গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষণ কি? এর কারণ ও চিকিৎসা

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া, যা পেলভিক অর্গান প্রোল্যাপস (Pelvic Organ Prolapse) নামেও পরিচিত, এমন একটি অবস্থা যেখানে জরায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিচে নেমে আসে এবং যোনিপথে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর কিছু লক্ষণ রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলারা অনুভব করতে পারেন। প্রথমত, তলপেটে বা যোনিপথে ভারী বা চাপের অনুভূতি হতে পারে। মনে হতে পারে যেন কিছু একটা নিচে নেমে আসছে বা পড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা ভারী কাজ করলে এই অনুভূতি আরও বাড়তে পারে। এই পোস্টে আমরা গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, জরায়ু নিচে নেমে গেলে প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা, প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধা হওয়া অথবা প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি লাগতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যোনিপথে অস্বস্তি বা ব্যথা এবং যৌন মিলনে অসুবিধা হওয়াও এই অবস্থার লক্ষণ হতে পারে।

তৃতীয়ত, জরায়ু অতিরিক্ত পরিমাণে নিচে নেমে গেলে যোনিপথের মুখ থেকে তা দৃশ্যমানও হতে পারে। যদিও গর্ভাবস্থায় জরায়ু সামান্য নিচে নামা স্বাভাবিক হতে পারে, তবে যদি এই লক্ষণগুলো তীব্র হয় এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করে, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুর অবস্থান নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা পরামর্শ দিতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস হয় তা এই পোস্টের মাধ্যমে জানুন।

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষণ ও কারণসমূহ

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার লক্ষণ ও কারণসমূহ

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার মূল কারণ হলো পেলভিক মাংসপেশির দুর্বলতা, যা গর্ভকালীন হরমোন ও জরায়ুর চাপে বাড়ে। একাধিক সন্তান জন্মদান ও প্রসবকালীন আঘাত পেলভিক ফ্লোরকে দুর্বল করে। দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ভারী জিনিস তোলা পেটের ভেতরের চাপ বাড়িয়ে জরায়ুকে নিচে নামাতে পারে। জন্মগত দুর্বলতাও একটি কারণ।

পেলভিক মাংসপেশি দুর্বলতা

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো পেলভিক অঞ্চলের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনের পরিবর্তন এবং জরায়ুর ক্রমশ বৃদ্ধি পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের কারণে মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং জরায়ুকে তার সঠিক অবস্থানে ধরে রাখতে ব্যর্থ হতে পারে।

এছাড়াও, কিছু মহিলার জন্মগতভাবে পেলভিক মাংসপেশি দুর্বল থাকে। গর্ভাবস্থার অতিরিক্ত ওজন এবং চাপ এই দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে জরায়ু সহজে নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম না করাও এই দুর্বলতার একটি কারণ হতে পারে।

বারবার সন্তান জন্ম

যারা একাধিকবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রতিটি গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সময় পেলভিক মাংসপেশি এবং সহায়ক টিস্যু প্রসারিত এবং দুর্বল হয়ে যায়। বারবার এই প্রক্রিয়া হওয়ার ফলে মাংসপেশিগুলো তাদের স্থিতিস্থাপকতা হারাতে পারে এবং জরায়ুকে আগের মতো দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারে না।

একাধিক স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে, কারণ প্রসবের সময় পেলভিক ফ্লোরের উপর যথেষ্ট চাপ পড়ে এবং টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সময়ের সাথে সাথে এই দুর্বলতা জরায়ুকে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিচে নামিয়ে আনতে পারে।

প্রসবকালীন আঘাত বা চাপ

প্রসবের সময় যদি পেলভিক অঞ্চলে কোনো ধরনের আঘাত লাগে বা অতিরিক্ত চাপ পড়ে, তবে তা জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী প্রসব, ফোর্সেপ বা ভেন্টোজের ব্যবহার অথবা বড় আকারের বাচ্চা প্রসবের সময় পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি এবং স্নায়ুতে আঘাত লাগতে পারে।

এই আঘাতের ফলে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং জরায়ুকে সঠিকভাবে সাপোর্ট দিতে পারে না। প্রসবের পরে এই দুর্বলতা ধীরে ধীরে প্রকট হতে পারে এবং জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ভারী জিনিস তোলা

দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অতিরিক্ত ভারী জিনিস তোলার মতো কাজগুলো পেটের ভেতরের চাপ (intra-abdominal pressure) বাড়িয়ে তোলে। এই অতিরিক্ত চাপ পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি এবং লিগামেন্টের উপর পড়ে। দুর্বল পেলভিক মাংসপেশি এই চাপ সহ্য করতে না পারলে জরায়ু ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিচে নেমে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় এমনিতেই পেলভিক অঞ্চলের উপর বাড়তি চাপ থাকে, তাই এই ধরনের কাজগুলো জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় এই ধরনের কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়া বা সাবধানে করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়? বিস্তারিত এই পোস্টটি থেকে জানুন।

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার প্রধান লক্ষণসমূহ

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার প্রধান লক্ষণসমূহ

এর কিছু বিশেষ ও প্রধান লক্ষণও রয়েছে, যা দেখে ও বুঝে আপনি সতর্ক হতে পারবেন। লক্ষণগুলো হচ্ছে-

  • তলপেটে ভারী বা টান টান অনুভূতি: গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে গেলে তলপেটে অস্বস্তিকর ভারী ভাব বা টান লাগার মতো অনুভূতি হতে পারে। মনে হতে পারে যেন পেটের ভেতর কোনো অঙ্গ নীচের দিকে চাপ দিচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা হাঁটাচলা করলে এই অনুভূতি আরও বাড়তে পারে এবং বিশ্রাম নিলে কিছুটা কম মনে হতে পারে।
  • যোনিপথে কিছু বেরিয়ে আসার অনুভূতি: জরায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গিয়ে যোনিপথের দিকে নেমে আসলে, যোনিমুখে কিছু একটা বেরিয়ে আসছে বা ফোলাভাব অনুভব হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে মনে হতে পারে যেন যোনিপথে কোনো নরম পিণ্ড স্পর্শ করা যাচ্ছে। এটি জরায়ু নিচে নেমে আসার একটি স্পষ্ট লক্ষণ।
  • কোমর ও পিঠে ব্যথা: জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পেলভিক অঞ্চলের স্নায়ু ও মাংসপেশির উপর চাপ পড়তে পারে। এর ফলে কোমর এবং পিঠের নিচের দিকে একটানা ব্যথা অনুভব হতে পারে। এই ব্যথা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং অনেক সময় অস্বস্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  • প্রস্রাব বা পায়খানার সমস্যা: জরায়ু মূত্রাশয় বা মলাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করলে প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা, প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধা হওয়া অথবা প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। একইভাবে, মলাশয়ের উপর চাপের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • সাদা বা লালচে স্রাব: জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণে যোনিপথে অস্বস্তি বা প্রদাহ হতে পারে। এর ফলে যোনি থেকে সাদা বা হালকা লালচে রঙের স্রাব বের হতে পারে। যদি স্রাবের পরিমাণ বেশি হয় বা দুর্গন্ধ থাকে, তবে তা সংক্রমণের লক্ষণও হতে পারে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হওয়ার কারণ জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

লক্ষণ দেখা দিলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ গাইনিকোলজিস্টের (স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই অবস্থায় নিজের ইচ্ছামতো কোনো ওষুধ খাওয়া বা ঘরোয়া চিকিৎসা করা উচিত নয়। কারণ, এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে এবং মা ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। শুধুমাত্র একজন ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে কিছু diagnostic পরীক্ষা করার পরেই সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারবেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা বা পরামর্শ দিতে পারবেন।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। তিনি সম্ভবত জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলতে পারেন, যেমন ভারী কাজ এড়িয়ে চলা, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা অথবা পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করা। কিছু ক্ষেত্রে, সাপোর্টভ পেটের বেল্ট (supportive garment) ব্যবহারের পরামর্শও দিতে পারেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে, প্রসবের পর surgical চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং তার নির্দেশনা মেনে চলা অপরিহার্য।

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার ঝুঁকি ও জটিলতা

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার ঝুঁকি ও জটিলতা

অকাল প্রসব

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া বেশ কিছু ঝুঁকি ও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে যা মা ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হলো অকাল প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি। জরায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গেলে গর্ভের শিশুর উপর অস্বাভাবিক চাপ পড়তে পারে, যা সময়ের পূর্বে প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার কারণ হতে পারে। অকাল প্রসবের ফলে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

জরায়ু ও আশেপাশের অঙ্গের ক্ষতি

দ্বিতীয়ত, জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পেলভিক অঞ্চলের অন্যান্য অঙ্গ যেমন মূত্রাশয় ও মলাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী এই চাপের ফলে অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। মূত্রাশয়ের উপর চাপের কারণে প্রস্রাবের সমস্যা, যেমন ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ বা প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধা হতে পারে। একইভাবে, মলাশয়ের উপর চাপের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সংক্রমণ ও অতিরিক্ত রক্তপাত

সবচেয়ে গুরুতর জটিলতাগুলোর মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ এবং অতিরিক্ত রক্তপাত। জরায়ুর অস্বাভাবিক অবস্থানের কারণে যোনিপথে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, প্রসবের সময় বা প্রসব পরবর্তী পর্যায়ে জরায়ু এবং আশেপাশের টিস্যুতে আঘাত লাগলে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে, যা মায়ের জন্য জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে ও বিরত থাকতে হবে তা এই পোস্ট থেকে জেনে নিন।

প্রতিকার ও চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় জরায়ু সামান্য নিচে নেমে গেলে বা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ (Kegel exercises) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো পেলভিক অঞ্চলের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা জরায়ুকে তার সঠিক অবস্থানে ধরে রাখতে সহায়ক। নিয়মিত এবং সঠিকভাবে এই ব্যায়ামগুলো করলে জরায়ু আরও নিচে নেমে যাওয়া প্রতিরোধ করা যেতে পারে এবং অস্বস্তিও কম হতে পারে। তবে, কোনো প্রকার ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম করা উচিত।

জরায়ু বেশি মাত্রায় নিচে নেমে গেলে বা পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজে তেমন উপকার না পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুর স্থান নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলতে পারেন। মৃদু ক্ষেত্রে, তারা হয়তো কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেবেন, যেমন ভারী কাজ এড়িয়ে চলা বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা। গুরুতর ক্ষেত্রে, যেখানে জরায়ু যোনিপথের বাইরে বেরিয়ে আসে এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করে, তখন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জরায়ুকে তার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয় এবং পেলভিক ফ্লোরের দুর্বল টিস্যুগুলোকে মেরামত করা হয়।

গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কি তা আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিন।

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নামার ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ও সতর্কতা

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

প্রতিরোধের সহজ উপায়

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। দুটি গর্ভাবস্থার মধ্যে পর্যাপ্ত সময় বিরতি রাখা পেলভিক অঞ্চলের মাংসপেশি এবং টিস্যুকে পুনরুদ্ধার করার সুযোগ দেয়। বারবার গর্ভধারণ এবং প্রসবের কারণে পেলভিক ফ্লোরের উপর যে ধকল পড়ে, তা সময়ের সাথে সাথে দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, শরীরের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ভারী কাজ এড়িয়ে চলা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ওজন তোলা বা এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যাতে পেটে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই ধরনের কার্যকলাপ পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশির উপর অতিরিক্ত strain সৃষ্টি করে এবং জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। হালকা কাজকর্ম করা এবং ভারী জিনিস তোলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

কিছু সাবধানতা

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো গর্ভাবস্থায় যেকোনো জটিলতা এড়াতে সহায়ক। ডাক্তারের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে থাকলে জরায়ুর অবস্থান এবং পেলভিক অঞ্চলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত থাকা যায়। কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে, যেমন তলপেটে ভারী ভাব, যোনিপথে কিছু নেমে আসার অনুভূতি বা প্রস্রাবের সমস্যা, তা দ্রুত ডাক্তারকে জানানো উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা শনাক্ত করা গেলে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

মনে রাখবেন

কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তনও জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। সঠিক বসার ভঙ্গি বজায় রাখা এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে যাওয়া পেলভিক অঞ্চলের উপর চাপ কমাতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি, কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে পেলভিক ফ্লোরের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ধূমপান ত্যাগ করা এবং অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করাও পেলভিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার লক্ষণগুলোকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। যদি তলপেটে ভারী ভাব, যোনিপথে কিছু নেমে আসার অনুভূতি, কোমর বা পিঠে ব্যথা, প্রস্রাব বা পায়খানার সমস্যা অথবা অস্বাভাবিক স্রাব দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক। অনেক মহিলাই লজ্জায় বা দ্বিধায় এই লক্ষণগুলো চেপে যান, যা পরবর্তীতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। মনে রাখবেন, দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে অনেক ক্ষেত্রেই গুরুতর সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া এই কারণেও জরুরি যে, গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য এবং গর্ভের শিশুর সুস্থতা দুটোই এর সাথে জড়িত। জরায়ু নিচে নেমে গেলে অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়ে এবং মায়ের শারীরিক discomfort তো থাকেই। ডাক্তার আপনার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজনে কিছু পরীক্ষাও করতে পারেন। এরপর তিনি আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন, যা পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম থেকে শুরু করে গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত হতে পারে।

সবশেষে এটাই বলার, নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সচেতন হোন। গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ সময়, এবং এই সময়ে মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন এবং সুস্থ থাকুন।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 111

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *