। এটি ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোর পুনর্জন্ম ঘটায় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
  • উপকারিতা: ওজোন থেরাপি প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা হ্রাস করে এবং টিস্যুর পুনর্জন্মে সহায়ক। এটি অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত রোগীদের জয়েন্টের ব্যথা ও অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।

৫. আলট্রা সাউন্ড থেরাপি

আলট্রা সাউন্ড থেরাপি তাপ এবং কম্পন ব্যবহার করে প্রদাহ ও ব্যথা কমানোর একটি নিরাপদ এবং প্রভাবশালী পদ্ধতি। এটি অস্থির জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা হ্রাস করতে বেশ কার্যকর।

  • কীভাবে কাজ করে: এই পদ্ধতিতে আলট্রা সাউন্ড তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়, যা টিস্যুর গভীরে তাপ সৃষ্টি করে। ফলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং ফোলা ও প্রদাহ কমে।
  • উপকারিতা: আলট্রা সাউন্ড থেরাপি ব্যথা, প্রদাহ এবং ফোলাভাব কমায়। এটি জয়েন্টে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে, যা পেশি ও টিস্যুর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

ফিজিওথেরাপি দিতে কত টাকা লাগে ও এর সঠিক লিস্ট টি আমাদের এই পোস্টে পেয়ে যাবেন।

অস্ত্রোপচার এবং অন্যান্য পদ্ধতি

অস্টিওআর্থারাইটিস কেন হয় , যদি কনজারভেটিভ চিকিৎসা সাহায্য না করে, তাহলে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হতে পারে যেমন: কর্টিসোন ইনজেকশন।
জয়েন্টে কর্টিকোস্টেরয়েডের ইনজেকশন কয়েক সপ্তাহের জন্য ব্যথা উপশম করতে পারে।
প্রতি বছর যে পরিমাণ কর্টিসোন ইনজেকশন পেতে পারেন তার সংখ্যা সাধারণত তিন বা চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ, কারণ ওষুধটি সময়ের সাথে সাথে জয়েন্টের ক্ষতি সাধন করতে পারে।

লুব্রিকেন্ট ইনজেকশন: হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের ইনজেকশনগুলি হাঁটুতে কিছু কুশন প্রদান করে ব্যথা উপশম করতে পারে, যদিও কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে এই ইনজেকশনগুলি প্লাসিবোর চেয়ে বেশি আরাম দেয় না।

হাড় পুনরায় সাজানো: যদি অস্টিওআর্থারাইটিস আপনার হাঁটুর একপাশে অন্যটির চেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে তবে একটি অস্টিওটমি অপারেশন এর প্রয়োজন হতে পারে। হাঁটুর অস্টিওটমিতে, একজন সার্জন হাঁটুর উপরে বা নীচের হাড় কেটে ফেলেন এবং তারপর হাড়ের একটি কীলক সরিয়ে দেন বা যোগ করেন। এটি আপনার শরীরের ওজন আপনার হাঁটুর জীর্ণ অংশ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

জয়েন্ট প্রতিস্থাপন: জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারিতে, সার্জন ক্ষতিগ্রস্থ জয়েন্ট সারফেস অপসারণ করেন এবং প্লাস্টিক/ধাতব অংশ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। অস্ত্রোপচারের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ এবং রক্ত জমাট বাঁধা। কৃত্রিম জয়েন্টগুলি পড়ে যেতে পারে বা আলগা হয়ে যেতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।

এই পদ্ধতিগুলো রোগীর ব্যথা এবং ফোলাভাব নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জন্য এই ধরনের আধুনিক থেরাপি পদ্ধতিগুলো নিয়মিত ব্যবহারে রোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।


পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

অস্টিওআর্থারাইটিস হলে অবশ্যই বাঁচা যায়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এর লক্ষণগুলোকে অনেকটাই কমিয়ে আনা যায় এবং ভালো মানের জীবন যাপন করা সম্ভব। অস্টিওআর্থারাইটিসের জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা আছে, যেমন ব্যথানাশক ওষুধ, শারীরিক চিকিৎসা, ওজন কমানো, এবং প্রয়োজনে সার্জারি। এই চিকিৎসাগুলো ব্যথাকে কমাতে, জয়েন্টের নড়াচড়া বাড়াতে এবং দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

অস্টিওআর্থারাইটিস রোগে আক্রান্ত রোগীর হাড়ে কয়েক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই রোগে জয়েন্টের তরুণাস্থি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার ফলে হাড়ের উপর চাপ বেড়ে যায় এবং হাড়ের গঠনেও পরিবর্তন আসতে পারে। হাড়ের প্রান্তে অতিরিক্ত হাড়ের গঠন হতে পারে যাকে বলে হাড়ের স্পার। এছাড়া, হাড়ের পৃষ্ঠের উপর ক্ষত বা গর্ত দেখা যেতে পারে। এই সমস্ত পরিবর্তনের ফলে জয়েন্টের নড়াচড়া কমে যায় এবং ব্যথা হয়। এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

অস্টিওআর্থারাইটিস হলে হাড়ে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়, যার মধ্যে হাড় বাড়াও একটি। এই রোগে জয়েন্টের তরুণাস্থি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার ফলে হাড়ের উপর চাপ বেড়ে যায় এবং শরীর নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টায় জয়েন্টের প্রান্তে অতিরিক্ত হাড় গঠন করতে পারে। এই অতিরিক্ত হাড়ের গঠনকে হাড়ের স্পার বলে। হাড়ের স্পারের ফলে জয়েন্টের আকার পরিবর্তিত হতে পারে এবং নড়াচড়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তবে, হাড় বাড়ার পাশাপাশি অস্টিওআর্থারাইটিসে হাড়ের পৃষ্ঠের উপর ক্ষতও দেখা দিতে পারে।

অস্টিওআর্থারাইটিস এবং হিমোগ্লোবিনের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। অস্টিওআর্থারাইটিস হল একটি জয়েন্টের রোগ, যেখানে জয়েন্টের তরুণাস্থি ক্ষয় হয়ে যায় এবং ব্যথা, ফোলাভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। অন্যদিকে, হিমোগ্লোবিন হল রক্তের একটি উপাদান যা শরীরে অক্সিজেন বহন করে।

অস্টিওআর্থারাইটিসের কারণে সরাসরি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে, যদি অস্টিওআর্থারাইটিসের কারণে কেউ দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা এবং অস্বস্তিতে থাকে, তাহলে তারা কম খেতে পারে বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারে, যার ফলে পরোক্ষভাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমতে পারে।

অস্টিওআর্থারাইটিস সাধারণত একটি প্রগতিশীল রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ, একবার শুরু হলে এই রোগ ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। জয়েন্টের তরুণাস্থি যে ক্ষয় হতে থাকে, সেই প্রক্রিয়াটি সাধারণত পুরোপুরি থামানো যায় না। তবে, চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এর অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব। ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা এবং কখনো কখনো জয়েন্ট প্রতিস্থাপন সার্জারি করার মতো চিকিৎসা পদ্ধতি অস্টিওআর্থারাইটিসের লক্ষণগুলোকে অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।

অস্টিওআর্থারাইটিস হলে হাড় সরাসরি নষ্ট হয় না, তবে এর আশেপাশের টিস্যুগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। এই রোগে জয়েন্টের তরুণাস্থি, যা হাড়ের মাঝখানে ঘর্ষণ কমাতে সাহায্য করে, ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়। ফলে হাড়গুলি একে অপরের বিরুদ্ধে ঘষতে থাকে। শরীর এই ঘর্ষণ কমাতে চেষ্টা করে এবং হাড়ের প্রান্তে অতিরিক্ত হাড়ের গঠন করে, যাকে হাড়ের স্পার বলে। এই স্পার এবং তরুণাস্থির ক্ষয়ের কারণে জয়েন্টের আকৃতি এবং কাজ করার ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়, যা ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তাই, অস্টিওআর্থারাইটিসে হাড় সরাসরি নষ্ট না হলেও, জয়েন্টের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয় যা ব্যথার কারণ হতে পারে।

অস্টিওআর্থারাইটিস এবং স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। অস্টিওআর্থারাইটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেখানে জয়েন্টের তরুণাস্থি ক্ষয় হয়ে যায় এবং ব্যথা হয়। অন্যদিকে, স্ট্রেস ফ্র্যাকচার হল হাড়ের একটি ছোট ফাটল যা অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে হয়।

অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, হাড়ে ফাটল হওয়ার পরিবর্তে জয়েন্টের তরুণাস্থি ক্ষয় হওয়া এবং হাড়ের প্রান্তে অতিরিক্ত হাড়ের গঠন হওয়া সাধারণ। তবে, যদি অস্টিওআর্থারাইটিসের কারণে কোনো জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং ব্যক্তি সেই জয়েন্টকে অতিরিক্ত ব্যবহার করে, তাহলে সেই জয়েন্টের আশেপাশের হাড়ে স্ট্রেস ফ্র্যাকচার হওয়ার সম্ভাবনা খুব সামান্য বেড়ে যেতে পারে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, অস্টিওআর্থারাইটিস সরাসরি স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের কারণ না হলেও, অস্টিওআর্থারাইটিসের কারণে ব্যথা হলে এবং ব্যক্তি সেই জয়েন্টকে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে স্ট্রেস ফ্র্যাকচার হওয়ার সম্ভাবনা খুব সামান্য বেড়ে যেতে পারে।

আর্থ্রাইটিস এবং ফ্র্যাকচার দুটি আলাদা সমস্যা, যদিও তাদের কিছু লক্ষণ একই রকম মনে হতে পারে। ফ্র্যাকচার হল হাড় ভেঙে যাওয়া, যার ফলে সাধারণত তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং জয়েন্টে ওজন বহন করতে অসুবিধা হয়। অন্যদিকে, আর্থ্রাইটিস হল জয়েন্টের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেখানে তরুণাস্থি ক্ষয় হয়ে যায় এবং ব্যথা, ফোলাভাব এবং জয়েন্টের নড়াচড়া কমে যায়।

যদিও উভয় ক্ষেত্রেই ব্যথা এবং ফোলাভাব হতে পারে, আর্থ্রাইটিসের ব্যথা সাধারণত ধীরে ধীরে বাড়ে এবং জয়েন্ট ব্যবহারের সাথে বাড়তে পারে। অন্যদিকে, ফ্র্যাকচারের ব্যথা সাধারণত হঠাৎ এবং তীব্র হয়। আর্থ্রাইটিসে জয়েন্টের আকার পরিবর্তিত হতে পারে এবং সকালে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। ফ্র্যাকচারে এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায় না।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, আর্থ্রাইটিস এবং ফ্র্যাকচারের লক্ষণ কিছুটা মিল থাকলেও, তাদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। নির্দিষ্টভাবে বলতে, কোনটি হচ্ছে তা নির্ণয় করার জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Author - Dr Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Dr. Saiful Islam
Dr. Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Articles: 16

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *