পিএলআইডির অপারেশন বিহীন আধুনিক চিকিৎসা

পিএলআইডি কি

পিএলআইডির অপারেশন বিহীন আধুনিক চিকিৎসা এর অর্থ হলো প্রলাপসড লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। এই সমস্যা হলে মেরুদন্ডের দুটি হাড়ের মধ্যে থাকা কোমরের নরম অংশ (ডিস্ক) বের হয়ে বাইরের দিকে চলে আসে। ডিস্কের বাইরের দিকে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস নামে শক্ত আবরণ থাকে, যা আঘাতে বা ক্ষয় জনিত কারণে ছিঁড়ে গিয়ে ভেতরের নরম জেলির মতো অংশ বের হয়। সেই বের হওয়া অংশ নার্ভেকে চাপ দেয়। ফলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং সেই ব্যথা ধীরে ধীরে ডান বা বাম পায়ে নেমে আসে। একে সায়াটিকা ব্যথাও বলে। সাধারণত লাম্বার ৪ ও ৫ নম্বর হাড়ে এটি হয়ে থাকে।

পিএলআইডি কেন হয়

পিএলআইডির অপারেশন বিহীন আধুনিক চিকিৎসা।

১. দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা বসে থাকলে অথবা সামনের দিকে ঝুকে কাজ করলে।
২. ভারী ওজন নেয়ার ফলে কোমরে আঘাত পেলে।
৩. রাস্তাঘাটে এক্সিডেন্ট বা আঘাত জনিত কারণে
৪. উঁচু যায়গা থেকে পড়ে গেলে। যেমন: গাছ থেকে পড়ে আঘাত পেলে
৫.শরীরের অতিরিক্ত ওজনের ফলে
৬. কোমরের মাংসপেশির শক্তি কমে গেলে
৭. কোমরের মাংসপেশি শক্ত বা টাইটনেস বেশি হলে
৮.অপুষ্টিজনিত কারণে

পিএলআইডি রোগের লক্ষণ

কোমর ব্যথা সাধারণত কোমর ও পায়ের পিছনের মাংসপেশি সহ পায়ের বুড়ো আঙুল বা ছোট আঙুল পর্যন্ত চলে আসে। পা ঝিনঝিন বা অবশ ভাব হতে পারে। কাশি-হাঁচি দিলে অনেক সময় কোমরে ব্যথা অনুভব হতে পারে।

সামনের দিকে ঝুঁকে ভারি কোনো জিনিস তুলতে গেলে ব্যথা বাড়ে। এছাড়া অনেকের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়ে থাকলে ব্যথা হতে পারে।

আরও পড়ুন :হাঁটু ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা (ফিজিওথেরাপি)

পিএলআইডির ঝুকিতে কারা আছে

যাদের ভারী ওজন তোলার কাজ করতে হয়। দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় বসে কম্পিউটারের কাজ যারা করেন বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সার, কম্পিউটার অপারেটর। এছাড়া যাদের শরীরের ওজন বেশি।

পিএলআইডি কোন বয়সে হতে পারে

যে কোন বয়সেই পিএলআইডি হতে পারে। তবে ২০-৪৫ বছর বয়সীদের বেশি হয়ে থাকে।

পিএলআইডি রোগের চিকিৎসা

পিএলআইডির অপারেশন বিহীন আধুনিক চিকিৎসা প্রলাপসড লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক রোগের বাংলাদেশে যথাযথ চিকিৎসা রয়েছে। পিএলআইডির অপারেশন বিহীন আধুনিক চিকিৎসায় কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে ৮০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যথা কমে যেতে পারে। এ জন্য কয়েকদিন বিশ্রাম করা প্রয়োজন, কিছু ব্যায়াম, ঠান্ডা গরম শেক দেয়া প্রয়োজন,অতিরিক্ত নরম বিছানায় না ঘুমানো, নিচু হয়ে ভারী কিছু না তোলা ও ভারী কাজ না করা, বিছানা থেকে ওঠার সময় কাত হয়ে ওঠা, অতিরিক্ত ভ্রমণ পরিহারকরা, মোটরসাইকেল বেশি না চালানো, শরিরের বাড়তি ওজন কমিয়ে আনার মত কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

এ ছাড়া পিএলআইডির অপারেশন বিহীন আধুনিক চিকিৎসা  কোমর ব্যথায় ৮০-৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে ব্যথা কমে যায়। আমাদের দেশেই পালসড ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি, এক্সট্রাকরপোরাল শক ওয়েভ থেরাপি, পালস ক্রায়োথেরাপি, ম্যানুয়েল থেরাপি ও আকুপাংচার এর মত উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি -বেসরকারি হাসপাতাল ও ফিজিওথেরাপি সেন্টার যেমন ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার(উত্তরা ও বনানী) , মে ফেয়ার ওয়েলনেস ক্লিনিক(গুলশান), সিআরপি, পংগু হাসপাতাল,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালসহ অনেক হাসপাতাল ও ফিজিওথেরাপি সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে।

১. পিএলআইডি ভাল হতে কত দিন লাগে?

উত্তর: পিএলআইডির অপারেশন বিহীন আধুনিক চিকিৎসা রোগ ভাল হওয়া সম্পুর্ণ নির্ভর করবে সমস্যার উপর। তবে একটানা ২-৩ সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে ৫/৬ মাস ফলোআপ করলে সম্পুর্ণ সুস্থ হওয়া যায়।

২. পিএলআইডি রোগের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খরচ কত?

উত্তর: চিকিৎসা খরচ নির্ভর করবে হাসপাতাল বা সেন্টার এবং চিকিৎসার ধরণের উপর। তবে সরাকারি হাসপাতালে খরচ একটু কম। বেসরকারি হাসপাতাল বা সেন্টার গুলোরে সর্বনিম্ন প্রতি সেশন ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

৩. পিএলআইডি রোগের জন্য অপারেশন কি লাগবে?

উত্তর: প্রাথমিক অবস্থায় অপারেশন লাগবে না। যদি প্রস্রাব পায়খানার নিয়ন্ত্রণ ৬ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে না থাকে তাহলে অপারেশন করতে হবে এবং অপারেশন এর পর অবশ্যই মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

৪. পিএলআইডি সমস্যা দূর করতে ব্যথানাশক ঔষধ খাব কিনা?

উত্তর: পিএলআইডি সমস্যায় ব্যথানাশক খেলে সাময়িক ব্যথা কমে থাকে, কিন্তু যে সমস্যার কারণে ব্যথা হচ্ছে তার কোন সমাধান হয় না। সেক্ষেত্রে ব্যথা তীব্র হলে সাময়িক ব্যথা কমানোর জন্য খেতে পারেন। তবে সুস্থ হতে চাইলে অবশ্যই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে।

৫. পিএলআইডি রোগের জন্য ইঞ্জেকশন কতটুকু কার্যকরী?

উত্তর: পিএলআইডি রোগের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ইঞ্জেকশন নিলে ব্যথা কিছুদিন কম থাকে তবে মাংসপেশির দুর্বলতার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। একসময় আবার ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

৬. পিএলআইডি রোগি সবধরণের খাবার খেতে পারবে কিনা?

উত্তর: একজন পিএলআইডি রোগি সব ধরণের খাবার খেতে পারবে। তবে শাকসবজি, দুধ, স্যালমন মাছ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশি উপকারী।

৭. পিএলআইডি জনিত কোমর ব্যথার জন্য কি ধরণের ব্যয়াম করতে হবে?

উত্তর: পিএলআইডি জনিত কোমর ব্যথায় কিছু স্ট্রেচিং ও স্টেনদেনিং এক্সারসাইজ করতে হয়। একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী এক্সারসাইজ বা ব্যয়াম করতে হবে।

৮. পিএলআইডি হলে কি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যাবে?

উত্তর: যদি সামনের দিকে ঝুকলে ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের জন্য বসে নামাজ পড়া উত্তম।

৯. পিএলআইডি হলে কোন ডাক্তারকে দেখাবো?

উত্তর: পিএলআইডি হলে প্রাথমিকভাবে একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট এর নিকট ২-৩ সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে বাসায় এক্সারসাইজ বা ব্যয়াম ও কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। যদি ৬ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে টয়লেট ও প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ না থাকে সেক্ষেত্রে একজন অর্থোপেডিক অথবা নিউরো সার্জন দেখাতে পারেন।

আরও পড়ুন :উরু বা রানের পেশিতে ব্যথা

ধন্যবাদান্তে-
ডাঃ মোঃ তরিকুল ইসলাম
ইনচার্জ সিনিয়র ফিজিওথেরাপিষ্ট
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
বনানী, ঢাকা।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) 
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার 

এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ Visionphysiotherapy.com

visionphysiotherapy
visionphysiotherapy
Articles: 82