ঘন ঘন প্রস্রাব হলে আপনার কি কি খাওয়া উচিত এবং আপনি কি কি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন?

ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হলে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত যা মূত্রাশয়ের কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, পালংশাক, কুমড়ার বীজ, এবং তিল বীজে থাকা পুষ্টিগুণ মূত্রাশয়ের প্রদাহ কমাতে এবং এর কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন মসুর ডাল, ছোলা এবং ফলমূল (যেমন আপেল, কলা) কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, যা মূত্রাশয়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে পারে। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি হলেও অতিরিক্ত তরল গ্রহণ এড়ানো উচিত, বিশেষত রাতে ঘুমানোর আগে।

দ্বিতীয়ত, কিছু খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন যা মূত্রাশয়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (কফি ও চা), অ্যালকোহল, সোডাযুক্ত পানীয় এবং মশলাদার খাবার এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। একইভাবে, টমেটো বা সাইট্রাস ফলের মতো অ্যাসিডিক খাবারও মূত্রাশয়ের জ্বালা বাড়াতে পারে। তাই এসব খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত। পাশাপাশি, দই বা ক্র্যানবেরি যুক্ত করা যেতে পারে যা মূত্রাশয়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

যদি আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, তাহলে প্রথমে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে এর কারণ নির্ণয় করা উচিত। এর কারণ জানার পর ডাক্তার আপনাকে অবশ্যই সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন। তবে, আপনি আমাদের দেওয়া খাবার এর তালিকা ঠিকমতো করে নিজেদের জীবনকে সুন্দর ও স্বস্তিতে নিয়ে যেতে পারবেন।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত?

কিছু খাবার আছে যা ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ক্র্যানবেরি জুস

ক্র্যানবেরি জুস ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমাতে সহায়ক। এটি মূত্রাশয় সংক্রমণের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। ক্র্যানবেরি জুস সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মূত্রাশয়ের দেয়াল থেকে আটকাতে সাহায্য করে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে না এবং প্রস্রাবের সমস্যা হ্রাস পায়।

ক্র্যানবেরি জুস শুধু সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে না, এটি মূত্রাশয়ের স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে। নিয়মিত ক্র্যানবেরি জুস পান করলে মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পানি

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পানি শুধু তৃষ্ণা নিবারণ করে না, বরং আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমকে সচল রাখতেও সহায়ক। পর্যাপ্ত পানি পান করলে আমাদের প্রস্রাব পাতলা থাকে। এর ফলে কিডনির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ সহজে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

যখন আমাদের প্রস্রাব যথেষ্ট পাতলা থাকে, তখন মূত্রাশয়ের উপর চাপ কম পড়ে এবং এটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যাও কমে যায়। তাই সুস্থ থাকতে এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমাতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

উপরের পিঠে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

ফল, সবজি এবং শস্য জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই খাবারগুলো খেলে আমাদের হজমক্ষমতা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমলে আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

যখন আমাদের অন্ত্র সুস্থ থাকে, তখন আমাদের শরীরে বর্জ্য পদার্থগুলো সহজে বের হতে পারে। এর ফলে আমাদের মূত্রাশয়ের উপরও চাপ কম পড়ে। তাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমে যায়। সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন আমাদের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে এই ফাইবার।

টমেটো

টমেটোতে লাইকোপেন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা প্রোস্টেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে, এটি পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থির স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়ক।

প্রোস্টেট গ্রন্থিটি পুরুষদের মূত্রতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টমেটোতে থাকা লাইকোপেন এই গ্রন্থির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমে যায়। তাই, পুরুষদের তাদের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে টমেটো যোগ করা উচিত।

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত না

হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথার কারণ সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত না?

কিছু খাবারও আছে যা আমাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। খাবারগুলো যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।

ক্যাফেইন

ক্যাফেইন একটি উত্তেজক পদার্থ যা কফি, চা এবং সোডার মতো পানীয়তে পাওয়া যায়। এটি আমাদের স্নায়ু তন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে এবং শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটায়। ক্যাফেইন মূত্রাশয়কে উত্তেজিত করতে পারে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।

ক্যাফেইন গ্রহণের পর, এটি খুব দ্রুত রক্তে মিশে যায় এবং এর প্রভাব শুরু হয়। এটি মূত্রাশয়ের পেশীগুলিকে সংকুচিত করে, যার ফলে প্রস্রাব তৈরি হওয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। এই কারণে, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করার পরে আমাদের প্রায়ই বাথরুমে যেতে হয়।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহল শুধু লিভারের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে না, বরং আমাদের মূত্রাশয়ের ওপরও এর খারাপ প্রভাব পড়ে। অ্যালকোহল একটি মূত্রবর্ধক পদার্থ, যার মানে এটি আমাদের শরীর থেকে বেশি পরিমাণে জল বের করে দেয়।

যখন আমরা অ্যালকোহল পান করি, তখন আমাদের কিডনি বেশি পরিমাণে প্রস্রাব তৈরি করে। এর ফলে আমাদের মূত্রাশয় দ্রুত ভরে যায় এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়। বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করলে মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণ কমে যেতে পারে, যার কারণে প্রস্রাব করার সময় নিয়ন্ত্রণ রাখতে অসুবিধা হয়। তাই, সুস্থ থাকতে হলে অ্যালকোহল পান করা উচিত নয় অথবা সীমিত পরিমাণে পান করা উচিত।

মশলাদার খাবার

মশলাদার খাবার ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মশলাদার খাবারে কিছু উপাদান থাকে যা মূত্রাশয়কে উত্তেজিত করতে পারে। এর ফলে মূত্রাশয়ের পেশী সংকুচিত হয় এবং প্রস্রাব তৈরি হওয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। তাই, মশলাদার খাবার খাওয়ার পরে আমাদের প্রায়ই বাথরুমে যেতে হয়।

কিছু লোক মশলাদার খাবার খেলে সাথে সাথেই প্রস্রাবের চাপ অনুভব করেন। তবে, এর কারণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে। যাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা আছে, তারা মশলাদার খাবার খাওয়ার আগে তাদের শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে পারেন। যদি মশলাদার খাবার খাওয়ার পর সমস্যা হয়, তাহলে এর পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া বা এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

সতর্ক থাকবেন

ঘন ঘন প্রস্রাব একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। এটি শুধু অস্বস্তিকর নয়, অনেক সময় এটি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। অনেক মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে যা বিব্রতকর। তাই এই সমস্যাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।

এই সমস্যা সমাধানে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, যেমন – প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খাওয়া এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করাও জরুরি। ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং মশলাদার খাবার ত্যাগ করা উচিত, কারণ এগুলো মূত্রাশয়কে উত্তেজিত করতে পারে।

তবে, যদি ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা এর সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন – প্রস্রাবে জ্বালা বা ব্যথা, রক্ত যাওয়া অথবা জ্বর, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, এটি কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সুস্থ জীবনযাপন এবং মূত্রাশয়ের সঠিক যত্নের জন্য সময় মতো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Author - Dr Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Dr. Saiful Islam
Dr. Saiful Islam

Consultant Physiotherapist
BPT (DU), MPT (Ortho)
PGC in Acupuncture (India)
Specially trained in Ozone therapy

Articles: 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *