অস্থিসন্ধির প্রদাহকে আর্থ্রাইটিস বা বাত বলা হয়। এই সমস্যায় সাধারণত জয়েন্টে প্রচুর ব্যথা হয়। এছাড়াও লাল হয়ে যাওয়া, গরম হওয়া, ফোলে যাওয়া এবং জয়েন্টের নড়াচড়ায় অসুবিধাসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অস্থিসন্ধি ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গে এর প্রভাব পড়তে পারে। অনেকে ভাবেন বয়সজনিত কারণে বাত রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা হতে পারে। যেমন রোগ, ইনফেকশন, জেনেটিক সমস্যা, ইনজুরি প্রভৃতি। এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত মাংস, রেড মিট, চিনি, গম,বার্লির দানা, অ্যালকোহল বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। তাই বাতের ব্যথা কমাতে এই খাবারগুলো পরিহার করা উচিত।
বাত রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি এখন পর্যন্ত। সাময়িক কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেমন-
- পরিবেশগত কারণ।
- রক্তে ইউরিক এসিডিটির মাত্রা বেড়ে গেলে। থায়াজাইড, পাইরাজিনামাইড, এসপিরিন, ইত্যাদি ঔষধ-এ ইউরিক এসিডের মাত্রাতিরিক্ত হলে গাউট হতে পারে। বংশগত ভাবে বা জেনেটিক কারণও হতে পরে তবে তা ১০ থেকে ১৫ ভাগ।
- হরমোনের প্রভাবে হতে পারে।
- ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব হলেও হতে পারে।
- উদ্বেগ, চিন্তা ইত্যাদির কারণেও হতে পারে।
আপনি যদি বাতের ব্যথায় ভুগছেন, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করার সময় এসেছে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার বাতের ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই, আপনার দৈনন্দিন খাবার থেকে এই ধরনের খাবারগুলো বাদ দিলে বাতের ব্যথা অনেকটাই কমতে পারে। বাতের ব্যথা কমাতে আপনার ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সায়াটিকা সারানোর সহজ উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে?
আর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খাদ্যের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা লবণে থাকা সোডিয়াম ক্লোরাইড এই রোগের ব্যথা আরও বৃদ্ধি করতে পারে। অন্যদিকে, প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিপস, বার্গার, চিজ, পপকর্ন, নোনতা এবং ভাজাভুজি খাবার আর্থারাইটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবারে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম এবং অন্যান্য হানিকারক উপাদান থাকে যা জয়েন্টের প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ব্যথা আরও তীব্র করে তোলে। সুতরাং, আর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কম লবণযুক্ত এবং প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও আপনাদের জন্য কি কি খেলে বাতের ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে-
প্রক্রিয়াজাত এবং লাল মাংস
গবেষণায় দেখা গিয়েছে রেড মিট এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস প্রদাহ সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে বাতের ব্যথাকে বাড়িয়ে দেয়। কারণ এই মাংসে প্রচুর পরিমাণে ইন্টারলিউকিন-৬, সি-রিঅ্যাক্টিব প্রোটিন এবং হোমোসিস্টিন থাকে। আর এগুলো প্রদাহের মার্কার হিসেবে কাজ করে।
রিসার্চ থেকে জানা যায়, রেড মিট এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস বাদ দিয়ে কেউ অধিক পরিমাণে শাক-সবজি খেলে বাতের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমে অধিক পরিমাণে অ্যারাকিডনিক এসিড নামীয় ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা অস্থিসন্ধির ব্যথা বাড়াতে বাড়িয়ে থাকে। তাই যাদের বাতের সমস্যা আছে তাদের যথাসম্ভব পরিহার করা উচিত। তবে ডিমের সাদা অংশ খেতে কোন অসুবিধা নেই।
গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার
গ্লুটেন, গম, বার্লি এবং অন্যান্য দানা জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এমন একটি প্রোটিন। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্লুটেন শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে। আর এই প্রদাহ বাতের মতো জয়েন্টের সমস্যাগুলোকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। তাই, বাতের রোগীদের জন্য গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা খুবই জরুরী। গ্লুটেন মুক্ত খাবার গ্রহণ করে বাতের লক্ষণগুলো অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে সেরা মানের ফিজিওথেরাপি সার্ভিস পেতে এখানে এপয়েন্টমেন্ট নিন।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু অনেকের ধারণা, দুধের প্রোটিন অস্থিসন্ধির পাশে জমে বাতের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। যদিও এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়, তবে দুধের প্রোটিন কিছু লোকের ক্ষেত্রে প্রদাহ বাড়াতে পারে এবং বাতের লক্ষণগুলোকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। বিশেষ করে, যাদের দুধের প্রতি অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আরও বেশি দেখা যায়। তাই, বাতের রোগীদের জন্য দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত চিনি
যদি কারো বাতের ব্যথা থাকে, তার যথাসম্ভব চিনি পরিহার করা উচিত। শুধু চিনি পরিহার করলেই হবে না, চিনি দিয়ে যে সকল খাবার তৈরি করা হয় যেমন মিষ্টি, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, সস, সালাদ, চকলেট প্রভৃতি খাবারও পরিহার করা উচিত। কারণ এ খাবারগুলোতে সাইটোকাইনস থাকে। আর এই সাইটোকাইনস বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সকল রোগী চিনি বা চিনি দিয়ে খাবার বেশি পরিমাণে খায় তার বাতের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
শাক-সবজির তেল
আমাদের শরীরের জন্য ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড দুইটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই দুইটি ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা খাদ্যের মাধ্যমে অধিক মাত্রায় ওমেগা-৬ এবং কম মাত্রায় ওমেগা-৩ গ্রহণ করি, তখন শরীরে প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়। এই প্রদাহ বাতের মতো জয়েন্টের সমস্যাগুলোকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।
সামুদ্রিক মাছ, বীজ, এবং সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। অন্যদিকে, মাখন, রান্না করা তেল, ভুট্টা ইত্যাদিতে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি পরিমাণে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে এই দুই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে একটি সুষমতা বজায় রাখা জরুরী। ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ এর মধ্যে একটি সুষমতা বজায় রাখলে শরীরে প্রদাহ কমে যায় এবং ফলে বাতের লক্ষণগুলোও উপশম হয়।
সুতরাং, বাতের রোগীদের জন্য তাদের খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি করার মাধ্যমে বাতের লক্ষণগুলোকে অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই, বাতের রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সুষম খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত।
অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের মাধ্যমে ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে সেরা মানের ফিজিওথেরাপি সার্ভিস পেতে এখানে এপয়েন্টমেন্ট নিন।
অধিক প্রক্রিয়াজাত খাবার
অধিক মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার- যেমন ফাস্ট ফুড( বার্গার, পিৎজা, রুল) ও খাদ্যশস্য সমৃদ্ধ খাবারে অতিরিক্ত চিনি, প্রিজারভেটিবস, ফ্রুক্টোজ, প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। যা বাতের সমস্যাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা অধিক মাত্রায় ফাস্ট ফুড খায় তাদের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে দেহে গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এটি রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। আর এ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলে বাতের ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে।
কার্বহাইড্রেট
আমরা বিভিন্ন খাবার (যেমন রুটি, ভাত, আলু ইত্যাদি) থেকে কার্বহাইড্রট পাই। আর অতিরিক্ত কার্বহাইড্রট দেহে শক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে। তাই খেলোয়াররা খেলার আগে অধিক পরিমাণে কার্বহাইড্রেট খেয়ে থাকে। কোন কারণে এই কার্বহাইড্রেট শক্তিতে রূপান্তরিত হতে না পারলে পরবর্তীতে এ খাবার দেহে প্রদাহের সৃষ্টি করে। যার ফলে বাতের ব্যথা বেড়ে যায়।
মদ ও অন্যান্য অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়
গবেষণায় প্রমাণিত, মদ বা অন্যান্য অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় সেবন বাত রোগকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। অ্যালকোহল শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা গাউট রোগের একটি প্রধান কারণ। এছাড়াও, অতিরিক্ত মদ্যপান মেরুদণ্ডে আর্থ্রাইটিসের মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, বাত রোগীদের জন্য মদ্যপান সম্পূর্ণ বর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। মদ্যপান বন্ধ করলে বাত রোগের উপসর্গ কমতে পারে এবং চিকিৎসার কার্যকারিতাও বাড়তে পারে।
ফিজিওথেরাপি কোর্স কোথায় পাওয়া যায় এবং যাবতীয় খরচ জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।
কফি
গবেষণা থেকে জানা যায়, কফি সেবন বাত ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন এই ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই, দৈনিক দুই কাপের বেশি কফি পান করা উচিত নয়। বিশেষ করে, ঘুমের আগে কফি পান করা উচিত নয় কারণ এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং বাতের ব্যথাকে আরও খারাপ করতে পারে।
কফিতে চিনি বা ক্রিম যোগ করাও বাতের ব্যথার প্রভাব বাড়াতে পারে। চিনিতে উপস্থিত শর্করা এবং ক্রিমে উপস্থিত চর্বি শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা বাতের ব্যথার প্রধান কারণ। তাই, বাত রোগীদের জন্য কফি সেবন সীমিত করা এবং চিনি ও ক্রিম যোগ না করে কফি পান করা উচিত।
অত্যাধিক লবণ খাওয়া
বাতের রোগীদের জন্য লবণ হলো একটি বিশেষ ধরনের শত্রু। লবণে থাকা সোডিয়াম শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে এবং বাতের লক্ষণগুলোকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিংড়ি, পনির, পিৎজা ইত্যাদি সাধারণত অতিরিক্ত লবণযুক্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং এটি অটোইমিউন রোগ যেমন বাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই, বাতের রোগীদের জন্য লবণের পরিমাণ কমিয়ে খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নাইটশেড সবজি
বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচ এবং আলু এই সবজিগুলোকে একসঙ্গে নাইটশেড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়। এই সবজিগুলোতে সোলানাইন নামক একটি উপাদান থাকে, যার কারণে বাতের রোগীদের জন্য এগুলো খাওয়া অনুচিত হতে পারে। গবেষণা থেকে জানা যায়, সোলানাইন শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে, যা বাতের ব্যথাকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। বাত রোগীদের জোড়ে ইতোমধ্যে প্রদাহ থাকে, সোলানাইন এই প্রদাহকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে জোড়ের ব্যথা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই, বাতের ব্যথা কমাতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এই সবজিগুলো পরিহার করা উচিত।
যদিও সব বাত রোগীদের ক্ষেত্রে নাইটশেড সবজি খাওয়া সমস্যা সৃষ্টি করে না, তবে অনেকের ক্ষেত্রে এটি ব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই, কোনো ধরনের খাদ্যতালিকা পরিবর্তনের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নাইটশেড সবজির পরিবর্তে আপনি অন্যান্য সবজি যেমন, লাউ, করলা, শিম, ফুলকপি ইত্যাদি খেতে পারেন। সুষম খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ফিজিওথেরাপি কেন দেওয়া হয়, ফিজিওথেরাপির উপকারিতা এবং একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট এর কাজ কি কি তা বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
শীত এবং বর্ষাতে কেন বাতের ব্যথা বাড়ে?
বাতের ব্যথা শুধু শীতেই বেড়ে যায় না, বরং বর্ষাতেও বাতের ব্যথা বেড়ে যায়। কারণ শীত কিংবা বর্ষাতে মানুষ শুয়ে ও বসে থাকতে পছন্দ করে যার ফলে দেহের নড়াচড়া খুব কম হয়। অস্থিসন্ধির নড়াচড়া কম হওয়ায় মাংসপেশিও শক্ত হয়ে যায়। এছাড়াও স্নায়ুর উপর বেশ চাপ পড়ে। যার ফলে বাতের ব্যথা শীত ও বর্ষাতে বেড়ে যায়। এছাড়া কিছু খাবার যেমন লাল মাংস, অতিরিক্ত চিনি, গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার, কফি, অত্যাধিক লবণ খাওয়া, ফাস্ট ফুড, ডিমের কুসুম, টমেটো, ফুলকপি, মদ, অ্যালকোহল পানে বাতের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
আমরা জানি, কিছু খাবার আমাদের শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা বাতের ব্যথাকে আরও তীব্র করে তোলে। তাই, বাতের ব্যথা কমাতে চাইলে এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। এছাড়াও, শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করাও খুবই জরুরি।
বাতের ব্যথার ব্যায়াম
বাতের রোগী হোন বা অন্য কেউ, শীতকালে সকলের জন্যই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে অনেকেই লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে পছন্দ করেন। তবে, দিনের বেলায় বিছানায় শুয়ে থাকা বা এক জায়গায় বসে থাকা উচিত নয়। পরিমিত হাঁটাচলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং জোড়গুলোকে সচল রাখে। তবে, ব্যায়াম করার সময় যদি ব্যথা বেড়ে যায়, তাহলে অবশ্যই ব্যায়াম বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখতে গরম পোশাক পরা এবং গরম খাবার খাওয়া জরুরি। তবে, অতিরিক্ত কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানো বা অতিরিক্ত গরম পোশাক পরা শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাধা দিতে পারে। তাই, শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পোশাক পরিধান করা উচিত। সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বাত ব্যথার চিকিৎসা
বাত ব্যথার কোনো নির্দিষ্ট ও একক চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। তবে ব্যথা বাড়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হতে পারে। যেহেতু বাতের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তাই দীর্ঘদিন ওষুধ সেবনের ফলে কিডনি, হার্ট, লিভার বা ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে, দীর্ঘদিন ওষুধ সেবনের পরিবর্তে ফিজিওথেরাপি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। ফিজিওথেরাপি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা বাত ব্যথার কার্যকারীভাবে প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে সাহায্য করে।
বাত ব্যথার চিকিৎসায় রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ওষুধের পাশাপাশি ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নও বাত ব্যথা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই, বাত ব্যথার সমস্যা হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেবেন।
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে সেরা মানের ফিজিওথেরাপি সার্ভিস পেতে এখানে এপয়েন্টমেন্ট নিন।
যে সকল খাবার খেলে ও কাজ করলে আপনি সুস্থ থাকবেন
যারা বাতের সমস্যায় ভুগেন তাদের কমন একটি প্রশ্ন থাকে কি খেলে বাতের ব্যথা ভালো হবে? ঘরে তৈরি খাবার, ফল, সবজি, মাছ, বাদাম ও মটরশুঁটি প্রভৃতি শুধু স্বাস্থ্যেরই উন্নতি করে না, বরং সাথে সাথে বাতের ব্যথা কমিয়ে থাকে। কারণ এ ফল ও সবজিতে প্রদাহনাশক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।
শীতের পোশাক
শীতের সময় পর্যাপ্ত পোশাকে নিজেকে আবৃত রাখুন, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সী লোকদের শীতের সময় উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। শীতের পোশাক যেন পুরো শরীর গরম থাকে অথবা রুম হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
গরম পানি
শীতের সময় হালকা গরম পানিতে অজু বা গোসল করুন। এ সময় কুসুম গরম পানি পান করুন। আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথার জন্য গরম পানির সেঁক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যথা যুক্ত জায়গায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম সেঁক দিলেও আরাম মেলে।
মাছ
আমেরিকার অ্যাকাডেমি অব নিউট্রেশন এর তথ্যমতে প্রতিসপ্তাহে দুই বার চার আউন্স মাছ খাওয়া প্রয়োজন।
স্যামন, টোনা, সমুদ্রিক পোনা মাছ, হেরিং, ছোট মাছ প্রভৃতি মাছ বাতের ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে। মাছ হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অন্যতম একটি উৎস। আর এটি প্রদাহজনিত প্রোটিন সি-রিঅ্যাক্টিব প্রোটিন ও ইন্টারলিউকিন-৬ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
আধুনিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, অস্থিসন্ধির ব্যথা ও ফোলা কমাতে সামুদ্রিক মাছের তেল খুব ভালো কাজ করে। সামুদ্রিক মাছের তেলে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। আর এ ভিটামিন অস্থিসন্ধির প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
মসলা জাতীয় খাবার
আদা, রসুন, দারুচিনিসহ বিভিন্ন মসলা জাতীয় খাবারে প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে। তাই এ মসলাগুলো নিয়মিত অল্প করে খেলে বাতের ব্যথা কমে যেতে পারে।
ব্রোকলি
ব্রোকলিতে সালফোরামেন নামক প্রদাহনাশক রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রদাহনাশক রয়েছে যেগুলো বাতের ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
বাদাম
প্রতিদিন কমপক্ষে ১.৫ আউন্স বাদাম খাওয়া উচিত। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বাদামে প্রদাহনাশক প্রভাব রয়েছে। যারা নিয়মিত বাদাম খায় তাদের বাতের ব্যথা তুলনামূলক কম হয়। বাদামে ভিটামিন বি-৬ রয়েছে। যা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি হিসেবে কাজ করে।
ভিটামিন ‘ডি’
শীতের সময় সূর্যালোক কম থাকায় ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি দেখা দেয়। তাই ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত পরিমাণমত। ভিটামিন ‘ডি’ ডিফিসিয়েন্সি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ‘ডি’ ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। সব থেকে উত্তম সকালের রোদ ২০-৩০ মিনিটের মতো পোহাতে পারলে। কারণ ভিটামিন ‘ডি’ এর ৮০ শতাংশ উৎস রয়েছে সূর্যের তাপে।
ফিজিওথেরাপি দিতে কত টাকা লাগে ও চিকিৎসা অনুযায়ী খরচ জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
তৈলাক্ত বা সামুদ্রিক টুনা, হেরিং, ফ্ল্যাক্সসিড, ক্যানোলা তেল, স্যামন, ম্যাকরেল, ওয়ালনাট, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, ওমেগা-৩ ফর্টিফাইড ফুড (ডিমের সাদা অংশ, মার্জারিন) খেতে পারেন। আখরোটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। আর এ অ্যাসিড বাতের ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
সবজি ও ফল
একজন মানুষের কমপক্ষে ৯ কাপ বা তার বেশি পরিমাণ সবজি বা ফল খাওয়া উচিত।
গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, ফল এবং সবজি (যেমন জাম, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, শাক, পাতাকপি) তে প্রচুর অ্যান্টঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। দেহকে ফ্রি রেডিকেল থেকে মুক্ত রাখে।
বেরিস (ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি) সাইট্রাস ফ্রুটস (আনারস, কমলা, মাল্টা), আঙুর, অ্যাভোকাডো, বেদানা, জলপাই, তরমুজ খেতে পারেন।
রসুন সেবন ও ব্যবহার
আগেকার দিনে বাত ব্যথা থেকে বাঁচতে রসুনের তেল হালকা গরম করে মালিশ করার অনেক চল ছিল। সেই ঘরোয়া টোটকাকেই সমর্থন করেন বর্তমানের আধুনিক চিকিৎসা। বাত ব্যথা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে রসুন তেলের মালিশ করতেই পারেন। পাশাপাশি রসুন সেবন করতে পারেন। শুধু বাত ব্যথাই নয় শরীরের আরো অনেক রোগ এই রসুনের সেবনে সেরে যায়।
আদা সেবন ও ব্যবহার
আদার ভেষজ গুনাগুনও অসাধারণ। সর্দি, কাশি তো বটেই, চা, স্যুপ কিংবা সরবতেও আদা মিশিয়ে সেবন করলে বাত ব্যথা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়। রান্না করা বা কাঁচাই হোক তাতে কি আদা সবসময়ই উপকারি।
লাল চাল ও আটা
লাল চাল ও আটাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায়। যা বাতের ব্যথা কমাতে খুবই সাহায্য করে থাকে।
দুগ্ধ জাতীয় পণ্য ও বিনস
লো ফ্যাট দুধ, দই, পনির খেতে পারেন। সাথে, পিন্টো বিনস, রেড বিনস, কিডনি বিনস খেতে পারেন।
অলিভ অয়েল
দৈনিক দুই থেকে তিন চামচ অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত। অলিভ অয়েল হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও এটি নন স্টেরয়েডাল ড্রাগস এর মত কাজ করে। যার ফলে বাতের ব্যথা কমে যাবে। বাদামের তুলনায় দশগুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অলিভ অয়েলে পাওয়া যায়।
ফিজিওথেরাপি কি এবং ফিজিওথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।
গ্রীন টি
গ্রীন টিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এছাড়াও এ চায়ের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি প্রভাব রয়েছে। সেই জন্য বাতের ব্যথায় ভোগা রোগীদের গ্রীন টি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মটরশুঁটি
মটরশুঁটি সি-রিঅ্যাক্টিব প্রোটিনকে কমিয়ে দিয়ে থাকে। এ প্রোটিনটি প্রদাহের সময় বেড়ে যায়। লাল মটরশুঁটি, বৃক্কাকার মটরশুঁটি বাতের ব্যথায় খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে।
চেরি
চেরি বাতের ব্যথা দূর করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। কারণ চেরিতে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি প্রভাব রয়েছে। যা বাতের সমস্যাকে কমিয়ে থাকে।
আঙুর ফল
অত্যন্ত পুষ্টিগুনে ভরা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ফল এটি খেতেও সুস্বাদু। শরীরে ইনফ্লেমেটারি কমিয়ে বাতের ব্যথা কমাতে প্রচুরি পরিমাণে সাহায্য করে।
চেরি ফল (টক)
চেরি ফলের রস খেতে পারেন। তবে মিষ্টি ফলের রস নয়, টক চেরি ফলের রস নিয়মিত খেলেও বাতের ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।
হলুদের ব্যবহার
প্রাচীনকাল থেকে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হলুদ। হলুদে রয়েছে কুরকুমিন নামের উপাদান, যা অ্যান্টিবায়োটিকের হিসেবে কাজ করে। অস্থিসন্ধির ব্যথা, পেশির ব্যথা বা বাত ব্যথার উপশম করতে পারে হলুদ।
এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পূর্ণশস্য, গ্রিন টি, ধনে, বাদাম, পুদিনাপাতা খেতে পারেন।
আরো পড়ুন : অস্টিওআর্থারাইটিস কেন হয় এবং অস্টিওআর্থারাইটিস কি
বাতের ব্যথা কমাতে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিত। যেমন—
- হাতের ওপর ভর দিয়ে বিছানায় শোয়া এবং হাতের ওপর ভর দিয়ে ওঠার অভ্যাস করা।
- নিচু আসবাবপত্র যেমন—পিঁড়ি, মোড়া বা ফ্লোরে অনেক্ষণ বসে না থেকে চেয়ারে বা উচু টুলে বসার চেষ্টা করা। অবশ্যই মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে।
- হাই হিল (উচু জুতা) বা শক্ত জুতা না ব্যবহার করে নরম জুতা ব্যবহারের অভ্যাস করুন।
- সম্ভব হলে টয়লেটে উঁচু কমোড ব্যবহার করুন। নিচু টয়লেটের ক্ষেত্রে ব্যথা বাড়তে পারে।
- নরম ফোম বা ম্যাট্রেস পরিহার করে তোষক বা জাজিম ব্যবহার করুন।
- ব্যথা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করুন বা ফিজিওথেরাপি নিন। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় বাত ব্যথা ভালো হয়।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
জয়েন্টে প্রদাহের কারণ কি?
জয়েন্টে প্রদাহ হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যখন আমাদের জয়েন্টগুলির চারপাশের টিস্যুতে অতিরিক্ত তরল জমে, তখন জয়েন্ট ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। এই ধরনের ফোলাভাব বিভিন্ন ধরনের বাত রোগ, সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে হতে পারে। বাতের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জয়েন্টে সংক্রমণ হলে বা কোনো আঘাতের ফলেও জয়েন্ট ফুলে যেতে পারে।
বাতের উপসর্গ কি?
বাত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ অনুভব করেন। প্রথম লক্ষণ হিসেবে ব্যথা অনুভূত হয়, যা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। অনেক সময় আক্রান্ত জায়গা লালচে হয়ে ওঠে এবং ফুলে যায়। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া ও জয়েন্টের চারপাশে অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়াও বাতের সাধারণ লক্ষণ। এছাড়া, আক্রান্ত জয়েন্টগুলি উষ্ণও অনুভূত হতে পারে।
কি করলে বাতের ব্যথা ভালো হয়?
বাতের ব্যথা কমাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মসলা, যেমন আদা, দারুচিনি এবং রসুনে প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে। নিয়মিত আদা ও রসুন খাওয়া বাতের ব্যথাকে কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, ব্রোকলির মতো শাকসবজিও খুব উপকারী। ব্রোকলিতে সালফোরাফেন নামক একটি শক্তিশালী প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে, যা বাতের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এই ধরনের খাবারগুলি আমাদের শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ফলে বাতের ব্যথাও কমতে পারে।
মিষ্টি খেলে কি ব্যথা বাড়ে?
বাতের রোগীদের জন্য খাদ্যের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, যেমন ক্যান্ডি, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং আইসক্রিম, বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে। এই খাবারগুলিতে থাকা অতিরিক্ত চিনি শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে, যা বাতের উপসর্গকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। অন্যদিকে, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং রেড মিটও শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে, ফলে বাতের ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে। সুতরাং, বাতের রোগীদের এই ধরনের খাবার পরিহার করে ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত।
শরীরে বাতের লক্ষণ কি কি?
বাত রোগের লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব করা হয়। কিন্তু এই রোগটি আরও অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেকেই ক্ষুধামন্দা, জ্বর, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি, হাত-পা অবশ হওয়া, শক্তিহীনতা, চোখের লালচেভাব এবং হাত-পায়ে টান অনুভব করতে পারেন। এই ধরনের উপসর্গগুলি যদি আপনার হয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লিখেছেন-
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।
পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন।
আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার