
এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি কি?
আমাদের হাঁটু একটি জটিল এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জোড়া, যা তিনটি প্রধান হাড় দিয়ে গঠিত: উরুর হাড় (ফিমার), শিনের হাড় (টিবিয়া), এবং হাঁটুর টুপি (প্যাটেলা)। হাঁটুর টুপি (প্যাটেলা) হাঁটুর সামনের অংশকে সুরক্ষা দেয়। এই তিনটি হাড়কে একসাথে ধরে রাখতে এবং হাঁটুকে স্থির ও কার্যকর রাখতে সাহায্য করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লিগামেন্ট। যখন এই লিগামেন্টগুলোর মধ্যে কোনো একটিতে আঘাত লাগে, তখন হাঁটু দুর্বল হয়ে যায়। এই আঘাতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো এসিএল (ACL) লিগামেন্ট ইনজুরি।
হাঁটুর লিগামেন্টগুলোর মধ্যে অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট বা ACL সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি শক্তিশালী, নমনীয় টিস্যুর ব্যান্ড, যা হাঁটুর জয়েন্টের ভেতরে অবস্থিত। ACL উরুর হাড় (ফিমার) থেকে শিনের হাড় (টিবিয়া) পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হাঁটুকে সামনের দিকে এবং ঘূর্ণনজনিত অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ, এটি টিবিয়াকে উরুর হাড়ের উপর অতিরিক্ত সামনে সরে যাওয়া থেকে আটকায় এবং হাঁটুতে হঠাৎ মোচড় লাগা প্রতিরোধ করে। যখন খেলাধুলা বা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ করে দিক পরিবর্তন, লাফানো বা দ্রুত থামা হয়, তখন এই লিগামেন্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং এটি ছিঁড়ে যেতে পারে।
এসিএল ইনজুরি সাধারণত খেলাধুলার সাথে জড়িত। বিশেষ করে ফুটবল, বাস্কেটবল, বা স্কিইংয়ের মতো খেলায় এই ধরনের আঘাত বেশি দেখা যায়। ইনজুরি হলে হাঁটুতে তীব্র ব্যথা, ফোলা, এবং অস্থিরতা অনুভূত হয়। আঘাতের সময় অনেকে হাঁটুতে একটি “পপিং” শব্দ শুনতে বা অনুভব করতে পারেন। যদি এসিএল লিগামেন্ট পুরোপুরি ছিঁড়ে যায়, তাহলে হাঁটু সম্পূর্ণ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করা কঠিন হয়ে যায়। এই ধরনের ইনজুরির ক্ষেত্রে সাধারণত অস্ত্রোপচার বা ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হয়। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে হাঁটুতে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে পারে।
হাঁটু জয়েন্টে অবস্থিত চারটি প্রধান লিগামেন্ট হলো
- মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট( এমসিএল)
- ল্যাটারাল কোল্যাটেরাল লিগামেন্ট( এলসিএল)
- অ্যান্টিরিয়োর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট( এসিএল)
- পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট( পিসিএল)
এছাড়াও মিডিয়াল ও ল্যাটেরাল মেনিস্কাস তো আছেই, যা অতিরিক্ত স্থিতিশীলতা প্রদান করে, হাঁটু জয়েন্টে শক শোষকের কাজ করে ।
অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট( এসিএল) হল একটি শক্তিশালী, নমনীয় টিস্যুর ব্যান্ড, যা হাঁটুর জয়েন্টের অভ্যন্তরে ফিমারকে( উরু) টিবিয়া( শিন) এর সাথে সংযুক্ত করে । এসিএল পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্টের সাথে একটি ক্রস আকৃতি তৈরি করে । ফিমার থেকে টিবিয়াতে যাওয়ার সময় এসিএল অগ্রভাগে, মধ্যবর্তীভাবে, এবং জয়েন্ট জুড়ে দূরত্বে চলে ।
এসিএল হাঁটু জয়েন্টের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো । এসিএল হাঁটুতে স্থিতিশীলতা প্রদান করে । এসিএল টিবিয়ার উপর পিছন দিকে পিছলে যাওয়া থেকে ফিমারকে আটকাতে এবং টিবিয়াকে ফিমারের নীচে সামনের দিকে পিছলে যাওয়া থেকে রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এসিএল ঘূর্ণনশীল লোডগুলোকেও প্রতিরোধ করে । যখন এসিএল আহত হয়, তখন হাঁটু অস্থির হয়ে যায় বা এমনকি হাঁটু ছেড়ে দিতেছে এমন অনুভুতিও দিতে পারে, বিশেষ করে যখন থামার বা দ্রুত ঘুরানোর চেষ্টা করা হয় ।
এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি কারণ
এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি- এন্টেরিয়োর ক্লোরুসিয়েট লিগামেন্টে ব্যথার কারণে বা ইনজুরিগত কারণকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যা নিম্নরুপ-
নন কন্ট্রাক্ট ইনজুরি
এটি তখনই হয় যখন ঘূর্ণন শক্তির সাথে মিলিত হঠাৎ ক্ষয়কারী শক্তি হাঁটুর সংস্পর্শে আসে, যেমন হঠাৎ করে হাঁটু মোচড় দেওয়া দৌড়ানো বা লাফা-লাফি থেকে অবতরণ করার সময় দ্রুত দিক পরিবর্তন করা।
পাশাপাশি হাইপার এক্সটেনশন (হাঁটুর খুব বেশি সোজা হওয়া) বা এক্সট্রিম হাইপারফ্লেক্সন (হাঁটুর খুব বেশি বাঁকানো) করলেও এসিএল এর ক্ষতি হতে পারে ।

কন্টাক্ট ইনজুরি
এটি সাধারণত হতে পারে যখন হাঁটুর বাইরে বা হাঁটুর নীচের অংশে ব্যথা বা পায়ে সরাসরি আঘাত লাগে । এসিএল লিগামেন্টে আগের পাওয়া আঘাত । খেলা-ধুলায় অংশগ্রহণের জন্য বার বার দিক পরিবর্তনের প্রয়োজন ।
কাদের এসিএল ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকি বেশি পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এসিএল ইনজুরিতে ভোগার সম্ভাবনা বেশি ।
এসিএল ইনজুরির গ্রেড
এসিএল ইনজুরির গ্রেড নং-১, গ্রেড নং-২ এবং গ্রেড নং-৩ স্প্রেইন হিসাবে সাজানো বা শ্রেণীবদ্ধ করা হয় ।
গ্রেড ওয়ান স্প্রেইন
যখন কোনো লিগামেন্টে গ্রেড-১ ইনজুরি হয়, তখন এর ফাইবারগুলো প্রসারিত হয়, কিন্তু পুরোপুরি ছিঁড়ে যায় না। লিগামেন্টের মূল গঠনগত বিন্যাস অক্ষত থাকে। এই ধরনের আঘাতকে “মৃদু স্প্রেইন” বা হালকা আঘাত হিসেবে ধরা হয়।
এই ইনজুরির কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- আক্রান্ত স্থানে হালকা ব্যথা এবং ফোলা অনুভূত হওয়া।
- স্থানটি স্পর্শ করলে মৃদু ব্যথা পাওয়া।
- হাঁটুতে কোনো ঝাঁকি বা অস্থিতিশীলতা অনুভূত হয় না। হাঁটাচলার সময় বা কোনো কাজ করার সময় মনে হয় না যে হাঁটু ছেড়ে দিচ্ছে।
- হাঁটুতে কোনো বর্ধিত শিথিলতা (laxity) বা দুর্বলতা থাকে না। জয়েন্টটি স্বাভাবিক এবং দৃঢ় অনুভূত হয়।
এই ধরনের ইনজুরির জন্য সাধারণত বিশ্রাম, বরফ দেওয়া এবং হালকা ব্যায়ামের মতো সহজ চিকিৎসা যথেষ্ট হয়।
আরও পড়ুন : হাঁটু ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা (ফিজিওথেরাপি)
আরও দেখুন : হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় / হাটুর জয়েন্টে ব্যাথা কমানোর উপায়
গ্রেড টু স্প্রেইন
গ্রেড-২ স্প্রেইনকে বলা হয় মাঝারি ACL ইনজুরি, যেখানে লিগামেন্টের ফাইবারগুলো আংশিকভাবে ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের আঘাত গ্রেড-১ এর চেয়ে গুরুতর, কিন্তু গ্রেড-৩ এর মতো সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যায় না। এই ইনজুরির কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
- আংশিক ছিঁড়ে যাওয়া: এই অবস্থায় লিগামেন্টের কিছু তন্তু ছিঁড়ে যায়, যার ফলে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় রক্তপাত হতে পারে। যদিও লিগামেন্টটি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয় না, এটি তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা কিছুটা হারায়।
- ব্যথা ও ফোলা: আঘাতের পর আক্রান্ত স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা এবং ফোলা দেখা যায়। এর কারণে হাঁটুর কিছু কার্যকারিতা হ্রাস পায়, যার ফলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হতে পারে।
- অস্থিতিশীলতা: এই ইনজুরির একটি প্রধান লক্ষণ হলো হাঁটুর অস্থিতিশীলতা। আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁটার সময় বা হঠাৎ দিক পরিবর্তন করার সময় হাঁটুতে ঝাঁকি অনুভব করতে পারেন, অথবা মনে হতে পারে যে হাঁটু “ছেড়ে দিচ্ছে”।
- রোগ নির্ণয়: এন্টেরিয়র ড্রয়ার স্ট্রেস টেস্টের মতো কিছু বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ধরনের ইনজুরি নির্ণয় করা হয়। এই পরীক্ষায় হাঁটু পরীক্ষা করলে ব্যথা বেড়ে যায় এবং হাঁটুর শিথিলতা (laxity) বোঝা যায়, যা লিগামেন্টের আংশিক ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়।
সাধারণত, গ্রেড-২ ইনজুরির চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি, একটি ব্রেস ব্যবহার এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে হাঁটুর স্থায়িত্ব বজায় থাকে।
গ্রেড থ্রি স্প্রেইন
লিগামেন্টের ফাইবার সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেছে( ফেটে গেছে); লিগামেন্ট নিজেই সম্পূর্ণভাবে দুটি অংশে বিভক্ত ।
টেন্ডারনেস বা কোমলতা আছে কিন্তু, অসহনীয় ব্যথা, বিশেষ করে যখন আঘাতের স্থানে গভীরতার সাথে তুলনা করা হয় ।
সামান্য বা কম ফোলা অথবা অনেক বেশি ফোলা হতে পারে । লিগামেন্ট হাঁটুর, নড়া-চড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না । হাঁটুতে ঝাঁকির অনুভব বা অনুভূত হয় বা নির্দিষ্ট সময়ে দেখা যায় হাঁটু ছেড়ে দেয় অনুভব হয় । একটি ইতিবাচক পিভট শিফট পরীক্ষা নীরিক্ষা দ্বারা নির্দেশিত আছে ঘূর্ণনশীল অস্থিরতাও রয়েছে ( রোটেশনলাল ইন্সটাবিলিটি)।
একটি এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি অ্যাভালশন ঘটে যে সময় এন্টেরিয়োরে ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট ফিমার বা টিবিয়া থেকে দূরে সরে যায় বা ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের আঘাত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম বয়সি বা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় । অগ্রবর্তী ক্রুসিয়েট ঘাটতি বা হাঁটু শব্দটি একটি গ্রেড এর মধ্যে যেমন থ্রি স্প্রেইনকে বোঝায় যেখানে এসিএল এর সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যায়।
এসিএল ইনজুরির ক্লিনিকাল উপস্থাপনা
এসিএল ইনজুরির লক্ষণগুলো সাধারণত খুবই স্পষ্ট হয়। আঘাতের ধরনের ওপর ভিত্তি করে এর তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু কিছু সাধারণ লক্ষণ প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা যায়। এগুলি হলো:
আঘাতের তাৎক্ষণিক লক্ষণ
- ‘পপিং’ শব্দ: ইনজুরি হওয়ার সময় প্রায়শই একটি বিকট ‘পপিং’ বা ফাটলের মতো শব্দ শোনা যায় বা অনুভব করা যায়। এটি সাধারণত লিগামেন্ট পুরোপুরি ছিঁড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
- তীব্র ব্যথা: আঘাতের সাথে সাথে হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
- অস্থিরতা: প্রথম দিকে হাঁটুতে এক ধরনের ঝাঁকুনি বা অস্থিরতা অনুভব হয়। অনেকের মনে হয় যেন হাঁটু ‘ছেড়ে দিচ্ছে’ বা জয়েন্টটি স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গেছে। এই অস্থিরতা বেশিরভাগ সময়ই হাঁটু ভাঁজ করা বা মোচড়ানোর সময় বেশি অনুভূত হয়।
- দ্রুত ফোলা: আঘাতের কিছুক্ষণের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়। এই ফোলা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা এতটাই বেশি হতে পারে যে হাঁটুর ভেতরের অন্যান্য লক্ষণগুলো সহজে বোঝা যায় না।
আঘাতের পরবর্তী লক্ষণ
- নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা: ইনজুরির পর হাঁটু সম্পূর্ণভাবে সোজা করা বা ভাঁজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফোলা এবং ব্যথার কারণে হাঁটার ক্ষমতাও অনেক কমে যায়।
- স্পর্শকাতরতা: হাঁটুর চারপাশে, বিশেষ করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে, স্পর্শ করলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। যদি হাঁটুর মাঝখানের দিকে (মেডিয়াল সাইডে) ব্যথা থাকে, তবে তা মেনিস্কাস বা তরুণাস্থিতে আঘাতের ইঙ্গিত দিতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা: যদি ইনজুরির পর চিকিৎসা না করা হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে হাঁটু অস্থিতিশীল থাকে। এর ফলে হঠাৎ করে মোচড় লাগা বা দিক পরিবর্তন করার সময় হাঁটু আবার “ছেড়ে দিচ্ছে” এমন অনুভূতি হতে পারে।
আরও পড়ুন : হাঁটু ব্যথা হলে করনীয় কি জেনে নিন
আরও দেখুন : ডান / বাম পায়ের হাঁটুতে ব্যথা হলে করণীয়│হাঁটু ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
এসিএল ইনজুরির চিকিৎসা
এসিএল ইনজুরির চিকিৎসা নির্ভর করে আঘাতের তীব্রতা, রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার ধরনের ওপর। একজন ডাক্তার প্রথমে আঘাতের মাত্রা মূল্যায়ন করেন এবং তারপর উপযুক্ত চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন।
মৃদু আঘাতের চিকিৎসা (নন-সার্জিক্যাল)
যদি এসিএল ইনজুরি হালকা বা মাঝারি (গ্রেড-১ বা গ্রেড-২) হয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বা সার্জারির প্রয়োজন হয় না। এই ধরনের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা ও ফোলা কমানো এবং হাঁটুর কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা। এই চিকিৎসার পদ্ধতিগুলোকে সংক্ষেপে R.I.C.E বলা হয়, যা হলো:
- বিশ্রাম (Rest): আঘাত পাওয়ার পর হাঁটুকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে যাতে লিগামেন্ট নিজে থেকে সেরে উঠতে পারে।
- বরফ (Ice): ব্যথা এবং ফোলা কমাতে আঘাতের স্থানে নিয়মিত বরফের সেঁক দিতে হবে।
- সংকোচন (Compression): হাঁটুকে স্থিতিশীল রাখতে এবং ফোলা কমাতে একটি ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ বা ব্রেস ব্যবহার করা হয়।
- উঁচুতে রাখা (Elevation): পা বালিশের ওপর তুলে উঁচুতে রাখতে হবে, যা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে এবং ফোলা কমায়।
এছাড়াও, হাঁটুকে সুরক্ষিত ও স্থির রাখার জন্য কিছু দিনের জন্য একটি হাঁটুর বন্ধনী (ব্রেস) পরার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গুরুতর আঘাতের চিকিৎসা (সার্জিক্যাল)
যদি এসিএল সম্পূর্ণরূপে ছিঁড়ে যায় (গ্রেড-৩) অথবা হাঁটুর অন্যান্য অংশ যেমন মেনিস্কাস বা অন্যান্য লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে প্রায়শই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এসিএল-এর আঘাতপ্রাপ্ত লিগামেন্টকে মেরামত করার চেয়ে নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়।
- আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি: এই পদ্ধতিতে সার্জন হাঁটুর চারপাশে ছোট ছোট ছিদ্র করে একটি বিশেষ ক্যামেরা ও যন্ত্র ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। এই প্রক্রিয়াকে লিগামেন্ট পুনর্গঠন (ligament reconstruction) বলা হয়, যেখানে শরীরের অন্য কোনো স্থান থেকে টিস্যু (গ্রাফট) নিয়ে নতুন লিগামেন্ট তৈরি করা হয়।
- পোস্ট-অপারেটিভ ফিজিওথেরাপি: অস্ত্রোপচারের পর রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ব্যায়াম করে হাঁটুর পেশীগুলো শক্তিশালী করা হয়, জয়েন্টের নমনীয়তা এবং গতির সম্পূর্ণ পরিসর পুনরুদ্ধার করা হয়। ফিজিওথেরাপি ছাড়া অস্ত্রোপচারের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।
এসিএল ইনজুরি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
- অতিরিক্ত ক্লান্ত অবস্থায় ব্যায়াম করা উচিত নয় বা এড়িয়ে চলুন ।
- আপনার পায়ের পেশী শক্তিশালী করা ।
- দুর্বল কোয়াড্রিসেপ (উরুর সামনের অংশ) এবং বিশেষ করে হ্যামস্ট্রিং ( উরুর পিছনে) এসিএল আঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- সমানভাবে পেশী গ্রুপ বিকাশের জন্য কাজ করুন ।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
এসিএল ইনজুরি চিকিৎসা কি?
প্রাথমিক অবস্থায় বিশ্রাম নিতে হবে, পা উঁচু করে রাখতে হবে, যেন ফোলা কমে সেজন্য বরফ লাগাতে হবে।
কখন ফিজিওথেরাপিষ্ট এর স্বরণাপন্ন হবেন?
আঘাত পাওয়ার পর পরই যত দ্রুত সম্ভব একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিষ্ট এর পরামর্শ নিন।
ধন্যবাদান্তে-
ডাঃ মাছুম বিল্লাহ মিয়াজি, পিটি
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা)
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার