ব্রেন স্ট্রোক করার পর রোগীর জন্য বিশেষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

স্ট্রোকের পরে রোগীরা প্রায়ই শারীরিক অক্ষমতার সম্মুখীন হন, যেমন পক্ষাঘাত, পেশির দুর্বলতা বা সমন্বয় হারানো। এই ধরনের সমস্যাগুলি মোকাবিলায় ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রেন স্ট্রোক রোগীর থেরাপি বা ফিজিওথেরাপি রোগীদের চলাচল, শক্তি এবং স্বনির্ভরতা ফিরে পেতে সহায়তা করে। এটি রোগীদের প্রতিদিনের কাজকর্ম সহজে করতে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি শুরু করলে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, কারণ এটি মস্তিষ্কের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে।

স্ট্রোক পরবর্তী ফিজিওথেরাপিতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন ব্যায়াম, ম্যানুয়াল থেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি এবং সহায়ক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। এই পদ্ধতিগুলি রোগীদের পেশির শক্তি বাড়াতে, সমন্বয় উন্নত করতে এবং চলাচলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপি রোগীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, ফিজিওথেরাপি স্ট্রোকের পরে সম্ভাব্য জটিলতা যেমন পক্ষাঘাতজনিত পড়ে যাওয়া বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

মিনি স্ট্রোকের লক্ষণ কি কি জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন।

ফিজিওথেরাপি শুরু করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়

ফিজিওথেরাপি শুরু করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়

স্ট্রোকের পরে ফিজিওথেরাপি শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি শুরু করলে রোগীর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। এটি মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি ব্যবহার করে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, যা রোগীকে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করে। সাধারণত, চিকিৎসাগতভাবে স্থিতিশীল হওয়ার পরে, ফিজিওথেরাপি 24 থেকে 48 ঘন্টার মধ্যে শুরু করা উচিত। কিছু ক্ষেত্রে, এটি স্ট্রোকের মাত্র 4 ঘন্টার মধ্যেই শুরু করা যেতে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি শুরু না করলে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এটি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসা বিলম্বিত হয়। তাই, স্ট্রোকের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিজিওথেরাপি শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগীকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে এবং তার শারীরিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

ফিজিওথেরাপি স্ট্রোকের পরে রোগীর জন্য অসংখ্য সুবিধা প্রদান করে। এটি রোগীকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে, পেশীর শক্তি বাড়ায়, এবং সমন্বয় ও ভারসাম্য উন্নত করে। এছাড়াও, ফিজিওথেরাপি রোগীকে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে সাহায্য করে, যা তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। তাই, স্ট্রোকের পরে প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্ট্রোক কি কারনে হয় জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে নিন।

ফিজিওথেরাপির ধরণসমূহ

ব্রেন স্ট্রোক রোগীর থেরাপি বা ফিজিওথেরাপির ধরণসমূহ

১। মোবিলিটি ট্রেনিং

মোবিলিটি ট্রেনিং হলো এমন একটি পুনর্বাসন পদ্ধতি, যা স্ট্রোক-পরবর্তী রোগীদের হাঁটা ও চলাফেরার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। স্ট্রোকের ফলে অনেক রোগী তাদের স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, ভারসাম্য রাখতে পারেন না অথবা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় মোবিলিটি ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পদ্ধতি

  • প্রথমদিকে রোগীকে চিকিৎসকের সহায়তায় বা সহায়ক যন্ত্রের (যেমন: ওয়াকার, ক্রাচ, বা সমর্থনকারী ব্যান্ড) সাহায্যে হাঁটতে শেখানো হয়।
  • রোগীকে ধীরে ধীরে তার ভারসাম্য রক্ষা করার কৌশল শেখানো হয় এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।
  • রোগীকে সম্পূর্ণরূপে স্বনির্ভর করার জন্য বিভিন্ন ব্যায়াম ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা তার চলাচলের ক্ষমতা আরও উন্নত করে।

উপকার

  • রোগীর স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার হয়।
  • শরীরের ভারসাম্য উন্নত হয় এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
  • রোগীর আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়।

ব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষণ ও বাঁচার উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

স্ট্রেন্থ ট্রেনিং ফিজিওথেরাপি

২। স্ট্রেন্থ ট্রেনিং

স্ট্রেন্থ ট্রেনিং হল আক্রান্ত অঙ্গের পেশির শক্তি পুনর্গঠনের জন্য বিশেষ ব্যায়াম। এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে মধ্যম থেকে উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে তার পেশির শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি রোগীর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং তাকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে।

পদ্ধতি

  • প্রথমদিকে রোগীকে সহজ ও স্বল্প মাত্রার ব্যায়াম দেওয়া হয়, যা পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • রোগী যখন কিছুটা উন্নতি করে, তখন তার জন্য মধ্যম-তীব্রতার ব্যায়াম নির্ধারণ করা হয়, যা পেশির কার্যকারিতা আরও বাড়ায়।
  • উন্নত পর্যায়ে রোগীকে ওজন সহ ব্যায়াম, প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম (resistance training) এবং অন্যান্য উন্নত কৌশল শেখানো হয়।

উপকার

  • পেশির শক্তি ও নমনীয়তা পুনরুদ্ধার হয়।
  • দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • রোগী স্বাভাবিক জীবনে দ্রুত ফিরে আসতে পারেন।

ব্রেন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা জানতে পোস্টটি বিস্তারিত পড়ুন।

৩। ফাংশনাল ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন (FES)

ফাংশনাল ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন (FES) হল একটি পদ্ধতি যেখানে পক্ষাঘাতগ্রস্ত পেশিগুলোর কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারের জন্য বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ পেশিকে সংকেত দেয়, যার ফলে পেশি সংকোচন ঘটে এবং রোগীর চলাফেরা ক্ষমতা উন্নত হয়।

পদ্ধতি

  • ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন: বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক ডিভাইসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রার বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত পেশিতে পাঠানো হয়।
  • বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে পেশির সংকোচন হয়, যা পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গের চলন ক্ষমতা উন্নত করে।
  • নিয়মিত প্রয়োগের ফলে পেশির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগী ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন।

উপকার

  • পক্ষাঘাতগ্রস্ত পেশির কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার হয়।
  • চলাচলের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ব্রেইন স্ট্রোক করার লক্ষণ ও করণীয় জানতে এই পোস্টটি পড়ে নিন।

৪। কনস্ট্রেইন্ট-ইনডিউসড মুভমেন্ট থেরাপি (CIMT)

কনস্ট্রেইন্ট-ইনডিউসড মুভমেন্ট থেরাপি (CIMT) হল একটি পদ্ধতি যেখানে সুস্থ অঙ্গটি সীমাবদ্ধ রেখে আক্রান্ত অঙ্গ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়। এই পদ্ধতিতে রোগীকে আক্রান্ত অঙ্গ ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়, যার ফলে আক্রান্ত অঙ্গের কার্যকারিতা উন্নত হয়।

পদ্ধতি

  • রোগীর সুস্থ হাত বা পা ব্যান্ডেজ বা অন্য কোনো উপায়ে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে সে আক্রান্ত অঙ্গটি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
  • রোগীকে বিভিন্ন কাজ করতে বলা হয়, যেমন- কিছু ধরার চেষ্টা করা, ছোট ছোট জিনিস তুলতে শেখানো ইত্যাদি।
  • থেরাপির মাধ্যমে আক্রান্ত অঙ্গের গতিশীলতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা হয়।

উপকার

  • আক্রান্ত অঙ্গ ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
  • দৈনন্দিন কাজে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।
  • হাত ও পায়ের সমন্বয় ক্ষমতা উন্নত হয়।

৫। স্পিচ ও স্বলোয়িং থেরাপি

স্পিচ ও স্বলোয়িং থেরাপি হল একটি বিশেষ থেরাপি যা স্ট্রোকের পরে যারা কথা বলা বা গিলতে সমস্যার সম্মুখীন হন, তাদের জন্য প্রয়োগ করা হয়। এই থেরাপিতে রোগীকে বিভিন্ন ব্যায়াম ও কৌশল শিখিয়ে তার যোগাযোগ ও গ্রহণ ক্ষমতা উন্নত করা হয়।

পদ্ধতি

  • রোগীকে ধাপে ধাপে শব্দ উচ্চারণ ও স্বর তৈরির ব্যায়াম করানো হয়।
  • কিছু রোগী খাবার বা পানি গিলতে পারেন না। তাদের জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম ও বিশেষ কৌশল শেখানো হয়।
  • কথা বলার বিকল্প উপায়, যেমন- ইশারা ভাষা বা যোগাযোগ ডিভাইস ব্যবহার শেখানো হয়।

উপকার

  • রোগীর কথা বলার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার হয়।
  • খাবার ও পানি গিলতে সাহায্য করে, যা পুষ্টি গ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ সহজ হয়।

স্ট্রোক এর লক্ষণ কি ও নিয়ন্ত্রণের উপায় জানতে এই পোস্টটি দেখুন।

স্ট্রোক পুনর্বাসন প্রক্রিয়া

পুনর্বাসন প্রক্রিয়া

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন হল একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং ধাপে ধাপে সম্পন্ন হওয়া প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা প্রদর্শন করতে হয়। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় একটি বহুবিষয়ক চিকিৎসা দল জড়িত থাকে, যার মধ্যে ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এবং স্পিচ থেরাপিস্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই দল রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করে।

প্রতিটি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এই পরিকল্পনায় রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক চাহিদা বিবেচনা করা হয়। ফিজিওথেরাপি রোগীর শারীরিক ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে, অকুপেশনাল থেরাপি রোগীকে দৈনন্দিন কাজকর্মে সহায়তা করে, এবং স্পিচ থেরাপি রোগীর যোগাযোগ ক্ষমতা উন্নত করে। এই সমন্বিত পদ্ধতি রোগীকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া রোগীর জন্য অসংখ্য সুবিধা প্রদান করে। এটি রোগীকে তার শারীরিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে, দৈনন্দিন কাজকর্মে স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে এবং সামাজিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত করে, যা তার সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে। তাই, স্ট্রোকের পরে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মানসিক সহায়তা

স্ট্রোকের পরে ফিজিওথেরাপি শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি শুরু করলে রোগীর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। এটি মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি ব্যবহার করে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, যা রোগীকে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করে। সাধারণত, চিকিৎসাগতভাবে স্থিতিশীল হওয়ার পরে, ফিজিওথেরাপি 24 থেকে 48 ঘন্টার মধ্যে শুরু করা উচিত। কিছু ক্ষেত্রে, এটি স্ট্রোকের মাত্র 4 ঘন্টার মধ্যেই শুরু করা যেতে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি শুরু না করলে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এটি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসা বিলম্বিত হয়। তাই, স্ট্রোকের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিজিওথেরাপি শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগীকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে এবং তার শারীরিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

দীর্ঘমেয়াদী যত্ন

স্ট্রোকের পরে দীর্ঘমেয়াদী যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং নিয়মিত চেকআপ করা প্রয়োজন, যাতে পেশির কঠোরতা বা সংকোচন প্রতিরোধ করা যায়। এই ধারাবাহিক যত্ন রোগীকে দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা অর্জন করতে সাহায্য করে এবং তার জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

দীর্ঘমেয়াদী যত্ন রোগীর জন্য অসংখ্য সুবিধা প্রদান করে। এটি রোগীকে তার শারীরিক ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, নিয়মিত চেকআপ রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতি পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে, যা তার সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবার ও পরিচর্যাকারীর ভূমিকা

পরিবার ও পরিচর্যাকারীর ভূমিকা

পরিবারের সদস্যরা স্ট্রোকের পরে রোগীর পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা রোগীর ব্যায়ামের সহায়ক হতে পারেন, যা রোগীর শারীরিক ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পরিবারের সদস্যরা দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করে, যেমন খাদ্য প্রস্তুতি, ঔষধ প্রশাসন, এবং ব্যক্তিগত যত্ন, যা রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

পরিবারের সদস্যরা রোগীকে মানসিকভাবেও সহায়তা প্রদান করে। তারা রোগীকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেয়, যা রোগীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং তাকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় সহজতর করে তোলে। এছাড়াও, পরিবারের সদস্যরা রোগীর সাথে সময় ব্যয় করে, যা রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং তাকে সামাজিকভাবে সংযুক্ত রাখে।

পরিবারের সহায়তা রোগীর পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা তার জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, পরিবারের সহায়তা রোগীকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং তাকে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করে। তাই, স্ট্রোকের পরে পরিবারের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গুরুত্বপূর্ণ কথা

স্ট্রোকের পরে রোগীর শারীরিক সক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হয়। ফিজিওথেরাপি এই অবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি রোগীর পেশি শক্তি পুনরুদ্ধার, নড়াচড়া উন্নত করা এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। প্রতিটি রোগীর অবস্থা আলাদা হওয়ায়, তার চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। সঠিক থেরাপির মাধ্যমে রোগী ধীরে ধীরে হাঁটাচলা ও স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে আসতে পারে, যা তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে।

ফিজিওথেরাপির পাশাপাশি অকুপেশনাল থেরাপি এবং স্পিচ থেরাপি অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অকুপেশনাল থেরাপি রোগীকে দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে, যেমন খাওয়া, পোশাক পরা এবং ব্যক্তিগত পরিচর্যা করা। অন্যদিকে, স্ট্রোকের ফলে যদি রোগীর কথা বলার বা গিলতে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে স্পিচ থেরাপি তার জন্য অপরিহার্য। এই সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগী আরও দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এবং তার সার্বিক জীবনমান উন্নত হয়।

ফিজিওথেরাপি শুধুমাত্র রোগীর শারীরিক উন্নতির জন্য নয়, মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত থেরাপির ফলে রোগীর স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি পায়, যা তার আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। পরিবার এবং সমাজের সক্রিয় সহযোগিতার পাশাপাশি উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে রোগীর সুস্থতার হার অনেক বৃদ্ধি পায়। তাই, স্ট্রোকের পরে যত দ্রুত সম্ভব ফিজিওথেরাপি শুরু করা উচিত, যাতে রোগী তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

 

লিখেছেন-

ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ), এমপিটি ( অর্থোপেডিকস ) – এন.আই.পি.এস, ইন্ডিয়া
পিজি.সি. ইন আকুপাংচার, ইন্ডিয়া
স্পেশাল ট্রেইন্ড ইন ওজন থেরাপি, ইউ.এস.এ এবং ওজোন ফোরাম, ইন্ডিয়া।
ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

পরামর্শ পেতে – 01760-636324 , 01932-797229 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা) এই নম্বরে কল করুন এবং এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিন

আমাদের ফেইসবুক পেইজঃ ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Visionphysiotherapy Centre
Visionphysiotherapy Centre
Articles: 95

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *