এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি কি?
হাঁটু জয়েন্ট তিনটি হাড় দিয়ে গঠিত; উরু( ফিমার), শিন( টিবিয়া), এবং হাঁটুর ক্যাপ( প্যাটেলা) । হাঁটুর ক্যাপ বা প্যাটেলা হাঁটুর সামনের অংশে বেশ কিছুটা সুরক্ষা দেয় । হাঁটু জয়েন্টের মধ্যে বেশ কিছু লিগামেন্ট রয়েছে, যা এই হাড়গুলোকে একত্রে সংযুক্ত করে এবং জয়েন্টটিকে স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
হাঁটু জয়েন্টে অবস্থিত চারটি প্রধান লিগামেন্ট হলো
- মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট( এমসিএল)
- ল্যাটারাল কোল্যাটেরাল লিগামেন্ট( এলসিএল)
- অ্যান্টিরিয়োর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট( এসিএল)
- পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট( পিসিএল)
এছাড়াও মিডিয়াল ও ল্যাটেরাল মেনিস্কাস তো আছেই, যা অতিরিক্ত স্থিতিশীলতা প্রদান করে, হাঁটু জয়েন্টে শক শোষকের কাজ করে ।
অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট( এসিএল) হল একটি শক্তিশালী, নমনীয় টিস্যুর ব্যান্ড, যা হাঁটুর জয়েন্টের অভ্যন্তরে ফিমারকে( উরু) টিবিয়া( শিন) এর সাথে সংযুক্ত করে । এসিএল পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্টের সাথে একটি ক্রস আকৃতি তৈরি করে । ফিমার থেকে টিবিয়াতে যাওয়ার সময় এসিএল অগ্রভাগে, মধ্যবর্তীভাবে, এবং জয়েন্ট জুড়ে দূরত্বে চলে ।
এসিএল হাঁটু জয়েন্টের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো । এসিএল হাঁটুতে স্থিতিশীলতা প্রদান করে । এসিএল টিবিয়ার উপর পিছন দিকে পিছলে যাওয়া থেকে ফিমারকে আটকাতে এবং টিবিয়াকে ফিমারের নীচে সামনের দিকে পিছলে যাওয়া থেকে রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এসিএল ঘূর্ণনশীল লোডগুলোকেও প্রতিরোধ করে । যখন এসিএল আহত হয়, তখন হাঁটু অস্থির হয়ে যায় বা এমনকি হাঁটু ছেড়ে দিতেছে এমন অনুভুতিও দিতে পারে, বিশেষ করে যখন থামার বা দ্রুত ঘুরানোর চেষ্টা করা হয় ।
এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি কারণ
এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি- এন্টেরিয়োর ক্লোরুসিয়েট লিগামেন্টে ব্যথার কারণে বা ইনজুরিগত কারণকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যা নিম্নরুপ-
নন কন্ট্রাক্ট ইনজুরি
এটি তখনই হয় যখন ঘূর্ণন শক্তির সাথে মিলিত হঠাৎ ক্ষয়কারী শক্তি হাঁটুর সংস্পর্শে আসে, যেমন হঠাৎ করে হাঁটু মোচড় দেওয়া দৌড়ানো বা লাফা-লাফি থেকে অবতরণ করার সময় দ্রুত দিক পরিবর্তন করা।
পাশাপাশি হাইপার এক্সটেনশন (হাঁটুর খুব বেশি সোজা হওয়া) বা এক্সট্রিম হাইপারফ্লেক্সন (হাঁটুর খুব বেশি বাঁকানো) করলেও এসিএল এর ক্ষতি হতে পারে ।
কন্টাক্ট ইনজুরি
এটি সাধারণত হতে পারে যখন হাঁটুর বাইরে বা হাঁটুর নীচের অংশে ব্যথা বা পায়ে সরাসরি আঘাত লাগে । এসিএল লিগামেন্টে আগের পাওয়া আঘাত । খেলা-ধুলায় অংশগ্রহণের জন্য বার বার দিক পরিবর্তনের প্রয়োজন ।
কাদের এসিএল ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকি বেশি পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এসিএল ইনজুরিতে ভোগার সম্ভাবনা বেশি ।
এসিএল ইনজুরির গ্রেড
এসিএল ইনজুরির গ্রেড নং-১, গ্রেড নং-২ এবং গ্রেড নং-৩ স্প্রেইন হিসাবে সাজানো বা শ্রেণীবদ্ধ করা হয় ।
গ্রেড ওয়ান স্প্রেইন
লিগামেন্টের ফাইবারগুলো বৃদ্ধি পায়, কিন্তু তাদের গঠনগত শ্রেনী বিন্যাস ঠিক আছে মানে লিগামেন্টে কোন ত্রুটি বা ছিড়া নেই।
সামান্য টেন্ডারনেস – ব্যথা যুক্ত স্থানে স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হওয়া অথবা ফোলা ।
হাঁটুতে ঝাঁকি অনুভুত হয়না বা কার্যকলাপের সময় হাঁটু ছেড়ে দেয় না ।
কোন নির্ধারিত বা বর্ধিত শিথিলতা ( ল্যাক্সিটি) নেই, একটি সঠিক বা দৃঢ় ফিল আছে ।
আরও পড়ুন : হাঁটু ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা (ফিজিওথেরাপি)
আরও দেখুন : হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় / হাটুর জয়েন্টে ব্যাথা কমানোর উপায়
গ্রেড টু স্প্রেইন
লিগামেন্টের ফাইবারগুলো, আংশিকভাবে ছিঁড়ে যায় বা, রক্তক্ষরণের সাথে অসম্পূর্ণ ছিঁড়ে যায় ।
সামান্য ব্যথা এবং মাঝারি ফোলাভাব রয়েছে এবং কিছু কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পায়।
হাঁটুর জয়েন্ট ঝাঁকি খাচ্ছে এমন বোধ হতে পারে বা হাঁটার সময়ও ছেড়ে দিতে পারে ।
এন্টেরিয়োর ড্রয়ার স্ট্রেস টেস্টের, মতো স্পেশাল কিছু টেস্ট দিয়ে, পরীক্ষা করলে ব্যথা ক্রমাগত বাড়ে ।
গ্রেড থ্রি স্প্রেইন
লিগামেন্টের ফাইবার সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেছে( ফেটে গেছে); লিগামেন্ট নিজেই সম্পূর্ণভাবে দুটি অংশে বিভক্ত ।
টেন্ডারনেস বা কোমলতা আছে কিন্তু, অসহনীয় ব্যথা, বিশেষ করে যখন আঘাতের স্থানে গভীরতার সাথে তুলনা করা হয় ।
সামান্য বা কম ফোলা অথবা অনেক বেশি ফোলা হতে পারে । লিগামেন্ট হাঁটুর, নড়া-চড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না । হাঁটুতে ঝাঁকির অনুভব বা অনুভূত হয় বা নির্দিষ্ট সময়ে দেখা যায় হাঁটু ছেড়ে দেয় অনুভব হয় । একটি ইতিবাচক পিভট শিফট পরীক্ষা নীরিক্ষা দ্বারা নির্দেশিত আছে ঘূর্ণনশীল অস্থিরতাও রয়েছে ( রোটেশনলাল ইন্সটাবিলিটি)।
একটি এসিএল লিগামেন্ট ইনজুরি অ্যাভালশন ঘটে যে সময় এন্টেরিয়োরে ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট ফিমার বা টিবিয়া থেকে দূরে সরে যায় বা ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের আঘাত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম বয়সি বা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় । অগ্রবর্তী ক্রুসিয়েট ঘাটতি বা হাঁটু শব্দটি একটি গ্রেড এর মধ্যে যেমন থ্রি স্প্রেইনকে বোঝায় যেখানে এসিএল এর সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যায়।
এসিএল ইনজুরির ক্লিনিকাল উপস্থাপনাঃ
দাঁড়ানো, অবতরণ বা লাফানোর পরে ঘটে । আঘাতের সময় একটি শ্রবণযোগ্য পপ বা ফাটল হতে পারে । প্রাথমিক ভাবে ঝাঁকি বা অস্থিরতার অনুভূতি যা পরে ব্যাপক ফোলা দ্বারা ছায়াযুক্ত বা ঢেকে যেতে পারে । বিশেষ করে পিভটিং বা ঘুর্নায়ু অথবা মোচড়ের গতিতে কোন কাজ করতে গেলে বেশিরভাগ সময় হাঁটু ছেড়ে দিচ্ছে এমন অনুভতি বা অনুভব হয়ে থাকে। এসিএল দূরে সরে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে তা অত্যন্ত ব্যথা অথবা বেদনাদায়ক, বিশেষ করে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে পাবার পরক্ষনেই বা পরপরই । হাঁটু ফুলে যাওয়া বা ফুলে গেলেও সাধারণত তাৎক্ষণিক ছড়িয়ে পড়া এবং বিসতৃত হয়, তবে ন্যূনতম সময় অতিবাহিত হতে পারে বা বিলম্বিত হতে পারে ।
সীমাবদ্ধ আন্দোলন হতে পারে বিশেষ ভাবে হাঁটু সম্পূর্ণ প্রসারিত করতে পারে না বা অক্ষম । সম্ভাব্য সময় ব্যাপক মৃদু টেন্ডারনেস বা স্পর্শে ব্যথা বেশিরভাগ সময় অনুভব করা । জয়েন্টের মাঝামাঝি স্থানে বা মধ্যবর্তী দিকে ( মিডিয়াল সাইডে) টেন্ডারনেস থাকলে তা কম সময় বা তরুণাস্থিতে আঘাত নির্দেশ করতে পারে ইত্যাদি ।
আরও পড়ুন : হাঁটু ব্যথা হলে করনীয় কি জেনে নিন
আরও দেখুন : ডান / বাম পায়ের হাঁটুতে ব্যথা হলে করণীয়│হাঁটু ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
এসিএল ইনজুরির চিকিৎসা
ডাক্তার ইনজুরির তীব্রতা মূল্যায়ন করার পর পরবর্তী পদক্ষেপটি বিবেচনা করবেন । একটি হালকা আঘাতের জন্য,
- বিশ্রামের নির্দেশ দেওয়া হবে
- পা একটু উঁচুতে রাখতে হবে
- ব্যথা এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করার জন্য হাঁটুতে বরফের প্যাক প্রয়োগ করতে বলা হবে
- হাঁটুকে স্থিতিশীল রাখার জন্য কিছুদিনের জন্য হাঁটুতে একটি বন্ধনী পরতে হতে পারে।
তবে গুরুতর আঘাতের জন্য আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, কারণ সব এ.সি.এল লিগামেন্ট ইনজুরি আঘাতের প্রায় অর্ধেক জয়েন্টের বাকি কাঠামোর ক্ষতি করে যেমনঃ অন্যান্য লিগামেন্ট / মেনিস্কাস, যা জয়েন্টের তরুণাস্থি ।
আপনার হাঁটুতে স্থিতিশীলতা এবং কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করার জন্য এসিএল ছিঁড়ে গেলে প্রায়ই সার্জারির প্রয়োজন পড়ে । একজন সার্জন আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি করতে পারেন, যা আপনাকে নিরাময়ের পথে নিয়ে যেতে পারে । পরে শক্তি পুনঃর্নির্মাণ এবং গতির সম্পূর্ণ পরিসর ফিরে পেতে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হবে ।
এসিএল ইনজুরি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
- অতিরিক্ত ক্লান্ত অবস্থায় ব্যায়াম করা উচিত নয় বা এড়িয়ে চলুন ।
- আপনার পায়ের পেশী শক্তিশালী করা ।
- দুর্বল কোয়াড্রিসেপ (উরুর সামনের অংশ) এবং বিশেষ করে হ্যামস্ট্রিং ( উরুর পিছনে) এসিএল আঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- সমানভাবে পেশী গ্রুপ বিকাশের জন্য কাজ করুন ।
[sc_fs_multi_faq headline-0=”h3″ question-0=”এসিএল ইনজুরি কি?” answer-0=”সাধারণ হাঁটুর আঘাত। যার ফলে লিগামেন্টের জয়েন্টটিতে টান লাগে বা ছিঁড়ে যায়। এটি হাঁটুতে সরাসরি আঘাত থেকেও ঘটতে পারে।” image-0=”” headline-1=”h3″ question-1=”এসিএল ইনজুরি চিকিৎসা কি?” answer-1=”প্রাথমিক অবস্থায় বিশ্রাম নিতে হবে, পা উঁচু করে রাখতে হবে, যেন ফোলা কমে সেজন্য বরফ লাগাতে হবে।” image-1=”” headline-2=”h3″ question-2=”কখন ফিজিওথেরাপিষ্ট এর স্বরণাপন্ন হবেন?” answer-2=”আঘাত পাওয়ার পর পরই যত দ্রুত সম্ভব একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিষ্ট এর পরামর্শ নিন।” image-2=”” count=”3″ html=”true” css_class=””]
ধন্যবাদান্তে-
ডাঃ মাছুম বিল্লাহ মিয়াজি, পিটি
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা)
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার