আপনি যদি মাথা ঘোরার মতো কোনো সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে আপনি একা নন। এই লক্ষণ দুটি একসঙ্গে দেখা দিলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। এটি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা, যার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। মাথা ঘোরা হল এমন একটি অনুভূতি যখন মনে হয়, আপনি বা আপনার চারপাশের জিনিসপত্র ঘুরছে। এই অনুভূতিটি কখনও কখনও অনেক অস্বস্তিকর হতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা দেয়। বমি বমি ভাবের সাথে যুক্ত হলে, এই সমস্যাটি আরো বেশি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। আমরা আমাদের আগের পোস্টে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যকার পার্থক্য নিয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করেছি। আজ আমরা এই পোস্টে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব কিসের লক্ষণ তা নিয়ে আলোচনা করবো।
আমাদের অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে উন্নত ফিজিওথেরাপি পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।
মাথা ঘোরা বা ভার্টিগো কি?
ভার্টিগো হল এমন এক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি অনুভব করে যে সে নিজে বা তার চারপাশের সবকিছু ঘুরছে। এই অনুভূতির সাথে সাথে বমি বমি ভাবও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, ভার্টিগোর মূল কারণ হল অভ্যন্তরীণ কানের সমস্যা। আমাদের কান শুধু শোনার কাজই করে না, এটি আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। যখন কানের এই ভারসাম্য বজায় রাখার অংশে কোনো সমস্যা হয়, তখন ভার্টিগোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভার্টিগো হল এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি অনুভব করেন যে তারা বা তাদের চারপাশের পরিবেশ ঘুরছে। এটি একটি খুবই অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং ভারসাম্য রক্ষাকে অনেক কঠিন করে তোলে। মাথা ঘোরা শুধুমাত্র একটি অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা নয়, অনেক ক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার একটি লক্ষণও হতে পারে। যদিও ভার্টিগো অনেক কারণে হতে পারে, তবে এটি প্রায়ই অন্তর্নিহিত কোনও অবস্থার ইঙ্গিত দেয়, যেমন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের টিউমার ইত্যাদি।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা ও হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
মাথা ঘোরা কিসের লক্ষণ?
মাথা ঘোরার অনুভূতির মূল কারণ সাধারণত শরীরের দুটি প্রধান অংশের সমস্যার সাথে জড়িত। প্রথমত, মস্তিষ্কের সেই অংশ যা আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে, অর্থাৎ মস্তিষ্কের কাণ্ড বা লঘু মস্তিষ্ক। এই অংশটি আঘাত, স্ট্রোক, সংক্রমণ, টিউমার, ভিটামিনের ঘাটতি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, কানের ভেতরের ভেস্টিবুলার সিস্টেম যা ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কানের সংক্রমণ, মিনিয়ারস রোগ, কানের স্নায়ুর প্রদাহ ইত্যাদির কারণে এই সিস্টেমে সমস্যা হলেও মাথা ঘোরার অনুভূতি হতে পারে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, মস্তিষ্কের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী অংশ বা কানের ভেতরের ভারসাম্য রক্ষাকারী সিস্টেমের কোনো ধরনের সমস্যা হলেই মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ, লক্ষণ ও করণীয় কি তা এই পোস্ট থেকে পড়ে নিন।
মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব কিসের লক্ষণ?
একজন মানুষের জন্য মাথা ঘোরার অনেক লক্ষণ রয়েছে। অনেকের আবার মাথা ঘোরার সাথে সাথে বমি বমি ভাবও চলে আসে। আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
গতিজনিত অসুস্থতার কারণে
অনেকের কাছেই ভ্রমণ মানে নতুন জায়গা দেখা, নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু অনেকের কাছেই ভ্রমণ মানে হয় গাড়ি, বাস, জাহাজ বা বিমানে যাতায়াতের সময় মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব আর চোখে ঝাপসা দেখা। এই অস্বস্তিকর অবস্থাকেই বলা হয় গতিজনিত অসুস্থতা। যাকে ইংরেজিতে বলে ‘Motion sickness’। এই সমস্যা কেন হয়? এর পেছনে মূল কারণ হলো আমাদের ভারসাম্য রক্ষাকারী অঙ্গ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সংকেতের মধ্যে একটা বৈষম্য তৈরি হয়ে যাওয়া।
যখন আমরা গতিশীল কোনো যানবাহনে থাকি, তখন আমাদের ভারসাম্য রক্ষাকারী অঙ্গ অনুভব করে যে আমরা চলছি, কিন্তু আমাদের চোখ হয়তো কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকে, যার ফলে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এই বিভ্রানতিই গতিজনিত অসুস্থতার কারণ।
এই অসুস্থতা কারো কারো ক্ষেত্রে খুবই প্রকট হতে পারে আবার কারো ক্ষেত্রে তেমন নাও হতে পারে। যাত্রা করার আগে হালকা খাবার খাওয়া, যানবাহনের সামনের দিকে বসা, যতটা সম্ভব ঘুমিয়ে থাকা ইত্যাদি উপায়ে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে
খাদ্যে বিষক্রিয়া হলো দূষিত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দেখা দেওয়া। এই অসুস্থতার একটি সাধারণ লক্ষণ হলো বিষক্রিয়া এবং বমি বমি ভাব। এই বিষক্রিয়ার বিশেষ কিছু কারণেও হতে পারে। সালমোনেলা, ই. কোলি, স্ট্যাফিলোককাস অরিয়াস প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া খাবারকে দূষিত করে এবং খাওয়ার পরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
নোরোভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রভৃতি খাদ্যের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিছু পরজীবীও খাবারের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। খাবারে মিশে যাওয়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থও বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে উন্নত মানের ফিজিওথেরাপি সেবা নিতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।
গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে অনেক মহিলারই মাথা ঘোরে এবং বমি ভাবের সমস্যা হয়। একে সাধারণত “মর্নিং সিকনেস” বলা হয়, যদিও এই সমস্যাটি দিনের যে কোন সময় হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই পরিবর্তনই মাথা ঘোরা ও বমি ভাবের মূল কারণ।
গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা কখনো কখনো রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে এবং মাথা ঘোরা অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। অনেক গর্ভবতী মহিলার খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়, যার ফলে বিভিন্ন খাবারে বমি ভাব হতে পারে।
মাথায় আঘাত পেলে
মাথায় আঘাত লাগার পর অনেক সময় মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এটি একটি সাধারণ ঘটনা, বিশেষ করে যখন মাথায় আঘাতটি বেশি জোরে হয়। মাথায় আঘাত লাগার পাশাপাশি অন্যান্য কারণ যেমন মাথায় আঘাত লাগার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ক্ষতিই মাথা ঘোরা ও বমি ভাবের মূল কারণ।
মাথায় আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের ভেতরে বা বাইরে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা মস্তিষ্কের চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়। মাথায় আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে, যা মাথা ঘোরা ও বমি ভাবের কারণ হতে পারে।
মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিস হলে
মেনিনজাইটিস ও এনসেফালাইটিস হলো মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের আবরণীর সংক্রমণজনিত দুটি গুরুতর রোগ। এই দুই রোগই মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে এবং অতি দ্রুত জটিলতায় পরিণত হতে পারে। এই দুই রোগের মূল কারণ হলো বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস বা পরজীবী। এই জীবাণুগুলো মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের আবরণীতে সংক্রমণ ঘটিয়ে এই রোগগুলো সৃষ্টি করে।
মেনিনজাইটিস ও এনসেফালাইটিসের লক্ষণ প্রায় একই রকম হতে পারে। সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা যে লক্ষণগুলো বিশেষভাবে অনুভব করেন তা হলো, তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, ঘাড়ে জ্বালা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, বমি বমি ভাব বা বমি, চেতনা হারানো,মূর্ছা যাওয়া ইত্যাদি।
কানের সংক্রমণের কারণে
কানের সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা যা কানের ভেতরের অংশের সংক্রমণের ফলে হয়। এই সংক্রমণটি শুধু কানে ব্যথা এবং শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয় না, বরং এটি ভারসাম্যের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। কানের ভেতরের অংশটি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যখন এই অংশে সংক্রমণ হয়, তখন ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে, ব্যক্তি মাথা ঘোরা, অস্থিরতা এবং চলতে অসুবিধা অনুভব করতে পারেন।
কানের সংক্রমণের জন্য অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো কানে ব্যথা হওয়া, কানে শো শো শব্দ শোনা, কান থেকে পুঁজ বা তরল পদার্থ বের হওয়া, কানে চাপ অনুভূতি, জ্বর, কানে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি। কানের সংক্রমণের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ, এলার্জি, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়া, কানের মধ্যে জল জমে থাকা ইত্যাদি।
ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে
ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে হয়। এই রোগের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া নামক একটি অবস্থা দেখা দিতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ হলো মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া একটি গুরুতর অবস্থা যা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এই অবস্থায় রোগীরা হঠাৎ করে তীব্র ক্ষুধা অনুভব করতে পারে, শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা অনুভব করতে পারে, হাত-পা এবং কপালে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে, হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যেতে পারে এবং উদ্বেগ অনুভব করতে পারে। এছাড়াও, কাজে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে অসুবিধা হওয়া, কথা বলতে গেলে ভুল হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া এবং ঠোঁট বা জিহ্বা ঝাঁকিয়ে ওঠার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। যদি আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং এই ধরনের লক্ষণগুলি অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
কোমর ব্যথা সারানোর উপায় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন
থাইরয়েড সমস্যা হলে
থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থি যখন সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন থাইরয়েড সমস্যা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত বা অভাবের কারণে এই সমস্যা হতে পারে। থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এটি হরমোনের অতিরিক্ত বা অভাবের উপর নির্ভর করে।
সাধারণত, থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি এবং ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। এছাড়াও, ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া, শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাসিকের সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণও দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড সমস্যার কারণ অনেকগুলো হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আয়োডিনের অভাব, অটোইমিউন রোগ, গর্ভাবস্থা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
কিছু ওষুধের কারণে হতে পারে
অনেক ওষুধই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, কিন্তু অনেক ওষুধেরই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এমন অনেক ওষুধ আছে যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। এটি ওষুধের উপাদান এবং শরীরের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। পেইনকিলার, অ্যান্টিবায়োটিক, রক্তচাপের ওষুধ এবং মূত্রবর্ধকের মতো ওষুধগুলোতে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই কোনো ওষুধ সেবন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব দূর করার উপায়
মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব অনেকেরই মাঝে মাঝে হতে পারে। এই সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
ঠান্ডা পানীয় পান করুন
মাথা ঘোরার অনুভূতি হঠাৎ করেই আসতে পারে। এই সময় ঠান্ডা পানি বা কোমল পানীয় পান করা একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। ঠান্ডা পানীয় শরীরকে শীতল করে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে মাথা ঘোরার অনুভূতি কমে যেতে পারে। এছাড়াও, ঠান্ডা পানীয় শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং শক্তি যোগায়। তাই, মাথা ঘোরা অনুভব করলে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করুন, আপনি নিশ্চয়ই উপকার পাবেন।
বিভিন্ন মশলা ব্যবহার করতে পারেন
বমি বমি ভাব কমাতে ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে, তার মধ্যে মশলা ব্যবহার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। আদা, পুদিনা, এলাচ, লবঙ্গের মতো মশলাগুলো হজম শক্তি বাড়াতে এবং বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে আদা চা, পুদিনা চা পান করতে পারেন। অথবা কাঁচা আদা, এলাচ বা লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে পারেন। এই মশলাগুলো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেটের অস্বস্তি কমাতে সহায়তা করে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
মাথা ঘোরার সমস্যা হলে শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া খুবই জরুরি। শান্ত এবং প্রশান্ত পরিবেশে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিলে শরীর ও মন দুটোই শান্ত হয়ে যায়। এতে করে মাথা ঘোরার অনুভূতি কমতে পারে। বিশ্রাম শরীরের ক্লান্তিকে দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে আনে। তাই, যখনই মাথা ঘোরার অনুভূতি হয়, তখন একটু সময় করে শুয়ে থাকুন এবং চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। এটি আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো অনুভূতি দেবে।
হালকা ম্যাসাজ করুন
মাথা ঘোরার সমস্যা হলে হালকা ম্যাসাজ একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। মাথা, ঘাড় এবং কপালের অংশে হালকা হাতে ম্যাসাজ করলে মাথাব্যথা এবং মাথা ঘোরার অনুভূতি কমতে পারে। ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, পেশী শিথিল করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে, মাথা ঘোরার অনুভূতি দূর হয় এবং আপনি আরাম অনুভব করেন। তবে মনে রাখবেন, যদি মাথা ঘোরার সমস্যা ঘন ঘন হয় বা অন্য কোনো উপসর্গের সাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সায়াটিকা সারানোর উপায়, ঔষধ, লক্ষণ, কারণ ও বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন
বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা প্রতিরোধ করার জন্য কিছু অতিরিক্ত টিপস
মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাবের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে কিছু অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন, গাড়িতে যাতায়াতের সময় সামনের দিকে বসে ঠান্ডা বাতাস পান করলে গতিজনিত অসুস্থতা কমতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এবং খাদ্যের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে খাদ্য বিষক্রিয়ার ঝুঁকি কমানো যায়। গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পানি পান এবং নিয়মিত ছোট ছোট খাবার খেলে এই সমস্যা অনেক কমে যায়।
মাথায় আঘাত থেকে বাঁচতে হেলমেট পরা এবং বিপজ্জনক কাজ থেকে দূরে থাকা জরুরি। মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো রোগ প্রতিরোধে টিকা নেওয়া উচিত। কানের সংক্রমণ প্রতিরোধে কান পরিষ্কার রাখা এবং ঠান্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি। ডায়াবেটিস ও থাইরয়েডের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অবলম্বন করা জরুরি। কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এই সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব অনেকেরই মাঝে মাঝে হতে পারে। এই সমস্যাটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:
- গর্ভাবস্থাঃ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বমি বমি ভাব খুব সাধারণ।
- খাবার বিষক্রিয়াঃ দূষিত খাবার খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে।
- মাইগ্রেনঃ মাইগ্রেন আক্রমণের সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।
- ভ্রমণ অসুস্থতাঃ গাড়ি, বাস বা জাহাজে ভ্রমণের সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।
- অন্যান্য কারণঃ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মস্তিষ্কের টিউমার, মেনিনজাইটিস, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে।
টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির নানা উপায় সম্পর্কে আমাদের এই পোস্ট থেকে বিস্তারিত জেনে নিন
বমি বমি ভাব হলে কি ওষুধ খেতে হবে?
বমি বমি ভাব হলে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা তা নির্ভর করে এর তীব্রতা এবং কারণের উপর। হালকা বমি বমি ভাবের জন্য ঘরোয়া উপায় যেমন আদা চা, পুদিনা চা ইত্যাদি চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু যদি বমি বমি ভাব তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে
গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব খুব সাধারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি নিজে থেকেই চলে যায়। কিন্তু যদি বমি বমি ভাব খুব তীব্র হয় এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এসব ওষুধগুলো সাধারণত নিরাপদ, কিন্তু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন মাথা ঘোরা, ঘুম ঘুম ভাব, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি। যদি আপনি এই ওষুধগুলি খাচ্ছেন এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে উন্নত মানের ফিজিওথেরাপি সেবা নিতে আজই এপয়েন্টমেন্ট নিন অথবা +8801932-797229 এই নম্বরে কল করুন।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে আমাদের 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
তথ্যসূত্র
WebMD- I’m Dizzy. What Should I Do? – WebMD
MedicalNewsToday- Feeling nauseous and dizzy: Symptoms and treatments
Mayo Clinic- Dizziness – Symptoms and causes
Healthline- What Causes Sudden Dizziness and Nausea?
Health- 13 Possible Causes of Dizziness
সাধারণ জিজ্ঞাসা
নিজে মাথা ঘোরা দূর করার উপায়?
মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাবের লক্ষণ কমাতে আপনার জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, লবণ এবং তামাকের অতিরিক্ত সেবন এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি আপনার অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। চাপ কমাতেও মনোযোগ দিন। যদি আপনার কোনো ওষুধের কারণে মাথা ঘোরা হয়, তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
কি কি কারণে মাথা ঘুরে?
মাথা ঘোরার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। সাধারণত মাইগ্রেন, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথা ঘোরা অনুভূত হয়। আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য দায়ী ভিতরের কানের সমস্যার কারণেও মাথা ঘোরা হতে পারে। ভারসাম্যজনিত সমস্যা বা ভার্টিগোর কারণে মাথা ঘোরা খুবই সাধারণ। বেনাইন প্যারোক্সিসমাল পজিশনাল ভার্টিগো (BPPV) হল ভার্টিগোজনিত মাথা ঘোরার সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
মাথা ঘোরা ও বমির কারণ কি?
মাথা ঘোরা এবং বমি হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি হল হৃদপিণ্ডের সমস্যা। যখন হৃদপিণ্ড ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন রক্তচাপ কমে যায় এবং এর ফলে মাথা ঘোরা এবং বমি হতে পারে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত চিন্তা বা উদ্বেগও মাথা ঘোরা এবং বমি হওয়ার কারণ হতে পারে। উদ্বেগের কারণে শরীরে যে হরমোন নিঃসৃত হয়, সেগুলি মাথা ঘোরা এবং বমি হওয়ার মতো শারীরিক লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
ভাইরাস কি মাথা ঘোরার কারণ?
ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস এবং ল্যাবিরিন্থাইটিস দুটি এমন অবস্থা যেগুলি সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের ফলে হয়। এই অবস্থাগুলিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই মাথা ঘোরা অনুভব করেন, যা ঘুরতে থাকার মতো অনুভূতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়। এর সাথে সাথে ভারসাম্যহীনতা, অস্থিরতা এবং কখনো কখনো দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
মাথা ঘোরার কারণে কি পেট খারাপ হয়?
মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব এমন দুটি লক্ষণ যা প্রায়শই একসঙ্গে দেখা যায়। এই লক্ষণগুলি সাধারণত মাইগ্রেন, পেট খারাপ বা অন্যান্য সাধারণ অসুখের লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। যদিও খুব কম ক্ষেত্রে, এগুলি মস্তিষ্কের টিউমারের মতো গুরুতর রোগের ইঙ্গিতও দিতে পারে।
মাথা ঘোরা কি বদহজমের লক্ষণ?
গুরুতর বদহজম বা অম্বল এবং হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ প্রায়শই খুব মিল হতে পারে। যদি আপনি বদহজম বা বুক জ্বালা অনুভব করেন এবং এর সাথে চাপ, আঁটসাঁটতা বা ব্যথা, বা বুক বা বাহুতে একটি সঙ্কুচিত সংবেদন, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা ঘাম এবং হঠাৎ মাথা ঘোরা অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা নিন। এই লক্ষণগুলি হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত হতে পারে। দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মাথা ঘোরা দূর করার উপায়?
আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে পারেন। ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, লবণ এবং তামাকের অতিরিক্ত সেবন এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি আপনার অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। মানসিক চাপ কমাতেও মনোযোগ দিন। যদি আপনার কোনো ওষুধের কারণে মাথা ঘোরা হয়, তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। ওষুধের মাত্রা কমানো বা অন্য কোনো বিকল্প খুঁজতে পারেন। সুস্থ জীবনযাত্রা আপনাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।