বুকের বাম পাশে ব্যথা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অনেকেই অনুভব করেন। এই ব্যথা মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি সাধারণ ও তেমন ক্ষতিকর নয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। আজ বুকের বাম পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ তা নিয়ে আলোচনা করবো।
বুকের বাম পাশে ব্যথার কারণগুলো অনেক বিস্তৃত। হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, এমনকি মানসিক চাপও এর কারণ হতে পারে। ব্যথার ধরন, তীব্রতা এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো সঠিক কারণ নির্ণয়ে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, হঠাৎ তীব্র ব্যথা যা বাম বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাসকষ্টের সাথে দেখা দেয়, তা হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে। অন্যদিকে, খাওয়ার পরে জ্বালাপোড়া ব্যথা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ইঙ্গিত দিতে পারে।
যেহেতু বুকের বাম পাশে ব্যথার কারণ এত বৈচিত্র্যময়, তাই এই ধরনের ব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়। বিশেষ করে যদি ব্যথা তীব্র, দীর্ঘস্থায়ী বা অন্যান্য উদ্বেগজনক লক্ষণের সাথে থাকে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একজন দক্ষ চিকিৎসক সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেন, যা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।
যেকোনো সমস্যায় সেবা পেতে এখনই এপয়েন্টমেন্ট নিন এবং এই +8801932-797229 নম্বরে যোগাযোগ করুন।
বুকের বাম পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ?
১. হৃদরোগজনিত কারণ (Cardiac Causes)
(ক) হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack)
হার্ট অ্যাটাক, যা ডাক্তারি ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নামে পরিচিত, হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে। সাধারণত, হৃদপিণ্ডের ধমনীতে চর্বি বা কোলেস্টেরল জমে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার ফলে এটি হয়। হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ হলো বুকের মাঝখান বা বাম পাশে তীব্র ব্যথা, যা প্রায়ই কাঁধ, হাত, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব এই অবস্থার সাথে যুক্ত থাকতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কখনও হঠাৎ করে তীব্র আকারে দেখা দেয়, আবার কখনও ধীরে ধীরে শুরু হয়। বুকের ব্যথা সাধারণত চাপ বা সংকোচনের মতো অনুভূত হয় এবং অনেক সময় এটি গ্যাস্ট্রিক বা সাধারণ ক্লান্তির সঙ্গে বিভ্রান্ত হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, যেমন—অস্বাভাবিক ক্লান্তি, পিঠ বা চোয়ালে ব্যথা। যেসব ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস বা পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত। চিকিৎসার আগে অতিরিক্ত নড়াচড়া এড়িয়ে চলা এবং যদি নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া থাকে তবে তা গ্রহণ করা যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি কমানো সম্ভব এবং জীবন রক্ষা করা যায়।
হার্টের ব্যথা কেমন হয় ও হার্টের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
(খ) অ্যাঞ্জাইনা (Angina)
হৃদপিণ্ডের রক্তনালীগুলোর সংকোচন বা ব্লকেজের কারণে বুকে ব্যথা হওয়া একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এই অবস্থায় হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয় না, যার ফলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময় এই ব্যথা বেশি প্রকট হয়। এই ধরনের বুকে ব্যথা কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে এবং বিশ্রাম নিলে বা নাইট্রোগ্লিসারিন গ্রহণ করলে ব্যথা কমে যায়।
হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে ব্লকেজ হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অনিয়ম, বংশগত কারণ এবং বয়স বৃদ্ধি এর অন্যতম। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দীর্ঘমেয়াদী তীব্র মানসিক অবসাদ এবং উদ্বেগও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে তা ধীরে ধীরে রক্তনালীর দেয়ালে জমা হয়ে ব্লকেজ সৃষ্টি করতে পারে।
এই সমস্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, যে কোনো ধরনের বুকে ব্যথা অনুভব করলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হৃদপিণ্ডের বিস্তারিত পরীক্ষা করানো উচিত। ECG, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, এনজিওগ্রাম ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের অবস্থা সম্পর্কে নির্ভুল ধারণা পাওয়া যায়।
পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চর্বিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে তাজা ফল, সবজি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাচলা এবং শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখা প্রয়োজন। এছাড়া ধূমপান ত্যাগ, মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
উন্নত মানের ফিজিওথেরাপি সেবা পেতে আপনার এপয়েন্টমেন্ট টি নিয়ে নিন এবং এই +8801932-797229 নম্বরে যোগাযোগ করুন।
২. পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা (Digestive Causes)
(ক) গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স (Acid Reflux / GERD)
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স একটি সাধারণ পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, যা পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে এলে ঘটে। এই অবস্থায় পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীর আস্তরণকে জ্বালাতন করে, ফলে বুকে জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সাধারণত খাওয়ার পর বা শুয়ে থাকার সময় এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- বুক ও গলায় জ্বালাপোড়া
- টক ঢেকুর ওঠা
- দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকলে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া
- মুখে টক বা তিক্ত স্বাদ অনুভব করা
অ্যাসিড রিফ্লাক্স নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। ঝাল, চর্বিযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এই ধরনের খাবার পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন করে। এর পরিবর্তে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, তাজা ফল ও সবজি এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত ও সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া জরুরি, কারণ দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলো আরও তীব্র হতে পারে। এছাড়াও, রাতের খাবারের পর অন্তত তিন ঘণ্টা শুতে না যাওয়া এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
যদি জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে যথেষ্ট উপকার না পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অ্যান্টাসিড, H2 ব্লকার এবং প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) জাতীয় ওষুধ অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টাসিড দ্রুত স্বল্পমেয়াদী স্বস্তি দেয়, যখন H2 ব্লকার ও PPI পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তবে, এই ওষুধগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো গ্রহণ করা উচিত নয়। গুরুতর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যখন GERD-এর জটিলতা দেখা দেয়, তখন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রস্রাব অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রস্রাব হালকা হলুদ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
(খ) গ্যাসের চাপ (Trapped Gas)
গ্যাসের চাপ বা ট্র্যাপড গ্যাস একটি সাধারণ সমস্যা, যা পাকস্থলী বা অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস জমা হলে এবং সেটি বের হতে না পারলে সৃষ্টি হয়। এই আটকে থাকা গ্যাস শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা প্রায়ই তীক্ষ্ণ বা চাপের অনুভূতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। গ্যাসের চাপের কারণে বুকে ব্যথার সাথে সাধারণত পেট ফোলা অনুভূত হওয়া এবং ঢেকুর বা গ্যাস বের হলে ব্যথা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। খাবার দ্রুত খাওয়া, বাতাসযুক্ত পানীয় পান করা, ধূমপান, চিউইং গাম চিবানো এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেমন সোডা, আলু, মসুর ডাল, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদি খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে। এছাড়াও, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, সিলিয়াক রোগ বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS)-এর মতো পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাগুলিও গ্যাসের চাপের কারণ হতে পারে। স্ট্রেস এবং উদ্বেগও পরিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
গ্যাসের চাপ থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার যেমন সোডা, আলু, মসুর ডাল, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। পরিবর্তে, হজম সহায়ক খাবার যেমন আদা, পুদিনা, ধনেপাতা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে হাঁটা বা যোগব্যায়াম, পরিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া এবং খাওয়ার সময় কথা বলা এড়িয়ে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি লক্ষণগুলি স্থায়ী হয় বা খুব তীব্র হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৩. পেশী ও হাড়ের সমস্যা (Musculoskeletal Causes)
(ক) পেশী টান (Muscle Strain)
পেশীতে টান একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা অনেকেই অনুভব করেন। এটি সাধারণত পেশী অতিরিক্ত প্রসারিত হলে বা হঠাৎ আঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঘটে। ভুলভাবে ভারী কিছু তোলা, হঠাৎ অস্বাভাবিক নড়াচড়া করা বা শারীরিক পরিশ্রমের সময় পেশীতে অতিরিক্ত চাপ পড়লে এমনটি হতে পারে। পেশী টানের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত অংশে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং নড়াচড়া করতে অসুবিধা। বিশেষ করে শরীর নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যায়, কিন্তু বিশ্রাম নিলে ব্যথা কমে আসে।
পেশীতে টানের তীব্রতা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যা সামান্য টান থেকে শুরু করে পুরো পেশী ছিঁড়ে যাওয়া পর্যন্ত হতে পারে। প্রথম গ্রেডের পেশী টানে সামান্য ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভূত হয়, দ্বিতীয় গ্রেডে মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা ও কিছুটা কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং তৃতীয় গ্রেডের টানে পেশী সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গিয়ে গুরুতর ব্যথা ও কার্যক্ষমতা হারানো ঘটে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, যাদের পেশী দুর্বল বা অনমনীয়, যারা ক্লান্ত অবস্থায় ব্যায়াম করেন বা যারা আগে পেশী টানের সমস্যায় ভুগেছেন তাদের মধ্যে পেশী টানের ঝুঁকি বেশি থাকে।
পেশীতে টানের প্রাথমিক চিকিৎসায় RICE পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় – বিশ্রাম (Rest), বরফ (Ice), চাপ প্রয়োগ (Compression) এবং উঁচুতে রাখা (Elevation)। আঘাতপ্রাপ্ত অংশে ২০ মিনিট করে বরফ সেঁক দেওয়া উচিত, যা ফোলাভাব ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। সুস্থ হওয়ার পর ধীরে ধীরে স্ট্রেচিং ও হালকা ব্যায়াম শুরু করা উচিত, যাতে পেশীর শক্তি ও নমনীয়তা ফিরে আসে এবং ভবিষ্যতে আবার টান পড়ার ঝুঁকি কমে।
বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে সেরা সেবা পেতে আপনার এপয়েন্টমেন্ট টি নিয়ে নিন এবং +8801932-797229 নম্বরে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিন।
(খ) কোস্টোকন্ড্রাইটিস (Costochondritis)
কোস্টোকন্ড্রাইটিস হল একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে পাঁজরের হাড় এবং বক্ষাস্থির সংযোগস্থলের তরুণাস্থিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এই প্রদাহের ফলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়, যা সাধারণত তীক্ষ্ণ বা চাপময় হতে পারে। রোগীরা প্রায়ই বুকে চাপ দিলে বা গভীর শ্বাস নিলে ব্যথা বাড়তে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা হার্টজনিত সমস্যা বলে মনে হলেও এটি মূলত পাঁজরের সংযোগস্থলের প্রদাহের কারণে হয়। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, বুকে আঘাত বা দীর্ঘদিন ধরে কাশি এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
কোস্টোকন্ড্রাইটিসের চিকিৎসায় প্রধানত বিশ্রাম নেওয়া এবং ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ গ্রহণ করা হয়। বরফ সেঁক দেওয়া প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা উপশমে কার্যকর। গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রদাহরোধী ওষুধ বা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন প্রয়োজন হতে পারে। তবে রোগীকে ভারী কাজ এড়িয়ে চলা এবং শারীরিক চাপ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সময়মতো চিকিৎসা এবং সঠিক যত্ন নিলে কোস্টোকন্ড্রাইটিস সাধারণত সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
গ্যাসের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয় ও কমানোর উপায় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।
৪. ফুসফুসজনিত সমস্যা (Lung-related Causes)
(ক) নিউমোনিয়া বা প্লুরিসি (Pneumonia/Pleurisy)
নিউমোনিয়া বা প্লুরিসি হল ফুসফুসের সংক্রমণ বা প্লুরার প্রদাহজনিত একটি শারীরিক অবস্থা, যা বুকে ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে ফুসফুসে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ফুসফুস পুঁজ বা তরল পদার্থে ভরে ওঠে। অন্যদিকে, প্লুরিসি হলো ফুসফুস ও বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে থাকা প্লুরাল স্তরের প্রদাহ, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। এই অবস্থায় গভীর শ্বাস নিলে বা কাশি হলে ব্যথা বৃদ্ধি পায় এবং রোগীর জ্বর, কাশি ও কফের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এই সমস্যাগুলির চিকিৎসায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিউমোনিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে, যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্লুরিসির ক্ষেত্রে প্রদাহ কমাতে ব্যথানাশক ও প্রদাহরোধী ওষুধ ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি, রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে এবং তরল গ্রহণ বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অক্সিজেন সাপোর্ট বা প্লুরাল স্পেস থেকে তরল অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে এই অবস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৫. মানসিক কারণ (Psychological Causes)
(ক) প্যানিক অ্যাটাক (Panic Attack)
প্যানিক অ্যাটাক একটি আকস্মিক এবং তীব্র মানসিক অবস্থা, যা সাধারণত অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে ঘটে থাকে। এই অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং শরীর কাঁপতে থাকা। এই সময় আক্রান্ত ব্যক্তি তীব্র ভয়, নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা এবং মৃত্যুভয় অনুভব করতে পারেন। প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত কয়েক মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
প্যানিক অ্যাটাকের সময় শরীরের লড়াই-বা-পলায়ন প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হয়, যার ফলে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোন হৃদস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা শারীরিক লক্ষণগুলির তীব্রতা বাড়িয়ে তোলে। এই শারীরিক পরিবর্তনগুলি রোগীর মধ্যে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করে, যা প্যানিক অ্যাটাকের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থায়, আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়শই মনে করেন যে তিনি হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
প্যানিক অ্যাটাক মোকাবেলা করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত, ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়া অত্যন্ত কার্যকর, যা শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করে। মেডিটেশন বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করা দীর্ঘমেয়াদী সুফল দিতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। যদি প্যানিক অ্যাটাক বারবার ঘটে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত, যিনি কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি সুপারিশ করতে পারেন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি বুকের ব্যথা ৫-১০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় এবং তা বাম হাত, কাঁধ বা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে, যদি শ্বাসকষ্ট, ঘাম বা বমি বমি ভাব দেখা দেয় এবং বিশ্রাম নিলেও ব্যথা না কমে, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এই ধরনের ব্যথা প্রায়শই হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা জীবন রক্ষা করতে পারে, তাই উপসর্গগুলো অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বুকে পিঠে ব্যথা হলে করণীয় ও তার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
শেষ কথা
বুকের বাম পাশের ব্যথা সবসময় হৃদরোগের কারণে হয় না, তবে এই ব্যথাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। এই ব্যথার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন পেশী টান, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, ফুসফুসের প্রদাহ বা মানসিক চাপ। তবে, যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, বাম হাত বা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাসকষ্ট বা ঘামের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে এটি হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।
বুকের ব্যথা যদি বারবার ঘটে বা গুরুতর মনে হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসা করানো উচিত। হৃদরোগজনিত ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় এবং বিশ্রাম নিলেও কমে না। অন্যদিকে, গ্যাস্ট্রিক বা পেশীজনিত ব্যথা সাধারণত কম গুরুতর এবং জীবনঘাতী নয়। তবে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ব্যথার প্রকৃত কারণ বোঝা সম্ভব নয়। এ কারণে বুকের ব্যথাকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সঠিকভাবে কারণ নির্ণয় করার জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যই জীবনের মূল ভিত্তি, তাই এর প্রতি যত্নবান হওয়া আমাদের দায়িত্ব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। যদি কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব এবং সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করা যায়।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার