কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় কি ও এর চিকিৎসা

কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ ?

নানাবিধ কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে যেগুলো কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। কোমর ব্যথা ইংরেজি  Lower back pain (LBP) . কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় সম্পর্কে জানুন।

পেশী ও লিগামেন্টের আঘাত: কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হল পেশী ও লিগামেন্টের আঘাত। হঠাৎ করে কোমর বাঁকালে, ভারী জিনিস তুলতে গিয়ে কোমর ব্যথা হতে পারে।

মেরুদণ্ডের ডিস্ক সমস্যা: মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝে থাকে ডিস্ক নামক নরম চাকতি। এই ডিস্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা বের হয়ে গেলে কোমর ব্যথা হতে পারে।

স্পন্ডিলাইসিস: মেরুদণ্ডের হাড়গুলো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা ক্ষয়ের  কারণে স্পন্ডিলাইসিস হতে পারে। ইহা কোমর ব্যথার সাধারণ একটি কারণ।

অস্টিওপোরোসিস: মেরুদণ্ডের হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে অস্টিওপোরোসিস হয়।ইহা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।

ক্যান্সার: মেরুদণ্ডের ক্যান্সার কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস:রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এই রোগে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ হয়। ইহা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।

কোমর ব্যথার সাথে আনুষঙ্গিক কিছু লক্ষণ দেখা দিলে তা অন্য গুরুতর কিছুর লক্ষণ হতে পারে। যেমন:

  • জ্বর হওয়া
  • শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া
  • পায়ে অবশভাব বা দুর্বলতা অনুভব করা
  • পায়ে ঝিনঝিন অনুভব করা

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনার উচিৎ অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ।

কোমর ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর কোমর ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ব্যথা উপশমকারী ওষুধ, ফিজিওথেরাপি এবং ব্যায়াম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় কি তা আমাদের জানতে হবে।

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় কি?

কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি স্বল্পমেয়াদী হয় এবং নিয়মিত ব্যায়াম, বিশ্রাম এবং ঔষধের মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং এর জন্য জটিল চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় তা জেনে নিন।

কোমর ব্যথা সারানোর সহজ উপায়গুলি হল:

বিশ্রাম: কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় হল কোমর ব্যথা হলে প্রথমেই বিশ্রাম নিন। ব্যথা তীব্র হলে কয়েক দিন বিশ্রাম নেওয়া ভালো। তবে, খুব বেশি বিশ্রাম নিলে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে, তাই অতিরিক্ত বিশ্রাম এড়িয়ে চলুন।

বরফ ব্যবহার: কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে একটি হল ব্যথার স্থানে বরফ লাগালে ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। বরফের টুকরো একটি তোয়ালেতে মুড়ে ব্যথার স্থানে ২০ মিনিটের জন্য লাগান। দিনে কয়েকবার এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।

গরম সেঁক: কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্য আরেকটি উপায় হল হট-ওয়াটার ব্যাগ বা ইলেকট্রিক ম্যাসেজার ব্যবহার করতে পারেন।

ওষুধ: ব্যথার তীব্রতা কমাতে ওষুধ সেবন করতে পারেন।তবে, কোন ওষুধটি আপনার জন্য উপযুক্ত তা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।

ব্যায়াম: কোমর ব্যথার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম রয়েছে যা উপকারী। এই ব্যায়ামগুলি কোমরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে এই ব্যায়ামগুলি শিখতে পারেন।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় কি তা আমাদের জানতে হবে।

কোমর ব্যথার জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও রয়েছে যা উপকারী হতে পারে। যেমন:

আদা চা: আদা চা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। 

রসুন: রসুনও ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। রসুন খেতে পারেন বা রসুন থেঁতো করে ব্যথার স্থানে লাগাতে পারেন।

কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই, কোমর ব্যথা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা নিন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে কোমরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করুন।

মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ কি?

মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণগুলি পুরুষদের কোমর ব্যথার কারণগুলির সাথে অনেকটা একই রকম। তবে, কিছু নির্দিষ্ট কারণে মহিলাদের মধ্যে কোমর ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।

গর্ভাবস্থায়: গর্ভধারণের সময়, মহিলাদের কোমর এবং পেটে অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হয়। এজন্য কোমর ব্যথা হতে পারে ।

পেলভিসের ব্যথা: যেমন জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট।পেলভিসের ব্যথা,  কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।

নারীদের কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। তবে, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

কোমর ব্যথার ওষুধের নাম

কোমর ব্যথার জন্য অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধের ধরন নির্ভর করে ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় কি তা আমাদের জানতে হবে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম উপায় ওষুধ সেবন করা।

drug-for-lower-back-pain

ব্যথানাশক ওষুধ

  • অ্যাসপিরিন
  • আইবুপ্রোফেন
  • নাপ্রোক্সেন

এই ওষুধগুলি ব্যথা উপশম করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

স্টেরয়েড হল শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ যা প্রায়শই দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। স্টেরয়েডের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে:

*প্যারাসিটামল (টাইলেনোল, অ্যাসিটামিনোফেন)

*কোডেইন

*ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস

*অ্যান্টিসাইকোটিকস

কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা কিভাবে করে?

কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

বিশ্রাম: কোমর ব্যথার প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।

বরফ: বরফ কোমর ব্যথার ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। বরফের টুকরোগুলি একটি তোয়ালেতে মুড়ে কোমর ব্যথার জায়গায় ২০ মিনিটের জন্য প্রয়োগ করুন। প্রতি ঘন্টায় একবার পুনরাবৃত্তি করুন।

গরম: গরম কোমর ব্যথার ব্যথা এবং কঠোরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। একটি গরম সেঁক বা হট-ওয়াটার ব্যাগ কোমর ব্যথার জায়গায় ২০ মিনিটের জন্য প্রয়োগ করুন। প্রতি ঘন্টায় একবার পুনরাবৃত্তি করুন।

ব্যথানাশক ওষুধ: ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন, কোমর ব্যথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ফিজিওথেরাপি: ফিজিওথেরাপিস্টরা কোমর ব্যথার জন্য বিভিন্ন ব্যায়াম ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারেন। এই ব্যায়ামগুলি কোমরকে শক্তিশালী করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে পারেন।

কোমর ব্যথার ডাক্তার সম্পর্কে জানুন

কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার আছেন। আপনার কোমর ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে আপনার জন্য কোন ডাক্তার সবচেয়ে উপযুক্ত তা খুঁজে বের করতে হবে।

কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য যেসকল ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন:

চিকিৎসক (General practitioner): একজন চিকিৎসক আপনার কোমর ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।

রোগতত্ত্ববিদ (Orthopedic surgeon): একজন Orthopedic surgeon মেরুদণ্ডের সমস্যার বিশেষজ্ঞ। তিনি আপনার কোমর ব্যথার জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে পারে কিনা তা বলতে পারেন।

ফিজিওথেরাপিস্ট (Physiotherapist): একজন ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে কোমর ব্যথার জন্য কি ধরণের ব্যায়াম এবং থেরাপির প্রয়োজন তার পরিকল্পনা দিতে পারেন।

ব্যথা বিশেষজ্ঞ (Pain specialist): একজন ব্যথা বিশেষজ্ঞ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ। তিনি আপনার কোমর ব্যথার জন্য ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদান করতে পারেন।

কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ কি?

কোমরের দুই পাশে ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল পেশী বা টেন্ডনের আঘাত। এটি হঠাৎ আঘাতের কারণে হতে পারে, যেমন ঝাঁকুনি বা ঝুঁকানো, বা দীর্ঘস্থায়ী চাপের কারণে হতে পারে।

আপনার কোমরের দুই পাশে ব্যথা হলে, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে সক্ষম হবেন।

অল্প বয়সে কোমর ব্যাথার কারন কি?

অল্প বয়সে কোমর ব্যথার অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি হল:

অভ্যাস: দীর্ঘ সময় ধরে একই ভঙ্গিতে বসে থাকা, দাঁড়ানো বা হাঁটা কোমরের পেশী এবং লিগামেন্টগুলিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।

ভারি জিনিস তোলা: ভারী জিনিস তোলার সময় সঠিক পধতি ভঙ্গি না বজায় রাখা কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।

load lifting

আঘাত: কোমর বা মেরুদণ্ডের আঘাত, যেমন স্পাইনাল ইনজুরি বা স্পোর্টস ইনজুরি, কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী রোগ: কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন অস্টিওআর্থারাইটিস বা অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস, কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।

অল্প বয়সে কোমর ব্যথার অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

অস্থি ক্ষয়: অস্থির খনিজ ঘনত্ব হ্রাস পেলে অস্থি ক্ষয় হয়। এটি কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।

মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা: মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা, যেমন স্কোলিওসিস বা কিউবিকোসিস, কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।

পেশী বা স্নায়ুর সমস্যা: পেশী বা স্নায়ুর সমস্যা, যেমন নার্ভ ব্লকেজ বা পেশী আঘাত, কোমরে ব্যথার কারণ হতে পারে।

কোনও ব্যক্তির কোমরে ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য, একজন ডাক্তার রোগীর  শারীরিক পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে, ডাক্তার ইমেজিং পরীক্ষা, যেমনঃ এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান, করার পরামর্শ দিতে পারেন।

অল্প বয়সে কোমরে ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর। সাধারণত, ব্যথা উপশমকারী ওষুধ, ফিজিওথেরাপি কোমরে ব্যথার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।

কোমরের ডান পাশে ব্যথা হলে করণীয় কি ?

কোমরের ডান পাশে ব্যথা হলে প্রথমে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে ব্যথার কারণটি কী। ব্যথার কারণ নির্ভর করে করণীয়ও ভিন্ন হবে। কোমরের একপাশেও অনেক সময়  ব্যথা অনুভব হয়।

কোমর ব্যাথা সারানোর ঔষধঃ (NSAIDs) ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ, যেমন আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মোটরিন আইবি, অন্যান্য) বা নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম (আলেভ) সাহায্য করতে পারে। এই ওষুধগুলি শুধুমাত্র চিকিৎসকের  নির্দেশে গ্রহণ করুন। অতিরিক্ত ব্যবহার গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

কোমরে জ্বালাপোড়া কেন হয় ?

কোমরে জ্বালাপোড়া হল একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।কোমরে জ্বালাপোড়ার কারণ নির্ণয় করার জন্য, একজন ডাক্তার রোগীর ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে, ডাক্তার ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান, করার পরামর্শ দিতে পারেন।

কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ও ব্যায়াম

কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়াম খুবই কার্যকরী। কোমরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে এমন ব্যায়ামগুলি কোমরের ব্যথা কমাতে এবং প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু কার্যকর ব্যায়াম হল:

কোর স্ট্রেংথ ব্যায়ামঃ কোর স্ট্রেংথ ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে প্ল্যাঙ্ক, সিট-আপস, এবং লং লিভিং।কোর স্ট্রেংথ ব্যায়ামগুলি কোমরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

plank

ইলাস্টিক স্ট্রেচিং: ইলাস্টিক স্ট্রেচিং কোমরের পেশীগুলিকে নমনীয় করতে সাহায্য করে। ইলাস্টিক স্ট্রেচিংয়ের মধ্যে রয়েছে কার্ডিও, টাইটনেস, এবং রিলাক্সেশন।

Elastic-stretching

ওয়াটার থেরাপি: ওয়াটার থেরাপি কোমরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী এবং নমনীয় করতে সাহায্য করে। ওয়াটার থেরাপির মধ্যে রয়েছে সাঁতার।

swmming

কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়াম শুরু করার আগে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে আপনার ব্যথার ধরণ অনুযায়ী আপনার জন্য সঠিক ব্যায়াম নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারেন।

কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়াম করার সময় নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করুন:

  • আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন,ব্যায়াম শুরু করার আগে।
  • প্রথমে আপনার শরীরকে উষ্ণ করুন।
  • ব্যায়ামের সময় আপনার শরীরের অবস্থান সঠিক রাখুন।
  • ব্যায়ামের পরে আপনার শরীরকে ঠান্ডা করুন।
  • ব্যায়ামের পরে বিশ্রাম নিন।

নিয়মিত ব্যায়াম কোমরের ব্যথা কমাতে এবং প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপিস্ট এর ভূমিকা?

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির কার্যকারিতা নিয়ে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে ফিজিওথেরাপি কোমর ব্যথার রোগীদের জন্য একটি কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে। ফিজিওথেরাপি কোমর ব্যথা কমাতে, কোমরকে শক্তিশালী করতে এবং ব্যথার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় কি তা আমাদের জানতে হবে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে ফিজিওথেরাপি অন্যতম ভূমিকা পালন।

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপিস্টদের দ্বারা ব্যবহৃত কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:

ব্যায়াম: ব্যায়াম কোমরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে এমন যেকোনো অস্বাভাবিকতা বা অসামঞ্জস্যতাও ঠিক করতে সাহায্য করতে পারে।

ম্যানুয়াল থেরাপি: ম্যানুয়াল থেরাপি হল হাত দ্বারা পরিচালিত চিকিৎসা পদ্ধতি। যা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে এমন যেকোনো অস্বাভাবিকতা বা অসামঞ্জস্যতা ঠিক করতে সাহায্য করতে পারে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল ম্যানুয়াল থেরাপি।

manual-therapy

ইলেকট্রোথেরাপি:কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল ইলেকট্রোথেরাপি হল, এমন  এক চিকিৎসা পদ্ধতি যা বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে ব্যথা কমাতে এবং কোমরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

electro-therapy

তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি:কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি।তাপ বা ঠান্ডা থেরাপি কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ফিজিওথেরাপিস্টরা কোমর ব্যথার রোগীদের জন্য উপযোগী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করবেন। এই পরিকল্পনাটি রোগীর ব্যথার কারণ, তীব্রতা এবং অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থার উপর ভিত্তি করে হবে।

কোমরের ব্যথা কমানোর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর ভূমিকা আছে কী?

কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কার্যকর হতে পারে কিনা তা নিয়ে গবেষণা মিশ্র। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে, অন্য গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি কোন প্রভাব ফেলে না।

ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করা হয় কারণ এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হলে, কোমরের পেশী এবং লিগামেন্টগুলিকে সমর্থন করার জন্য হাড়গুলি আরও শক্তিশালী হয়।

কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ডাক্তার আপনার জন্য সঠিক মাত্রা এবং ধরণের ক্যালসিয়াম নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারেন।

কোমর ব্যথার খাবার তালিকা

food

কোমর ব্যথার জন্য কিছু কার্যকরী খাবার হল:

ফল এবং শাকসবজি: ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাছ, বাদাম এবং বীজ।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: প্রোটিন পেশী এবং লিগামেন্টের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত পণ্য এবং ডাল।

ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, বাদাম এবং বীজ।

কোমর ব্যথার জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবারের উদাহরণ হল:

ফল: আপেল, কমলা, আঙ্গুর এবং আনারস।

শাকসবজি: গাজর, পালং শাক, ব্রকলি এবং বাঁধাকপি।

মাছ: স্যামন, টুনা, এবং ম্যাকেরেল।

বাদাম এবং বীজ: চিনাবাদাম, পেস্তা এবং আখরোট।

মাংস: মুরগির মাংস, টার্কি এবং লাল মাংস।

দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ, দই এবং পনির।

কোমরের নিচের ব্যথার জন্য কোন ক্রিম ভালো

কোমরের নিচের ব্যথার জন্য অনেক ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। এই ক্রিমগুলি সাধারণত ব্যথা উপশমকারী, প্রদাহ-বিরোধী বা শিথিল করার উপাদানগুলির সমন্বয়ে তৈরি হয়।

কোমরের নিচের ব্যথার জন্য কিছু জনপ্রিয় ক্রিম হল:

আইবুপ্রোফেন ক্রিম: আইবুপ্রোফেন হল একটি ব্যথা উপশমকারী এবং প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ। আইবুপ্রোফেন ক্রিম কার্যকর হতে পারে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম এই ক্রিম ।

ডায়ক্লোফেনাক ক্রিম: ডায়ক্লোফেনাক হল আরেকটি ব্যথা উপশমকারী এবং প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ। ডায়ক্লোফেনাক ক্রিম কোমরের ব্যথা কমাতেও কার্যকর হতে পারে। কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল ডায়ক্লোফেনাক ক্রিম।

মেথামিসল ক্রিম: মেথামিসল হল একটি ব্যথা উপশমকারী এবং শিথিল করার ওষুধ। মেথামিসল ক্রিম কোমরের ব্যথা কমাতে এবং পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল মেথামিসল ক্রিম।

বেনজিল অ্যানিলিন ক্রিম: বেনজিল অ্যানিলিন হল একটি ব্যথা উপশমকারী এবং শিথিল করার ওষুধ। বেনজিল অ্যানিলিন ক্রিম কোমরের  ব্যথা কমাতে এবং পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় এর মধ্যে অন্যতম হল বেনজিল অ্যানিলিন ক্রিম।

কোমরের  ব্যথার জন্য কোন ক্রিম সবচেয়ে ভালো তা নির্ভর করে আপনার ব্যথার কারণ এবং তীব্রতার উপর। আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্ট আপনার জন্য সঠিক ক্রিমটি সুপারিশ করতে পারেন।

কোমরের নিচের ব্যথার জন্য ক্রিম ব্যবহার করার সময় নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করুন:

  • নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। ক্রিমটি ব্যবহার করার আগে নির্দেশাবলী পড়ুন এবং অনুসরণ করুন।
  • অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। নির্দেশাবলী অনুসারে ক্রিমটি ব্যবহার করুন।
  • ত্বকের ক্ষতি এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। ক্রিমটি ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ব্যবহার করবেন না।
  • শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। ক্রিমটি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।

কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণা কেন হয়?

ঘুম থেকে উঠার পর অনেকের কোমরে ব্যাথা করে। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অবশ অনুভূত হয়। কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণা, যা সায়াটিকা নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ সমস্যা। এটি সায়টিকা নামক একটি নার্ভের উপর চাপ বা আঘাতের কারণে হয়। সায়টিকা নার্ভ হল একটি বড় নার্ভ যা কোমর থেকে পায়ের দিকে নেমে যায়।

কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

কোমর এবং পায়ে ব্যথা: ব্যথা সাধারণত হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তীব্র হতে পারে।

পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ: ব্যথার সাথে সাথে পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ হতে পারে।

পায়ে দুর্বলতা: ব্যথার সাথে সাথে পায়ে দুর্বলতা হতে পারে।

কোমর থেকে পায়ের যন্ত্রণা নির্ণয়ের জন্য, আপনার ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন। আপনার ডাক্তার আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান ও অর্ডার করতে পারেন। 

সম্পর্কিত প্রশ্নসমূহ

কোমর ব্যথা হয় কেন?

পেশী বা টেন্ডনের আঘাত, ডিস্ক প্রলাপস , অস্টিওআর্থারাইটিস ,রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস , মেনোপজ, ওজন বৃদ্ধি , অনিয়মিত ব্যায়াম এসকল কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে।

কোমরে ব্যথা কমানোর উপায় কি?

বিশ্রাম,ওষুধ,ফিজিওথেরাপি,স্পাইনাল স্ট্রেচিং,গরম বা ঠান্ডা সেঁক,মেনথল অয়েল ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।আপনার কোমরে ব্যথা যদি তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।

কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল ?

কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল এই কথা বিবেচনায় আনলে বলা যায় যে, কোমরে ব্যথা করলে বিশ্রাম আশ্যক। এক্ষেত্রে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল তা নির্ধারণ করে রোগীর ব্যথার ধরণ ও অবস্থার উপর।

জ্বর ও কোমর ব্যথার কারণ কি হতে পারে?

কোমর ব্যথার সাথে যদি জ্বর আসে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসক দেখানো জরুরি৷ এই ধরনের লক্ষণগুলো সাধারণত প্যাথলজিক্যাল বড় সমস্যার কারণে হয়ে থাকে, এটা রেড এলার্ট।

স্ট্রেস কি কোমর ব্যথায় অবদান রাখতে পারে?

হ্যাঁ, স্ট্রেস এবং টেনশন পেশীর অসাড়তা সৃষ্টি করে,কোমর ব্যথাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল, লক্ষণগুলি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

লাইফস্টাইলের কোন পরিবর্তনগুলি কোমর ব্যথার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে?

সঠিক ওজন বজায় রাখা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, ভাল অঙ্গবিন্যাস অনুশীলন করা কোমর ব্যথা প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে।

কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল ?

কোমরে ব্যথা হলে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল এই কথা বিবেচনায় আনলে বলা যায় যে, কোমরে ব্যথা করলে বিশ্রাম আশ্যক। এক্ষেত্রে বসা ভালো না শুয়ে থাকা ভাল তা নির্ধারণ করে রোগীর ব্যথার ধরণ ও অবস্থার উপর।

Dr. Saiful Islam
Dr. Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Articles: 4