সাধারণ সর্দি-কাশির অন্যতম একটি অপ্রীতিকর লক্ষণ হলো মাথাব্যথা। এটি আপনার দৈনন্দিন কাজগুলোকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে, বিশেষ করে যদি উজ্জ্বল আলোতে গেলে আপনার ব্যথা বেড়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ঠান্ডাজনিত মাথাব্যথার কারণে কপাল, চোখ এবং গালের হাড়ের চারপাশে এক ধরনের চাপ বা জমাট বাঁধার মতো অনুভূতি হয়। এই ব্যথা ঠান্ডা লাগার অন্যান্য উপসর্গের সাথে প্রায়শই দেখা যায়।
একটি সাধারণ ঠান্ডা সঙ্গে মাথাব্যথা কারণ কি?
ঠান্ডা লাগলে মাথাব্যথা হওয়ার প্রধান কারণ হলো সাইনাস কনজেশন। যখন আপনার সর্দি হয়, তখন শরীর ভাইরাস ও জীবাণু বের করে দেওয়ার জন্য নাকে বেশি শ্লেষ্মা তৈরি করে। যদি এই শ্লেষ্মা অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হয় অথবা যদি আপনার নাকের ভেতরের পথ ফুলে ও সরু হয়ে যায়, তাহলে শ্লেষ্মা বের হতে পারে না এবং আটকে যায়। এর ফলে আপনার নাক বন্ধ হয়ে আসে।
এই আটকে থাকা শ্লেষ্মা আপনার মাথায়, বিশেষ করে সাইনাস-এর আশেপাশে চাপ তৈরি করে। সাইনাস হলো আপনার মাথার খুলির ভেতরে থাকা কয়েকটি ফাঁকা গহ্বর, যা আপনার নাকের চারপাশে, চোখের নিচে এবং কপালে অবস্থিত। এই জমে থাকা শ্লেষ্মার কারণে সাইনাসগুলোও ফুলে যায় এবং এতে প্রদাহ হয়। এই প্রদাহ ও চাপের ফলেই আপনার মাথায় ব্যথা শুরু হয়।
সাইনাস সংক্রান্ত মাথাব্যথার একটি বিশেষ লক্ষণ হলো, যখন আপনি মাথা নিচু করবেন বা সামনের দিকে ঝুঁকবেন, তখন আপনার মাথায় একটি কম্পনের মতো তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে। এর কারণ হলো, মাথা নিচু করলে সাইনাসের ওপর জমে থাকা শ্লেষ্মার চাপ আরও বেড়ে যায়। এই ধরনের মাথাব্যথা সাধারণত ঠান্ডা লাগার অন্যান্য লক্ষণগুলোর সাথে দেখা দেয় এবং ঠান্ডা লাগা সেরে গেলে তা ধীরে ধীরে কমে যায়।

ঠান্ডায় মাথা ব্যথা হওয়ার কারণসমূহ
ঠাণ্ডা লাগার কারণে মাথাব্যথা হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দায়ী থাকে। এই ভাইরাসগুলো সাধারণত শ্বাসনালীর উপরের অংশকে আক্রমণ করে এবং এর ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়, যার মধ্যে মাথাব্যথা অন্যতম। এই ধরনের ঠাণ্ডা লাগার জন্য যেসব ভাইরাস দায়ী, সেগুলো হলো:
- রাইনোভাইরাস (Rhinovirus): এটি সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার জন্য সবচেয়ে পরিচিত ভাইরাস।
- মানব মেটাপনিউমোভাইরাস (Human Metapneumovirus): এটিও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার একটি কারণ।
- হিউম্যান প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (Human Parainfluenza Virus): এই ভাইরাসটি ফুসফুসের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
- শ্বাসযন্ত্রের সিনসিসিয়াল ভাইরাস (Respiratory Syncytial Virus): বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসটি শ্বাসতন্ত্রের গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করে।
- অ্যাডেনোভাইরাস (Adenovirus): এটিও ঠাণ্ডাজনিত মাথাব্যথার একটি কারণ হতে পারে।
এই ভাইরাসগুলো সাধারণত হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়ানো ক্ষুদ্র ফোঁটার মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি যখন হাঁচি বা কাশি দেন, তখন এই ভাইরাসযুক্ত ফোঁটাগুলো বাতাসে ভেসে থাকে এবং অন্য সুস্থ ব্যক্তি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে তা গ্রহণ করলে সংক্রমিত হতে পারেন। এছাড়াও, ভাইরাস সংক্রমিত কোনো জিনিস বা পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর যদি সেই হাত দিয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা হয়, তাহলেও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
মাথায় ঠান্ডা লাগার লক্ষণ
সাধারণ ঠান্ডা লাগার লক্ষণগুলো সাধারণত ঠান্ডা লাগার জন্য দায়ী ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ১ থেকে ৩ দিন পর দেখা দিতে শুরু করে। যদিও এই লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবুও কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা যায়। নিচে সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
- গলা ব্যথা: ঠান্ডা লাগার প্রথম লক্ষণগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সাধারণত, গলায় এক ধরনের অস্বস্তি, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হয়, যা ঢোক গিলতে গেলে আরও বাড়ে।
- কাশি: শুষ্ক বা কফযুক্ত কাশি হতে পারে। এটি ঠান্ডা লাগার সময় এবং সেরে ওঠার পরেও কিছু দিন থাকতে পারে।
- সর্দি: নাক থেকে পাতলা বা ঘন শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি প্রথমে পাতলা জলের মতো হতে পারে, পরে ঘন হয়ে যেতে পারে।
- ঠাসা নাক: নাক বন্ধ বা ঠাসা থাকার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, যা বিশেষ করে রাতের বেলায় ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে।
- হাঁচি: নাক এবং গলার ভেতরের অংশে জ্বালাপোড়ার কারণে বারবার হাঁচি আসতে পারে।
- শরীর ব্যথা: পুরো শরীরে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত পেশী ও জয়েন্টগুলোতে হয়।
- মাথাব্যথা: সাধারণ থেকে হালকা ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে, যা অনেক সময় সাইনাসের সমস্যার কারণেও হতে পারে।
- ক্লান্তি: শরীর দুর্বল এবং ক্লান্ত লাগে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুম পেতে পারে বা দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হতে পারে।
জেনে নিন শীতে মাথা ব্যথার কারণগুলো
যেহেতু আপনার শরীরের পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন, অতিরিক্ত চাপ বা অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মাথাব্যথা হতে পারে। তা ছাড়া শীতের মৌসুমও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জার্নাল অফ হেডেক পেইন অনুসারে, নিম্ন তাপমাত্রা এবং ঘন ঘন মাথাব্যথার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। সেজন্য নিজেকে ভেতর থেকে উষ্ণ রাখতে হবে।

ঠান্ডায় মাথা ব্যথা হলে করণীয়
ক্যাফেইন সেবন করুন
ঠাণ্ডাজনিত কারণে যদি আপনার মাথাব্যথা হয়, তবে উষ্ণ প্রভাব আছে এমন জিনিস খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাথাব্যথার সাথে, প্রায়ই চা বা কফি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ ক্যাফেইন গ্রহণ মস্তিষ্ককে শিথিল রাখার পাশাপাশি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে৷ দ্য জার্নাল অফ হেডেক অ্যান্ড পেইন রিপোর্ট করে যে ক্যাফিন মেজাজ উন্নত করতে পারে, রক্তনালীর শিথিলতায় সহায়তা করতে পারে, সতর্কতা বাড়ায় এবং মেজাজ বাড়ায় তাই এটি মাথাব্যথাও কম করে৷
যোগাসন
নির্দিষ্ট যোগব্যায়াম ভঙ্গি করার পরে আপনি ভাল বোধ করতে পারেন। যোগব্যায়াম ভঙ্গি বা হালকা ঘাড় এবং কাঁধের ব্যায়াম আপনাকে শিথিল থাকতে সাহায্য করতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ স্টাডিজ অনুসারে, যোগব্যায়াম মাথাব্যথা এবং স্ট্রেস উপশমে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে যোগব্যায়াম বারবার মাথাব্যথার সমস্যার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হালকা গরম তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন
ঠাণ্ডাজনিত কারণে মাথাব্যথা হলে হালকা গরম তেল দিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করা আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। এ জন্য সরিষার তেলও মালিশ করতে পারেন। এটি পেশী শিথিল করার পাশাপাশি মাথাব্যথা থেকে দ্রুত ত্রাণ প্রদানে সহায়তা করতে পারে। তাছাড়া, এটি মাইগ্রেনের আক্রমণের সম্ভাবনা কমাতে পারে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়া মাথাব্যথার সর্বোত্তম চিকিত্সা কারণ এটি আপনার মনকে শিথিল করতে সহায়তা করে। অপর্যাপ্ত ঘুম এবং অনিদ্রা স্নায়বিক রোগের সাথে যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ক্রমাগত মাথাব্যথা রয়েছে, এই বিষয়ে গবেষণা অনুসারে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন এবং আপনার ঘরটি শান্ত এবং অন্ধকার রাখুন। এটি আপনাকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে।
আদার রস গ্রহণ করুন
আদার রস শরীরে তাপ বজায় রাখার পাশাপাশি মাথাব্যথা থেকে দ্রুত উপশম দিতে উপকারী প্রমাণিত। অধিকন্তু, এটি প্রদাহ কমাতে পারে এবং সেইসাথে ইমিউন সিস্টেমকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ জন্য পানিতে আদা সিদ্ধ করে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
পরিচালনায়ঃ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস , ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার , ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি , ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম , ইন্ডিয়া ।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা)
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
https://visionphysiotherapy.com/appoi..