যে কোন বয়সের মানুষের হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। আমাদের শরীরের বেশির ভাগ ওজন বহন করার অন্যতম অঙ্গ হলো হাঁটু। হাঁটু অন্যান্য জয়েন্টগুলোর মতোই তিনটা বড় হাড় তার সাথে কিছু লিগামেন্ট দিয়ে তৈরি। তাই যখনি এই জয়েন্টের উপর চাপ পড়ে তখন হাঁটু ব্যথা হতে পারে। এর ফলে অনেক সময় বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা বাড়তে পারে। এছাড়াও অনেক কারনে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে যেমন- বাত, লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে, আঘাত পেলে, টেন্ডন ইনজুরি হলে , অস্টিওআর্থারাইটিস।
হাঁটু ব্যথা কি?
হাঁটুতে ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ বিষয়। হাঁটুতে ব্যথা হলে সাধারণত হাঁটু বাঁকানোর সময় এবং হাঁটুতে ওজন রেখে চলার সময় এই ব্যথা বেশি অনুভব হয়। হাঁটু ব্যথার অনেকগুলি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, যা একটি সাধারণ পেশীর স্ট্রেন বা টেন্ডোনাইটিস থেকে শুরু করে এক ধরণের আর্থ্রাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। কখনও কখনও এই ব্যথার কারন খুঁজে পাওয়া যায় না।
হাঁটু ব্যথা অনেক সময় ঘরে থেকেই কিছু চিকিৎসা নিলে সেরে যায়। কিন্তু আঘাতের কারনে ব্যথা গুরুতর হলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরার্মশ নিতে হবে। হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কারনে অনেক ব্যথা হতে পারে যার ফলে আপনাকে সার্জারি পর্যন্ত করতে হতে পারে।
আঘাত জনিত কারন ছাড়া হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার অন্যতম প্রধান কারন হলো বাত বা আর্থ্রাইটিস। এটি আপনার শরীরের বড় এবং শক্তিশালী জয়েন্টগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে আপনার জয়েন্টগুলো ব্যথা, ফোলাভাব এবং শক্ত হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার লক্ষন এবং হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে কি হয়
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার কারন
আপনার হাঁটুর জয়েন্টটি হাড়, তরুণাস্থি, লিগামেন্ট এবং তরল দিয়ে তৈরি। পেশী এবং টেন্ডন হাঁটুর জয়েন্ট নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। যখন এই কাঠামোর কোনো ক্ষতি হয়, তখন আপনার হাঁটুতে সমস্যা হয়। যার ফলে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হয়।
হাঁটু ব্যথার সাধারণ কিছু কারণঃ
অস্টিওআর্থারাইটিস
অস্টিওআর্থারাইটিস এর কারনে হাঁটুতে থাকা তরুণাস্থি ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায় এর কারনে হাঁটুতে ব্যথা বাড়তে পারে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। ব্যথার সাথে হাঁটু ফুলে যেতে পারে।
লিগামেন্ট ইনজুরি
অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL) আঘাত সাধারণত হঠাৎ মোচড়ের গতির ফলে হয় এই আঘাতের কারনে ব্যথা হয়ে থাকে। পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্টে (PCL) আঘাত সাধারণত সরাসরি প্রভাব দ্বারা সৃষ্ট হয়, যেমন একটি গাড়ি দুর্ঘটনা বা ক্রীড়া কার্যকলাপের কারনে আঘাত এর ফলে ব্যথা হয় তীব্র।
হাড় ক্ষয়
হাঁটুর জয়েন্টের কাছে কারটিলিস নামের যে নরম হাড় থাকে, সেখানে ক্ষয় দেখা দিলে হাঁটুর ব্যথা হয়।
টেন্ডন ইনজুরি
টেন্ডন ইনজুরির কারনে ব্যথা হয়ে থাকে। সাধারনত এই ব্যথা পড়ে যাওয়ার কারনে হতে পারে।
স্ট্রেন বা মোচ
হঠাৎ বা অস্বাভাবিক মোচড়ের কারণে লিগামেন্টে ছোটখাটো আঘাত লাগতে পারে। এর ফলে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে।
তরুণাস্থি আঘাত
আঘাত, অত্যধিক ব্যবহার, পেশী দুর্বলতা, বা হাঁটুর মিসলাইনমেন্ট হাঁটুর তরুণাস্থিকে নরম করতে পারে বা হাঁটুতে আঘাতের ফলে তরুণাস্থির একটি অংশ ছিঁড়ে যেতে পারে। যার ফলে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হয়।
ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড সিন্ড্রোম
আপনার নিতম্ব থেকে হাঁটুর বাইরের দিকে চলে যাওয়া মোটা ব্যান্ডে আঘাত লাগলে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।
হাড়ের ফাটল
অনেক সময় আঘাতের কারনে হাঁটুর হাড়ে ফাটল দেখা দেয় যার কারনে ব্যথা হতে পারে এবং ফোলা সৃষ্টি হয়।
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার প্রতিকার
যদিও হাঁটুর ব্যথা প্রতিরোধ করা সবসময় সম্ভব নয়, নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি আঘাত এবং জয়েন্টের অবনতি এড়াতে সাহায্য করতে পারেঃ
- একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন এটা আপনার হাঁটুর জন্য ভালো। অতিরিক্ত ওজন আপনার জয়েন্টগুলিতে অতিরিক্ত চাপ দেয়, আঘাত এবং অস্টিওআর্থারাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- আপনি যদি খেলাধুলা করে থাকেন তাহলে খেলায় অংশগ্রহণের জন্য আপনার পেশী প্রস্তুত করুন এবং তার জন্য সময় নিন।
- তাপ বা বরফের প্যাক ব্যবহার করুন। আপনার ব্যথা অনেক দিনের হলে আপনি তাপ দিতে পারেন ২০ মিনিট করে প্রতি ৩-৪ ঘন্টা পর পর। স্বল্প-মেয়াদী হাঁটু ব্যথার জন্য বরফ ব্যবহার করুন ৩০ মিনিট করে ২-৩ ঘ্নটা পর পর।
- উপযুক্ত জুতা পরিধান করুন, বেশি হিল জুতা ব্যবহার করবেন না ফ্ল্যাট জুতা পরার চেষ্টা করবেন হাঁটু ব্যথা হলে।
- হাঁটুর ফোলা কমাতে সাহায্য করার জন্য, আপনার পা বালিশে রেখে বসার চেষ্টা করবেন।
- শরীরের পেশী বা জয়েন্টগুলো শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। যেমন-হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, এবং যোগব্যায়াম সবই উপকারী হতে পারে।
- দীর্ঘক্ষণ এক স্থানে বসে না থেকে কিছু সময় পর পর শরীর নড়াচড়া করতে হবে। কারন দীর্ঘ সময় এক ভাবে বসে থাকলে জয়েন্টগুলি শক্ত হয়ে যায় ফলে ব্যথা হতে পারে।
- ম্যাসাজ হাঁটুর ব্যথা কম করতে পারে। পা সমতল করে বসে উরুর উপরে নিচে ম্যাসাজ করুন, উরুর পেশী ম্যাসাজ করলে হাঁটুতে একটি উপকারী প্রভাব ফেলবে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
আপনার হাঁটু যখন ওজন বা ভার সহ্য করতে পারবে না। মনে হবে যেন আপনার হাঁটু ভারী বা অবশ হয়ে আছে। হাঁটুর ব্যথা তীব্র হবে এবং হাঁটুতে ফোলা সৃষ্টি হলে। আপনি হাঁটু সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করতে অক্ষম হবেন।পায়ে বা হাঁটুতে সুস্পষ্ট বিকৃতি দেখা গেলে। হাঁটুতে লালভাব, ব্যথা সাথে জ্বর থাকলে। হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পেলে। উল্লেখিত লক্ষনগুলো যদি আপনার থাকে তাহলে একজন ফিজিওথেরাপির সাথে যোগাযোগ করুন। ব্যথা থেকে উপশম করতে ফিজিওথেরাপি বেশ কার্যকর হতে পারে আপনার।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহঃ
[sc_fs_multi_faq headline-0=”h3″ question-0=”হাঁটু ব্যথার জন্য হাঁটা কি ভালো ?” answer-0=”গবেষণা এখন পরামর্শ দেয় যে হাঁটাহাঁটি করা অস্টিওআর্থারাইটিসের সাথে সম্পর্কিত হাঁটু ব্যথা কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া জয়েন্টগুলিকে সহজ এবং ভারসাম্য উন্নত করতে হাঁটা প্রয়োজন। ” image-0=”” headline-1=”h3″ question-1=”হাঁটুতে তেল দেওয়া কি ভালো ?” answer-1=”আপনার হাঁটুতে উষ্ণ তেল (নারকেল তেল, সরিষার তেল, জলপাই তেল) ঘষলে হাঁটুর চারপাশের শিরাগুলিতে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করবে।উপকার পাওয়ার জন্য সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ” image-1=”” headline-2=”h3″ question-2=”নুনের পানি কি হাঁটুর ব্যথার জন্য ভালো ?” answer-2=”বাত এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশম করার একটি কার্যকর উপায় হল লবণের থেরাপি, যা আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে সহায়তা করে। লবণ থেরাপির অন্যান্য সুবিধা রয়েছে, যা মন এবং শরীরের স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে। ” image-2=”” headline-3=”h3″ question-3=”বাত কোন বয়সে শুরু হয় ?” answer-3=”এটি সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী লোকেদের মধ্যে শুরু হয়৷ এটি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে৷” image-3=”” count=”4″ html=”true” css_class=””]
পরিচালনায়ঃ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস , ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার , ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি , ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম , ইন্ডিয়া ।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা)
ফেসবুকঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার
এপয়েন্টম্যান্ট নিতে ক্লিক করুনঃ
https://visionphysiotherapy.com/appoi..