কোমর ব্যথা কি?
কোমর ব্যথা হল কটিদেশীয় অঞ্চলে ব্যথা যা পিঠের নিচের অংশ থেকে শুরু হয় এবং পায়ের দিকে বিকিরণ করতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে হতে পারে।
কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ ,অনেকগুলি কারণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
পেশী বা টেন্ডন আঘাত: কোমর ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল পেশী বা টেন্ডন আঘাত। এটি হঠাৎ করে বাঁকানো, মোচড়ানো বা ভারী বস্তু উত্তোলনের ফলে হতে পারে।
ডিস্ক প্রল্যাপস: ডিস্ক প্রল্যাপস হল একটি অবস্থা যেখানে মেরুদণ্ডের ডিস্ক থেকে অংশগুলি বেরিয়ে আসে এবং স্নায়ুগুলিকে সংকুচিত করে। এটি কোমর বা পায়ে তীব্র ব্যথা এবং অসাড়তা বা শিরশিরে অনুভূতির কারণ হতে পারে।
অস্টিওপোরোসিস: অস্টিওপোরোসিস হল একটি অবস্থা যেখানে হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। এটি কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে, বিশেষ করে মেরুদণ্ডের হাড়গুলিতে ফাটল বা ভেঙে গেলে।
ক্যান্সার: ক্যান্সার কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে, বিশেষ করে মেরুদণ্ড, লিম্ফ নোড বা অন্যান্য অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়লে।
অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থা: কোমর ব্যথা অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থার লক্ষণ হতে পারে, যেমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সিন্ড্রোম, মূত্রনালীর সংক্রমণ বা গুরুতর সংক্রমণ।
কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ ,কোমর ব্যথার উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে-
- কোমর বা পায়ে ব্যথা,
- অসাড়তা বা শিরশিরে অনুভূতি,
- শক্তি হ্রাস,
- পায়ের দুর্বলতা,
- পেশী বা জয়েন্টগুলিতে ফোলাভাব ও
- জ্বর
কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ , কোমর ব্যথার প্রকারভেদ
কোমর ব্যথার অনেকগুলি কারণ হতে পারে, তাই এটি বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।
তীব্রতা অনুযায়ী কোমর ব্যথার কারণ
তীব্র কোমর ব্যথা: এটি হঠাৎ করে শুরু হয় এবং কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা: এটি তিন মাসের বেশি সময় ধরে থাকে।
কারণ অনুযায়ী
পেশী বা টেন্ডন আঘাত: এটি কোমর ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এটি হঠাৎ করে বাঁকানো, মোচড়ানো বা ভারী বস্তু উত্তোলনের ফলে হতে পারে।
অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থা: কোমর ব্যথা অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থার লক্ষণ হতে পারে, যেমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সিন্ড্রোম, মূত্রনালীর সংক্রমণ বা গুরুতর সংক্রমণ।
অন্যান্য শ্রেণীবিভাগ
অস্ত্রোপচারমূলক কোমর ব্যথা: এটি এমন কোমর ব্যথা যা অস্ত্রোপচারের ফলে হয়।
জন্মগত কোমর ব্যথা: এটি এমন কোমর ব্যথা যা জন্মগত ত্রুটির ফলে হয়।
প্রদাহজনক কোমর ব্যথা: এটি এমন কোমর ব্যথা যা প্রদাহের ফলে হয়।
কোমর ব্যথার কারণ নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায়।
কীভাবে কোমরের দুই পাশে ব্যথার প্রতিরোধ করবেন?
কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করুন:
ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত ওজন মেরুদণ্ডের উপর চাপ বাড়ায় এবং কোমর ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন। হাঁটার সময়, বসে থাকার সময় এবং ভারী বস্তু উত্তোলনের সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম মেরুদণ্ডের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং কোমর ব্যথার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ভারী বস্তু উত্তোলনের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন: ভারী বস্তু উত্তোলন করার সময়, আপনার কোমর বা পিঠের পরিবর্তে আপনার পায়ে শক্তি ব্যবহার করুন।
সঠিক আসবাবপত্র ব্যবহার করুন: আপনার চেয়ার, বিছানা এবং অন্যান্য আসবাবপত্রগুলি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করুন।
এছাড়াও, নিম্নলিখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলিও কোমরের দুই পাশে ব্যথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে:
বিশ্রাম করুন: কোমরের ব্যথার সময় বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যথানাশক ওষুধ নিন। ওভার-দ্য-কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশন ব্যথানাশক ওষুধ কোমরের ব্যথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ঠান্ডা বা গরম সেঁক লাগান: ঠান্ডা সেঁক ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যখন গরম সেঁক পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।
স্ট্রেচিং করুন: কোমরের ব্যথার তীব্রতা কমে গেলে, স্ট্রেচিং মেরুদণ্ডের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
যদি আপনার কোমরের দুই পাশে ব্যথা হয় যা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনার জন্য সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিক থেকে কোমরের দুই পাশে ব্যথার কারণ :
গ্যাস্ট্রিক থেকে কোমরের দুই পাশে ব্যথার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে, কিছু লোক মনে করেন যে গ্যাস্ট্রিকের কারণে কোমরের দুই পাশে ব্যথা হতে পারে। এটি সম্ভবত কারণ গ্যাস্ট্রিকের কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে, যা কখনও কখনও কোমরের দুই পাশে ছড়িয়ে যেতে পারে।
যদি আপনার কোমরের দুই পাশে ব্যথা হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনার ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনার জন্য সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারেন।
এখানে কিছু অতিরিক্ত টিপস রয়েছে যা কোমরের দুই পাশে ব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে
আরও জানুন : গর্ভবতী অবস্থায় কোমর ব্যথার কারন ও চিকিৎসা
আপনার শরীরের অবস্থার প্রতি মনোযোগ দিন। যদি আপনি ব্যথা অনুভব করেন তবে বিশ্রাম নিন এবং আপনার শরীরকে সুস্থ হতে দিন।পর্যাপ্ত ঘুম পান। ঘুম আপনার শরীরকে নিরাময় করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান। স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার শরীরকে পুষ্টি দেয় এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ঝুঁকি কমায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শরীরকে শক্তিশালী করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ঝুঁকি কমায়।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
কোমর ব্যথার জন্য কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?
এক্স-রে: এক্স-রে মেরুদণ্ডের হাড় এবং ডিস্কগুলির চিত্র প্রদান করতে পারে। সিটি স্ক্যান: সিটি স্ক্যান মেরুদণ্ডের আরও বিস্তারিত চিত্র প্রদান করতে পারে। এমআরআই: এমআরআই মেরুদণ্ডের সবচেয়ে বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে
আরও জানুন : কোমর ব্যাথা নিরাময়ে আকুপাংচার যেন এক অনন্য চিকিৎসা
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার