কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে

Table of Contents

ভূমিকা :

কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে এ বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই, তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার এর জন্য সব চেয়ে বেশি দ্বায়ী। চিনিজাতীয় খাবার, সোডা, কেক, পেস্ট্রি এ সব খাবার বেশি পরিমাণে খেলে বাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর্থারাইটিসের নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই তবে সচেতনতা আপনাকে সুস্থ্য করে তুলতে পারে।

বাত রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি এখন পর্যন্ত। সাময়িক কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেমন-

  • পরিবেশগত কারণ।
  • রক্তে ইউরিক এসিডিটির মাত্রা বেড়ে গেলে। থায়াজাইড, পাইরাজিনামাইড, এসপিরিন, ইত্যাদি ঔষধ-এ ইউরিক এসিডের মাত্রাতিরিক্ত হলে গাউট হতে পারে। বংশগত ভাবে বা জেনেটিক কারণও হতে পরে তবে তা ১০ থেকে ১৫ ভাগ।
  • হরমোনের প্রভাবে হতে পারে।
  • ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব হলেও হতে পারে।
  • উদ্বেগ, চিন্তা ইত্যাদির কারণেও হতে পারে।

শীত এবং বর্ষাতে কেন বাতের ব্যথা বাড়ে?

শীতে তো বটেই, বর্ষা মৌসুমে অনেক সময়ে বাড়ে বাতের ব্যথা। এ জন্য কিছু খাবার দায়ী। বয়স বাড়লে অস্থিসন্ধিস্থল দুর্বল হতে থাকে এটা কম-বেশি সকলেই জানে, তখন কিছু বিশেষ খাবার সাভাবিক ভাবেই বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। এগুলি এড়িয়ে গেলেই ব্যথা কমতে পারে। তাছাড়া শীতকালে বাত ব্যথা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায় এই সময়ে মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলো কম হয়। শীতের প্রকোপের কারণে মানুষ বেশিক্ষণ কর্মহীন থাকে। বসে বা শুয়ে সময় কাটায়। শীতকালে বায়ুর চাপ কমে আশে এবং শরীরের পেশিকলাগুলো প্রসারিত হয় এবং স্নায়ুর ওপর প্রচুর পরিমানে চাপের সৃষ্টি করে তাই বাত ব্যথা বেড়ে যায়।

বাতের ব্যথা কমাতে খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করুন :
আপনিও কি বাতের ব্যথায় কখনো খুগেছেন বা ভুগছেন? তাহলে আজই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন কিছু খাবার যা আপনার বাত ব্যথা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোন খাবার খাওয়া কমালে বা বাদ দিলে বাতের ব্যথা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে :

যে সকল খাবার আপনাকে বর্জন করতে হবে:

গরুর গোস্ত :

গরুর গোস্ত থাকে পিউরিন নাইট্রাইট, এ খাবার এটিইনফ্লামেশন আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া এতে রয়েছে টকসিন গ্লাইকেশন ব্যথার পরিমাণ বাড়াতে এটি সাহায্য করে। যখন শরীরে প্রদাহ হয় সে সময় সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন লিভারে তৈরি হয়। গরুর গোস্ত এই সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের লেভেল অনেক গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং সে কারণে বাতের ব্যথা বাড়ে।

গরুর গোস্ত

ডিমের কুসুম :

ডিম খুবই পুষ্টিকর খাদ্য। কিন্তু এর কুসুমে রয়েছে অ্যারাকিডনিক অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। যাঁরা অস্থিসন্ধির ব্যথায় ভুগছেন, তাঁরা ডিমের কুসুম খাওয়া থেকে দূরে থাকুন তবে সাদা অংশ খেতে পারেন।

ডিমের কুসুম
কর্ন অয়েল বা ভুট্টার তেল :

এ তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। বেশি ওমেগা-৬ অ্যাসিড শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়। তবে খাদ্যতালিকা থেকে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বাদ না দিয়ে কম খাওয়া উচিত।

কর্ন অয়েল বা ভুট্টার তেল

দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য :

যাঁদের বাতের ব্যথা বিশেষ করে কোমরে ব্যথা রয়েছে তারা দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার পর প্রদাহ বেড়ে যায়। এ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এই প্রোটিন অস্থিসন্ধির চার পাশে যে টিস্যু আছে সেগুলোতে অস্বস্তি তৈরি করে। অ্যালার্জিতে আছে যাদের তারা দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে প্রদাহ বেড়ে যায়।

দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য

চিনি যুক্ত খাবার :

অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথার কারণ সাইটোকাইনস। চিনি সাইটোকাইনের মাত্রা অনেকগুনে বাড়িয়ে দেয় তাই ব্যথা বেড়ে যায়। প্রতিদিন চিনিজাতীয় খাদ্য, যেমন কেক, সোডা, পেস্ট্রি পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা বেড়ে যায়।

ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড :

সয়া, চিনাবাদাম, কর্ন তেল, সানফ্লাওয়ার তেল, মেয়নেজ, সালাদ ড্রেসিং অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া বর্জন করতে হবে।

রিফাইন্ড কার্বস :

সাদা আটার রুটি, পাস্তা বর্জন করুন।

সবজি :

আলু, টমেটো, বেগুন বর্জন করুন।

সবজি

এ ছাড়াও কাঁচা লবণ, সম্পৃক্ত ফ্যাট, পূর্ণ ননিযুক্ত পণ্য, ট্রান্স ফ্যাট, প্রসেসড ফুড, মনোসোডিয়া, অ্যালকোহল জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।

অ্যালকোহল

বাত ব্যথার চিকিৎসা :

বাতের ব্যথার রোগীদের আলাদা চিকিৎসা নেই। তবে ব্যথা বাড়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করতে হবে। যেহেতু বাতের ব্যথার ঔষধ দীর্ঘদিন খেতে হয়, তাই মনে রাখতে হবে ব্যথানাশক ঔষধ সেবনের কারণে কিডনি, হার্ট, লিভার, ফুসফুস এই অর্গানগুলোর ক্ষতি না হয়। তবে বাত ব্যথার জন্য সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক চিকিৎসা সেবা ফিজিওথেরাপি রয়েছে যা বাত ব্যথা থেকে রুগীকে সম্পূর্ণ ভালো করতে সক্ষম। তাই দীর্ঘ দিন ঔষধ সেবন না করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন।

দৈনিক কাজকর্ম ও ব্যায়াম :

শুধু বাতের রোগীর জন্য এমনটা নয় নয়, বরং সকলের উচিত শীতকালে স্বাভাবিক কাজকর্মের চেয়ে একটু বেশি করা। লেপ-কম্বল-কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর সময় ব্যতীত বিছানায় শুয়ে না থাকা বা বেশি সময় এক স্থানে বসে না থাকা উচিত। হালকা হাঁটাহাঁটি করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। তবে ব্যথা বেড়ে গেলে ব্যায়াম বন্ধ রাখুন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

যে সকল খাবার খেলে ও কাজ করলে আপনি সুস্থ্য থাকবেন :

শীতের পোশাক :

শীতের সময় পর্যাপ্ত পোশাকে নিজেকে আবৃত রাখুন, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সী লোকদের শীতের সময় উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। শীতের পোশাক যেন পুরো শরীর গরম থাকে অথবা রুম হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।

গরম পানি :

শীতের সময় হালকা গরম পানিতে অজু বা গোসল করুন। এ সময় কুসুম গরম পানি পান করুন। আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথার জন্য গরম পানির সেঁক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যথা যুক্ত জায়গায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম সেঁক দিলেও আরাম মেলে।

ভিটামিন ‘ডি’ :

শীতের সময় সূর্যালোক কম থাকায় ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি দেখা দেয়। তাই ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত পরিমাণমত। ভিটামিন ‘ডি’ ডিফিসিয়েন্সি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ‘ডি’ ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। সব থেকে উত্তম সকালের রোদ ২০-৩০ মিনিটের মতো পোহাতে পারলে। কারণ ভিটামিন ‘ডি’ এর ৮০ শতাংশ উৎস রয়েছে সূর্যের তাপে।

আরো পড়ুন : বাতের ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

আরো পড়ুন : বাত ব্যাথার ঔষধের নাম | আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড :

তৈলাক্ত বা সামুদ্রিক টুনা, হেরিং, ফ্ল্যাক্সসিড, ক্যানোলা তেল, স্যামন, ম্যাকরেল, ওয়ালনাট, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, ওমেগা-৩ ফর্টিফাইড ফুড (ডিমের সাদা অংশ, মার্জারিন) খেতে পারেন।

ফল :

বেরিস (ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি) সাইট্রাস ফ্রুটস (আনারস, কমলা, মাল্টা), আঙুর, অ্যাভোকাডো, বেদানা, জলপাই, তরমুজ খেতে পারেন।

সবজি :

বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, গাঢ় সবুজ শাক, লেটুস, বেসিল লিফ, ব্রকলি, মিষ্টি আলু, গাজর, লাল মরিচ খেতে পারেন।

সবজি

রসুন সেবন ও ব্যবহার

আগেকার দিনে বাত ব্যথা থেকে বাঁচতে রসুনের তেল হালকা গরম করে মালিশ করার অনেক চল ছিল। সেই ঘরোয়া টোটকাকেই সমর্থন করেন বর্তমানের আধুনিক চিকিৎসা। বাত ব্যথা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে রসুন তেলের মালিশ করতেই পারেন। পাশাপাশি রসুন সেবন করতে পারেন। শুধু বাত ব্যথাই নয় শরীরের আরো অনেক রোগ এই রসুনের সেবনে সেরে যায়।

রসুন সেবন

আদা সেবন ও ব্যবহার

আদার ভেষজ গুনাগুনও অসাধারণ। সর্দি, কাশি তো বটেই, চা, স্যুপ কিংবা সরবতেও আদা মিশিয়ে সেবন করলে বাত ব্যথা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়। রান্না করা বা কাঁচাই হোক তাতে কি আদা সবসময়ই উপকারি।

আদা সেবন

দুগ্ধ জাতীয় পণ্য :

লো ফ্যাট দুধ, দই, পনির খেতে পারেন।

বিনস :

পিন্টো বিনস, রেড বিনস, কিডনি বিনস খেতে পারেন।

আঙুর ফল :

অত্যন্ত পুষ্টিগুনে ভরা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ফল এটি খেতেও সুস্বাদু। শরীরে ইনফ্লেমেটারি কমিয়ে বাতের ব্যথা কমাতে প্রচুরি পরিমাণে সাহায্য করে।

আঙুর ফল

চেরি ফল (টক)

চেরি ফলের রস খেতে পারেন। তবে মিষ্টি ফলের রস নয়, টক চেরি ফলের রস নিয়মিত খেলেও বাতের ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।

চেরি ফল

হলুদের ব্যবহার :

প্রাচীনকাল থেকে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হলুদ। হলুদে রয়েছে কুরকুমিন নামের উপাদান, যা অ্যান্টিবায়োটিকের হিসেবে কাজ করে। অস্থিসন্ধির ব্যথা, পেশির ব্যথা বা বাত ব্যথার উপশম করতে পারে হলুদ।

এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পূর্ণশস্য, গ্রিন টি, ধনে, বাদাম, পুদিনাপাতা খেতে পারেন।

আরো পড়ুন : কি খেলে বাতের ব্যথা কমে , লক্ষণ ও তার প্রতিরোধের উপায়

আরো পড়ুন : অস্টিওআর্থারাইটিস কেন হয় এবং অস্টিওআর্থারাইটিস কি

কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিত। যেমন—

  • হাতের ওপর ভর দিয়ে বিছানায় শোয়া এবং হাতের ওপর ভর দিয়ে ওঠার অভ্যাস করা।
  • নিচু আসবাবপত্র যেমন—পিঁড়ি, মোড়া বা ফ্লোরে অনেক্ষণ বসে না থেকে চেয়ারে বা উচু টুলে বসার চেষ্টা করা। অবশ্যই মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে।
  • হাই হিল (উচু জুতা) বা শক্ত জুতা না ব্যবহার করে নরম জুতা ব্যবহারের অভ্যাস করুন।
  • সম্ভব হলে টয়লেটে উঁচু কমোড ব্যবহার করুন। নিচু টয়লেটের ক্ষেত্রে ব্যথা বাড়তে পারে।
  • নরম ফোম বা ম্যাট্রেস পরিহার করে তোষক বা জাজিম ব্যবহার করুন।
  • ব্যথা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করুন বা ফিজিওথেরাপি নিন। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় বাত ব্যথা ভালো হয়।

সাধারণ জিজ্ঞাসা :

বাতের ব্যথায় কী খাবেন?

১। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সম্পন্ন খাবার যেমন মাছের তেল, চিয়া বীজ, সামুদ্রিক মাছ, শণ বীজ, আখরোট। ২। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য ৩। প্রচুর ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাদ্য ৪। ফ্ল্যাভোনয়েড যুক্ত খাদ্য

জয়েন্টে প্রদাহের কারণ কি?

জয়েন্টগুলির চারো দিকের টিস্যুতে তরল বৃদ্ধি পেলে জয়েন্টগুলি ফুলে যায় এবং বিভিন্ন ধরণের আর্থ্রাইটিস, সংক্রমণ বা আঘাতের সাথে জয়েন্ট ফুলে যায়।

বাতের উপসর্গ কি?

১. বাতের প্রথম লক্ষন হলো ব্যথা। ২. শরীরের বিভিন্ন স্থানে লালচে হয়ে যাবে। ৩. শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যাবে। ৪. মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাবে। ৫. জয়েন্টের চারপাশে অস্বাভাবিকতা দেখা দিবে ৬. জয়েন্ট উষ্ণ উনুভাব হবে।

সম্পাদনায়
ডাঃ সাইফুল ইসলাম ,পিটি
বিপিটি ( ঢাবি – সিআরপি ), এমপিটি (অর্থো)
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
বাসা # ৪২, লেক ড্রাইভ রোড, সেক্টর # ৭,
উত্তরা, ঢাকা -১২৩০

 

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 

এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ Visionphysiotherapy.com

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 82