স্ট্রোক কি?
স্ট্রোক একটি অত্যন্ত গুরুতর শারীরিক অবস্থা, যা মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পর্কিত। যখন কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন কিছু মস্তিষ্কের টিস্যু অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। এই ঘটনাকেই আমরা স্ট্রোক বলে থাকি। সহজভাবে বলতে গেলে, স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের একটি জরুরি অবস্থা।
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার প্রধান দুটি কারণ হলো: হয় রক্তনালী ব্লক হয়ে যায়, অথবা রক্তনালী ছিঁড়ে যায়। যখন রক্তনালী ব্লক হয়ে যায়, তখন মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে রক্ত পৌঁছাতে পারে না। অন্যদিকে, যখন রক্তনালী ছিঁড়ে যায়, তখন মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এই উভয় ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের কোষগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ তারা বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না।
স্ট্রোক হঠাৎ করেই হতে পারে এবং এর লক্ষণগুলো খুব দ্রুত প্রকাশ পায়। যেমন, হঠাৎ করে শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া, বা তীব্র মাথা ব্যথা অনুভূত হওয়া। এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া জরুরি, কারণ যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়। তাই, স্ট্রোককে একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি হিসেবে ধরা হয়।
স্ট্রোক এর লক্ষণ কি?
স্ট্রোক এর লক্ষণ কি ও প্রাথমিক পর্য়ায় স্ট্রোকের লক্ষণগুলির তীব্রতা কমই থাকে ,কিন্তু হঠাৎ করে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। তবে কিছু লক্ষণ আছে যা দেখলে আপনি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমনঃ
- মাথা ঘোরা ও বমি হওয়া: হঠাৎ করে তীব্র মাথা ঘোরা শুরু হলে এবং তার সাথে বমি হলে সতর্ক হওয়া উচিত। এটি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের ঘাটতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।
- অস্বাভাবিকভাবে তীব্র মাথাব্যথা: যদি কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়, যা আগে কখনো অনুভব করেননি, তবে এটিকে গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত। এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের লক্ষণ হতে পারে।
- বিভ্রান্তি বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস: স্ট্রোকের কারণে রোগী হঠাৎ করে বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। তিনি চিনতে ভুল করতে পারেন, সময়ের হিসাব ভুল করতে পারেন, অথবা তার স্মৃতিশক্তি সাময়িকভাবে হারিয়ে যেতে পারে।
- শরীরের একপাশে অসাড়তা বা দুর্বলতা: এটি স্ট্রোকের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। শরীরের যেকোনো একপাশের একটি হাত, পা, বা মুখের এক দিক হঠাৎ করে দুর্বল বা অবশ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় মুখ বেঁকে যায় এবং রোগী হাসতে পারেন না।
- কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা: স্ট্রোক হলে রোগীর কথা জড়িয়ে যেতে পারে, যা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী নিজেও কী বলছেন তা বুঝতে পারেন না। আবার, অন্যরা কী বলছে তা বুঝতেও তার অসুবিধা হতে পারে।
- দৃষ্টিশক্তি হারানো বা দেখতে অসুবিধা: হঠাৎ করে এক বা উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে বা রোগী সবকিছু ঝাপসা দেখতে পারেন।
- ভারসাম্য বা হাঁটার ক্ষমতা হারানো: স্ট্রোক হলে রোগীর ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং তিনি হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতে পারেন বা টলতে পারেন। এটি মস্তিষ্কের যে অংশ ভারসাম্যের জন্য দায়ী, তার ক্ষতির কারণে ঘটে।
এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে এক মুহূর্তও দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।
আরও জানুন : কোমর ব্যাথা নিরাময়ে আকুপাংচার যেন এক অনন্য চিকিৎসা
স্ট্রোক এর লক্ষণ কি
স্ট্রোকের ভয়াবহতা
বাংলাদেশে স্ট্রোকের পরিস্থিতি অনেক গুরুতর। ল্যানসেট (Lancet) এর গবেষণা অনুযায়ী, আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো স্ট্রোক। এর অর্থ হলো, অন্যান্য রোগ বা দুর্ঘটনার চেয়েও স্ট্রোকের কারণে এখানে বেশি মানুষ মারা যায়। এই পরিসংখ্যানটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
মৃত্যুর কারণ হওয়ার পাশাপাশি, স্ট্রোক মানুষের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিবন্ধিতারও প্রধান কারণ। যেসব রোগী স্ট্রোক থেকে বেঁচে যান, তাদের অনেকেই পরবর্তীতে শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতায় ভোগেন। এর ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না এবং অনেক সময় অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তাই, স্ট্রোক শুধু একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যাও বটে। এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য।
স্ট্রোকের প্রকারভেদ
ইস্কেমিক স্ট্রোকঃ এটি ঘটে যখন আপনার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী একটি ধমনী রক্ত জমাট বাঁধে।
হেমোরহেজিক স্ট্রোকঃ রক্তনালী ফেটে গেলে (বা ফেটে) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়। এর অর্থ হল আশেপাশের মস্তিষ্কের কোষগুলিতে কম রক্ত যায় যার ফলে তাদের মৃত্যু হয়।
মিনি-স্ট্রোক, বা ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক(টিআইএ): এটি ঘটে যখন অল্প সময়ের জন্য মস্তিষ্কের অংশে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যেমন অস্থায়ী বক্তৃতা হ্রাসের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। টিআইএ সাধারণত কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট পরে সমাধান করে।
স্ট্রোকের ঝুঁকিগুলো কি কি?
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো। এই কারণগুলো জীবনযাত্রা এবং কিছু শারীরিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত।
- পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কোনো সদস্যের স্ট্রোকের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিত।
- উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার): এটি স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে দুর্বল করে দেয়, যা থেকে স্ট্রোক হতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরি।
- ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
- হৃদরোগ: যাদের হৃদরোগ আছে, যেমন অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন (অ্যারিথমিয়া), তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। হৃদরোগের সঠিক চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
- উচ্চ কোলেস্টেরল: রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালীর ভেতরে চর্বি জমে এবং ব্লক তৈরি হতে পারে, যা স্ট্রোকের কারণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- স্থূলতা (ওবেসিটি): অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা পরোক্ষভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।
- ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান: ধূমপান রক্তনালীকে সংকীর্ণ করে এবং অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়িয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাদের মধ্যে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
স্ট্রোকের জন্য নিয়ন্ত্রণযোগ্য বা চিকিৎসাযোগ্য ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
ধূমপান: ধূমপান ত্যাগ করে আপনি আপনার ঝুঁকি কমাতে পারেন কেননা যারা ধুমপান করেন তাদের স্ট্রোক হওয়ার প্রবনতা বেশী থাকে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী ধূমপানে আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ: 140/90 mm Hg বা তার বেশি রক্তচাপ স্ট্রোকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণ। এটির সাধারণত কোন নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না এবং কোন আগাম সতর্কতা চিহ্ন থাকে না। এজন্য নিয়মিত আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করা জরুরি। আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যারোটিড বা অন্যান্য ধমনী রোগ: আপনার ঘাড়ের ক্যারোটিড ধমনী আপনার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে। এথেরোস্ক্লেরোসিস থেকে ফ্যাটি (চর্বি) জমার কারণে একটি ক্যারোটিড ধমনী সংকুচিত হয়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। ক্যারোটিড ধমনীগুলিকে নিউরোসার্জন দ্বারা ক্যারোটিড এন্ডার্টারেক্টমির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, যাতে ঘাড়ে একটি ছেদ তৈরি করা হয় এবং ধমনী থেকে ফলক অপসারণ করা হয়; বা ক্যারোটিড ধমনী এনজিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টিং, এটি একটি এন্ডোভাসকুলার পদ্ধতি যার জন্য ঘাড়ে কোন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না।
টিআইএ-এর ইতিহাস: প্রায় 30 শতাংশ স্ট্রোকের আগে এক বা একাধিক টিআইএ হয় যা স্ট্রোকের কয়েক দিন, সপ্তাহ বা এমনকি মাস আগে ঘটতে পারে।
ডায়াবেটিস: আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস, বিশেষ করে যখন চিকিত্সা না করা হয়, তখন আপনাকে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অন্যান্য অনেক গুরুতর স্বাস্থ্যগত প্রভাব রয়েছে।
উচ্চ রক্তের কোলেস্টেরল: রক্তে মোট কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা (240 mg/dL বা তার বেশি) হৃদরোগের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ, যা আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
সাম্প্রতিক গবেষণা প্রমাণ দেখায় যে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) গ্রহণকারী ব্যক্তিদের স্ট্রোকের ঝুঁকি 29 শতাংশ বেড়ে যায়, বিশেষ করে ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে।
অনিয়ন্ত্রিত ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
বয়স: শিশুসহ সব বয়সের মানুষের স্ট্রোক হয়। কিন্তু আপনার বয়স যত বেশি, স্ট্রোকের ঝুঁকি তত বেশি।
লিঙ্গ: স্ট্রোক মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি সাধারণ। বেশিরভাগ বয়সের মধ্যে, একটি নির্দিষ্ট বছরে মহিলাদের চেয়ে বেশি পুরুষের স্ট্রোক হবে। তবে, সমস্ত স্ট্রোক মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি মহিলারা। গর্ভবতী মহিলাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি । গর্ভবতী মহিলাদের স্ট্রোক এর লক্ষণ কি, কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় স্ট্রোকের লক্ষণগুলিকে ব্যাখ্যা করতে পারে না, যার ফলে তারা চিকিৎসা সেবা পেতে দেরি করে যা তাদের উচ্চ স্ট্রোক মৃত্যুর ঝুকি বেশি বাড়ায়।
বংশগতি এবং জাতি: পিতামাতা, দাদা-দাদি, বোন বা ভাইয়ের যদি স্ট্রোকের ইতিহাস থাকে তাহলে আপনার ও হওয়ার ঝুঁকি আছেন।
পূর্বে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক: আপনার যদি স্ট্রোক হয়ে থাকে, তাহলে আপনার আরেকটি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আপনার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে তবে আপনার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।
স্ট্রোক এর লক্ষণ কি, স্ট্রোকের প্রভাব
স্ট্রোকের লক্ষণ এবং এর প্রভাব মূলত নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশটি এবং কী পরিমাণ টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর। যেহেতু মস্তিষ্কের একটি অংশ শরীরের বিপরীত দিককে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই মস্তিষ্কের ডান দিকে স্ট্রোক হলে শরীরের বাম দিকে স্নায়বিক জটিলতা দেখা যায়। একইভাবে, যদি বাম দিকে স্ট্রোক হয়, তাহলে শরীরের ডান দিকে এর প্রভাব পড়ে। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো এই ক্ষতির অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।
ডান দিকের স্ট্রোকের প্রভাব
মস্তিষ্কের ডান দিকে স্ট্রোক হলে সাধারণত শরীরের বাম পাশে এর প্রভাব দেখা যায়। এর ফলে কিছু নির্দিষ্ট জটিলতা হতে পারে:
- শরীরের বাম পাশে প্যারালাইসিস: এটি ডান দিকের স্ট্রোকের একটি প্রধান লক্ষণ। শরীরের বাম দিকের হাত, পা এবং মুখ সম্পূর্ণ বা আংশিক অবশ হয়ে যেতে পারে।
- দৃষ্টি সমস্যা: আক্রান্ত ব্যক্তির দৃষ্টিতে সমস্যা হতে পারে। তিনি সবকিছু ঝাপসা দেখতে পারেন অথবা তার দেখার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যেতে পারে।
- আচরণগত পরিবর্তন: ডান দিকের স্ট্রোক হলে রোগীর আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি দ্রুত, অনুসন্ধিৎসু বা উদ্দেশ্যহীনভাবে কাজ করতে পারেন।
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস: এই ধরনের স্ট্রোকের ফলে রোগীর মনে রাখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে, অর্থাৎ তার স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে।
বাম দিকের স্ট্রোকের প্রভাব
মস্তিষ্কের বাম দিকে স্ট্রোক হলে এর প্রভাব শরীরের ডান পাশে দেখা যায়। এর ফলে সাধারণত নিচের সমস্যাগুলো হতে পারে:
- শরীরের ডান পাশে প্যারালাইসিস: বাম দিকের স্ট্রোকের কারণে শরীরের ডান দিকের হাত, পা এবং মুখ অবশ হয়ে যেতে পারে।
- কথা বলার সমস্যা: এটি বাম দিকের স্ট্রোকের একটি বিশেষ লক্ষণ। রোগী কথা বলতে বা শব্দ উচ্চারণ করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। তার কথা জড়িয়ে যেতে পারে বা তিনি কী বলতে চান তা গুছিয়ে বলতে পারেন না।
- ধীর ও সতর্ক আচরণ: এই ধরনের স্ট্রোক হলে রোগীর আচরণে ধীরতা ও সতর্কতা দেখা যায়। তিনি সহজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না এবং কোনো কাজ করতে অনেক সময় নিতে পারেন।
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস: বাম দিকের স্ট্রোকেও স্মৃতিশক্তির ওপর প্রভাব পড়তে পারে, যার ফলে রোগীর মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
স্ট্রোক একটি মারাত্মক রোগ হলেও কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। আমাদের জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কমান
স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত এটি পরীক্ষা করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা এবং লবণ খাওয়া কমিয়ে দেওয়া জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন
রক্তে উচ্চ মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) মস্তিষ্কের রক্তনালীতে চর্বি জমিয়ে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি স্ট্রোকের একটি অন্যতম কারণ। তাই, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফল, সবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। একই সাথে, তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
ধূমপান বর্জন করুন
ধূমপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এটি রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে এবং রক্তকে ঘন করে তোলে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্রুত কমে আসে। যারা ধূমপান করেন, তাদের অবিলম্বে এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
নিয়মিত ব্যায়াম
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা স্ট্রোক প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং করার মতো হালকা ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত চলাচল ভালো থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস স্ট্রোক প্রতিরোধে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। তাজা ফল, শাকসবজি, শস্য এবং মাছের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত লবণ, চিনি, এবং ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা দরকার। একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা বজায় রাখলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে আসে।
এই পাঁচটি সহজ উপায় অনুসরণ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
ধন্যবাদন্তে,
ডাঃ আরাফাত হোসেন, পিটি
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
উত্তরা শাখা
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা)
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
Appointment Now
সাধারণ জিজ্ঞাসা
ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষনসমূহ?
হঠাৎ বিভ্রান্তি, কথা বলতে বা বুঝতে সমস্যা, হঠাৎ হাঁটতে সমস্যা, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য বা সমন্বয় হারানো, তীব্র মাথাব্যথা।
স্ট্রোকের চিকিৎসা কি?
সাধারণত স্ট্রোকের কোনো লক্ষন দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে। তারপর প্যারালাইসিস জটিলতা থাকেলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর অধিনে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।
স্ট্রোক হলে করনীয় কি?
সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, দ্রুত একজন নিউরোলজিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্ট এর শরনাপন্য হয়ে চিকিৎসা নেয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা।