পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি ও তার চিকিৎসা

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি ( ক্যালকেনিয়াল স্পার )

ক্যালকেনিয়াল স্পার যা হিল স্পার নামেও পরিচিত পায়ের গোড়ালির হাড়ের ( ক্যালকেনিয়াস) অতিরিক্ত বৃদ্ধি যা পায়ের গোড়ালির সাধারন কাজকে ব্যহত করে স্বাভাবিক দাড়িয়ে থাকা বা হাটার মতো কাজকে প্রভাবিত করে। এটি গোড়ালির নিচে বা পিছনের দিকে যেকোন যায়গায় হতে পারে অনেক সময় নিচে ও পিছনে উভয় যায়গাই হয়ে থাকে। একটি বা উভয় পায়ের গোড়ালিতেও হতে পারে। এটি কিছু ক্ষেত্রে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস ( প্ল্যান্টার ফাসা তে প্রদাহ) বা অ্যাকিলিস টেন্ডোনাইটিসের (অ্যাকিলিস টেন্ডনের প্রদাহ) মতো অবস্থার সাথেও সম্পর্কিত থাকে।

গবেষনা বলে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০-১৫% মানুষ এই সমস্যায় ভুগে থাকেন যার ৫% এর ক্ষেত্রে এটি সাধারনত কোন লক্ষণ প্রকাশ করে না। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এবং চল্লিশ বয়সোর্দ্ধ মানুষেরা এই রোগের অধিক ঝুকিতে আছেন।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি

আরও জানুন : পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও তার প্রতিকার

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি এর কারণ কি?

অত্যধিক ব্যবহার বা পুনরাবৃত্তিমূলক চাপ: সমেয়র সাথে সাথে গোড়ালিতে ক্রমাগত চাপ , যেমন প্রায়শই দীর্ঘ দূরত্বে দৌড়ানো বা দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকার জন্য ক্যালকেনিয়াল স্পার হতে পারে।

প্ল্যান্টার ফাসাইটিস: প্ল্যান্টার ফাসা একটি নরম টিস্যু যা গোড়ালির হাড়কে পায়ের আঙ্গুলের সাথে সংযুক্তক করে থাকে। এই টিস্যুতে প্রদাহ দেখা দিলে তা ক্যালকেনিয়াল স্পার হওয়ার কারন হতে পারে।

অ্যাকিলিস টেন্ডেনোপ্যাথি: অ্যাকিলিস টেন্ডনের প্রদাহ বা যেকোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন ক্যালকেনিয়াল স্পার গঠনে অবদান রাখতে পারে।

পায়ের অস্বাভাবিক খিলান বা বক্রতার কমবেশী: অস্বাভাবিক পায়ের মেকানিক্স, যেমন সমতল পা ( ফ্ল্যাট ফুট) বা উঁচু খিলান (পেস ক্যাভাস বা হাই আর্চ) হিল স্পারের বিকাশে অবদান রাখতে পারে।

অনুপযুক্ত জুতা:  নিজের মাপের ছোট বা বড় জুতা পড়া ক্যালকেনিয়াল স্পারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি বা ক্যালকেনিয়াল স্পার এর লক্ষণ কি ?

পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা:

সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হল ব্যথা, প্রায়ই ছুরিকাঘাত করার মতো তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভুত হওয়া।

সকালে অস্বস্তি:

ক্যালকেনিয়াল স্পার যাদের  আছে এমন অনেক লোক সকালে বিছানা থেকে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার সময় সবচেয়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। যদিও অনেকের সময়ের সাথে এ ব্যাথা কিছুটা কমে যায়।

হাটার বা দাড়ানোর সাথে ব্যথা:

লম্বা সময় হাটা বা দৌড়ালে ব্যাথা বেড়ে যাওয়া ।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি বা ক্যালকেনিয়াল স্পার রোগনির্ণয়

কিছু লক্ষণ যা ক্যালকেনিয়াল স্পারের সাথে সম্পর্কিত যা থাকলে ধারনা করা যায় রোগী ক্যালকেনিয়াল স্পারে ভুগতেছে যেমন : হাটলে বা দাড়িয়ে থাকলে গোড়ালির ব্যাথা ব্যাথা বৃদ্ধি পাওয়া, সকালে উঠে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হওয়া।

এক্সরে: এক্সরে তে অতিরিক্ত হাড়ের বৃদ্ধি দেখা যায় যা পরবর্তী চিকিৎসায় অনেক বেশী সহায়ক।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি ( ক্যালকেনিয়াল স্পার ) এর চিকিৎসা

বিশ্রাম: গোড়ালিতে অত্যধিক চাপ সৃষ্টিকারী কার্যকলাপগুলি হ্রাস করা বা এড়ানো প্রায়শই হিল স্পারের প্রাথমিক এবং অন্যতম প্রধান চিকিৎসা।

ঔষধ: সাধারনত ব্যাথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ গ্রহন করা যেতে পারে।

নিজের মাপের সঠিক জুতা পরিধান করা: নিজের মাপের সঠিক  জুতা পরিধান করা গোড়ালিতে চাপ কমিয়ে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।

পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি রোগের চিকিতসায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ : প্ল্যান্টার ফাসা এবং অ্যাকিলিস টেন্ডনের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ সমস্যা কমাতে এবং গোড়ালির ওপর চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করে।

স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ : কিছু ব্যায়াম গোড়ালির আশেপাশের মাংশপেশীকে শক্তিশালী করে এ রোগ থেকে সৃষ্ট সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

হিল কুশন: এটি একটি ছোট সিলিকনের তৈরী যা শক এবজরবার হিসেবে কাজ করে রোগীর পায়ের গোড়ালিকে শরীরের ওজনের চাপের থেকে সৃষ্ট ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।

শক ওয়েভ থেরাপি: এক্সট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ থেরাপি (ESWT) উচ্চ শক্তির শব্দ তরঙ্গ যা শরীরের বাইরে উৎপন্ন হয়ে শরীরের দিকে চালনা করা হয় যা গেড়ালির ব্যাথা নিরাময়ে এবং অতিরিক্ত হাড়ের থেকে সৃষ্ট ছোট ছোট ক্ষতকে সারাতে এবং আশেপাশের টেন্ডনের সমস্যা থাকলে তা সমাধানে সাহায্য করে।

ytfyt

ক্রায়োথেরাপি: নতুন এবং অনেকদিন এর পুরাতন দুই ধরনের ক্যালকেনিয়াল স্পারের ক্ষেত্রেই ক্রায়োথেরাপি কার্যকরী।

আকুপাংচার : আকুপাংচার ক্যালকেনিয়াল স্পারের থেকে সৃষ্ট ব্যাথা কমাতে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি।

ytfyh

কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন: কিছু ক্ষেত্রে সাধারন চিকিৎসায় সমাধান না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশনের প্রয়োগ করা যেতে পারে।

সার্জারি: যদিও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সাধারন চিকিৎসাতেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।গুরুতর ক্ষেত্রে যেখানে সাধারন চিকিৎসা কাজ না করলে অস্ত্রোপচার করে স্পার অপসারণ বা প্ল্যান্টার ফাসার সংকোচনকে কমানো হয় ।

ক্যালকেনিয়া স্পার হয়েছে কিভাবে বুঝবো?

সাধারনত কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যেমন সকালে ব্যাথা, দীর্ঘসময় দাড়িয়ে থাকলে বা হাটতে ব্যাথা বৃদ্ধি পাওয়া। নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সরে করা যেতে পারে।

ক্যালকেনিয়াল স্পারের সেরা চিকিৎসা কোনটি?

বিশ্রাম নেয়া, হিল কুশন ব্যবহার করা, শকওয়েভ থেরাপি এবং একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যায়াম করা।

ক্যালকেনিয়াল স্পার কেনো হয়?

ক্যালকেনিয়াল স্পারের আসল কারণ এখনও অজানা কিন্তু ধারনা করা হয় সময়ের সাথে সাথে গোড়ালিতে প্রতিনিয়ত চাপ যেমন প্রায়শই দীর্ঘসময় দৌড়ানো বা দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা, নিজের থেকে বড় বা ছোট মাপের জুতা পরিধান করা, অ্যাকিলিস টেন্ডিনোপ্যাথি বা প্ল্যান্টার ফাসাইটিস এর মতো গোড়ালির সমস্যার দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করার জন্য ক্যালকেনিয়াল স্পার হতে পারে।

পায়ের গোড়ালিতে কেনো ব্যাথা হয়?

পায়ের গোড়ালিতে বিভিন্ন কারনে ব্যাথা হতে পারে তার মধ্যে ক্যালকেনিয়াল স্পার বা হিল স্পার, প্ল্যান্টার ফাসাইটিস, গোড়ালির কোন লিগামেন্ট ইনজুরি অন্যতম।

ধন্যবাদান্তে:-

ডা: ইব্রাহিম হাওলাদার (পিটি)
বিপিটি, এমডিএমআর( ফেলো)
ফিজিওথেরাপিস্ট,  ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
https://visionphysiotherapy.com/appoi..

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 79