টেনিস এলবো কনুই এর অন্যতম পরিচিত একটি সমস্যা, যেখানে আক্রান্ত রোগী কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথা অনুভব করে থাকে। এটি ‘ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইলাইটিস‘ নামেও পরিচিত; এটি এটি প্রায়শই কনুইয়ের জয়েন্টের কাছে, হাতের পেশীগুলির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘটে। টেনিস এলবো কনুই একটি পরিচিত সমস্যা যা প্রতি বছর জনসংখ্যার প্রায় ১-৩% মানুষকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।
এটি কনুই ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ, দুই-তৃতীয়াংশ কনুই ব্যথার জন্য টেনিস এলবো দায়ী। এটি মহিলাদের এবং পুরুষদের সমানভাবে প্রভাবিত করে এবং যারা প্রভাবিত হয় তাদের বেশিরভাগই ৩৫-৫৫ বছরের মধ্যে। টেনিস এলবো কি ও এর উপসর্গ কি জেনে নিন।
টেনিস এলবো এর উপসর্গ
- কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথা লক্ষ্য করা, যা কব্জি পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
- হাত উঠাতে বা বাঁকাতে গেলে কনুইতে ব্যথা অনুভব করা।
- হাত মোচড়ানোর সময়, যেমন দরজার হাতল ঘুরানো বা একটি জার খোলা এই কাজগুলো করতে গেলে এমনকি হাত সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করাও কঠিন হতে পরা।
- কনুইয়ের বাইরের দিকে চাপ দিলে ব্যাথা লাগা।
- আক্রান্ত হাতে ওজন তুললে ব্যাথা বৃদ্ধি পাওয়া।
টেনিস এলবো হওয়ার কারণ
- কনুইয়ের সাথে সংযুক্ত পেশীগুলির অত্যধিক ব্যবহার করা।
- কনুই বারবার নাড়াচাড়া করতে হয় এমন কাজ করা।
- বারবার কব্জি বাকাতে হয় এমন কাজ যারা করা।
টেনিস এলবো রোগ নির্ণয়ের উপায়
টেনিস এলবোর উপসর্গ এর সাথে মিলিয়ে দেখা। এছাড়া আরো ভালোভাবে রোগনির্ণয়ের জন্য মাস্কুলেস্কেলেটাল আল্ট্রাসাউন্ড বা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) করা যেতে পারে।
পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
টেনিস এলবো এর চিকিৎসা
টেনিস এলবো এর চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। নিচে এই চিকিৎসা ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
- বিশ্রামঃ উপসর্গের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ব্যথার কারণ হয় এমন কার্যকলাপ এড়িয়ে চলা উচিত।
- ঠান্ডা শেক দেওয়াঃ প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা ও ফোলা কমাতে বরফ বা ঠান্ডা শেক ব্যবহার করা যেতে পারে। ১০-১৫ মিনিট করে দিনে ২-৩ বার বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ফিজিওথেরাপিঃ টেনিস এলবোর এর চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্রামে ব্যথা না কমলে ব্যাথা কমাতে এবং পুনরায় আগের মতো কাজ করার সক্ষমতা অর্জনের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করা উচিত। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর ব্যাথা কমাতে আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, সফট টিস্যু মেনিপুলেশন, স্ট্রেচিং, স্ট্রেনদেনিং ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
- ব্রেসঃ আক্রান্ত হাতকে বিশ্রামে রাখার জন্য ব্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রেস আক্রান্ত হাতের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে। টেনিস এলবো এর ক্ষেত্রে এলবো স্ট্রাপ সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়।
- কাইনেশিও টেপিংঃ কাইনেশিও টেপিং ব্যাথা ও ফোলা কমাতে বেশ কার্যকরী। যারা ব্রেস ব্যবহার করতে চান না তাদের জন্য কাইনেশিও টেপিং ব্যবহার করা হতে পারে।
- শক-ওয়েভ থেরাপিঃ নিম্ন শক্তির শক-ওয়েভ ব্যাথা এবং ফোলা কমানোর জন্য এবং আগের যায়গায় টিস্যুকে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি।
- ড্রাই নিডেলিংঃ কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত মাংসপেশী বা তার আশেপাশে কোন স্পাশম বা ট্রিগার পয়েন্ট থাকলে কমাতে এবং ওই স্থানে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে ড্রাই নিডেলিং করা হয়
- অস্ত্রোপচারঃ বেশীরভাগ রোগী বিশ্রাম ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসয়ায় সুস্থ হয়ে ওঠে। যদি বিশ্রাম, ব্যাথানাশক ঔষধ ও ফিজিওথেরাপিতে রোগী ভালো না হয় এক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়।
লিখেছেন,
ডা: ইব্রাহিম হাওলাদার (পিটি)
বিপিটি, এমডিএমআর( ফেলো)
ফিজিওথেরাপিস্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এবং এখানে এপয়েন্টমেন্ট নিন।
আমাদের ফেসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
সাধারণ জিজ্ঞাসা
টেনিস এলবো এর ক্লিনিক্যাল নাম ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইলাইটিস। আমাদের কনুই এর বাইরের দিকের অংশ ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইল নামে পরিচিত ওখানে প্রদাহ হয় দেখে এই নামে ডাকা হয়। টেনিস এলবো কনুই এর বাইরের দিকের মাংসপেশীর অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে হয়ে থাকে। যারা কনুই বা কব্জি অনেক বেশী নাড়াচাড়া করতে হয় এমন কাজ করে থাকেন তারা এ রোগে অধিক ভুগে থাকেন। টেনিস এলবোর প্রাথমিক চিকিৎসা বিশ্রাম নেয়া তথা আক্রান্ত হাতের নাড়াচাড়া যথাসম্ভব কমিয়ে দেয়া প্রয়োজনে ব্রেস ব্যবহার করা, ব্যাথা এবং ফোলা কমাতে বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং পাশাপাশি একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেয়া।
টেনিস এলবো আর ল্যাটেরাল এপিকন্ডাইলাইটিস কি একই?
টেনিস এলবো কেনো হয়?
টেনিস এলবোর প্রাথমিক চিকিৎসা কি?